নিয়োগ-পদোন্নতিতে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না by ইকতেদার আহমেদ
দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে
প্রজাতন্ত্রের কর্ম শব্দদ্বয় সংজ্ঞায়িত। প্রজাতন্ত্রের কর্ম বিষয়ে সংবিধানে
বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্ম অর্থ অসামরিক বা সামরিক ক্ষমতায় বাংলাদেশ
সরকার সংক্রান্ত যে কোনো কর্ম, চাকরি বা পদ এবং আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের
কর্ম বলে ঘোষিত হতে পারে, এরূপ যে কোনো কর্ম। উপরোক্ত সংজ্ঞা থেকে যে
ধারণা পাওয়া যায় তা হল, সরকারি কোষাগার থেকে যেসব ব্যক্তির বেতনভাতা
নির্বাহ করা হয়, তারা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি।
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি অনুসৃত হবে সে বিষয়ে সংবিধানের ১৩৩নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে- এ সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন; তবে শর্ত থাকে যে, এ উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা বা অধীন বিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করে বিধিসমূহ প্রণয়নের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে এবং অনুরূপ যে কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে অনুরূপ বিধিসমূহ কার্যকর হবে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মে বেসামরিক পদে নিয়োজিত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনকে (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারি কর্ম কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা এবং সংবিধানে এক বা একাধিক সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে একটি সরকারি কর্ম কমিশন রয়েছে। এটি একজন চেয়ারম্যান ও ১৪ সদস্য সমন্বয়ে গঠিত। সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগলাভ করেন। সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছর বা তার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া এ দুটির মধ্যে যেটি আগে ঘটে সে কাল পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকতে পারেন; তবে সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান বা সদস্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারেন। বয়সসীমা অতিক্রম করা না সাপেক্ষে কর্ম অবসানের পর একজন চেয়ারম্যান এক মেয়াদের জন্য পুনঃনিয়োগ এবং একজন সদস্য এক মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসেবে পুনঃনিয়োগের জন্য যোগ্য। সংবিধানে সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ বিষয়ে বলা হয়েছে- সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোনো সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো সদস্য অপসারিত হবেন না।
সরকারি কর্ম কমিশনের দায়িত্ব বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে যে- সরকারি কর্ম কমিশনের দায়িত্ব হবে (ক) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদিগকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনা (খ) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কোনো বিষয় সম্পর্কে কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হলে সে সম্বন্ধে রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ দান এবং (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারি কর্ম কমিশনকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদিগকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হলেও সরকারি কর্ম কমিশন এ দায়িত্বটি কেবল প্রজাতন্ত্রের বেসামরিক কর্মে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে পালন করে থাকে। সংবিধানে যদিও উল্লেখ রয়েছে, সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিন্তু পরিতাপের বিষয় সংবিধান প্রণয়নের পর ৪২ বছর অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবধি প্রজাতন্ত্রের সামরিক বা বেসামরিক কর্মে নিয়োগদানের জন্য সংসদ কর্তৃক কোনো আইন প্রণীত হয়নি। এরূপ আইনের অনুপস্থিতিতে নিয়োগ সংক্রান্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বিধি ও নির্বাহী আদেশ দ্বারা সম্পন্ন করা হচ্ছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও দেখা যায় বিধি বা নির্বাহী আদেশ দিয়ে তা সম্পন্ন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে শৃংখলা বাহিনী বলতে স্থল, নৌ বা বিমানবাহিনী, পুলিশবাহিনী এবং আইনের দ্বারা শৃংখলা বাহিনী হিসেবে ঘোষিত যে কোনো বাহিনীকে বোঝায়। বাংলাদেশে আইনের দ্বারা যেসব বাহিনীকে শৃংখলা বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব বাহিনী হল বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার বাহিনী ও র্যাব। শৃংখলা বাহিনীসমূহের মধ্যে পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর কর্মকর্তারা সরকারের ক্যাডার সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত। এ দুটি বাহিনীর কর্মকর্তারা সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। অপর শৃংখলা