বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ
উচ্চ
শিক্ষিত বাংলাদেশীদের নিম্নমানের পেশা দেখে কষ্ট পেতেন ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর
হানিপ। তিনি লক্ষ্য করলেন শুধু তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান না থাকায় বাংলাদেশীরা
সেখানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এমন পেশা বেছে নিচ্ছেন। কাজ নিচ্ছেন বাবুর্চি,
রেস্টুরেন্ট কর্মী এবং ড্রাইভারের। অবশেষে জন্মভূমির মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের
জন্য একটা উপায় বের করলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, তাদের আইটি দক্ষ করে গড়ে
তুলবেন। যেই ভাবা, সেই কাজ। তথ্যপ্রযুক্তিতে আমেরিকায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলা
আবু হানিপ ২০০৪ সালে নিজ বাড়িতেই গড়ে তুললেন ট্রেনিং সেন্টার। যেখানে ছুটির
দিনগুলোতে বাংলাদেশীদের আইটি প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করলেন। সফলও হলেন। তার
কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিম্নমানের কাজ করা অনেক বাংলাদেশীই চাকরি নিলেন
আইটি সেক্টরে। যেখানে তাদের শুরুটাই হয় বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার আয়
দিয়ে। গড়ে তুললেন পিপিল এন টেক নামে প্রশিক্ষণ স্কুল। সেখানে হাজার হাজার
তরুণ, যুবক, বাবুর্চি, রেস্টুরেন্ট কর্মী, ড্রাইভার, গৃহবধূ থেকে শুরু করে
বয়ষ্ক নারী-পুরুষ শিখেছে, শিখছে কম্পিউটার জগতের নানা কারিগরি। তারা
সফটওয়্যার বানানো শিখছে, শিখছে আধুনিক প্রযুক্তির আরও অত্যাধুনিক ব্যবহার।
প্রশিক্ষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার বড় বড় কোম্পানিতে বড় বড় পদে, বড়
অংকের বেতনে কর্মরত অনেকেই। ৪ মাসের কোর্সের ভিত্তিতে ১০ বছরে ৩০০০ নন আইটি
বাংলাদেশীকে তিনি আইটি দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন। আবু হানিপ তার কাজ আর
আমেরিকার বাংলাদেশী কমিউনিটিতে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তার নজর এখন পুরো
বাংলাদেশের দিকে। সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি পিপল এন টেকের শাখা খুলেছেন রাজধানী
ঢাকায়। আইটির পাশাপাশি যুতসই ইংরেজিও শেখানো হচ্ছে এখানে। পিপল এন টেকের
সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা আবু হানিপ বলেন, একজন বাংলাদেশী হিসেবে দেশের
অর্থনীতিতে অবদান রাখা তার দায়িত্ব। এখানকার জনসম্পদকে মানবসম্পদে পরিণত
করতে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। চুয়েটের সাবেক এ ছাত্র বলেন, ১৭ কোটি মানুষের
৩৪ কোটি হাত ও ৩৪ কোটি পা রাখার জন্য বাংলাদেশের আয়তন খুবই কম। এই ৩৪ কোটি
হাতকে শক্তিশালী করার জন্যই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি একা হয়তো এটা
পারবেন না তবে একটা মডেল দাঁড় করাবেন। যেটা অন্যরা অনুসরণ করে এদেশে দক্ষ
কর্মী গড়ে তুলবে। ঢাকার গ্রীনরোডে গুডলাক সেন্টারে পিপল এন টেকের এ
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। যে কেউ
যে কোন বিষয়ে ৪ বছরের গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে এ কোর্সটি গ্রহণ করে নিজেকে
প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন আইটি সেক্টরে। ঢাকায় এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার ৩টি
উদ্দেশ্যের কথা বললেন আবু হানিপ। তিনি বলেন, যারা ইমিগ্রান্ট হয়ে আমেরিকায়
যেতে চায় (যাদের আত্মীয়স্বজন সেখানে আছে) তারা যেন অপছন্দনীয় পেশার
মুখোমুখি না হন সেজন্য তাদের এখান থেকেই দক্ষ আইটি হিসেবে গড়ে তুলতে
প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যাতে সেখানে গিয়েই তারা ভাল চাকরি পেতে
পারে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবছর এইচ ওয়ানবি ভিসায় বিভিন্ন
দেশকে ৬০ হাজার লোককে সুযোগ দেয়। এ সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আমাদের দেশে দক্ষ
লোক না থাকায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকেই তারা কর্মী নেয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে
আমরা এক্ষেত্রেও বড় অংশীদার হতে পারি। তিনি আরও বলেন এ কোর্সটি বিশেষ করে
যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এরই মধ্যে কম্পিউটার সায়েন্সে শিক্ষা নিয়েছেন
তাদের জন্য এই শর্ট-টার্ম কোর্সটি হবে সোনায় সোহাগার মতো। কোর্স শেষে তাদের
সিভি জমা হলে অনেক কোম্পানি তাদের চাকরি দেবে, ডাকবে। তখন কোম্পানির
স্পন্সরেই তারা যাবেন সেদেশে। এছাড়া যাদের আমেরিকা যাওয়ার কোন যোগ্যতা নেই
তারাও এ কোর্সটি গ্রহণ করে আইটি দক্ষ হয়ে ঘরে বসে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে
হাজার হাজার ডলার আয় করতে পারবেন। আউট সোর্সিংয়ে বাংলাদেশের নাম কেবল
ড্যাটা এন্ট্রির তালিকা থেকে উঠে আসবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ ও দামি দামি কাজে। আবু হানিপ জানান, তিনি অসচ্ছল এবং
মেধাবীদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগই করে দিচ্ছেন।
ইতিমধ্যে ৬০ জনকে এ বৃত্তি দেয়া হয়েছে। জানুয়ারিতে আরও ১০০ জনকে দেয়ার জন্য
বাছাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যদি টার্গেট অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ করা যায় তাহলে
বছরে ১২০০০ কোটি টাকা শুধু এখান থেকেই রেমিট্যান্স আসবে- যা পরে আরও বৃদ্ধি
পাবে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট মেয়াদে কোর্সে ভর্তি হলেও যতক্ষণ
পর্যন্ত একজন প্রশিক্ষণার্থী দক্ষ না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে প্রশিক্ষণ
দেয়া হবে। অতিরিক্ত এ সময়ে প্রশিক্ষণের জন্য কোন ফি নেয়া হবে না। তিনি
বলেন, দেশে তরুণ, যুবা, মধ্যবয়সী যেই হোন না কেন ১০ হাজার মানুষকে
প্রশিক্ষিত করে এ হিসাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের হতে পারে। যা সত্যিই দেশকে
২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। পিপল এন টেক সম্পর্কে
বিস্তারিত তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইট-এ দেয়া আছে। কুমিল্লার সন্তান আবু হানিপ
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে ১৯৯৫ সালে
যুক্তরাষ্ট্রে যান। এরপর কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্সসহ অরাকল ডিবিএ,
সিস্টেম অ্যাডমিনসহ যাবতীয় সার্টিফিকেশন পেয়ে এফডিআইসি, আইআরএস, ডিওডি,
আইবিএম এবং অরকল কোম্পানিতে কাজ করে পান বাস্তব অভিজ্ঞতা।
No comments