যেকোনো ব্যবস্থা নিন, দায়িত্ব আমার by ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
প্রধানমন্ত্রী
বিজিবি, র্যাব, পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের দেশের চলমান নাশকতা ও
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যেকোনো ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যবস্থার
দায় ভবিষ্যতে কে নেবে এই সংশয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনে উদয় হতে
পারে। সে কথা স্মরণে রেখেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার দায়দায়িত্ব তিনি
নেবেন বলেছেন কি না জানি না। জানি না এ আদেশের মাধ্যমে এ দেশের নাগরিকদের
যাকে যেখানে খুশি নির্বিচারে হত্যা করার লাইসেন্স তিনি ওই তিন বাহিনীকে
দিয়ে দিয়েছেন কি না। এখন মন্ত্রীদের মুখে ভাষা: ‘হুকুমের আসামি’।
এটি নতুন কথা নয়। আমার ছেলেবেলায় দেখেছি, গ্রাম্য টাউট মাতবরেরা গ্রামের ভেতর নিজেদের কর্তৃত্ব বহাল রাখার জন্য মামলা করিয়ে দিয়ে, সেসব মামলা চালু রাখার জন্য নিজেরা মামলা কিনে নিতেন। সেসব মামলায় অন্য কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য হুমুকের আসামি করা হতো। তেমনি গ্রাম্য পদ্ধতিতে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ২০ দলীয় জোটের প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধে ‘হুকুমের আসামি’ করে মামলা করেছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, শেখ হাসিনা যেন শতায়ু হন।
হতে পারে যখনকার ঘটনা তখন সংশ্লিষ্ট ‘আসামি’কে পুলিশ তার নিচ বাড়িতে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। হতে পারে তখন তিনি ইতোমধ্যেই কারারুদ্ধ আছেন। কিংবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। তাতে কিছু যায় আসে না। তাদের হুমুকের আসামি করে দেয়া যায়। এমনকি এসব হুমুকের আসামিদের কেউ ক্রসফায়ারে যেতে পারেন। দেশে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে জনগণ সর্বাত্মক আন্দোলন করছে। সে দাবি আদায়ের জন্য গত ২৬ দিন ধরে জনগণ সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এর সাথে সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদে মাঝে মধ্যেই যুক্ত হচ্ছে ১০-১৫ জেলায় হরতাল। এই হরতালেরও ডাক দেয়া হচ্ছে কোথায়ও কোথায়ও সরকারের নির্বিচার হত্যা, জেল-জুলুমের প্রতিবাদে। জনগণ তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনও করছে।
এই যে দেশব্যাপী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সবার অংশগ্রহণমূলক একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হয়ে গেল, সেটি এত তাড়াতাড়ি শুরু হবে সেরকম পরিকল্পনা সম্ভবত ছিল না। শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দেয়ার জন্য যখন ভাড়ায়ও যথেষ্ট লোক মিলছিল না, তখন বেগম খালেদা জিয়া দেশের যে প্রান্তেই গেছেন সেখানেই লাখ লাখ মানুষ তার বক্তব্য শোনার জন্য এসে সমবেত হয়েছেন। প্রতিটি জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। তা থেকে আওয়ামী নেতাদের এমন উপলব্ধি হয়নি যে, তাদের জনসমর্থনে ভাটা পড়ে গেছে। কিংবা সে উপলব্ধি হয়েছে বলেই তারা ঘোষণা করতে শুরু করে যে, খালেদা জিয়াকে আর কোথায়ও রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না।
তাদের ভয় এই যে, খালেদা জিয়ার জনসভায় যে লাখ লাখ লোকের সমাগম হয় তারা যদি হুট করেই রাস্তায় বসে পড়ে তাহলে সরকার পালানোর পথ পাবে না। যে কথা সেই কাজ। তিনি গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ মাঠে জনসভা আহ্বান করেছিলেন ২৭ ডিসেম্বর। কিন্তু ওই গ্রাম্য কৌশল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সেখানে ছাত্রলীগ দিয়ে এক সভা আহ্বান করায়। অথচ বেশ আগেই ওই স্থানে খালেদা জিয়ার জনসভা করার জন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি ছিল। কিন্তু সরকারি নির্দেশে এসব ছুড়ে ফেলে দিয়ে ‘শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা’য় পুলিশ সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে ওই জনসভা পণ্ড করে দেয়। আর পুলিশের ১৪৪ ধারার কী বহর! আমরা দেখলাম, মাঠে যাতে বিএনপি জনসভা করতে না পারে, তার জন্য শত শত পুলিশ মোতায়েন করা হলো। আর তার পাশ দিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে দিনভর মিছিল করল ছাত্রলীগ। পুলিশ বাধা দিলো না। অর্থাৎ ১৪৪ ধারা জারি আছে, সেটি কার্যকর শুধু বিএনপির জন্য, যাকে কোনো অবস্থাতেই গণতন্ত্র বলা যায় না। এর প্রতিবাদে এক দিন হরতাল পালন করে ২০ দলীয় জোট।
এরপর এরা ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের ডাক দেয়। সে উপলক্ষে দেশব্যাপী কালো পতাকা প্রদর্শন ও ঢাকায় একটি সমাবেশ আহ্বান করে। সরকারও ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালনের জন্য সোহরাওয়ার্দীতে একটি সমাবেশের ডাক দেয়। এটি ছিল সরকারের এক চরম দুরভিসন্ধি। সরকার জানত তাদের এই জনসমাবেশ ফপ হতে বাধ্য। সে কারণে পুলিশ দিয়ে তারা সারা দেশে সব ধরনের সভা-সমাবেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ বলতে থাকে যে, পুলিশের অনুমোদন পাওয়া গেলে সোহরাওয়ার্দীতে তাদের সমাবেশ হবেই। কিন্তু ৩ জানুয়ারি রাত থেকেই সরকার সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখী সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতেও তাদের মতলব অস্পষ্ট থাকে না। এরা যদি গণতন্ত্রের বিজয় পালন করবেই তাহলে ঢাকায় লোক আসার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কেন?
৩ জানুয়ারি রাত থেকেই এরা বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। বিএনপি অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রুহুল কবীর রিজভীকে। তারপর ওই অফিসেও তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। এ অবস্থায়ই বেগম খালেদা জিয়া নয়া পল্টনে তার প্রস্তাবিত জনসভায় যোগ দেয়ার জন্য গাড়িতে ওঠেন। কিন্তু পুলিশ তার কার্যালয়ের তালা তো খুলে দেয়ইনি, বরং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা করে বসলেন, যত দিন প্রয়োজন তত দিন তাকে সেখানে তালাবদ্ধ করে রাখা হবে।
অপর দিকে প্রধানমন্ত্রী বলতে থাকলেন, তিনি তো ইচ্ছে করলেই অফিস ছেড়ে বাড়িতে চলে যেতে পারেন। এক দিকে তার অফিসের দরজায় দরজায় তালা। অপর দিকে বাড়িতে যাওয়ার আহ্বান। এতে কেবল লোক হাসানোই হয়েছে। সরকারের লাভ হয়নি। সরকার কেবলই বলেছে, বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধের নাটক করছেন। তাকে যে শুধু ৫ জানুয়ারি তার অবরুদ্ধ অফিস থেকে বের হতেই দেয়া হলো না, তা-ই নয়, বরং যখন তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে দাঁড়ালেন, তখন তার দিকে স্প্রে করা হলো আদালতে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিষাক্ত পেপার স্প্রে। তাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া ও তার অন্য নেতাকর্মীরাও।
বেগম খালেদা জিয়াকে তার অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখার জন্য অফিসের চার পাশে মোতায়েন করা হয় শত শত পুলিশ ও পানিকামান। সড়ক থেকে ইট-বালুর ট্রাক ধরে এনে তার বাড়িতে যাওয়ার পথ আটকে দেয়া হয়। এই ট্রাকের সংখ্যা ১৩টিতে উন্নীত করা হয়েছিল। এরপর কী করবেন খালেদা জিয়া? যা করা সঙ্গত, তিনি তাই করলেন। নিরপেক্ষ কোনো কর্তৃপক্ষের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিলেন। যে অবরোধের সূচনা করেছিল আওয়ামী লীগই। সে অবরোধ চলছেই এবং প্রতিদিন তা আরো বেগবান হয়েছে। আরো বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিনই তাতে অংশগ্রহণ করেছে। এখন গোটা দেশই এই অবরোধে সম্পৃক্ত।
