মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় স্থায়ী পে কমিশন গঠনের সুপারিশ
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে জীবনযাত্রার মান
সমন্বয় করতে ‘একটি স্থায়ী বেতন ও চাকরি কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে অষ্টম
জাতীয় বেতন কমিশন। দুই বা এক বছর অন্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি
বিচার বিশ্লেষণ করে এ কমিশন বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করবে। বিকল্প হিসেবে এ
কমিশনের নাম হতে পারে ‘প্রশাসনিক সংস্কার ও বেতন কমিশন’। কমিশনের
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচ থেকে সাত বছর পর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতার
বড় ধরনের পরিবর্তনে প্রত্যাশিত সুফল আসে না। কারণ এরূপ বড় ধরনের পরিবর্তনের
সঙ্গে জিনিসপত্রের দামও মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। এতে চাকরিজীবীদের সঙ্গে
সাধারণ ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। স্থায়ী বেতন কমিশন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের
সঙ্গে যুক্ত থাকবে বলে রূপরেখা দিয়েছে কমিশন। প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বিভাগ
ও স্বীয় ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে স্বাধীনভাবে বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করার
পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। তবে গঠন প্রক্রিয়া খুব বেশিদূর পর্যন্ত যায়নি। কারণ শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান ও সিঙ্গাপুরে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বেতন কাঠামো কিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, তার রূপরেখা অনুসরণ করে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সূত্রমতে, সিঙ্গাপুরে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য স্থায়ী পে-কমিশনের মতো ওয়েজবোর্ড কাজ করছে। সে দেশে প্রতি বছর যে হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়, একই হারে কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো হয়।
ভারতে স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের বিধান নেই। তবে কেন্দ্রীয় ও অন্য চাকরিজীবীদের জন্য ভারত সরকার ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর ষষ্ঠ ও সর্বশেষ বেতন কমিশন গঠন করেছিল। কমিশন ১৮ মাস কাজ করে ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ সুপারিশ পেশ করেছে। কিছু সংশোধন করে ওই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ভারতের বেতন কমিশন চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন এনে পে-ব্যান্ড পদ্ধতি চালু করেছে। এক্ষেত্রে ৪টি পে-ব্যান্ডে ২০টি গ্রেড অন্তর্ভুক্ত করে বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা হয়।
এছাড়া পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার ২০০৪ সালের ১৯ অক্টোবর মূল বেতন স্কেল ও পেনশন কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশ ২০০৫ সালের পহেলা জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন শুরু করে।
বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী পে-কমিশনের ধারণা একেবারেই নতুন। সেজন্য এর অর্গানোগ্রাম বা রূপরেখা কেমন হবে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্থায়ী কমিশন গঠন করা কতটুকু যৌক্তিক- এসব বিষয় খতিয়ে দেখছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
জাতীয় বেতন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে ইনডেক্সসান পদ্ধতি প্রবর্তন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। সরকার কমিশনের সুপারিশের নির্যাস গ্রহণ করে। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের স্থায়ী কমিটি গঠনের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন-ভাতার সমন্বয়ের ব্যবস্থা এখনও করা হয়নি।
এছাড়া সরকার মাঝে মধ্যে মূল্যস্ফীতির কথা বিবেচনা করে মহার্ঘ ভাতা দিয়ে চাকরিজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা হালনাগাদ করে থাকে। পাশাপাশি প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছরের ব্যবধানে সরকার কমিশন গঠন করে মূল্যস্ফীতিকে হিসাব করে বেতন-ভাতা প্রণয়ন করে থাকে। কমিশন প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের আকস্মিক বড় ধরনের পরিবর্তন চাকরিজীবীদের জন্য প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনে না। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীও বাধ্য হন তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়াতে। এতে ব্যয় বেড়ে ও লাভ কমে যাওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় বলে কমিশন প্রতিবেদনে মন্তব্য করে।
কমিশন মনে করে, কয়েক বছর পরপর বেতন-ভাতা একসঙ্গে বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করাই ভালো। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন-ভাতা নিয়মিত সমন্বয় করা বাঞ্ছনীয়। এজন্য প্রয়োজন একটি স্থায়ী শক্তিশালী বেতন কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ সময় পরপর কমিশন গঠন করে চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর পদ্ধতি তাদের প্রকৃত আয় সংরক্ষণের পুরোপুরি সহায়ক হয় না। কারণ দীর্ঘদিনের মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এনে অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধির সুপারিশ করে কমিশন। এ সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজস্ব বাজেটের ওপর এককালীন চাপ পড়তে পারে যদি বাজেটের আয়তন সে পরিমাণ বৃদ্ধি না পায়।
পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য মতে, মোট জনসংখ্যার ৫ কোটি ৬৭ লাখ হচ্ছে সিভিলিয়ন লেবার ফোর্স। এর মধ্যে কর্মরত জনসংখ্যা ৫ কোটি ৪১ লাখ। অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী হচ্ছে ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ জন, যা মোট কর্মরত জনসংখ্যার ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ফলে চাকরিজীবীদের পেছনে সরকার যে অর্থ ব্যয় করবে তা বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। এটি প্রমাণিত হয়। তাই দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে একটি প্রাইস কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।
জানা গেছে, এর আগে স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। তবে গঠন প্রক্রিয়া খুব বেশিদূর পর্যন্ত যায়নি। কারণ শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান ও সিঙ্গাপুরে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বেতন কাঠামো কিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, তার রূপরেখা অনুসরণ করে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সূত্রমতে, সিঙ্গাপুরে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য স্থায়ী পে-কমিশনের মতো ওয়েজবোর্ড কাজ করছে। সে দেশে প্রতি বছর যে হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়, একই হারে কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো হয়।
ভারতে স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের বিধান নেই। তবে কেন্দ্রীয় ও অন্য চাকরিজীবীদের জন্য ভারত সরকার ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর ষষ্ঠ ও সর্বশেষ বেতন কমিশন গঠন করেছিল। কমিশন ১৮ মাস কাজ করে ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ সুপারিশ পেশ করেছে। কিছু সংশোধন করে ওই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ভারতের বেতন কমিশন চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন এনে পে-ব্যান্ড পদ্ধতি চালু করেছে। এক্ষেত্রে ৪টি পে-ব্যান্ডে ২০টি গ্রেড অন্তর্ভুক্ত করে বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা হয়।
এছাড়া পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার ২০০৪ সালের ১৯ অক্টোবর মূল বেতন স্কেল ও পেনশন কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশ ২০০৫ সালের পহেলা জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন শুরু করে।
বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী পে-কমিশনের ধারণা একেবারেই নতুন। সেজন্য এর অর্গানোগ্রাম বা রূপরেখা কেমন হবে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্থায়ী কমিশন গঠন করা কতটুকু যৌক্তিক- এসব বিষয় খতিয়ে দেখছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
জাতীয় বেতন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে ইনডেক্সসান পদ্ধতি প্রবর্তন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। সরকার কমিশনের সুপারিশের নির্যাস গ্রহণ করে। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের স্থায়ী কমিটি গঠনের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন-ভাতার সমন্বয়ের ব্যবস্থা এখনও করা হয়নি।
এছাড়া সরকার মাঝে মধ্যে মূল্যস্ফীতির কথা বিবেচনা করে মহার্ঘ ভাতা দিয়ে চাকরিজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা হালনাগাদ করে থাকে। পাশাপাশি প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছরের ব্যবধানে সরকার কমিশন গঠন করে মূল্যস্ফীতিকে হিসাব করে বেতন-ভাতা প্রণয়ন করে থাকে। কমিশন প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের আকস্মিক বড় ধরনের পরিবর্তন চাকরিজীবীদের জন্য প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনে না। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীও বাধ্য হন তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়াতে। এতে ব্যয় বেড়ে ও লাভ কমে যাওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় বলে কমিশন প্রতিবেদনে মন্তব্য করে।
কমিশন মনে করে, কয়েক বছর পরপর বেতন-ভাতা একসঙ্গে বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করাই ভালো। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন-ভাতা নিয়মিত সমন্বয় করা বাঞ্ছনীয়। এজন্য প্রয়োজন একটি স্থায়ী শক্তিশালী বেতন কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ সময় পরপর কমিশন গঠন করে চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর পদ্ধতি তাদের প্রকৃত আয় সংরক্ষণের পুরোপুরি সহায়ক হয় না। কারণ দীর্ঘদিনের মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এনে অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধির সুপারিশ করে কমিশন। এ সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজস্ব বাজেটের ওপর এককালীন চাপ পড়তে পারে যদি বাজেটের আয়তন সে পরিমাণ বৃদ্ধি না পায়।
পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য মতে, মোট জনসংখ্যার ৫ কোটি ৬৭ লাখ হচ্ছে সিভিলিয়ন লেবার ফোর্স। এর মধ্যে কর্মরত জনসংখ্যা ৫ কোটি ৪১ লাখ। অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী হচ্ছে ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ জন, যা মোট কর্মরত জনসংখ্যার ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ফলে চাকরিজীবীদের পেছনে সরকার যে অর্থ ব্যয় করবে তা বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। এটি প্রমাণিত হয়। তাই দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে একটি প্রাইস কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।
No comments