নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন- ময়লা অপসারণ বন্ধ, দুর্ভোগ
(নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় ময়লা পরিষ্কার না করায় দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো) পাঁচ
দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ বন্ধ। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে প্রধান
সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে জমা হয়েছে ময়লার স্তূপ। তা থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট
দুর্গন্ধ। একদিকে আবর্জনা, অন্যদিকে ময়লা নিয়ে রাজনীতিতে অতিষ্ঠ
নারায়ণগঞ্জবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে ময়লা
ফেলার কারণে গত ২৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে দুই লাখ টাকা
জরিমানা করে। এরপর ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন ময়লা অপসারণ বন্ধ
রাখে। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পুনরায় ওই
স্থানে ময়লা ফেলতে গেলে তাঁদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। তখন তাঁরা
আবার ময়লা অপসারণ বন্ধ করে দেন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ফতুল্লার
লামাপাড়ায় সিটি করপোরেশনকে ময়লা ফেলতে বাধা দেওয়া হলেও সেখানে সদর
উপজেলার তিনটি ঘনবসতিপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ এবং বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য
ফেলা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, লিংক রোডের
পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর দুই পাশ,
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কের কাশীপুরের ভোলাইল, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ
পুরোনো সড়কের ঢাকার অংশের শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায়ও রাস্তার পাশে সওজের
খালি জায়গায় ময়লা ফেলা হচ্ছে। শুধু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে ফেলতে
দেওয়া হচ্ছে না। অপসারণ না করায় অনেকটা ময়লার নগরে পরিণত হয়েছে
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। গতকাল দেখা গেছে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা
সংগ্রহ করে যেখানে স্তূপ করে রাখেন, সেখানে ময়লার স্তূপ জমেছে। খানপুরে
৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল, মণ্ডলপাড়ায় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, প্রধান কাঁচাবাজারগুলো, জেলা ও পুলিশ
প্রশাসনের কার্যালয়সহ পাড়া-মহল্লায় বন্ধ রয়েছে ময়লা অপসারণ।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, মেয়র ছুটি
নিয়ে নিউজিল্যান্ড যাওয়ার পর গডফাডার এক সাংসদ মেয়রকে বিব্রতকর অবস্থায়
ফেলতে নেপথ্যে থেকে ময়লা নিয়ে নোংরামি করছেন। ওই সাংসদ সিটি করপোরেশনকে
বর্জ্য অপসারণের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে নগরকে দুর্গন্ধের নগর হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। প্রশাসনও সিটি করপোরেশনের
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সেদিনই সিটি করপোরেশনের
কর আদায়কারী মাজহারউদ্দিন খন্দকার ফতুল্লা থানায় অভিযোগ জমা দেন। কিন্তু
তা দুই দিনেও এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি। এ ব্যাপারে থানার ওসি
আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের
দাবি, ঘটনাস্থলের আশপাশে পুলিশের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে
হামলাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র
মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, সংকট সমাধানে তাঁরা আন্তরিক চেষ্টা করছেন।
নাগরিকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী
পরিকল্পিতভাবে সিটি করপোরেশনকে বর্জ্য অপসারণে প্রশাসনিকভাবে ও সন্ত্রাসী
বাহিনী দিয়ে হামলা করে বাধা দিচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র জানান, প্রতিদিন
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হতো। মাতুয়াইলে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ময়লা ফেলার জন্য আবেদন করা
হয়েছে। কিন্তু তারা টনপ্রতি ২৩৫ টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন ১০০ টন বর্জ্য
অপসারণের অনুমতি দিয়েছে। এতে খরচ পড়বে দিনে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা। তা ছাড়া
জ্বালানি খরচ লাগবে দ্বিগুণ। বিষয়টি ব্যয়বহুল বলে তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত
নেননি। ওবায়দুল্লাহ বলেন, সিটি করপোরেশনের নিজস্ব চারটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড
নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এই মুহূর্তে ফতুল্লার লামাপাড়া ছাড়া
অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও তাঁদের হাতে নেই। লামাপাড়ায় অন্যরা বর্জ্য
ফেললেও কেবল সিটি করপোরেশনকে বাধা দেওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক আনিছুর
রহমান মিঞা বলেন, বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
No comments