সরকার মনে করেছিল, বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে পারলে এবং ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেফতার করতে পারলেই জনগণের এই অবরোধ একেবারে ধসে পড়বে। সেই প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী নেতারা এই বলে তম্বি করছেন যে, সাত দিনের মধ্যে অবরোধ শেষ হয়ে যাবে। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সেই সাত দিন ২৭ দিনে গড়িয়েছে। অচল অবস্থা শেষ তো হয়ইনি, বরং আরো জোরদার ও বেগবান হয়েছে। সরকার দেখছে, অবরোধের মাত্রা দেখে নতুন নতুন এলাকায় তা বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে সরকার টিভি চ্যানেলগুলোকে ডেকে বলল, তারা যেন নিজ নিজ চ্যানেলে শুধু এটাই প্রচার করে যে, দেশে অবরোধ-টবরোধ কিছু হচ্ছে না। সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় চলছে।
কিন্তু টিভি চ্যানেলে দেখাক বা না দেখাক, সত্য ধামাচাপা পড়ে থাকেনি। অবরোধ জোরালো থেকে আরো জোরালো হয়েছে। তখন সরকার এক ভিন্ন কৌশল নিতে শুরু করল। ২০ দলীয় জোটের প্রতি মানুষের সহানুভূতি ও বেগবান আন্দোলন থেকে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য সরকারের এজেন্টরা যানবাহনে পেট্রলবোমা ছুড়ে জানমালের ক্ষতি করতে শুরু করল। সরকারের ময়নাপাখি আলোচকেরা বার্ন ইউনিট, বার্ন ইউনিট বলে সরকারের ধুয়াকে আরো সরব করে তোলার চেষ্টা করল। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করল না যে, এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ২০ দলীয় জোটের লোকেরা করেছে। কারণ আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো বীভৎসতা কেউ সমর্থন করে না। এজন্য যদি ২০ দলীয় জোট দায়ী হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি বিরূপ ধারণাই পোষণ করবে।
পাঠক লক্ষ করে থাকবেন, প্রথম দিকে যে দু-একটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়, তাতে অগ্নিসংযোগকারীরা যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আগুন দিয়েছেন। কিংবা বলেছেন, ভাই আপনারা তাড়াতাড়ি নামেন। বাসে আগুন দেবো। এতে সাধারণ মানুষ হেসেছে। যদিও তাতেও সম্পদের অপচয় হয়েছে। সরকারের পেট্রলবোমা কৌশল ব্যর্থ হওয়ার পর এরা এখন একেবারে ১৯৭১ সালের পাকিস্তান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার বলেছে, পাড়ায় পাড়ায় শান্তি কমিটির মতো সন্ত্রাস নির্মূল কমিটি গঠন করবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ প্রভৃতি লীগের সদস্যরা। এরা পাড়া মহল্লার সম্ভাব্য ‘বোমাবাজ’দের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হতে ধরিয়ে দেবে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশ হলো, এরা এসব সম্ভাব্য বোমাবাজকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করতে পারবে।
১৯৭১ সালেও ঠিক তাই ঘটেছিল। এরকম শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিত বা ধরিয়ে দিত। আর পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে তাদের হত্যা করত। কিন্তু ১৯৭১-এর যুদ্ধে এত কিছুর পরও সাধারণ মানুষেরই জয় হয়েছিল। অতবড় শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে জনগণের কাছে পরাজয় বরণ করে নিতে হয়েছিল। ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত উৎপীড়িতেরই জয় হয়। এ দেশের মানুষেরও বর্তমান গণতন্ত্রের লড়াইয়ে বিজয় সুনিশ্চিত।
