তারেককে পাশে পেতে সরকারকে হটাতে হবে: ফখরুল
আর দূরে নয়, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পাশে চান বিএনপির নেতারা। এ জন্য সরকারকে হটাতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। তারেক রহমানের ৫০তম জন্মদিন (২০ নভেম্বর) উপলক্ষে এটি আয়োজিত হয়। বিএনপির চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের মা বেগম খালেদা জিয়া দর্শক সারিতে বসে অনুষ্ঠানের আলোচনা শোনেন। মির্জা ফখরুল বলেন, “তারেক রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের পতাকা আঁকড়ে ধরেছিলেন বলে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত হোক না কেন, তা দেশের মানুষ মানবে না।” ফখরুল বলেন, “তারেক রহমানকে আর দূরে নয়, আমরা পাশে দেখতে চাই। তিনি ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) পাশে থেকে আমাদের উজ্জীবিত করবেন।” নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আপনারা যদি সত্যিই তারেক রহমানকে স্বাধীন দেশে দেখতে চান, তাহলে তার জন্মদিনে বর্তমান ফ্যাসিস্ট, জালেম, গণতন্ত্র ও মানুষ হত্যাকারী সরকারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ নিতে হবে। সরকারকে সরিয়ে তারেককে স্বাধীন বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেটাই হবে তার জন্মদিনের বড় উপহার।” প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, “তিনি নির্বাচন নিয়ে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে নির্বাচন নিয়ে আমাদের অভিযোগ সত্য প্রমাণ হয়েছে।” তারেক রহমান তার ৫১তম জন্মদিনে মুক্তমঞ্চে ফিরে আসবেন, এমন আশা ব্যক্ত করে হান্নান শাহ বলেন, “খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তারেক রহমান দুটি টাকাও সরকারি তহবিল থেকে খরচ করেননি। কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয় উপদেষ্টা হিসেবে কোটি কোটি টাকা নিচ্ছেন। এটা বাংলাদেশের মানুষের টাকা। মানি লন্ডারিংয়ের পর্যাুয়ে পড়ে। ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে এই আইন কার্যাকর করা হবে।” বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, “গণতন্ত্র ধ্বংস করে এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় এসে তারা মিডিয়ার ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছে। বহু গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। ” তিনি বলেন, “আজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। সর্বত্র ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজিতে জনগণ অতিষ্ঠ। এই অচলাবস্থা থেকে দেশের মুক্তি পেতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সবাইকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।” বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, “তারেক রহমান কোনো ফেরারি আসামি নন। তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছেন, সেটা মনে রাখতে হবে।তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।” মির্জা আব্বাস বলেন, “বর্তমান সরকারের অত্যাচার নির্যাতন হিটলার-মুসোলিনিকেও ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আন্দোলনের মাধ্যমেই এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।” সম্প্রতি লন্ডনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারেক রহমানের দেয়া এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “আমি আশা করি আগামী মাস তিনেকের মধ্যে তারেক রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কথাগুলো বলবেন।” আন্দোলনের আগে জনগণকে সচেতন করতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে সাবেক উপাচার্য বলেন, “একা বেশি দূর যাওয়া যায় না। তাই আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যথার্থতা যদি থাকে, আমার চিন্তাভাবনা যদি ঋজু হয়, তাহলে মার্চ–এপ্রিলের মধ্যে দেশের চেহারা এমন থাকবে না। মাঝখানের সময়ে আন্দোলনে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়বে।” এ ছাড়া বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান, বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ প্রমুখ। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। আলোচনার ফাঁকে তারেক রহমানকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
No comments