‘ধর্মপুত্রে’ কলঙ্কিত বিমান- তিন কর্মকর্তাসহ পাঁচজন গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে by টিপু সুলতান ও নজরুল ইসলাম
সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমানের চেয়ারম্যানের কথিত ‘ধর্মপুত্র’ মাহমুদুল হক ওরফে পলাশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একই জেলার বাসিন্দা ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছেলের মতো ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তিনি নিজেকে তাঁর ধর্মপুত্র দাবি করতেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের তিনজন পদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন। তাঁরা হলেন চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, ফ্লাইট সার্ভিস শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন ও ব্যবস্থাপক (শিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন। এঁদের সঙ্গে হারুন অর রশিদ নামে একজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বিমানবন্দর, উত্তরা ও বসুন্ধরা এলাকা থেকে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিবি জানায়। তাঁদের চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এসব বিমানকর্মীর বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দিক হোসেন জনসংযোগ শাখার মাধ্যমে প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন। পুলিশি ব্যবস্থা শেষ হলে বিমান বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে।
সোনা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিমানের অনেক কর্মী গ্রেপ্তার হলেও ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
খোদ বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদও এ নিয়ে প্রথম আলোর কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগে শুনতাম, কেবিন ক্রু, সুইপার, টেকনিশিয়ানের মতো ছোট কর্মচারীরা এসবে জড়িত হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন শহীদের মতো সিনিয়র পাইলট, চিফ অব প্ল্যানিং ও শিডিউলিংয়ে থেকে এমন কাজে জড়িত হয়েছে, আমি হতবাক হয়েছি।’
জানতে চাইলে সাবেক বিমানমন্ত্রী জি এম কাদের এ ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যখন বিমানমন্ত্রী ছিলেন, তখন এ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা সোনা চোরাচালানে জড়িত এমন অভিযোগ তিনি শোনেননি। এত সোনা ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, গত ছয় বছরে বিমানমন্ত্রী তিনবার রদবদল হয়েছে। বিমানের পরিচালনা পর্ষদ ও এমডি পদেও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে জামালউদ্দিনই বহাল আছেন, যার ফলে বিমানে তাঁর একছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আকাশ পরিবহন জগতে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে।
বিমান সূত্র জানায়, কোন পাইলট কবে কোন ফ্লাইটে দায়িত্ব পালন করবেন, তা ঠিক করতেন ক্যাপ্টেন শহীদ। আর ডিজিএম এমদাদ ও ব্যবস্থাপক তোজাম্মেল কেবিন ক্রুদের দায়িত্ব বণ্টন করতেন। অভিযোগ রয়েছে, চোরাচালান চক্রের পছন্দের কর্মীরা যাতে নির্দিষ্ট ফ্লাইটে দায়িত্ব পান, তা এসব কর্মকর্তা নিশ্চিত করতেন। আর এঁদের পদে থাকাটা নির্বিঘ্ন করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা ছিল পলাশের।
বিমানের একাধিক সূত্র জানায়, কোনো পদে না থেকেও পলাশ নিয়মিত বিমান কার্যালয়ে যেতেন। তিনি সেখানে বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের ‘ধর্মপুত্র’ বলে বহুল পরিচিত ছিলেন। ফলে সবাই তাঁকে সমীহ করে চলতেন।
অবশ্য এ বিষয়ে জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্মপুত্র কেমনে হয়? আর হলেই বা কী? এ দোহাই দিয়ে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। এ ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে।’
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ নিজেকে বিমানের ঠিকাদার ও বিমানের চেয়ারম্যানের ‘ধর্মপুত্র’ পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন, তিনি জামাল উদ্দিনের ছেলের বন্ধু।
বিমানের চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পলাশ কস্মিনকালেও আমার ছেলের বন্ধু হতে পারে না। সে কুমিল্লার ছেলে। আমার বাড়িও কুমিল্লা। এই সুবাদে সে আমার কাছে বিমানে ঠিকাদারি কাজ পেতে সহায়তা চায়। আমি বলেছি, সিস্টেমের বাইরে আমি সহায়তা করতে পারি না। তুমি অন্যদের মতো নিয়ম মেনে চেষ্টা করো।’ তিনি বলেন, ‘পলাশের স্ত্রী কেবিন ক্রু, সেই সুবাদে সে হয়তো এ ধরনের চক্রের হয়ে কোনো সুযোগ নিয়েছে।’
জানতে চাইলে ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, পলাশ বিমানবন্দর এলাকায় অতি প্রভাবশালী। তিনি সেখানকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করেন।
এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিং করেন মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু মাজহারুল আবছারকে দুই কেজি ৬০০ গ্রাম সোনা, ছয়টি আইপ্যাডসহ গ্রেপ্তার করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীকালে আদালতে তাঁর দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের মধ্যে পলাশ পুরো চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন। তিনি বলেন, এই পাঁচজন ছাড়াও সোনা পাচারে জড়িত বা সহায়তাকারী হিসেবে বিমানের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে।
আদালত সূত্র জানায়, ১৭ নভেম্বর মাজহারুল আবছার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সোনা পাচারে জড়িত হিসেবে আরও ৫৬ জনের নাম বলেছেন। তাঁদের মধ্যে ৫১ জন বিমানের ও পাঁচজন বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) কর্মী। তিনি আরও বলেন, সোনা পাচারকারী চক্রগুলো সিভিল এভিয়েশন, শুল্ক বিভাগ, বাংলাদেশ বিমানসহ অন্য বিমান সংস্থার একশ্রেণির কর্মীকে পাচারকাজে যুক্ত করেছে।
শেখ নাজমুল আলম বলেন, জবানবন্দিতে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
একজনকে সুবিধা দিতে পাইলটদের বয়স বৃদ্ধি: বিমান সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ক্যাপ্টেন শহীদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৮ অক্টোবর। এখনো তিনি কীভাবে চাকরি করছেন জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র মহাব্যবস্থাপক খান মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত সেপ্টেম্বরে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় পাইলটদের চাকরির বয়স তিন বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক আদেশ বা প্রজ্ঞাপন হয়নি, এই অবস্থায় ক্যাপ্টেন শহীদের বাড়তি সময় এ পদে বৈধ হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে বিমানের মুখপাত্র বলেন, পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হলে তিনি থাকতে পারেন।
বিমানের পাইলটরা কয়েক বছর ধরে বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু তা মানা হয়নি। এ নিয়ে মামলাও চলছে। এখন ক্যাপ্টেন শহীদকে সুযোগ দিতেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ঘটনায় প্রতীয়মান হয়, সোনা পাচারে আরও ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি জড়িত আছেন।
ঢাকায় ২০ মাসে সোনা উদ্ধার: শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআর সম্প্রতি তাঁর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে একটি পাচারের ঘটনায় জড়িত হিসেবে ১৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১০ জনই বিমানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী। তিনি বলেন, এসব তথ্য তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেবেন। তিনি মনে করেন, সঠিকভাবে তদন্ত হলে এঁদের ওপরে আর কারা আছেন, তা বেরিয়ে আসবে।
শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত, অর্থাৎ ২০ মাসে শুল্ক বিভাগ ও শুল্ক গোয়েন্দারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক হাজার ১৮ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে।
ঢাকা বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম জানান, গত জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোনা উদ্ধারের ঘটনায় ৯৫টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১৯ জন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের তিনজন পদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন। তাঁরা হলেন চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, ফ্লাইট সার্ভিস শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন ও ব্যবস্থাপক (শিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন। এঁদের সঙ্গে হারুন অর রশিদ নামে একজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বিমানবন্দর, উত্তরা ও বসুন্ধরা এলাকা থেকে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিবি জানায়। তাঁদের চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এসব বিমানকর্মীর বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দিক হোসেন জনসংযোগ শাখার মাধ্যমে প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন। পুলিশি ব্যবস্থা শেষ হলে বিমান বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে।
সোনা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিমানের অনেক কর্মী গ্রেপ্তার হলেও ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
খোদ বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদও এ নিয়ে প্রথম আলোর কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগে শুনতাম, কেবিন ক্রু, সুইপার, টেকনিশিয়ানের মতো ছোট কর্মচারীরা এসবে জড়িত হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন শহীদের মতো সিনিয়র পাইলট, চিফ অব প্ল্যানিং ও শিডিউলিংয়ে থেকে এমন কাজে জড়িত হয়েছে, আমি হতবাক হয়েছি।’
