বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কি যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে না? by অনুরূপ আইচ
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার করবে বলে ওয়াদা করেছিল। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার দেরিতে
হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে। এ প্রক্রিয়ার নাম দেয়া হয়েছে,
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। এ জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। এখানে
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকারদের বিচার চলছে এখনও। বেশ কয়েকজন
চিহ্নিত রাজাকারের শাস্তি হয়েছে এরই মধ্যে। আরও অনেকের বিচার প্রক্রিয়াধীন
রয়েছে। বর্তমান সরকার কথা দিয়েছে, তাদের এ শাসনামলে বিচার প্রক্রিয়া শেষ
হবে। অপরাধীদের রায় কার্যকর করা হবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ
পর্যায়ে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, যুদ্ধাপরাধীদের রায় কি এক মাসে
কার্যকর হবে? নাকি ঝুলে থাকবে? যে কারণে অনেক প্রশ্ন উঁকি মারছে জনগণের
মাঝে। যদি বর্তমান সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হয় কিংবা পরবর্তী
নির্বাচনে যদি বিএনপি জয়লাভ করে তবে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া
বন্ধ হয়ে যাবে? এমন প্রশ্ন দেখা দেয়ার অনেক কারণ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের
বিচারের ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা স্পষ্ট নয়। এখনও তারা যুদ্ধাপরাধীদের
সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে জোটবদ্ধ। হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করলেও
বিএনপি বাদ দেয়নি জামায়াতকে। বাদ দেয়া প্রসঙ্গও তুলছে না। শাহবাগে যখন তরুণ
প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিল, তখনও প্রথম দিকে
বিএনপি ছিল নিশ্চুপ। পরে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের সঙ্গে তাল
মিলিয়েছে। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের নাস্তিক বলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের মদদদাতা
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আঁতাত করেছিল বিএনপি। এখনও পর্যন্ত এটাই স্পষ্ট যে,
বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের দল। যদিওবা তারা দাবি করে তারা স্বাধীনতার
পক্ষের শক্তি। এ কথা শুধু মুখের কথাই রয়ে গেছে। তারা একদিকে শহীদ
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক দাবি করে, অন্যদিকে তারা
স্বঘোষিত স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিল। শুধু তাই নয়, যে জামায়াত
কিংবা হেফাজতিরা বলে থাকে, ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম, নারীদের পড়ালেখা
কিংবা কাজ করার অধিকার নেই, অথবা নারীদের বোরখা পরা বাধ্যতামূলক, সেই
জামায়াত কিংবা হেফাজতে ইসলাম বোরখাহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার পতাকা তলে সমবেত
হতেও দ্বিধা করেনি। এটা কোন ধরনের ভণ্ডামি? ইসলামের দোহাই দিয়ে যারা যেসব
বিষয়কে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে, সেসব নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি কেন ঝুঁকছে
হেফাজতিরা! তারা এরই মধ্যে বিএনপির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, আগামী
নির্বাচনে তারা ৫০টি আসন চায় বিএনপির কাছে। বিএনপি হয়তো এ প্রস্তাবে সাড়া
দিতে পারে। কারণ তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে অনেক কিছু করতে পারে তার
উদাহরণ আছে। এছাড়া চার সিটি কর্পোরেশনে তাদের সমর্থিত প্রার্থী জেতার পর
ভেবেছে, হেফাজতিদের সমর্থনের কারণে জিতেছে। এবার বুঝুন- বিএনপির মনোবল এতই
ভঙ্গুর যে, তারা নিজেদের ওপর আস্থা না রেখে পরগাছা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছে।
অথচ বিশাল জনগোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে এ দলের। তবুও যে কেন তারা অবলম্বন খুঁজে
বেড়ান তা প্রশ্নবিদ্ধ।
জামায়াত-হেফাজতিদের অবলম্বন করে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসেও তবে কি তারা নিজেদের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন করবে? নাকি জামায়াত হেফাজতিদের স্বপ্ন পূরণ করবে? তবে কি তারা নারীদের পড়ালেখা, কাজকর্ম সব নিষিদ্ধ করে দেবেন? নাকি বিএনপির নেত্রীরা সবাই বোরখা পরা শুরু করবেন? তখন তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার কী হবে? এ প্রশ্ন এখন জনগণের। বিএনপি হয়তো ভুলে যাচ্ছে, চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন মানে জাতীয় নির্বাচন নয়। যে চার সিটিতে বিএনপি সমর্থক মেয়র জয়লাভ করেছে সেই চার সিটি বিএনপির ঘাঁটি বলেই পরিচিত ছিল এক সময়। বিএনপির নেতারা যোগ্যতাবলে তাদের ঘাঁটিতে জয়লাভ করেছে। এটা না ভেবে বিএনপি হয়তো ভাবছে, তারা জামায়াত-হেফাজাতদের কল্যাণে জিতেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমার মতো অনেকেরই ধারণা, বিএনপি যদি জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দেয়, তবে আগামী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। যদি বিএনপি হেফাজতিদের প্রশ্রয় না দেয় তবে আসন সংখ্যা বাড়বে বিএনপির। ভোটের আগে যদি বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয় তবে তাদের জনসমর্থন বাড়বে। বিএনপি যদি পরে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের সঠিক বিচার করে তবে তাদের ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা বাড়বে।
ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যদ্ধাপরাধীদের সমর্থনের প্রয়োজন নেই বিএনপির। বিএনপি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজনৈতিক দল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ৯১-এর নির্বাচনে খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল একক জনপ্রিয়তা নিয়ে। সেই জনপ্রিয়তায় ধস নামেনি। বরং যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে জোট বাঁধার কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। এটা বিএনপি বোঝে কিনা জানি না। তবে বিএনপির বোঝা উচিত, সারাবিশ্ব এখন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। এমতাবস্থায় যারাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে নাটকীয় ভূমিকায় থাকবে, তারাই জনসমর্থন হারাবে।
অনুরূপ আইচ : লেখক ও সাংবাদিক
জামায়াত-হেফাজতিদের অবলম্বন করে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসেও তবে কি তারা নিজেদের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন করবে? নাকি জামায়াত হেফাজতিদের স্বপ্ন পূরণ করবে? তবে কি তারা নারীদের পড়ালেখা, কাজকর্ম সব নিষিদ্ধ করে দেবেন? নাকি বিএনপির নেত্রীরা সবাই বোরখা পরা শুরু করবেন? তখন তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার কী হবে? এ প্রশ্ন এখন জনগণের। বিএনপি হয়তো ভুলে যাচ্ছে, চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন মানে জাতীয় নির্বাচন নয়। যে চার সিটিতে বিএনপি সমর্থক মেয়র জয়লাভ করেছে সেই চার সিটি বিএনপির ঘাঁটি বলেই পরিচিত ছিল এক সময়। বিএনপির নেতারা যোগ্যতাবলে তাদের ঘাঁটিতে জয়লাভ করেছে। এটা না ভেবে বিএনপি হয়তো ভাবছে, তারা জামায়াত-হেফাজাতদের কল্যাণে জিতেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমার মতো অনেকেরই ধারণা, বিএনপি যদি জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দেয়, তবে আগামী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। যদি বিএনপি হেফাজতিদের প্রশ্রয় না দেয় তবে আসন সংখ্যা বাড়বে বিএনপির। ভোটের আগে যদি বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয় তবে তাদের জনসমর্থন বাড়বে। বিএনপি যদি পরে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের সঠিক বিচার করে তবে তাদের ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা বাড়বে।
ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যদ্ধাপরাধীদের সমর্থনের প্রয়োজন নেই বিএনপির। বিএনপি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজনৈতিক দল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ৯১-এর নির্বাচনে খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল একক জনপ্রিয়তা নিয়ে। সেই জনপ্রিয়তায় ধস নামেনি। বরং যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে জোট বাঁধার কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। এটা বিএনপি বোঝে কিনা জানি না। তবে বিএনপির বোঝা উচিত, সারাবিশ্ব এখন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। এমতাবস্থায় যারাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে নাটকীয় ভূমিকায় থাকবে, তারাই জনসমর্থন হারাবে।
অনুরূপ আইচ : লেখক ও সাংবাদিক
No comments