অবরুদ্ধ গণতন্ত্র : অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ by এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর
গভীর
এক সঙ্কটে সমগ্র বাংলাদেশ জনমানুষের দিন কাটছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে।
রাজপথে পরস্পর মুখোমুখি সরকার ও বিরোধী পক্ষ। জাতি আজ চরম এক অনিশ্চয়তা ও
গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। দেশে আজ যে অরাজকতা ও
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার কারণ খুঁজতে একটু পেছনের দিকে যেতে
হবে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদের নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৯৫ সালের শুরু থেকেই ‘তত্ত্বাবধায়ক ও নিরপেক্ষ
সরকারের’ অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে এক
আন্দোলন গড়ে তোলে। অন্যান্য দলের মধ্যে এই আন্দোলনে তাদের সঙ্গী ছিল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল। ভাঙচুর ও সহিংসতা ছাড়াও তারা ১৭৩ দিন হরতাল
পালন করেছিল। আমি নিজে বিএনপি মনোনীত একজন প্রার্থী থাকার সুবাদে সৌভাগ্য
অথবা দুর্ভাগ্যক্রমে আমার সুযোগ হয়েছিল নির্বাচনবিরোধীদের হিংসাত্মক
কার্যকলাপ দেখার। নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে এবং সরকার গঠন করে। তখনো
‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও নিয়ম রক্ষার’ জন্যই ষষ্ঠ সংসদের নির্বাচন করতে
বাধ্য হয়েছিল বিএনপি। তবে বর্তমান অবস্থার পার্থক্য হলো যে দেশের জনগণের
স্বস্তি-শান্তি বিশেষ করে বেশির ভাগ জনমানুষের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে
দেশপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইচ্ছায় ও নির্দেশে আমরা ষষ্ঠ সংসদের
সদস্যরা ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ অধীনে অনুষ্ঠানের
বিধান করে শাসনতন্ত্রের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করি। এর পরপরই ষষ্ঠ সংসদ ভেঙে
দিয়ে জুন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সপ্তম সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হয় এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০০১ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অধীনে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ২০০৬
সালে নবম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সংবিধানের বিধান মোতাবেক সবশেষে
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান
হওয়ার কথা। কিন্তু বিচারপতি কে এম হাসান এক সময়ে বিএনপি করতেন এই অজুহাতে
আওয়ামী লীগ তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে আপত্তি জানায়। এই নিয়েই
শুরু হয় বিতর্ক-সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষের একপর্যায়ে লগি-বৈঠার আক্রমণে প্রাণও
হারান কয়েকজন। এ অবস্থায় বিচারপতি কে এম হাসান নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
প্রধান হতে তার অনিচ্ছার কথা জানান। শেষপর্যায়ে আওয়ামী লীগ ২০০৭ সালের
জানুয়ারিতে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে দেশে হিংসাত্মক রাজনৈতিক
পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সংঘর্ষময় পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে
সেনাসমর্থিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ দাবি করে যে, ‘এই সরকার
তাদের আন্দোলনের ফসল’। এরপর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম সংসদ নির্বাচনে
আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ২০১১ সালের অক্টোবরে মাননীয় সুপ্রিম
কোর্টের এক বিভক্ত রায়ে প্রচলিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন
অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এই রায়ে আরো বলা হয় যে, সংসদ যদি ইচ্ছা করে তাহলে আগামী
দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে।
যে আওয়ামী লীগ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচন নিয়ে সংগ্রাম-আন্দোলন করেছিল সেই আওয়ামী লীগই তাদের আন্দোলনের ফসল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে। দশম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিসহ বিরোধীয় জোট আন্দোলন শুরু করে। ওই নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বিরোধীয় জোটের নির্বাচন বর্জনের আহ্বানের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪২টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ মাত্র ১২টি দল এ নির্বাচনে অংশ নেয় । সংসদীয় ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনের একজন করে প্রার্থী থাকায় তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
২০ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে একটি সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে আবেদন করে ২২ ডিসেম্বর। কিন্তু ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিএমপির পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। সরকার এক অলিখিত আদেশে ঢাকার সাথে সারা দেশের সড়ক ও নৌযোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ ঢাকা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ দিকে ৩ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে যান এবং একপর্যায়ে অসুস্থ অফিস সেক্রেটারি রিজভী আহমেদকে দেখতে যেতে চাইলে পুলিশ তাকে বের হতে দেয়নি। কার্যালয়ের অফিস গেটে বাইরে থেকে তালা মেরে দেয়া হয়। শত শত পুলিশ কার্যালয়ের সামনে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। ইট-বালু-পাথর বোঝাই ১০-১২টি ট্রাক, পুলিশের লরি, জলকামান, রায়ট কার ইত্যাদি দিয়ে গুলশান কার্যালয়ের রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
কার্যালয় ঘিরে আট স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি আবারো তিনি বের হতে চাইলে তাকে বের হতে দেয়া হয়নি। ভেতরে আটকা মহিলা কর্মীসহ কিছু নেতাকর্মী মূল ফটক খোলার চেষ্টা করলে পুলিশ ফটকের ভেতর পেপার স্প্রে করে। ফটকের ভেতর গাড়িতে বসে থাকা দেশনেত্রীসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। একটু সুস্থ হলে বেগম জিয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম জিয়া যে অবরুদ্ধ সেটা স্বীকার করতে রাজি হননি। অথচ দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেছে চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ ছিলেন কি না?
রাজনীতি হলো মানুষের কল্যাণের জন্য আর রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব হলো দেশের জনগণের সুখ-শান্তি, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা। সর্ববৃহৎ বিরোধী দলের নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা তার সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে জনগণের সুখ-শান্তি স্বস্তির উদ্দেশ্যেই সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। যার মধ্যে একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই হলো মূল দাবি আর এর সাথে এই সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি। তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার দাবি করেননি। তিনি সরকারকে অনুরোধ করেছেন জনগণের কাছে ফেরত যেতে নূতন ম্যান্ডেট নেয়ার। সমস্যা সমাধানের এটিই একমাত্র উপায়।
আমাদের সংবিধানের মূলনীতির অন্যতম হলো গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হলো ভোটাধিকার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মতে, বিকৃত ও ভোটারবিহীন নির্বাচন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে। (এ এফ এম শাহ আলম বনাম মজিবুর রহমান, ৪১ ডি এল আর (এ ডি) ১৯৮৯। বিরোধীপক্ষকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, দুষ্কৃতকারী, স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যা দিয়ে উৎখাত-নির্মূল করতে যাওয়া কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না। আর কোটি কোটি মানুষের সমর্থনপুষ্ট দল বিএনপি ও সেই দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করা অত সহজ বলে কেউই মনে করে না।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা অপরিহার্য। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯২টি আসনে জয়লাভ করেছিল। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ ছিল কমবেশি সব দলেরই এই বিরোধী দল প্রসঙ্গে রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী মরহুম আবুল মনসুর আহমেদ তার ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইতে লিখেছেন,’ ... নৌকা চালাইতে হইলে ডাইনে-বাঁয়ে দুই সারি দাঁড়ি লাগে। নৌকার হাল ধরিবেন শেখ মুজিব নিজেই ঠিকই, কিন্তু দাঁড়ি হইবেন দুই কাতারের। সব দাঁড়ি একদিক হইতে দাঁড় টানিলে নৌকা সামনে চলিবার বদলে ঘুরপাক খাইয়া ডুবিতে পারে।’ আশা করব সরকারি দল বিষয়টি উপলব্ধি করবে।
লেখক : গোপালগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি
যে আওয়ামী লীগ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচন নিয়ে সংগ্রাম-আন্দোলন করেছিল সেই আওয়ামী লীগই তাদের আন্দোলনের ফসল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে। দশম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিসহ বিরোধীয় জোট আন্দোলন শুরু করে। ওই নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বিরোধীয় জোটের নির্বাচন বর্জনের আহ্বানের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪২টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ মাত্র ১২টি দল এ নির্বাচনে অংশ নেয় । সংসদীয় ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনের একজন করে প্রার্থী থাকায় তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
২০ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে একটি সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে আবেদন করে ২২ ডিসেম্বর। কিন্তু ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিএমপির পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। সরকার এক অলিখিত আদেশে ঢাকার সাথে সারা দেশের সড়ক ও নৌযোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ ঢাকা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ দিকে ৩ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে যান এবং একপর্যায়ে অসুস্থ অফিস সেক্রেটারি রিজভী আহমেদকে দেখতে যেতে চাইলে পুলিশ তাকে বের হতে দেয়নি। কার্যালয়ের অফিস গেটে বাইরে থেকে তালা মেরে দেয়া হয়। শত শত পুলিশ কার্যালয়ের সামনে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। ইট-বালু-পাথর বোঝাই ১০-১২টি ট্রাক, পুলিশের লরি, জলকামান, রায়ট কার ইত্যাদি দিয়ে গুলশান কার্যালয়ের রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
কার্যালয় ঘিরে আট স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি আবারো তিনি বের হতে চাইলে তাকে বের হতে দেয়া হয়নি। ভেতরে আটকা মহিলা কর্মীসহ কিছু নেতাকর্মী মূল ফটক খোলার চেষ্টা করলে পুলিশ ফটকের ভেতর পেপার স্প্রে করে। ফটকের ভেতর গাড়িতে বসে থাকা দেশনেত্রীসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। একটু সুস্থ হলে বেগম জিয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম জিয়া যে অবরুদ্ধ সেটা স্বীকার করতে রাজি হননি। অথচ দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেছে চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ ছিলেন কি না?
রাজনীতি হলো মানুষের কল্যাণের জন্য আর রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব হলো দেশের জনগণের সুখ-শান্তি, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা। সর্ববৃহৎ বিরোধী দলের নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা তার সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে জনগণের সুখ-শান্তি স্বস্তির উদ্দেশ্যেই সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। যার মধ্যে একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই হলো মূল দাবি আর এর সাথে এই সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি। তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার দাবি করেননি। তিনি সরকারকে অনুরোধ করেছেন জনগণের কাছে ফেরত যেতে নূতন ম্যান্ডেট নেয়ার। সমস্যা সমাধানের এটিই একমাত্র উপায়।
আমাদের সংবিধানের মূলনীতির অন্যতম হলো গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হলো ভোটাধিকার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মতে, বিকৃত ও ভোটারবিহীন নির্বাচন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে। (এ এফ এম শাহ আলম বনাম মজিবুর রহমান, ৪১ ডি এল আর (এ ডি) ১৯৮৯। বিরোধীপক্ষকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, দুষ্কৃতকারী, স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যা দিয়ে উৎখাত-নির্মূল করতে যাওয়া কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না। আর কোটি কোটি মানুষের সমর্থনপুষ্ট দল বিএনপি ও সেই দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করা অত সহজ বলে কেউই মনে করে না।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা অপরিহার্য। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯২টি আসনে জয়লাভ করেছিল। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ ছিল কমবেশি সব দলেরই এই বিরোধী দল প্রসঙ্গে রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী মরহুম আবুল মনসুর আহমেদ তার ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইতে লিখেছেন,’ ... নৌকা চালাইতে হইলে ডাইনে-বাঁয়ে দুই সারি দাঁড়ি লাগে। নৌকার হাল ধরিবেন শেখ মুজিব নিজেই ঠিকই, কিন্তু দাঁড়ি হইবেন দুই কাতারের। সব দাঁড়ি একদিক হইতে দাঁড় টানিলে নৌকা সামনে চলিবার বদলে ঘুরপাক খাইয়া ডুবিতে পারে।’ আশা করব সরকারি দল বিষয়টি উপলব্ধি করবে।
লেখক : গোপালগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি
No comments