১৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন খালেদা
(বিদ্যুৎ-সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করার পর অন্ধকারাচ্ছন্ন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার
গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়। শুক্রবার রাত পৌনে তিনটার দিকে তোলা ছবি l
সংগৃহীত) নৌপরিবহনমন্ত্রীর
ঘোষণার ১০ ঘণ্টার মাথায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের
কার্যালয়ের বিদ্যুৎ-সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। ১৯ ঘণ্টা অন্ধকারে রেখে রাত
১০টার দিকে আবার সংযোগ চালু করা হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটায়
বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার খুলে দেওয়া হলে কার্যালয়টি অন্ধকারে ডুবে যায়।
এরপর গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে কার্যালয়ের কেব্ল টিভি ও ব্রডব্যান্ড
ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর বিকেলে ওই এলাকার মোবাইল ফোন
নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশ্য রাতে তা আবার চালু হয়। বিএনপির
চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শাইরুল কবির বলেন, রাতে বিদ্যুৎ-সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করার সময় এর কারণ জানতে চাইলে ডেসকোর লাইনম্যান বলেন, তিনি কিছু
জানেন না। থানার নির্দেশে লাইন কাটতে এসেছেন।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে গুলশান থানার পুলিশ বিষয়টি অবহিত নয় বলে দাবি করেছে। কিন্তু কেন, কী উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া হলো, আবার ১৯ ঘণ্টা পর চালু করা হলো, সরকারের পক্ষ থেকে তার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যোগাযোগ করা হলে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি। তবে বাগেরহাটে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বাসার বিদ্যুৎ সরকার বিচ্ছিন্ন করেনি। আমাদের শ্রমিক-কর্মচারীরাই এটি বন্ধ করে দিয়েছে।’
গতকাল রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া শাখার একজন সদস্য জানান, রাত ১০টার পর চার-পাঁচজনের একটি দল হঠাৎ এসে বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু করে দিয়ে দ্রুত কেটে পড়ে। গামছা দিয়ে এদের মুখ ঢাকা ছিল। শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার না করলে খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী। তিনি এও বলেন, ওই কার্যালয় এমনভাবে অবরুদ্ধ করা হবে, যাতে খালেদা জিয়া না খেয়ে মরে পড়ে থাকবেন।
এদিকে গতকাল খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় বিএনপির ১৩ জন নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশ। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ছয় নারী আইনজীবী কর্মী, সাড়ে সাতটায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য খালেদা ইয়াসমিন, সাড়ে আটটায় আরও ছয়জন নারী কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় আরও কিছু নারী কর্মী কার্যালয়ের পেছনের ফটক টপকে বের হয়ে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই কড়া নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যেই রাত সাড়ে নয়টায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ৫০-৬০ গজ দূরে পর পর দুটি ককটেল ফাটে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, জনসভায় ঘোষণা দিয়ে গভীর রাতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি দল ঘোষণা দিয়েছে, পানি, গ্যাস ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে এ রকম ঘৃণিত ও জঘন্য নজির কোথাও পাওয়া যাবে না।
বিবৃতিতে বিএনপির এই নেতা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা, সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আসুন, দেখুন। ভোটারবিহীন এই সরকারের বদৌলতে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে কত ঘৃণ্য জঙ্গলিতন্ত্র কার্যকর হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কাছে আহ্বান জানাই, আপনারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অনুধাবন করে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’
বিএনপির চেয়ারপারসন তাঁর কার্যালয়ের বিদ্যুৎ-সংযোগ কেটে দেওয়ার ঘটনাকে ‘নিকৃষ্ট নিষ্ঠুরতা’ বলে মন্তব্য করেন। গতকাল কার্যালয়ে থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তাঁর প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। খালেদা জিয়া এ ঘটনায় ‘স্তম্ভিত’ জানিয়ে তিনি বলেন, বিনা নোটিশে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়া মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে ডেসকো কোনো বক্তব্য দেয়নি। কোম্পানির একজন পরিচালক ও গুলশান অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোর কাছে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তাঁরা বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ডেসকোর সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি ‘ট্রাবল শুটিং গ্যাং’ (বিদ্যুৎ সরবরাহ সুষ্ঠু রাখার কাজে যারা ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকে) চাওয়া হয়। সে অনুযায়ী গুলশান অঞ্চলের একটি দলকে সেখানে যেতে বলা হয়। গভীর রাতে পুলিশ তাদের নিয়ে গিয়ে ওই বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ডেসকোর সিদ্ধান্তে এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি।
বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর থেকে জেনারেটরের মাধ্যমে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়। তবে কার্যালয়ের গ্যাস ও পানির সংযোগ চালু ছিল। বিদ্যুৎ, কেব্ল টিভি ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর বিকেল পর্যন্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কিংবা ২০-দলীয় জোটের কোনো নেতা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যাননি। বিকেলের দিকে মহিলা দলের কয়েকজন নেতা খাবার, মোমবাতি ও পানি নিয়ে ভেতরে যান। রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী। ফিরে এসে এমাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বিদ্যুৎ, মোবাইলসহ অন্যান্য সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া নিকৃষ্টতম পদক্ষেপ। তিনি বলেন, তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণের উদাহরণ কোথাও দেখা যাবে না। যারা এসব করছে, তাদের ‘গণতন্ত্রের প্রথম পাঠ’ নেওয়া উচিত। তাঁকে হত্যার কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। গত ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে রাজধানী ঢাকায় পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সাংঘর্ষিক অবস্থান নিলে ৩ জানুয়ারি রাতেই পুলিশ ইট-বালুর ট্রাক দিয়ে কার্যালয়ের সামনের রাস্তা আটকে খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ’ করে। পরে পুলিশ ও ইট-বালুর ট্রাক সরিয়ে নিয়ে ‘অবরোধমুক্ত’ করা হলেও তিনি আর কার্যালয় থেকে বের হননি। ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তিনি থাকছেন।
রাত আটটার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে রাতের খাবার ও কিছু বোতলজাত পানি নেওয়া হয়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ৫০টির মতো ফিল্টার পানির জার এবং দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বড় দুটি ড্রামে করে জ্বালানি তেল খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের উত্তর ফটক দিয়ে ভেতরে নেওয়া হয়। কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ আছে। সাদা পোশাকে ওই কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়।
কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই কার্যালয়ে আছেন সদ্য প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তাঁর দুই মেয়ে। এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আলম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানসহ খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের সদস্য ও কার্যালয়ের কর্মচারীরা রয়েছেন।
মারুফ কামাল বলেন, গত রাতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পর খালেদা জিয়া দুই নাতনিকে নিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। তিনি জানান, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে কার্যালয়ের ফ্যাক্স মেশিন অকার্যকর। মোবাইল সেটগুলো চার্জ দিতে না পেরে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ভেতরের সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন।
স্মারকলিপি: এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলাকালে অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করার দাবিতে গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে খালেদা জিয়াকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ২৫-৩০ জন অভিভাবক। প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কয়েকজন অভিভাবক গুলশানের কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। সাড়ে ১২টার দিকে কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করেন আইরিন পারভীন নামের একজন অভিভাবক। এ ব্যাপারে তাঁরা আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন বলে জানান।
লায়লা আফরোজ নামের আরেক অভিভাবক বলেন, তাঁর মেয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তিনি কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে এখানে আসেননি। বিকেল চারটার দিকে আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীর বাবা দাবি করে কার্যালয়ের ভেতর যেতে চান। তিনি ছেলের পরীক্ষার প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে গুলশান থানার পুলিশ বিষয়টি অবহিত নয় বলে দাবি করেছে। কিন্তু কেন, কী উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া হলো, আবার ১৯ ঘণ্টা পর চালু করা হলো, সরকারের পক্ষ থেকে তার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যোগাযোগ করা হলে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি। তবে বাগেরহাটে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বাসার বিদ্যুৎ সরকার বিচ্ছিন্ন করেনি। আমাদের শ্রমিক-কর্মচারীরাই এটি বন্ধ করে দিয়েছে।’
গতকাল রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া শাখার একজন সদস্য জানান, রাত ১০টার পর চার-পাঁচজনের একটি দল হঠাৎ এসে বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু করে দিয়ে দ্রুত কেটে পড়ে। গামছা দিয়ে এদের মুখ ঢাকা ছিল। শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার না করলে খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী। তিনি এও বলেন, ওই কার্যালয় এমনভাবে অবরুদ্ধ করা হবে, যাতে খালেদা জিয়া না খেয়ে মরে পড়ে থাকবেন।
এদিকে গতকাল খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় বিএনপির ১৩ জন নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশ। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ছয় নারী আইনজীবী কর্মী, সাড়ে সাতটায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য খালেদা ইয়াসমিন, সাড়ে আটটায় আরও ছয়জন নারী কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় আরও কিছু নারী কর্মী কার্যালয়ের পেছনের ফটক টপকে বের হয়ে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই কড়া নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যেই রাত সাড়ে নয়টায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ৫০-৬০ গজ দূরে পর পর দুটি ককটেল ফাটে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, জনসভায় ঘোষণা দিয়ে গভীর রাতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি দল ঘোষণা দিয়েছে, পানি, গ্যাস ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে এ রকম ঘৃণিত ও জঘন্য নজির কোথাও পাওয়া যাবে না।
বিবৃতিতে বিএনপির এই নেতা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা, সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আসুন, দেখুন। ভোটারবিহীন এই সরকারের বদৌলতে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে কত ঘৃণ্য জঙ্গলিতন্ত্র কার্যকর হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কাছে আহ্বান জানাই, আপনারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অনুধাবন করে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’
বিএনপির চেয়ারপারসন তাঁর কার্যালয়ের বিদ্যুৎ-সংযোগ কেটে দেওয়ার ঘটনাকে ‘নিকৃষ্ট নিষ্ঠুরতা’ বলে মন্তব্য করেন। গতকাল কার্যালয়ে থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তাঁর প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। খালেদা জিয়া এ ঘটনায় ‘স্তম্ভিত’ জানিয়ে তিনি বলেন, বিনা নোটিশে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়া মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে ডেসকো কোনো বক্তব্য দেয়নি। কোম্পানির একজন পরিচালক ও গুলশান অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোর কাছে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তাঁরা বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ডেসকোর সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি ‘ট্রাবল শুটিং গ্যাং’ (বিদ্যুৎ সরবরাহ সুষ্ঠু রাখার কাজে যারা ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকে) চাওয়া হয়। সে অনুযায়ী গুলশান অঞ্চলের একটি দলকে সেখানে যেতে বলা হয়। গভীর রাতে পুলিশ তাদের নিয়ে গিয়ে ওই বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ডেসকোর সিদ্ধান্তে এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি।
বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর থেকে জেনারেটরের মাধ্যমে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়। তবে কার্যালয়ের গ্যাস ও পানির সংযোগ চালু ছিল। বিদ্যুৎ, কেব্ল টিভি ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর বিকেল পর্যন্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কিংবা ২০-দলীয় জোটের কোনো নেতা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যাননি। বিকেলের দিকে মহিলা দলের কয়েকজন নেতা খাবার, মোমবাতি ও পানি নিয়ে ভেতরে যান। রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী। ফিরে এসে এমাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বিদ্যুৎ, মোবাইলসহ অন্যান্য সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া নিকৃষ্টতম পদক্ষেপ। তিনি বলেন, তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণের উদাহরণ কোথাও দেখা যাবে না। যারা এসব করছে, তাদের ‘গণতন্ত্রের প্রথম পাঠ’ নেওয়া উচিত। তাঁকে হত্যার কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। গত ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে রাজধানী ঢাকায় পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সাংঘর্ষিক অবস্থান নিলে ৩ জানুয়ারি রাতেই পুলিশ ইট-বালুর ট্রাক দিয়ে কার্যালয়ের সামনের রাস্তা আটকে খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ’ করে। পরে পুলিশ ও ইট-বালুর ট্রাক সরিয়ে নিয়ে ‘অবরোধমুক্ত’ করা হলেও তিনি আর কার্যালয় থেকে বের হননি। ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তিনি থাকছেন।
রাত আটটার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে রাতের খাবার ও কিছু বোতলজাত পানি নেওয়া হয়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ৫০টির মতো ফিল্টার পানির জার এবং দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বড় দুটি ড্রামে করে জ্বালানি তেল খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের উত্তর ফটক দিয়ে ভেতরে নেওয়া হয়। কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ আছে। সাদা পোশাকে ওই কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়।
কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই কার্যালয়ে আছেন সদ্য প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তাঁর দুই মেয়ে। এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আলম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানসহ খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের সদস্য ও কার্যালয়ের কর্মচারীরা রয়েছেন।
মারুফ কামাল বলেন, গত রাতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পর খালেদা জিয়া দুই নাতনিকে নিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। তিনি জানান, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে কার্যালয়ের ফ্যাক্স মেশিন অকার্যকর। মোবাইল সেটগুলো চার্জ দিতে না পেরে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ভেতরের সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন।
স্মারকলিপি: এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলাকালে অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করার দাবিতে গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে খালেদা জিয়াকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ২৫-৩০ জন অভিভাবক। প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কয়েকজন অভিভাবক গুলশানের কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। সাড়ে ১২টার দিকে কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করেন আইরিন পারভীন নামের একজন অভিভাবক। এ ব্যাপারে তাঁরা আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন বলে জানান।
লায়লা আফরোজ নামের আরেক অভিভাবক বলেন, তাঁর মেয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তিনি কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে এখানে আসেননি। বিকেল চারটার দিকে আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীর বাবা দাবি করে কার্যালয়ের ভেতর যেতে চান। তিনি ছেলের পরীক্ষার প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানান।
No comments