রাজনীতিকদের দায়িত্বশীলতা চাই by মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
রাজনীতিকদের
বচন সুন্দর ও শ্রুতিমধুর দূরে থাকুক_ বর্তমানে আমাদের দেশের দুই প্রধান
রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে ভাষায় ভাব বিনিময় হচ্ছে, তা দেশের রাজনীতিকে কলুষিত
করা ছাড়া ভালো কিছু উপহার দেবে না। রাজনীতিকদের এসব ভাষার মাধ্যমে
পরস্পরের মধ্যে কতটা তিক্ততা, বিরোধ ও আক্রোশ রয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যায়।
ফলে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট যে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা
রাখে না। অথচ দেশের এই দুর্দিনে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে, পরস্পরের আলোচনার
কথা বলা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তা কতটা সম্ভব? এর মাধ্যমে যেমন দেশের সংকটের
সমাধানের আশা সুদূরপরাহত, তেমনি এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাজনীতিকদের
অনুসারীরা এ থেকে সুন্দর কিছু অর্জন করতে পারবে না। প্রতিপক্ষকে বাক্যবাণে
বিদ্ধ করবেন যুক্তি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীর
আলোকদিশারিরা যুক্তি ও বিতর্কের মাধ্যমে অপরকে ঘায়েল করেছেন; আর সেই ধারা
থেকেই বিতর্ক, যুক্তি ও সমালোচনা শাস্ত্রের যাত্রা। জ্ঞান, প্রজ্ঞা দ্বারা
অপরকে সমালোচনা করা দোষের কিছু নয় বরং তা শিক্ষণীয়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয়
এখনও এ ধারা অব্যাহত আছে। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সেসব দেশে
গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এ মতপ্রকাশের দিকটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তার বড়
প্রমাণ মার্কিন রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আব্রাহাম নোয়াম
চমস্কির প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ। এতে করে নোয়াম চমস্কি কেবল বিশব্যাপী
প্রশংসিতই হননি, তিনি একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির
ভুল পদক্ষেপগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে
ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীদের বাক্যবাণে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত
হয়ে উঠেছিল। কয়েকজন মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী এসব বচন জনসমক্ষে না বলার জন্য
বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। এমনকি বেফাঁস কথাবার্তা বলার জন্য মন্ত্রিত্ব
হারিয়ে জেলে অবরুদ্ধ রয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। আসলে এ থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া
নিজ দলের ও জাতির উত্তরণের কোনো পথ নেই। পরস্পরের ঘৃণা, জিঘাংসা সমাধানের
পথ নয়। তাছাড়া বেফাঁস মন্তব্যে নিজের সম্মানই ধূলিসাৎ হয়। নেতারা এ রকম
মন্তব্য করলে কর্মীবাহিনী শিখবে কী। অথচ কর্মীবাহিনী নিজ দলের উচ্চাসীন
নেতাদের তারা গুরুর মতো ভক্তি ও শ্রদ্ধা করে থাকেন, গুরুদের দেওয়া বচন বাণী
তারা ভবিষ্যৎ জীবনের পাথেয় ভাবেন। এসব দিক বিবেচনা করে শ্রদ্ধেয়
নেতাকর্মীদের বচন ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। তারা যদি বিষয়টি না ভাবেন
তাহলে দেশের রাজনীতিতে যে কালো গ্গ্নানি বিরাজ করছে তার থাবা আরও মারাত্মক
আকার ধারণ করবে।
সহকারী অধ্যাপক, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সহকারী অধ্যাপক, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments