পোশাক কারখানায় দেড় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ, মারা গেছেন দুজন
(হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ শ্রমিকদের কয়েকজন। ছবি: অরূপ রায়, সাভার) সাভারের
একটি পোশাক তৈরির কারখানায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দেড় শতাধিক
শ্রমিক অসুস্থ হয়েছেন। রিয়াজ (২০) ও দিদার হোসেন (২২) নামে দুই শ্রমিক
মারা গেছেন। তাঁদের পায় সবারই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ ছিল বুক আর মাথা
ব্যথা। তবে অসুস্থতার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঢাকার সাভারের
রাজফুলবাড়িয়া এলাকার একেএইচ নিটিং অ্যান্ড ডাইং নামের কারখানাতে এ ঘটনা
ঘটে। কারখানাটির চারটি ভবনে অন্তত ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সাভার মডেল
থানার পুলিশ ও কারখানা সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতের পালার কাজ শুরু
হওয়ার পরপরই পাঁচ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর আজ রোববার সকাল সাড়ে
আটটার দিকে এসব ভবনের দেড় শতাধিক শ্রমিক পর্যায়ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
চিকিৎসার জন্য দ্রুত তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এঁদের
মধ্যে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৬ জন এবং রাজফুলবাড়িয়ার
আফনান হাসপাতালে ১৬ জনকে ভর্তি করা হয়। বাকিরা নিজ উদ্যোগে অন্যান্য
হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কারখানার চিকিৎসক আমিনা বেগম জানান, এর আগে কর্মরত
অবস্থায় গত ২৫ জানুয়ারি সকাল নয়টার দিকে রিয়াজ নামে একজন সুইং অপারেটর
বুকে ব্যথা নিয়ে কারখানার চিকিৎসাকেন্দ্রে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসায় কাজ
না হওয়ায় তাঁকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে হাসপাতালে
নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান। এর দুই দিন পর ২৮ জানুয়ারি সকালে নমুনা
বিভাগের শ্রমিক দিদার হোসেন একই রকম সমস্যা নিয়ে কারখানার চিকিৎসাকেন্দ্রে
এলে তাঁকেও দ্রুত এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান। এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন
শ্রমিক মিঠুন হোসেন বলেন, কর্মরত অবস্থায় গত শনিবার রাত আটটার দিকে তিনি
বুক ও মাথায় ব্যথা অনুভব করে অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়। প্রায় একই রকম সমস্যার কথা জানালেন, শ্রমিক বশির উদ্দিন,
মেহেদি হাসান, ইতি আক্তার ও মঞ্জুয়ারা বেগম। কর্মরত অবস্থায় তাঁরা বুকে
চাপ অনুভব করেন। এর পরপরই শুরু হয় বুক ও মাথা ব্যথা। এর পরের কথা তাঁরা আর
বলতে পারেননি। কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক রাশেদ খান
বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগে যে দুই শ্রমিক মারা গেছেন, তাঁরা হৃদ্রোগে
আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে এবার যাঁরা অসুস্থ হন তাঁরা হৃদ্রোগে আক্রান্ত
হয়েছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগের ঘটনায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়েও
তাঁরা অসুস্থ হয়ে থাকতে পারেন।’ কারখানার পরিচালক এস এম সাদুল্লা বলেন,
‘অসুস্থ হওয়ার আগে শ্রমিকদের কোনো খাবার সরবরাহ করা হয়নি, যা খেয়ে তাঁরা
অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই একসঙ্গে এত শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার কারণ
আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।’ এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক ও মাদকাসক্ত
রোগ বিভাগের অধ্যাপক দেওয়ান এ কে এম আবদুর রহিম বলেন, রোগের লক্ষণ আর
অসুস্থতার ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটা মানসিক সমস্যা। একজনকে অসুস্থ হতে দেখে
অন্যরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। জানতে চাইলে সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি কারখানা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। নির্দেশনা পেলে অসুস্থ হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখা
হবে।’
No comments