বাহিনীসমূহের মধ্যে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা আন্তঃবিভাগীয় বাছাই বোর্ডের (আইএসএসবি) মাধ্যমে নিয়োগের জন্য সুপারিশ লাভ করেন। বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র্যাবের ক্ষেত্রে অন্যান্য শৃংখল বাহিনী থেকে প্রেষণে নিয়োজিত ব্যক্তিরা কর্মকর্তা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বেসামরিক পদে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিয়োগের জন্য সুপারিশ পরবর্তী পদোন্নতি বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের আর কোনো ভূমিকা থাকে না। অনুরূপ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিয়োগ পরবর্তী পদোন্নতির ক্ষেত্রে আন্তঃবিভাগীয় বাছাই বোর্ডের আর কোনো ভূমিকা থাকে না।
সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের অনুপস্থিতিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিদের পদোন্নতির কার্যটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে সমাধা করা হয় এবং তা কার্যকর করার আগে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেয়া হয়।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৮২ খ্রি. অবধি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশন মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এরশাদ ১৯৮২ খ্রি. ক্ষমতা গ্রহণ-পরবর্তী থানাসমূহকে উপজেলা নামকরণের মাধ্যমে তথায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা করলে বিপুলসংখ্যক সহকারী জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবশ্যকতা দেখা দেয়। সে সময় নিয়োগ বিধি শিথিল করে সহকারী জজ নিয়োগের দায়িত্বটি সরকারি কর্ম কমিশনের পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয় এবং আইন মন্ত্রণালয় মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ৪৫০ সহকারী জজ নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। ম্যাজিস্ট্রেট নামে স্বতন্ত্র অস্তিত্ববিশিষ্ট কোনো পদ না থাকলেও ১ নভেম্বর, ২০০৭ খ্রি.-এর আগে প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনার পদধারীরা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করতেন। ১ নভেম্বর, ২০০৭ খ্রি. পরবর্তী এ দায়িত্বটি বিচার বিভাগের সহকারী জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তারা পালন করে আসছেন। উপজেলায় আদালত স্থাপনের কারণে দ্রুত সহকারী কমিশনার নিয়োগের আবশ্যকতা দেখা দিলে সহকারী জজ নিয়োগের ন্যায় নিয়োগ বিধি শিথিল করে সরকারি কর্ম কমিশনকে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির আওতায় ৩০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে ৬৫০ ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীকালে এসব কর্মকর্তাদের অনেকেই সচিব পদে আসীন হয়েছেন, যদিও নিয়োগের শর্তানুযায়ী তাদের শুধু বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। যাহোক, এ ব্যাপারে মামলা হলে তা সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত এসব কর্মকর্তার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটবহির্ভূত দায়িত্ব পালনের অনুকূলে যায়।
অধস্তন বিচার বিভাগের সহকারী জজরা আগে সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করতেন। ২০০৭ খ্রি. পরবর্তী সময়ে তারা জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করছেন।
সরকারি কর্ম কমিশন যে কোনো ক্যাডার পদে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ১০০০ নম্বরের লিখিত ও ২০০ নম্বরের মৌখিক সমন্বয়ে হয়ে থাকে। কিন্তু যখন নিয়োগবিধি শিথিল করে সীমিত নম্বরের লিখিত এবং শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া হয়, তখন সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে মেধা ও যোগ্যতা নির্ধারণপূর্বক সম্পন্ন হয় না। এ বিষয়ে কারও মধ্যে কোনো ধরনের দ্বিমত নেই।
বেসামরিক গুরুত্বপূর্ণ একই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগবিধি শিথিল করার কারণে সহকারী জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট পদে ১৯৮৩ সালে এমন অনেক কর্মকর্তার প্রবেশ ঘটেছে, যারা সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক সত্যিকার যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়, ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে কোনোভাবেই উত্তীর্ণ হতে পারতেন না।
