দাফনের আগে নড়ে উঠলো শিশুটি
‘মৃত’ নবজাতককে গোসল করিয়ে মাখানো হয় আতর। সাদা কাফন পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কবরস্থানে। অপেক্ষা শুধু জানাজার। সময় তখন বেলা সাড়ে ১১টা। স্থান রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থান। সেই নবজাতকের লাশ পাশে রেখে তার পিতা জাহাঙ্গীর হোসেন মনোযোগী ছিলেন অন্য দিকে। আর মামা মাসুদ ও ইজাজ খান ব্যস্ত জানাজার নামাজ আয়োজনে। গরিব পরিবার ও ঢাকায় আত্মীয়স্বজন বেশি না থাকায় ৩-৪ জন মিলে দাফনের কাজ সেরে নিচ্ছিলেন তারা। কিছুক্ষণ পরেই দাফন করা হবে মাত্র এক দিন বয়সী নবজাতককে। কিন্তু তা আর হলো না। এসময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিল স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তাদের চোখ যায় ওই লাশের কফিনে। তারা অবাক হয়ে আবিষ্কার করে লাশটি নড়াচড়া করছে। সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে আসে সবাই। অভিভাবকদের ডাকা হয়। মুখের ওপর থেকে কাফনের কাপড় সরিয়ে দেখা যায় প্রাণ আছে শিশুটির। সঙ্গে সঙ্গে তাকে আবার নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউতে। সেই থেকে সৌভাগ্যবান এ নবজাতককে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে ভ্যান্টিলেটর দিয়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল। আগের দিন রাত সাড়ে ১২টায় তার জন্ম। সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন ঢামেকের চিকিৎসকরা। কিন্তু তাদের সেই ঘোষণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে এখনও বেঁচে আছে নবজাতকটি। এদিকে এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন মৃত্যু সনদ প্রদানকারী চিকিৎসক ডা. জিল্লুর রহমান। হাপসাপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, যেভাবে মৃত্যু সনদ দেয়া হয়েছে সেটি সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। চিকিৎসক ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। প্রকৃত ঘটনা ও এর সঙ্গে কারা জড়িত তা বের করতে সার্জারির প্রফেসর ডা. জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিবেদনের আলোকে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, মায়ের গর্ভে মাত্র ৬ মাস বয়সেই তার জন্ম হয়। অপরিণত বয়সে জন্মের কারণে তার অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
এর কিছুদিন আগেও ঢাকা মেডিক্যালে এরকম আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। অজ্ঞাতনামা এক মহিলাকে মৃত ঘোষণা করে ময়না তদন্ত শুরুর সামান্য আগে তিনি নড়ে উঠেন। তাকে আবার চিকৎসা দেয়া হয়। তবে বেশি দিন তিনি বাঁচেননি।
নবজাতকের স্বজনরা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢামেকের ২১২ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে সুলতানা বেগমকে ভর্তি করা হয়। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী (৩০)। ভর্তির এক ঘণ্টা পরে তিনি অপরিণত বয়েসের একটি পুত্র শিশুর জন্ম দেন। নবজাতকের স্বাভাবিক ওজন ৩ কেজি থাকার কথা থাকলেও এসময় তার ওজন ছিল মাত্র ১২০০ গ্রাম। কিছু সময় পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরমর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তা না করে তারা শিশুটিকে তার মায়ের কাছে রেখে দেন। ফলে ধীরে ধীরে তার হার্ট, ফুসফুস কার্যকারিতা হারাতে থাকে। সকালে ঘুম থেকে জেগে তার নানী হনুফা বেগম টের পান সে আর নড়াচড়া করছে না। মৃত ভেবে বিষয়টি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জানালে তারা পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করেই মৃত্যু সনদ দেন। শিশুর মামা মাসুদ জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। দাফনের আগে প্রত্যক্ষদর্শী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কলেজের আল আমিন নামের শিক্ষার্থী আমাদের ডেকে বলেন বাচ্চা নড়াচড়া করছে। সে মনে হয় মরেনি। কাফন খুলে দেখেন। তখন কাছে ছিলেন ইজাজ খান। তিনি কাফন খুলে দেখেন শিশুটি এখনও বেঁচে আছে। পিতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চিকিৎসকরা তাকে ভালো করে পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানালে আমার শিশুটিকে জিন্দা দাফনের জন্য নিয়ে যেতাম না। তিনি এর জন্য চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্য উভয়ের ভুল বলে মন্তব্য করেন।
ঢামেকের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. ফেরদৌসি ইসলাম বলেন, তার জন্ম হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের অন্তত ৩ মাস আগে। এসময় হার্ট, ফুসফুস, লাঞ্চসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব অংশই অপূর্ণ থাকে। ফলে অপরিণত সময়ে জন্মে যাওয়া শিশুকে বাঁচানো অনেক সময় সম্ভব হয় না। তার বেলায়ও তাই হয়েছে। তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভ্যান্টিলেটর ছিল অপরিহার্য। কিন্তু এখানে সিট খালি না থাকায় জরুরি ভিত্তিতে অন্য শিশু হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু তা না করে অভিভাবকরা তাকে সঙ্গেই রেখে দিয়েছিলেন। এজন্য একটি সময়ে এসে তার শরীরের প্রত্যঙ্গগুলো স্বাভাবিক কাজ করছিল না। নবজাতক বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আবেদ নুরুল হক বলেন, তার জন্মই হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। তবে আমাদের সাধ্য না থাকায় বলা হয়েছিল অন্যত্র নিয়ে যেতে। পরে মৃত্যুর খবর শুনে চিকিৎসকরা স্বাভাবিকভাবেই হয়তো ধরে নিয়েছিলেন সে মারা গেছে। কিন্তু এটা আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল। শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. এখলাসুর রহমান বলেন, এসময় নবজাতকের শরীর ঠা-া ছিল। নবজাতককে ফিরিয়ে আনার পর তার শরীর দ্রুত গরম করার ব্যবস্থা করা হয়। সকালে একটি সিট খালি হলে পরে তাকে ওই সিটে রেখে ভ্যান্টিলেটর দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হচ্ছে। যতদিন সে পূর্ণ শরীরে আসছে না ততদিন তাকে সেবা দেয়া হবে।