এদিকে আন্তর্জাতিক কোনো অনুরোধ বিবেচনাকে সরকার সামান্যও মূল্য দেয়নি। ভারত ছাড়া গোটা পশ্চিমা বিশ্ব ২০১৪ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে যে, অতি দ্রুত সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের আয়োজন করুক সরকার। এতে তো সরকার কোনো কান দেয়ইনি, বরং এসব রাষ্ট্র ও তাদের কূটনীতিকদের শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষায় গালিগালাজ করে দম্ভ করেছে। গত ২৯ জানুয়ারি ব্রিটেনের হাউজ অব কমন্সে আবারো বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে তারা গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। সঙ্কট নিরসনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প বলে তারা মত দিয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, হত্যা, গুম ও নির্বিচারে গ্রেফতারসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মারাত্মক আইন লঙ্ঘনের বিচার করতে বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা অপহরণ, হত্যা ও খেয়ালখুশিমতো আটক করছে। বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে। মুক্ত মত প্রকাশে অগ্রহণযোগ্য সীমারেখা আরোপ করেছে। সমালোচনা করায় ২০১৩ সালে কয়েকটি টেলিভিশন ও সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকারের স্বার্থ রক্ষিত হওয়ায় সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়মুক্তি দিয়ে রেখেছে। আর তাদের মারাত্মক ঘটনাগুলোর বেলায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
জাতিসঙ্ঘ বলেছে, বিরোধী দলের কোনো শীর্ষ নেতাকে খেয়ালখুশিমতো গ্রেফতার করতে পারে না আইন প্রয়োগকারীরা। এ বিষয়টি সরকারকে খেয়াল করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশী সেনা মোতায়েনের বিষয়টি মানদণ্ড যাচাইয়ের নীতির অধীনে রাখা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আমরা দেখেছি এবং দেখছি যে বাংলাদেশ পরিস্থিতি হতাশ হওয়ার মতো। এরকম বিশ্লেষণের যে সুদূরপ্রসারী মূল্য আছে সেটা সাম্প্রতিক ভারতের দিকে তাকালেও হয়তো সরকার বুঝতে পারবে।
এখানে আরো একটি কথা বলে রাখা ভালো, প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার ওপেন জেনারেল লাইসেন্স দিয়ে দিলেন, যা কার্যত চলছিল অনেক দিন ধরেই। এখনো চলছে। সেটি যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় এবং অব্যাহতভাবে চলতেই থাকে, তাহলে আত্মরক্ষার্থেই মানুষ সংঘাত সংঘর্ষের পথ অবলম্বনে বাধ্য হবে। তাতেও শেষ পর্যন্ত স্বৈরশাসকদের কোনো লাভ হবে না। সে ক্ষেত্রেও বেদনাদায়ক পরাজয়ই তাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়াবে।
সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
এটি নতুন কথা নয়। আমার ছেলেবেলায় দেখেছি, গ্রাম্য টাউট মাতবরেরা গ্রামের ভেতর নিজেদের কর্তৃত্ব বহাল রাখার জন্য মামলা করিয়ে দিয়ে, সেসব মামলা চালু রাখার জন্য নিজেরা মামলা কিনে নিতেন। সেসব মামলায় অন্য কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য হুমুকের আসামি করা হতো। তেমনি গ্রাম্য পদ্ধতিতে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ২০ দলীয় জোটের প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধে ‘হুকুমের আসামি’ করে মামলা করেছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, শেখ হাসিনা যেন শতায়ু হন।