১৯৯০ সালে এরশাদের পতন ঘটলে তদপরবর্তী দীর্ঘকাল যাবৎ এ দেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুটি দল দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে। ১৯৯৬ সালে সরকারি কিছু কর্মকর্তা সরকারি কর্মচারীদের জন্য অনুসৃত আচরণবিধি এবং প্রজাতন্ত্রের আইন অবজ্ঞা ও উপেক্ষাপূর্বক জনতার মঞ্চে আরোহণ করেন। অতঃপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে ওই কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করলে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে চিরস্থায়ীভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সে সময় থেকে অদ্যাবধি দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে আওয়ামীপন্থী হিসেবে খ্যাতদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। অনুরূপ বিএনপি শাসনামলে দেখা গেছে, বিএনপিপন্থীদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে একই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুটি দলের শাসনামলে নিজ দলের রাজনীতির প্রতি অনুগত কর্মকর্তারা মূল্যায়িত হওয়ায় অপর দলের রাজনীতির প্রতি অনুগতরা এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন নিরপেক্ষ হিসেবে খ্যাত কর্মকর্তারা অবমূল্যায়িত হয়েছেন। দুটি দলের শাসনামলে মূল্যায়ন ও অবমূল্যায়নের জাঁতাকলে পড়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপিপন্থীরা নিয়োগবঞ্চিত অথবা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন কিংবা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকেছেন অথবা আত্মসম্মান রক্ষার্থে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন। বিএনপি শাসনামলে আওয়ামীপন্থীদের একই পরিণতির শিকার হতে হয়েছে।
২০০০ সাল-পরবর্তী প্রজাতন্ত্রের উভয় শ্রেণী অর্থাৎ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন বাড়তে থাকে এবং বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখন দলীয় রাজনীতি ও আদর্শের প্রতি অনুগত নয় এমন ব্যক্তি বা কর্মকর্তাদের নিয়োগ বা পদোন্নতি দুরূহ হয়ে পড়েছে।
সরকারি কর্ম কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও বিগত এক দশকেরও অধিক সময় ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর কার্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ সম্পন্ন করে নিজেদের বিশ্বস্ততার প্রমাণ রাখতে সচেষ্ট থেকেছে। আর পদোন্নতির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, দলীয় রাজনীতি বা আদর্শবহির্ভূত ব্যক্তিদের কোনোভাবেই জ্যেষ্ঠতা, মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও বিবেচনায় নেয়া হয় না। একে তো প্রজাতন্ত্রের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটার কারণে মেধাবীরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত পদে আসীন হতে পারছেন না, উপরন্তু বর্তমানে যেভাবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা মুখ্য বিবেচ্য হচ্ছে, তাতে এ দুয়ের ফলে প্রজাতন্ত্রের কর্মের শৃংখলা বিনষ্ট হওয়ার আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এভাবে শৃংখলা বিনষ্টের কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মে যে দলীয় প্রভাব বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে অবমুক্ত হতে না পারলে সার্বিক বিচারে যারা সৎ, নিরপেক্ষ ও দক্ষ, তারা যে জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মূল্যায়িত হতে পারবেন না, অতীতের পদোন্নতিসমূহ বিবেচনায় নিলে তা স্পষ্ট প্রতিভাত।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ; সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি অনুসৃত হবে সে বিষয়ে সংবিধানের ১৩৩নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে- এ সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন; তবে শর্ত থাকে যে, এ উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা বা অধীন বিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করে বিধিসমূহ প্রণয়নের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে এবং অনুরূপ যে কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে অনুরূপ বিধিসমূহ কার্যকর হবে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মে বেসামরিক পদে নিয়োজিত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনকে (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারি কর্ম কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা এবং সংবিধানে এক বা একাধিক সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে একটি সরকারি কর্ম কমিশন রয়েছে। এটি একজন চেয়ারম্যান ও ১৪ সদস্য সমন্বয়ে গঠিত। সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগলাভ করেন। সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছর বা তার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া এ দুটির মধ্যে যেটি আগে ঘটে সে কাল পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকতে পারেন; তবে সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান বা সদস্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারেন। বয়সসীমা অতিক্রম করা না সাপেক্ষে কর্ম অবসানের পর একজন চেয়ারম্যান এক মেয়াদের জন্য পুনঃনিয়োগ এবং একজন সদস্য এক মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসেবে পুনঃনিয়োগের জন্য যোগ্য। সংবিধানে সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ বিষয়ে বলা হয়েছে- সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোনো সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো সদস্য অপসারিত হবেন না।
সরকারি কর্ম কমিশনের দায়িত্ব বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে যে- সরকারি কর্ম কমিশনের দায়িত্ব হবে (ক) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদিগকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনা (খ) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কোনো বিষয় সম্পর্কে কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হলে সে সম্বন্ধে রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ দান এবং (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারি কর্ম কমিশনকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদিগকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হলেও সরকারি কর্ম কমিশন এ দায়িত্বটি কেবল প্রজাতন্ত্রের বেসামরিক কর্মে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে পালন করে থাকে। সংবিধানে যদিও উল্লেখ রয়েছে, সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিন্তু পরিতাপের বিষয় সংবিধান প্রণয়নের পর ৪২ বছর অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবধি প্রজাতন্ত্রের সামরিক বা বেসামরিক কর্মে নিয়োগদানের জন্য সংসদ কর্তৃক কোনো আইন প্রণীত হয়নি। এরূপ আইনের অনুপস্থিতিতে নিয়োগ সংক্রান্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বিধি ও নির্বাহী আদেশ দ্বারা সম্পন্ন করা হচ্ছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও দেখা যায় বিধি বা নির্বাহী আদেশ দিয়ে তা সম্পন্ন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে শৃংখলা বাহিনী বলতে স্থল, নৌ বা বিমানবাহিনী, পুলিশবাহিনী এবং আইনের দ্বারা শৃংখলা বাহিনী হিসেবে ঘোষিত যে কোনো বাহিনীকে বোঝায়। বাংলাদেশে আইনের দ্বারা যেসব বাহিনীকে শৃংখলা বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব বাহিনী হল বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার বাহিনী ও র্যাব। শৃংখলা বাহিনীসমূহের মধ্যে পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর কর্মকর্তারা সরকারের ক্যাডার সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত। এ দুটি বাহিনীর কর্মকর্তারা সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। অপর শৃংখলা বাহিনীসমূহের মধ্যে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা আন্তঃবিভাগীয় বাছাই বোর্ডের (আইএসএসবি) মাধ্যমে নিয়োগের জন্য সুপারিশ লাভ করেন। বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র্যাবের ক্ষেত্রে অন্যান্য শৃংখল বাহিনী থেকে প্রেষণে নিয়োজিত ব্যক্তিরা কর্মকর্তা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বেসামরিক পদে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিয়োগের জন্য সুপারিশ পরবর্তী পদোন্নতি বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের আর কোনো ভূমিকা থাকে না। অনুরূপ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিয়োগ পরবর্তী পদোন্নতির ক্ষেত্রে আন্তঃবিভাগীয় বাছাই বোর্ডের আর কোনো ভূমিকা থাকে না।
সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের অনুপস্থিতিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিদের পদোন্নতির কার্যটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে সমাধা করা হয় এবং তা কার্যকর করার আগে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেয়া হয়।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৮২ খ্রি. অবধি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশন মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এরশাদ ১৯৮২ খ্রি. ক্ষমতা গ্রহণ-পরবর্তী থানাসমূহকে উপজেলা নামকরণের মাধ্যমে তথায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা করলে বিপুলসংখ্যক সহকারী জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবশ্যকতা দেখা দেয়। সে সময় নিয়োগ বিধি শিথিল করে সহকারী জজ নিয়োগের দায়িত্বটি সরকারি কর্ম কমিশনের পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয় এবং আইন মন্ত্রণালয় মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ৪৫০ সহকারী জজ নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। ম্যাজিস্ট্রেট নামে স্বতন্ত্র অস্তিত্ববিশিষ্ট কোনো পদ না থাকলেও ১ নভেম্বর, ২০০৭ খ্রি.-এর আগে প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনার পদধারীরা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করতেন। ১ নভেম্বর, ২০০৭ খ্রি. পরবর্তী এ দায়িত্বটি বিচার বিভাগের সহকারী জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তারা পালন করে আসছেন। উপজেলায় আদালত স্থাপনের কারণে দ্রুত সহকারী কমিশনার নিয়োগের আবশ্যকতা দেখা দিলে সহকারী জজ নিয়োগের ন্যায় নিয়োগ বিধি শিথিল করে সরকারি কর্ম কমিশনকে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির আওতায় ৩০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে ৬৫০ ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীকালে এসব কর্মকর্তাদের অনেকেই সচিব পদে আসীন হয়েছেন, যদিও নিয়োগের শর্তানুযায়ী তাদের শুধু বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। যাহোক, এ ব্যাপারে মামলা হলে তা সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত এসব কর্মকর্তার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটবহির্ভূত দায়িত্ব পালনের অনুকূলে যায়।
