পাকিস্তানকে শিক্ষা ও গণতন্ত্রহীনতার মাশুল দিতে হচ্ছে by মোঃ রফিকুল ইসলাম
পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে জঙ্গিদের একের
পর এক অপতৎপরতা ও হামলার বিষয়টি উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। ১৬ ডিসেম্বর
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারে সেনাবাহিনী
পরিচালিত এক স্কুলে জঙ্গিরা যে নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে, এ ঘটনা সারা বিশ্বের
বিবেকবান প্রতিটি মানুষের মনে বিশেষভাবে নাড়া দিয়ে যাবে। এ ঘটনার পর যে
কোনো বিবেকবান মানুষ যা ভাববে তা হল, এমন নিষ্ঠুরতা অবসানের উপায় কী? কাজটি
যে কঠিন তা যে কেউ স্বীকার করবেন।
পাকিস্তানে এ ধরনের জঙ্গি হামলার অন্যতম কারণ হল, দেশটিতে বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু থাকলেও দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে শক্তিশালী হতে পারেনি। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর দেশটিতে যতবার সেনা শাসন কায়েম ছিল, সেনা শাসকরা সামরিক খাতে প্রচুর বরাদ্দ রাখলেও অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে নামমাত্র অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। ফলে বিভিন্ন অস্ত্রের মজুদের দিক থেকে পাকিস্তান এশিয়ার অন্য অনেক দেশ থেকে এগিয়ে থাকলেও সামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সূচকে দেশটির অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।
উল্লেখিত হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করে ইতিমধ্যে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী বিবৃতিও দিয়েছে। ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর পক্ষে জানানো হয়েছে যে, সেনা অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। জঙ্গিগোষ্ঠীর এ ধরনের বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট হয় তারা এমন নিষ্ঠুরতার জন্য মোটেও অনুতপ্ত নয়। এমন জঘন্য ঘটনার পরও যারা অনুতপ্ত নয়, তাদের মনমানসিকতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যায়। নারী ও শিশুদের জিম্মি করে জঙ্গিরা তাদের অন্যায্য দাবি আদায়ের চেষ্টা করতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা লক্ষ্য করেছি, গত কয়েক দশকে পাকিস্তান একের পর এক আধুনিক অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়ে এ অঞ্চলের এবং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ দেশটি সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে কোনোভাবেই যাতে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে না পড়ে সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবছর সামরিক খাতে বিপুল অর্থ বরাদ্দ রাখায় অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখতে পারেনি।
জঙ্গিগোষ্ঠীরা চায় না সাধারণ মানুষ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হোক, আলোকিত হোক। তাই তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি মসজিদেও হামলা চালাতে দ্বিধা করে না। পাকিস্তানের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীগুলোর অনৈক্যও দেশটির অগ্রগতিতে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানের এক প্রদেশের সঙ্গে অন্য প্রদেশের বিভেদের বিষয়টিও এখানে উল্লেখ করা যায়। অর্থাৎ ঐতিহাসিকভাবেই দেশটির জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অনৈক্য লক্ষ্য করা গেছে।
১৬ ডিসেম্বর যে স্কুলটিতে হামলা হয়েছে, পাকিস্তানে এ ধরনের সেনাবাহিনী পরিচালিত আরও অনেক স্কুল রয়েছে। কাজেই ওইসব প্রতিষ্ঠানে আবারও কখন হামলা হয় এ নিয়েও অভিভাবকদের উদ্বেগ রয়েছে। উল্লেখিত ঘটনায় যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, আমরা তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এ ধরনের হামলার ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ ব্যাপারে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হলেও ১৯৫৬ সালের আগে দেশটিতে কোনো সংবিধান ছিল না। এ ধরনের উদাহরণ থেকেও পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পাকিস্তানে আধুনিক শিক্ষার যথাযথ বিস্তারের এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার যথাযথ ব্যবস্থা নিলেই জঙ্গিদের অপতৎপরতা কমে আসবে, এমন ধারণা করা যায়।
মোঃ রফিকুল ইসলাম : সহযোগী অধ্যাপক, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পাকিস্তানে এ ধরনের জঙ্গি হামলার অন্যতম কারণ হল, দেশটিতে বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু থাকলেও দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে শক্তিশালী হতে পারেনি। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর দেশটিতে যতবার সেনা শাসন কায়েম ছিল, সেনা শাসকরা সামরিক খাতে প্রচুর বরাদ্দ রাখলেও অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে নামমাত্র অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। ফলে বিভিন্ন অস্ত্রের মজুদের দিক থেকে পাকিস্তান এশিয়ার অন্য অনেক দেশ থেকে এগিয়ে থাকলেও সামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সূচকে দেশটির অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।
উল্লেখিত হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করে ইতিমধ্যে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী বিবৃতিও দিয়েছে। ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর পক্ষে জানানো হয়েছে যে, সেনা অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। জঙ্গিগোষ্ঠীর এ ধরনের বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট হয় তারা এমন নিষ্ঠুরতার জন্য মোটেও অনুতপ্ত নয়। এমন জঘন্য ঘটনার পরও যারা অনুতপ্ত নয়, তাদের মনমানসিকতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যায়। নারী ও শিশুদের জিম্মি করে জঙ্গিরা তাদের অন্যায্য দাবি আদায়ের চেষ্টা করতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা লক্ষ্য করেছি, গত কয়েক দশকে পাকিস্তান একের পর এক আধুনিক অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়ে এ অঞ্চলের এবং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ দেশটি সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে কোনোভাবেই যাতে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে না পড়ে সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবছর সামরিক খাতে বিপুল অর্থ বরাদ্দ রাখায় অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখতে পারেনি।
জঙ্গিগোষ্ঠীরা চায় না সাধারণ মানুষ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হোক, আলোকিত হোক। তাই তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি মসজিদেও হামলা চালাতে দ্বিধা করে না। পাকিস্তানের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীগুলোর অনৈক্যও দেশটির অগ্রগতিতে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানের এক প্রদেশের সঙ্গে অন্য প্রদেশের বিভেদের বিষয়টিও এখানে উল্লেখ করা যায়। অর্থাৎ ঐতিহাসিকভাবেই দেশটির জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অনৈক্য লক্ষ্য করা গেছে।
১৬ ডিসেম্বর যে স্কুলটিতে হামলা হয়েছে, পাকিস্তানে এ ধরনের সেনাবাহিনী পরিচালিত আরও অনেক স্কুল রয়েছে। কাজেই ওইসব প্রতিষ্ঠানে আবারও কখন হামলা হয় এ নিয়েও অভিভাবকদের উদ্বেগ রয়েছে। উল্লেখিত ঘটনায় যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, আমরা তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এ ধরনের হামলার ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ ব্যাপারে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হলেও ১৯৫৬ সালের আগে দেশটিতে কোনো সংবিধান ছিল না। এ ধরনের উদাহরণ থেকেও পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পাকিস্তানে আধুনিক শিক্ষার যথাযথ বিস্তারের এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার যথাযথ ব্যবস্থা নিলেই জঙ্গিদের অপতৎপরতা কমে আসবে, এমন ধারণা করা যায়।
মোঃ রফিকুল ইসলাম : সহযোগী অধ্যাপক, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments