খালেদার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ- তুমুল হইচই হট্টগোল
আবারও
হট্টগোল। তুমুল হইচই। এরই মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ মিনিটের
জন্য সাক্ষ্য দিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের-দুদক উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদ।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই এ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। তার
আইনজীবীরা সময় চেয়ে আবেদন করলেও ঢাকার বিশেষ জজ বাসুদেব রায় ওই আবেদন
খারিজ করে দেন। বিচারক বলেন, আপনারা কোন স্টে অর্ডার আনতে পারেননি। আমাকে
বসানো হয়েছে মামলা করার জন্য। আমাকে আমার কাজ করতে হবে। তবে নিরাপত্তার
কারণে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। যদিও পরবর্তী
তারিখে তাকে অবশ্যই হাজির করতে তার আইনজীবীদের নির্দেশ দেয়া হয়। মধ্যহ্ন
বিরতির পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তুমুল হট্টগোল
করেন। সংক্ষিপ্ত সময়ের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত ২৪শে ডিসেম্বর পর্যন্ত
মামলার কার্যক্রম মুলতবি করে। আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন
বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, এ আদালতে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার
পাবেন না। আদালত চলছে সরকারের ইচ্ছায়। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল
বলেন, পরবর্তী তারিখে হাজির না হলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
নেয়ার জন্য আবেদন করা হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণকে
কেন্দ্র করে গতকাল ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতের আশপাশে
বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। ২০০৮
সালের ৩রা জুলাই এ মামলাটি দায়ের করা হয়। গত ৮ই ডিসেম্বরও তুমুল হট্টগোলের
মধ্যে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। গতকাল বেলা ১২টার দিকে বিচারক
বাসুদেব রায় এজলাসে আসেন। শুরুতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী সানাউল্লাহ
মিয়া চারটি আবেদন দায়েরের কথা জানান। তিনি বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির জন্য
দু’টি আবেদন করা হয়েছে। আর নিরাপত্তার কারণে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির
কারণে দু’টি আবেদন করা হয়েছে। এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল
বলেন, আজ সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সাক্ষী আদালতে উপস্থিত রয়েছেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ করা হোক। খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া
বলেন, এর আগে আপনি আমাদের সময় আবেদন খারিজ করেছিলেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে
আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করেছি। আংশিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৫ই জানুয়ারি
আদালত খোলার সময় পর্যন্ত আবেদনের শুনানি মুলতবি করেছে। এ অবস্থায় এ আদালতে
শুনানি মুলতবি রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিচারকদের আইনের পাশাপাশি নিজের
বিবেক অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আপনি যেদিন এ মামলায় চার্জ গঠনের আদেশ দেন,
সেদিন আমি আদালতে উপস্থিত ছিলাম। আপনার ক্লার্ক এজলাস কক্ষে এসে চার্জ
গঠনের কথা জানিয়ে যান। আপনি আদেশে লিখেছেন, আপনি খালেদা জিয়াকে দোষী না
নির্দোষ তা জিজ্ঞেস করে চার্জগঠনের আদেশ দেন। আপনি যা লিখেছিলেন তা সত্য
নয়। এ সময় বিচারক বলেন, পেছনে নয়, আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে। খালেদা
জিয়ার আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীনও হাইকোর্টে আবেদন শুনানির কথা জানিয়ে সময়
চান। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে সাবেক এটর্নি জেনারেল এজে
মোহাম্মদ আলী বলেন, আবেদন পেন্ডিং থাকা ও মুলতবি থাকা এক কথা নয়। হাইকোর্টে
আবেদন মুলতবি অবস্থায় থাকায় এ আদালতে শুনানির সুযোগ নেই। দুদকের পক্ষে
এডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট আইন
অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিল। এ আদেশ আপিল বিভাগও বহাল
রাখে। এ অবস্থায় এ সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির কোন সুযোগ নেই। শুনানি শেষে আদালত
খালেদা জিয়ার সময় আবেদন খারিজ করে দেয়। এ আবেদন পুনর্বিবেচনা করার জন্য
তাৎক্ষণিকভাবে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। এ আবেদনও নাকচ করে দেন বিচারক।
তিনি সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর নির্দেশ দেন।
প্রায় দেড় ঘণ্টা বিরতির পর বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে আদালতের বিচার কার্যক্রম আবারও শুরু হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া খারিজ করে দেয়া পুনর্বিবেচনার আবেদন আবারও পুনর্বিবেচনার জন্য বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই মামলার একজন আসামির পিতা মারা গেছেন। এজন্য সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির জন্য অনুরোধ করছি। এ সময় সানাউল্লাহর বক্তব্যের মধ্যেই মামলার সাক্ষী হারুনুর রশিদ তার জবানবন্দি শুরু করেন। বিচারক বলেন, আমাকে এখানে বিচারের জন্য বসানো হয়েছে। আমি এখানে বিচার করতে এসেছি। আমরা এমন কিছু করছি না যাতে আসামি প্রিজুডিস হয়। আইনজীবী সানাউল্লাহ বলেন, এই মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সবই মিথ্যা। কুয়েতের আমির কিছু টাকা পাঠিয়েছিলেন। আসামিরা কোন টাকা মারেন নাই। একটি টাকাও কেউ আত্মসাৎ করেন নাই। এটা প্রাইভেট ট্রাস্টের মামলা। দুদক এখানে মামলা করতে পারে না। তিনি বলেন, এই চেয়ারে যেই বসুক, এই প্রতিষ্ঠানকে (আদালত) ন্যায়বিচারের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বিচারকের উদ্দেশে বলেন, আবেদনে আমরা বলেছি আপনার ওপর আমাদের আস্থা নেই। কিন্তু বিচারকাজ শুরু করে আপনি আমাদের ডিনাই করছেন। এতে আপনার প্রতি আমাদের আস্থাহীনতা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আইনের ক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু এখানে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি বলতে পারবেন না আপনার পূর্বাপর কোন আদেশে আমাদের সন্দেহাতীত সুযোগ দিয়েছেন। এক পর্যায়ে খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা আইনজীবী। আপনি বিচারক। বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, দেশে সিনিয়র আইনজীবী আছেন ৭৩ জন। এর মধ্যে আমরাও আছি। সুপ্রিম কোর্টে আমরা যদি কোন আবেদন করি বিচারপতিরা তা শোনেন এবং তা বিবেচনা করে আদেশ দেন। কিন্তু আপনার এখানে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য একের পর এক আবেদন করেই যাচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে যারা আছেন এদের মধ্যে অনেকেই ভবিষ্যতে বিচারক বা বিচারপতি হবেন। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে কি শিখবে? জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা যদি এই শিক্ষা গ্রহণ করি যে, হাইকোর্টের সমস্ত আদেশ উপেক্ষা করে বিচারকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে তাহলে এ থেকে আইনজীবীরা কিছু্ই শিখবে না। তিনি বলেন, আপনি বলেছেন, এখানে বিচার করতে বসেছেন। কিন্তু বিচারের পাশাপাশি, আপনি এখানে ন্যায়বিচার করতে বসেছেন। একপর্যায়ে বিচারক বাসুদেব রায় প্রসিকিউশনের আইনজীবীদের বলার জন্য আহ্বান করলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, যে আবেদন তারা দাখিল করেছেন তাতে হাইকোর্টের কার্যক্রম শুরু হলে এ বিষয়ে শুনানি হবে। তাহলে সাক্ষ্য গ্রহণে বাধা কোথায়? এর উত্তরে জয়নুল আবেদীন খুরশীদ আলমকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী তারিখে আমরা যদি উচ্চ আদালত থেকে কোন আদেশ না আনতে পারি, তাহলে আর কোন মুলতবির আবেদন আমরা করবো না। এ সময় সাক্ষী হারুন-উর রশিদ আবারও জবানবন্দি শুরু করলে আদালতে কিছুক্ষণের জন্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সবাই দাঁড়িয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির জন্য চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী ইকবাল হোসেন বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি কোন আদালতে বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানালে সংশ্লিষ্ট বিচারক আর বিচারকাজ চালান না। কিন্তু আমরা আপনার প্রতি বারবার অনাস্থা জানানোর পরও আপনি বিচারকাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য এত অস্থির হয়ে পড়েছেন কেন? পরে সানাউল্লাহ মিয়া আবারও বিচারকের উদ্দেশে বলেন, আপনার আদালতে যারা শুনানি করেছেন তারা সবাই সম্মানিত আইনজীবী। এজে মোহাম্মদ আলী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল, জয়নুল আবেদীন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি। আমি নিজে বার কাউন্সিলের সিটিং মেম্বার। কিন্তু কাউকেই আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অবহেলা করছেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক দল করি। আমাদের নামে হাজার হাজার মামলা আছে। এসব মামলায় লাখ লাখ আসামি। আপনারা কি আমাদের জামিন দিচ্ছেন না? আমরা কি কারাগার থেকে বের হচ্ছি না? তাহলে এখানে আমাদের আবেদন গ্রহণ করতে বাধা কোথায়? এ পর্যায়ে বিচারক বাসুদেব রায় আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর নির্দেশ দেন। এ সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি করার জন্য সমস্বরে চিৎকার, চেঁচামেচি করতে থাকেন। পরে পুলিশ সদস্যরা এসে এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে যান। এর মধ্যেই সাক্ষী হারুনুর রশিদ তার জবানবন্দি শুরু করেন। কিন্তু মাইক্রোফোন নষ্ট থাকায় তিনি তা ছাড়াই জবানবন্দি দিতে থাকেন। প্রায় ৫ মিনিটের জবানবন্দিতে তিনি এই মামলার এজাহার সম্পর্কে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দির একপর্যায়ে বিচারক বাসুদেব রায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বসার জন্য নির্দেশ দিলেও আইনজীবীরা চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে বিচারক তার আসন থেকে নেমে গিয়ে তার খাসকামরায় চলে যান। কিছুক্ষণ পর তার ব্যক্তিগত সহকারী এসে সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ আগামী ২৪শে ডিসেম্বর হবে বলে জানিয়ে দেন। পরে এডভোকেট জয়নুল আবেদীন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, যে কোনভাবেই হোক খালেদা জিয়ার বিচার করার জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছে। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নিজেদেরকে দেশের সবচেয়ে সিনিয়র কাউন্সিল বলে দাবি করেন। কিন্তু মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে তাদের জুনিয়র আইনজীবীরা প্রতিবার আদালতে হট্টগোল করেন। আদালতের প্রতি অশোভন আচরণ করেন। কিন্তু সিনিয়র আইনজীবরা তাদের নিবৃত্ত করার কোন চেষ্টাই করেননা। শুনানিকালে খালেদা জিয়ার পক্ষে আসাদুজ্জামান, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সালেহউদ্দিন আহমেদ, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, মোহাম্মদ আলীসহ শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় দেড় ঘণ্টা বিরতির পর বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে আদালতের বিচার কার্যক্রম আবারও শুরু হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া খারিজ করে দেয়া পুনর্বিবেচনার আবেদন আবারও পুনর্বিবেচনার জন্য বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই মামলার একজন আসামির পিতা মারা গেছেন। এজন্য সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির জন্য অনুরোধ করছি। এ সময় সানাউল্লাহর বক্তব্যের মধ্যেই মামলার সাক্ষী হারুনুর রশিদ তার জবানবন্দি শুরু করেন। বিচারক বলেন, আমাকে এখানে বিচারের জন্য বসানো হয়েছে। আমি এখানে বিচার করতে এসেছি। আমরা এমন কিছু করছি না যাতে আসামি প্রিজুডিস হয়। আইনজীবী সানাউল্লাহ বলেন, এই মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সবই মিথ্যা। কুয়েতের আমির কিছু টাকা পাঠিয়েছিলেন। আসামিরা কোন টাকা মারেন নাই। একটি টাকাও কেউ আত্মসাৎ করেন নাই। এটা প্রাইভেট ট্রাস্টের মামলা। দুদক এখানে মামলা করতে পারে না। তিনি বলেন, এই চেয়ারে যেই বসুক, এই প্রতিষ্ঠানকে (আদালত) ন্যায়বিচারের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বিচারকের উদ্দেশে বলেন, আবেদনে আমরা বলেছি আপনার ওপর আমাদের আস্থা নেই। কিন্তু বিচারকাজ শুরু করে আপনি আমাদের ডিনাই করছেন। এতে আপনার প্রতি আমাদের আস্থাহীনতা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আইনের ক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু এখানে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি বলতে পারবেন না আপনার পূর্বাপর কোন আদেশে আমাদের সন্দেহাতীত সুযোগ দিয়েছেন। এক পর্যায়ে খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা আইনজীবী। আপনি বিচারক। বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, দেশে সিনিয়র আইনজীবী আছেন ৭৩ জন। এর মধ্যে আমরাও আছি। সুপ্রিম কোর্টে আমরা যদি কোন আবেদন করি বিচারপতিরা তা শোনেন এবং তা বিবেচনা করে আদেশ দেন। কিন্তু আপনার এখানে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য একের পর এক আবেদন করেই যাচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে যারা আছেন এদের মধ্যে অনেকেই ভবিষ্যতে বিচারক বা বিচারপতি হবেন। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে কি শিখবে? জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা যদি এই শিক্ষা গ্রহণ করি যে, হাইকোর্টের সমস্ত আদেশ উপেক্ষা করে বিচারকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে তাহলে এ থেকে আইনজীবীরা কিছু্ই শিখবে না। তিনি বলেন, আপনি বলেছেন, এখানে বিচার করতে বসেছেন। কিন্তু বিচারের পাশাপাশি, আপনি এখানে ন্যায়বিচার করতে বসেছেন। একপর্যায়ে বিচারক বাসুদেব রায় প্রসিকিউশনের আইনজীবীদের বলার জন্য আহ্বান করলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, যে আবেদন তারা দাখিল করেছেন তাতে হাইকোর্টের কার্যক্রম শুরু হলে এ বিষয়ে শুনানি হবে। তাহলে সাক্ষ্য গ্রহণে বাধা কোথায়? এর উত্তরে জয়নুল আবেদীন খুরশীদ আলমকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী তারিখে আমরা যদি উচ্চ আদালত থেকে কোন আদেশ না আনতে পারি, তাহলে আর কোন মুলতবির আবেদন আমরা করবো না। এ সময় সাক্ষী হারুন-উর রশিদ আবারও জবানবন্দি শুরু করলে আদালতে কিছুক্ষণের জন্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সবাই দাঁড়িয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির জন্য চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী ইকবাল হোসেন বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি কোন আদালতে বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানালে সংশ্লিষ্ট বিচারক আর বিচারকাজ চালান না। কিন্তু আমরা আপনার প্রতি বারবার অনাস্থা জানানোর পরও আপনি বিচারকাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য এত অস্থির হয়ে পড়েছেন কেন? পরে সানাউল্লাহ মিয়া আবারও বিচারকের উদ্দেশে বলেন, আপনার আদালতে যারা শুনানি করেছেন তারা সবাই সম্মানিত আইনজীবী। এজে মোহাম্মদ আলী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল, জয়নুল আবেদীন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি। আমি নিজে বার কাউন্সিলের সিটিং মেম্বার। কিন্তু কাউকেই আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অবহেলা করছেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক দল করি। আমাদের নামে হাজার হাজার মামলা আছে। এসব মামলায় লাখ লাখ আসামি। আপনারা কি আমাদের জামিন দিচ্ছেন না? আমরা কি কারাগার থেকে বের হচ্ছি না? তাহলে এখানে আমাদের আবেদন গ্রহণ করতে বাধা কোথায়? এ পর্যায়ে বিচারক বাসুদেব রায় আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর নির্দেশ দেন। এ সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি করার জন্য সমস্বরে চিৎকার, চেঁচামেচি করতে থাকেন। পরে পুলিশ সদস্যরা এসে এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে যান। এর মধ্যেই সাক্ষী হারুনুর রশিদ তার জবানবন্দি শুরু করেন। কিন্তু মাইক্রোফোন নষ্ট থাকায় তিনি তা ছাড়াই জবানবন্দি দিতে থাকেন। প্রায় ৫ মিনিটের জবানবন্দিতে তিনি এই মামলার এজাহার সম্পর্কে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দির একপর্যায়ে বিচারক বাসুদেব রায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বসার জন্য নির্দেশ দিলেও আইনজীবীরা চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে বিচারক তার আসন থেকে নেমে গিয়ে তার খাসকামরায় চলে যান। কিছুক্ষণ পর তার ব্যক্তিগত সহকারী এসে সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ আগামী ২৪শে ডিসেম্বর হবে বলে জানিয়ে দেন। পরে এডভোকেট জয়নুল আবেদীন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, যে কোনভাবেই হোক খালেদা জিয়ার বিচার করার জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছে। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নিজেদেরকে দেশের সবচেয়ে সিনিয়র কাউন্সিল বলে দাবি করেন। কিন্তু মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে তাদের জুনিয়র আইনজীবীরা প্রতিবার আদালতে হট্টগোল করেন। আদালতের প্রতি অশোভন আচরণ করেন। কিন্তু সিনিয়র আইনজীবরা তাদের নিবৃত্ত করার কোন চেষ্টাই করেননা। শুনানিকালে খালেদা জিয়ার পক্ষে আসাদুজ্জামান, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সালেহউদ্দিন আহমেদ, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, মোহাম্মদ আলীসহ শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
No comments