অধস্তন বিচার বিভাগের সহকারী জজরা আগে সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করতেন। ২০০৭ খ্রি. পরবর্তী সময়ে তারা জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করছেন।
সরকারি কর্ম কমিশন যে কোনো ক্যাডার পদে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ১০০০ নম্বরের লিখিত ও ২০০ নম্বরের মৌখিক সমন্বয়ে হয়ে থাকে। কিন্তু যখন নিয়োগবিধি শিথিল করে সীমিত নম্বরের লিখিত এবং শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া হয়, তখন সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে মেধা ও যোগ্যতা নির্ধারণপূর্বক সম্পন্ন হয় না। এ বিষয়ে কারও মধ্যে কোনো ধরনের দ্বিমত নেই।
বেসামরিক গুরুত্বপূর্ণ একই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগবিধি শিথিল করার কারণে সহকারী জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট পদে ১৯৮৩ সালে এমন অনেক কর্মকর্তার প্রবেশ ঘটেছে, যারা সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক সত্যিকার যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়, ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে কোনোভাবেই উত্তীর্ণ হতে পারতেন না।
১৯৯০ সালে এরশাদের পতন ঘটলে তদপরবর্তী দীর্ঘকাল যাবৎ এ দেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুটি দল দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে। ১৯৯৬ সালে সরকারি কিছু কর্মকর্তা সরকারি কর্মচারীদের জন্য অনুসৃত আচরণবিধি এবং প্রজাতন্ত্রের আইন অবজ্ঞা ও উপেক্ষাপূর্বক জনতার মঞ্চে আরোহণ করেন। অতঃপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে ওই কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করলে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে চিরস্থায়ীভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সে সময় থেকে অদ্যাবধি দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে আওয়ামীপন্থী হিসেবে খ্যাতদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। অনুরূপ বিএনপি শাসনামলে দেখা গেছে, বিএনপিপন্থীদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে একই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুটি দলের শাসনামলে নিজ দলের রাজনীতির প্রতি অনুগত কর্মকর্তারা মূল্যায়িত হওয়ায় অপর দলের রাজনীতির প্রতি অনুগতরা এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন নিরপেক্ষ হিসেবে খ্যাত কর্মকর্তারা অবমূল্যায়িত হয়েছেন। দুটি দলের শাসনামলে মূল্যায়ন ও অবমূল্যায়নের জাঁতাকলে পড়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপিপন্থীরা নিয়োগবঞ্চিত অথবা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন কিংবা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকেছেন অথবা আত্মসম্মান রক্ষার্থে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন। বিএনপি শাসনামলে আওয়ামীপন্থীদের একই পরিণতির শিকার হতে হয়েছে।
২০০০ সাল-পরবর্তী প্রজাতন্ত্রের উভয় শ্রেণী অর্থাৎ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন বাড়তে থাকে এবং বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখন দলীয় রাজনীতি ও আদর্শের প্রতি অনুগত নয় এমন ব্যক্তি বা কর্মকর্তাদের নিয়োগ বা পদোন্নতি দুরূহ হয়ে পড়েছে।
সরকারি কর্ম কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও বিগত এক দশকেরও অধিক সময় ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর কার্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ সম্পন্ন করে নিজেদের বিশ্বস্ততার প্রমাণ রাখতে সচেষ্ট থেকেছে। আর পদোন্নতির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, দলীয় রাজনীতি বা আদর্শবহির্ভূত ব্যক্তিদের কোনোভাবেই জ্যেষ্ঠতা, মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও বিবেচনায় নেয়া হয় না। একে তো প্রজাতন্ত্রের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটার কারণে মেধাবীরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত পদে আসীন হতে পারছেন না, উপরন্তু বর্তমানে যেভাবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা মুখ্য বিবেচ্য হচ্ছে, তাতে এ দুয়ের ফলে প্রজাতন্ত্রের কর্মের শৃংখলা বিনষ্ট হওয়ার আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এভাবে শৃংখলা বিনষ্টের কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মে যে দলীয় প্রভাব বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে অবমুক্ত হতে না পারলে সার্বিক বিচারে যারা সৎ, নিরপেক্ষ ও দক্ষ, তারা যে জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মূল্যায়িত হতে পারবেন না, অতীতের পদোন্নতিসমূহ বিবেচনায় নিলে তা স্পষ্ট প্রতিভাত।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ; সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
No comments