হতে পারে যখনকার ঘটনা তখন সংশ্লিষ্ট ‘আসামি’কে পুলিশ তার নিচ বাড়িতে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। হতে পারে তখন তিনি ইতোমধ্যেই কারারুদ্ধ আছেন। কিংবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। তাতে কিছু যায় আসে না। তাদের হুমুকের আসামি করে দেয়া যায়। এমনকি এসব হুমুকের আসামিদের কেউ ক্রসফায়ারে যেতে পারেন। দেশে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে জনগণ সর্বাত্মক আন্দোলন করছে। সে দাবি আদায়ের জন্য গত ২৬ দিন ধরে জনগণ সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এর সাথে সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদে মাঝে মধ্যেই যুক্ত হচ্ছে ১০-১৫ জেলায় হরতাল। এই হরতালেরও ডাক দেয়া হচ্ছে কোথায়ও কোথায়ও সরকারের নির্বিচার হত্যা, জেল-জুলুমের প্রতিবাদে। জনগণ তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনও করছে।
এই যে দেশব্যাপী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সবার অংশগ্রহণমূলক একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হয়ে গেল, সেটি এত তাড়াতাড়ি শুরু হবে সেরকম পরিকল্পনা সম্ভবত ছিল না। শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দেয়ার জন্য যখন ভাড়ায়ও যথেষ্ট লোক মিলছিল না, তখন বেগম খালেদা জিয়া দেশের যে প্রান্তেই গেছেন সেখানেই লাখ লাখ মানুষ তার বক্তব্য শোনার জন্য এসে সমবেত হয়েছেন। প্রতিটি জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। তা থেকে আওয়ামী নেতাদের এমন উপলব্ধি হয়নি যে, তাদের জনসমর্থনে ভাটা পড়ে গেছে। কিংবা সে উপলব্ধি হয়েছে বলেই তারা ঘোষণা করতে শুরু করে যে, খালেদা জিয়াকে আর কোথায়ও রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না।
তাদের ভয় এই যে, খালেদা জিয়ার জনসভায় যে লাখ লাখ লোকের সমাগম হয় তারা যদি হুট করেই রাস্তায় বসে পড়ে তাহলে সরকার পালানোর পথ পাবে না। যে কথা সেই কাজ। তিনি গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ মাঠে জনসভা আহ্বান করেছিলেন ২৭ ডিসেম্বর। কিন্তু ওই গ্রাম্য কৌশল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সেখানে ছাত্রলীগ দিয়ে এক সভা আহ্বান করায়। অথচ বেশ আগেই ওই স্থানে খালেদা জিয়ার জনসভা করার জন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি ছিল। কিন্তু সরকারি নির্দেশে এসব ছুড়ে ফেলে দিয়ে ‘শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা’য় পুলিশ সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে ওই জনসভা পণ্ড করে দেয়। আর পুলিশের ১৪৪ ধারার কী বহর! আমরা দেখলাম, মাঠে যাতে বিএনপি জনসভা করতে না পারে, তার জন্য শত শত পুলিশ মোতায়েন করা হলো। আর তার পাশ দিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে দিনভর মিছিল করল ছাত্রলীগ। পুলিশ বাধা দিলো না। অর্থাৎ ১৪৪ ধারা জারি আছে, সেটি কার্যকর শুধু বিএনপির জন্য, যাকে কোনো অবস্থাতেই গণতন্ত্র বলা যায় না। এর প্রতিবাদে এক দিন হরতাল পালন করে ২০ দলীয় জোট।
এরপর এরা ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের ডাক দেয়। সে উপলক্ষে দেশব্যাপী কালো পতাকা প্রদর্শন ও ঢাকায় একটি সমাবেশ আহ্বান করে। সরকারও ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালনের জন্য সোহরাওয়ার্দীতে একটি সমাবেশের ডাক দেয়। এটি ছিল সরকারের এক চরম দুরভিসন্ধি। সরকার জানত তাদের এই জনসমাবেশ ফপ হতে বাধ্য। সে কারণে পুলিশ দিয়ে তারা সারা দেশে সব ধরনের সভা-সমাবেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ বলতে থাকে যে, পুলিশের অনুমোদন পাওয়া গেলে সোহরাওয়ার্দীতে তাদের সমাবেশ হবেই। কিন্তু ৩ জানুয়ারি রাত থেকেই সরকার সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখী সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতেও তাদের মতলব অস্পষ্ট থাকে না। এরা যদি গণতন্ত্রের বিজয় পালন করবেই তাহলে ঢাকায় লোক আসার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কেন?
৩ জানুয়ারি রাত থেকেই এরা বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। বিএনপি অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রুহুল কবীর রিজভীকে। তারপর ওই অফিসেও তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। এ অবস্থায়ই বেগম খালেদা জিয়া নয়া পল্টনে তার প্রস্তাবিত জনসভায় যোগ দেয়ার জন্য গাড়িতে ওঠেন। কিন্তু পুলিশ তার কার্যালয়ের তালা তো খুলে দেয়ইনি, বরং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা করে বসলেন, যত দিন প্রয়োজন তত দিন তাকে সেখানে তালাবদ্ধ করে রাখা হবে।
অপর দিকে প্রধানমন্ত্রী বলতে থাকলেন, তিনি তো ইচ্ছে করলেই অফিস ছেড়ে বাড়িতে চলে যেতে পারেন। এক দিকে তার অফিসের দরজায় দরজায় তালা। অপর দিকে বাড়িতে যাওয়ার আহ্বান। এতে কেবল লোক হাসানোই হয়েছে। সরকারের লাভ হয়নি। সরকার কেবলই বলেছে, বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধের নাটক করছেন। তাকে যে শুধু ৫ জানুয়ারি তার অবরুদ্ধ অফিস থেকে বের হতেই দেয়া হলো না, তা-ই নয়, বরং যখন তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে দাঁড়ালেন, তখন তার দিকে স্প্রে করা হলো আদালতে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিষাক্ত পেপার স্প্রে। তাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া ও তার অন্য নেতাকর্মীরাও।
বেগম খালেদা জিয়াকে তার অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখার জন্য অফিসের চার পাশে মোতায়েন করা হয় শত শত পুলিশ ও পানিকামান। সড়ক থেকে ইট-বালুর ট্রাক ধরে এনে তার বাড়িতে যাওয়ার পথ আটকে দেয়া হয়। এই ট্রাকের সংখ্যা ১৩টিতে উন্নীত করা হয়েছিল। এরপর কী করবেন খালেদা জিয়া? যা করা সঙ্গত, তিনি তাই করলেন। নিরপেক্ষ কোনো কর্তৃপক্ষের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিলেন। যে অবরোধের সূচনা করেছিল আওয়ামী লীগই। সে অবরোধ চলছেই এবং প্রতিদিন তা আরো বেগবান হয়েছে। আরো বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিনই তাতে অংশগ্রহণ করেছে। এখন গোটা দেশই এই অবরোধে সম্পৃক্ত।
সরকার মনে করেছিল, বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে পারলে এবং ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেফতার করতে পারলেই জনগণের এই অবরোধ একেবারে ধসে পড়বে। সেই প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী নেতারা এই বলে তম্বি করছেন যে, সাত দিনের মধ্যে অবরোধ শেষ হয়ে যাবে। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সেই সাত দিন ২৭ দিনে গড়িয়েছে। অচল অবস্থা শেষ তো হয়ইনি, বরং আরো জোরদার ও বেগবান হয়েছে। সরকার দেখছে, অবরোধের মাত্রা দেখে নতুন নতুন এলাকায় তা বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে সরকার টিভি চ্যানেলগুলোকে ডেকে বলল, তারা যেন নিজ নিজ চ্যানেলে শুধু এটাই প্রচার করে যে, দেশে অবরোধ-টবরোধ কিছু হচ্ছে না। সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় চলছে।
কিন্তু টিভি চ্যানেলে দেখাক বা না দেখাক, সত্য ধামাচাপা পড়ে থাকেনি। অবরোধ জোরালো থেকে আরো জোরালো হয়েছে। তখন সরকার এক ভিন্ন কৌশল নিতে শুরু করল। ২০ দলীয় জোটের প্রতি মানুষের সহানুভূতি ও বেগবান আন্দোলন থেকে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য সরকারের এজেন্টরা যানবাহনে পেট্রলবোমা ছুড়ে জানমালের ক্ষতি করতে শুরু করল। সরকারের ময়নাপাখি আলোচকেরা বার্ন ইউনিট, বার্ন ইউনিট বলে সরকারের ধুয়াকে আরো সরব করে তোলার চেষ্টা করল। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করল না যে, এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ২০ দলীয় জোটের লোকেরা করেছে। কারণ আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো বীভৎসতা কেউ সমর্থন করে না। এজন্য যদি ২০ দলীয় জোট দায়ী হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি বিরূপ ধারণাই পোষণ করবে।
পাঠক লক্ষ করে থাকবেন, প্রথম দিকে যে দু-একটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়, তাতে অগ্নিসংযোগকারীরা যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আগুন দিয়েছেন। কিংবা বলেছেন, ভাই আপনারা তাড়াতাড়ি নামেন। বাসে আগুন দেবো। এতে সাধারণ মানুষ হেসেছে। যদিও তাতেও সম্পদের অপচয় হয়েছে। সরকারের পেট্রলবোমা কৌশল ব্যর্থ হওয়ার পর এরা এখন একেবারে ১৯৭১ সালের পাকিস্তান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার বলেছে, পাড়ায় পাড়ায় শান্তি কমিটির মতো সন্ত্রাস নির্মূল কমিটি গঠন করবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ প্রভৃতি লীগের সদস্যরা। এরা পাড়া মহল্লার সম্ভাব্য ‘বোমাবাজ’দের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হতে ধরিয়ে দেবে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশ হলো, এরা এসব সম্ভাব্য বোমাবাজকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করতে পারবে।
১৯৭১ সালেও ঠিক তাই ঘটেছিল। এরকম শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিত বা ধরিয়ে দিত। আর পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে তাদের হত্যা করত। কিন্তু ১৯৭১-এর যুদ্ধে এত কিছুর পরও সাধারণ মানুষেরই জয় হয়েছিল। অতবড় শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে জনগণের কাছে পরাজয় বরণ করে নিতে হয়েছিল। ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত উৎপীড়িতেরই জয় হয়। এ দেশের মানুষেরও বর্তমান গণতন্ত্রের লড়াইয়ে বিজয় সুনিশ্চিত।
এদিকে আন্তর্জাতিক কোনো অনুরোধ বিবেচনাকে সরকার সামান্যও মূল্য দেয়নি। ভারত ছাড়া গোটা পশ্চিমা বিশ্ব ২০১৪ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে যে, অতি দ্রুত সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের আয়োজন করুক সরকার। এতে তো সরকার কোনো কান দেয়ইনি, বরং এসব রাষ্ট্র ও তাদের কূটনীতিকদের শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষায় গালিগালাজ করে দম্ভ করেছে। গত ২৯ জানুয়ারি ব্রিটেনের হাউজ অব কমন্সে আবারো বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে তারা গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। সঙ্কট নিরসনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প বলে তারা মত দিয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, হত্যা, গুম ও নির্বিচারে গ্রেফতারসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মারাত্মক আইন লঙ্ঘনের বিচার করতে বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা অপহরণ, হত্যা ও খেয়ালখুশিমতো আটক করছে। বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে। মুক্ত মত প্রকাশে অগ্রহণযোগ্য সীমারেখা আরোপ করেছে। সমালোচনা করায় ২০১৩ সালে কয়েকটি টেলিভিশন ও সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকারের স্বার্থ রক্ষিত হওয়ায় সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়মুক্তি দিয়ে রেখেছে। আর তাদের মারাত্মক ঘটনাগুলোর বেলায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
জাতিসঙ্ঘ বলেছে, বিরোধী দলের কোনো শীর্ষ নেতাকে খেয়ালখুশিমতো গ্রেফতার করতে পারে না আইন প্রয়োগকারীরা। এ বিষয়টি সরকারকে খেয়াল করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশী সেনা মোতায়েনের বিষয়টি মানদণ্ড যাচাইয়ের নীতির অধীনে রাখা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আমরা দেখেছি এবং দেখছি যে বাংলাদেশ পরিস্থিতি হতাশ হওয়ার মতো। এরকম বিশ্লেষণের যে সুদূরপ্রসারী মূল্য আছে সেটা সাম্প্রতিক ভারতের দিকে তাকালেও হয়তো সরকার বুঝতে পারবে।
এখানে আরো একটি কথা বলে রাখা ভালো, প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার ওপেন জেনারেল লাইসেন্স দিয়ে দিলেন, যা কার্যত চলছিল অনেক দিন ধরেই। এখনো চলছে। সেটি যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় এবং অব্যাহতভাবে চলতেই থাকে, তাহলে আত্মরক্ষার্থেই মানুষ সংঘাত সংঘর্ষের পথ অবলম্বনে বাধ্য হবে। তাতেও শেষ পর্যন্ত স্বৈরশাসকদের কোনো লাভ হবে না। সে ক্ষেত্রেও বেদনাদায়ক পরাজয়ই তাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়াবে।
সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
No comments