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল। আগের দিন রাত সাড়ে ১২টায় তার জন্ম। সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন ঢামেকের চিকিৎসকরা। কিন্তু তাদের সেই ঘোষণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে এখনও বেঁচে আছে নবজাতকটি। এদিকে এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন মৃত্যু সনদ প্রদানকারী চিকিৎসক ডা. জিল্লুর রহমান। হাপসাপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, যেভাবে মৃত্যু সনদ দেয়া হয়েছে সেটি সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। চিকিৎসক ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। প্রকৃত ঘটনা ও এর সঙ্গে কারা জড়িত তা বের করতে সার্জারির প্রফেসর ডা. জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিবেদনের আলোকে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, মায়ের গর্ভে মাত্র ৬ মাস বয়সেই তার জন্ম হয়। অপরিণত বয়সে জন্মের কারণে তার অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
এর কিছুদিন আগেও ঢাকা মেডিক্যালে এরকম আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। অজ্ঞাতনামা এক মহিলাকে মৃত ঘোষণা করে ময়না তদন্ত শুরুর সামান্য আগে তিনি নড়ে উঠেন। তাকে আবার চিকৎসা দেয়া হয়। তবে বেশি দিন তিনি বাঁচেননি।
নবজাতকের স্বজনরা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢামেকের ২১২ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে সুলতানা বেগমকে ভর্তি করা হয়। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী (৩০)। ভর্তির এক ঘণ্টা পরে তিনি অপরিণত বয়েসের একটি পুত্র শিশুর জন্ম দেন। নবজাতকের স্বাভাবিক ওজন ৩ কেজি থাকার কথা থাকলেও এসময় তার ওজন ছিল মাত্র ১২০০ গ্রাম। কিছু সময় পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরমর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তা না করে তারা শিশুটিকে তার মায়ের কাছে রেখে দেন। ফলে ধীরে ধীরে তার হার্ট, ফুসফুস কার্যকারিতা হারাতে থাকে। সকালে ঘুম থেকে জেগে তার নানী হনুফা বেগম টের পান সে আর নড়াচড়া করছে না। মৃত ভেবে বিষয়টি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জানালে তারা পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করেই মৃত্যু সনদ দেন। শিশুর মামা মাসুদ জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। দাফনের আগে প্রত্যক্ষদর্শী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কলেজের আল আমিন নামের শিক্ষার্থী আমাদের ডেকে বলেন বাচ্চা নড়াচড়া করছে। সে মনে হয় মরেনি। কাফন খুলে দেখেন। তখন কাছে ছিলেন ইজাজ খান। তিনি কাফন খুলে দেখেন শিশুটি এখনও বেঁচে আছে। পিতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চিকিৎসকরা তাকে ভালো করে পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানালে আমার শিশুটিকে জিন্দা দাফনের জন্য নিয়ে যেতাম না। তিনি এর জন্য চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্য উভয়ের ভুল বলে মন্তব্য করেন।
ঢামেকের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. ফেরদৌসি ইসলাম বলেন, তার জন্ম হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের অন্তত ৩ মাস আগে। এসময় হার্ট, ফুসফুস, লাঞ্চসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব অংশই অপূর্ণ থাকে। ফলে অপরিণত সময়ে জন্মে যাওয়া শিশুকে বাঁচানো অনেক সময় সম্ভব হয় না। তার বেলায়ও তাই হয়েছে। তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভ্যান্টিলেটর ছিল অপরিহার্য। কিন্তু এখানে সিট খালি না থাকায় জরুরি ভিত্তিতে অন্য শিশু হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু তা না করে অভিভাবকরা তাকে সঙ্গেই রেখে দিয়েছিলেন। এজন্য একটি সময়ে এসে তার শরীরের প্রত্যঙ্গগুলো স্বাভাবিক কাজ করছিল না। নবজাতক বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আবেদ নুরুল হক বলেন, তার জন্মই হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। তবে আমাদের সাধ্য না থাকায় বলা হয়েছিল অন্যত্র নিয়ে যেতে। পরে মৃত্যুর খবর শুনে চিকিৎসকরা স্বাভাবিকভাবেই হয়তো ধরে নিয়েছিলেন সে মারা গেছে। কিন্তু এটা আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল। শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. এখলাসুর রহমান বলেন, এসময় নবজাতকের শরীর ঠা-া ছিল। নবজাতককে ফিরিয়ে আনার পর তার শরীর দ্রুত গরম করার ব্যবস্থা করা হয়। সকালে একটি সিট খালি হলে পরে তাকে ওই সিটে রেখে ভ্যান্টিলেটর দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হচ্ছে। যতদিন সে পূর্ণ শরীরে আসছে না ততদিন তাকে সেবা দেয়া হবে।
No comments