মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ by শুভ দেবনাথ সনি
সৌরভ
সপরিবারে বসবাস করেন কুমিল্লায়। তারা এক ভাই এক বোন। বোন তার থেকে চার
বছরের বড়। দুই বছর আগে বোনের বিয়ে হয় যশোরে। তাই তাকে স্বামীর সঙ্গে থাকতে
হয় ওখানে। বাবা ব্যবসায়িক কাজে বছরের বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে অবস্থান
করেন। তাই মাকে দেখার কাজটা সৌরভকেই করতে হয়। হঠাৎ একদিন তার মা অসুস্থ হয়ে
পড়েন। রাত তখন এগারোটা। বাবা দেশের বাইরে অবস্থান করায় জানাতে সাহস পাচ্ছে
না সে। তাই বাধ্য হয়ে বড় বোনকে ফোন করে সে। দ্রুত টাকার প্রয়োজন মাকে
বাঁচাতে। কিন্তু তার কাছে এত টাকা না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় সে। যশোর
থেকে কুমিল্লার দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় অপারেশনের আগে বোনের আসা সম্ভব নয়।
ঠিক সেই সময় বন্ধুর কাছ থেকে শুনতে পারে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কথা। বর্তমান
সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং টাকা আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম। দূর-দূরান্ত থেকে
অল্প সময়ে টাকা পাওয়া যায় এই মাধ্যম থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী
দৈনিক ৩৫০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে এ খাতে। বর্তমানে বাংলাদেশে দুই কোটি ৫২
হাজার গ্রাহক এই সেবা ব্যবহার করছে। টাকা আদান-প্রদানের জন্য ৪১ হাজার
এজেন্ট নিয়োগ আছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী ২০১৩ সালের
তুলনায় ২০১৪ সালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, গত বছরের ডিসেম্বর
পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংক এই সেবা দিয়ে আসছে। এর ফলে মানুষের যেমন ভোগান্তি
কমছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ অর্থনীতির দিক থেকেও লাভবান হচ্ছে। বিকাশের
নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল এস কাদির বলেন, ব্যাংক সব সময় দারিদ্র্য বিমোচনের
জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সবার কথা মাথায় রেখে স্বল্পমূল্যে এ সেবা প্রদান করা
হচ্ছে। বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার রেজাউল হোসেন বলেন, যেহেতু এই
সেবাটি এজেন্টের মাধ্যমে প্রদান করা হয়, সেজন্য সরকারের উচিত তাদের
নিরাপত্তা প্রদান করা। তিনি আরও বলেন, এজেন্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটর এই ব্যবসার
প্রাণ। তাদের কথা মাথার রেখে স্বল্পমূল্যে এই সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ
বিষয়ে বিকাশ ব্যবহারকারী সৌমিক বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং টাকা প্রদানের জন্য
বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অন্যতম উদ্যোগ। মোবাইল
ব্যাংকিং সেবা গ্রহণকারী তন্দ্রা বলেন, বিকাশের হাত ধরে এ সেবা চালু হলেও
বর্তমানে অন্য ব্যাংকগুলো এই সেবা প্রদান করছে, যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল
দেশের জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ইন্দোনেশিয়া
প্রথম, ভিয়েতনাম দ্বিতীয় অবস্থানের রয়েছে। এভাবে প্রসার ঘটলে আমাদের
প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলংকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে
বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে গ্রহণ করবে।-শুভ দেবনাথ সনি
No comments