জানতে চাইলে সাবেক বিমানমন্ত্রী জি এম কাদের এ ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যখন বিমানমন্ত্রী ছিলেন, তখন এ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা সোনা চোরাচালানে জড়িত এমন অভিযোগ তিনি শোনেননি। এত সোনা ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, গত ছয় বছরে বিমানমন্ত্রী তিনবার রদবদল হয়েছে। বিমানের পরিচালনা পর্ষদ ও এমডি পদেও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে জামালউদ্দিনই বহাল আছেন, যার ফলে বিমানে তাঁর একছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আকাশ পরিবহন জগতে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে।
বিমান সূত্র জানায়, কোন পাইলট কবে কোন ফ্লাইটে দায়িত্ব পালন করবেন, তা ঠিক করতেন ক্যাপ্টেন শহীদ। আর ডিজিএম এমদাদ ও ব্যবস্থাপক তোজাম্মেল কেবিন ক্রুদের দায়িত্ব বণ্টন করতেন। অভিযোগ রয়েছে, চোরাচালান চক্রের পছন্দের কর্মীরা যাতে নির্দিষ্ট ফ্লাইটে দায়িত্ব পান, তা এসব কর্মকর্তা নিশ্চিত করতেন। আর এঁদের পদে থাকাটা নির্বিঘ্ন করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা ছিল পলাশের।
বিমানের একাধিক সূত্র জানায়, কোনো পদে না থেকেও পলাশ নিয়মিত বিমান কার্যালয়ে যেতেন। তিনি সেখানে বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের ‘ধর্মপুত্র’ বলে বহুল পরিচিত ছিলেন। ফলে সবাই তাঁকে সমীহ করে চলতেন।
অবশ্য এ বিষয়ে জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্মপুত্র কেমনে হয়? আর হলেই বা কী? এ দোহাই দিয়ে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। এ ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে।’
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ নিজেকে বিমানের ঠিকাদার ও বিমানের চেয়ারম্যানের ‘ধর্মপুত্র’ পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন, তিনি জামাল উদ্দিনের ছেলের বন্ধু।
বিমানের চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পলাশ কস্মিনকালেও আমার ছেলের বন্ধু হতে পারে না। সে কুমিল্লার ছেলে। আমার বাড়িও কুমিল্লা। এই সুবাদে সে আমার কাছে বিমানে ঠিকাদারি কাজ পেতে সহায়তা চায়। আমি বলেছি, সিস্টেমের বাইরে আমি সহায়তা করতে পারি না। তুমি অন্যদের মতো নিয়ম মেনে চেষ্টা করো।’ তিনি বলেন, ‘পলাশের স্ত্রী কেবিন ক্রু, সেই সুবাদে সে হয়তো এ ধরনের চক্রের হয়ে কোনো সুযোগ নিয়েছে।’
জানতে চাইলে ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, পলাশ বিমানবন্দর এলাকায় অতি প্রভাবশালী। তিনি সেখানকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করেন।
এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিং করেন মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু মাজহারুল আবছারকে দুই কেজি ৬০০ গ্রাম সোনা, ছয়টি আইপ্যাডসহ গ্রেপ্তার করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীকালে আদালতে তাঁর দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের মধ্যে পলাশ পুরো চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন। তিনি বলেন, এই পাঁচজন ছাড়াও সোনা পাচারে জড়িত বা সহায়তাকারী হিসেবে বিমানের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে।
আদালত সূত্র জানায়, ১৭ নভেম্বর মাজহারুল আবছার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সোনা পাচারে জড়িত হিসেবে আরও ৫৬ জনের নাম বলেছেন। তাঁদের মধ্যে ৫১ জন বিমানের ও পাঁচজন বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) কর্মী। তিনি আরও বলেন, সোনা পাচারকারী চক্রগুলো সিভিল এভিয়েশন, শুল্ক বিভাগ, বাংলাদেশ বিমানসহ অন্য বিমান সংস্থার একশ্রেণির কর্মীকে পাচারকাজে যুক্ত করেছে।
শেখ নাজমুল আলম বলেন, জবানবন্দিতে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
একজনকে সুবিধা দিতে পাইলটদের বয়স বৃদ্ধি: বিমান সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ক্যাপ্টেন শহীদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৮ অক্টোবর। এখনো তিনি কীভাবে চাকরি করছেন জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র মহাব্যবস্থাপক খান মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত সেপ্টেম্বরে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় পাইলটদের চাকরির বয়স তিন বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক আদেশ বা প্রজ্ঞাপন হয়নি, এই অবস্থায় ক্যাপ্টেন শহীদের বাড়তি সময় এ পদে বৈধ হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে বিমানের মুখপাত্র বলেন, পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হলে তিনি থাকতে পারেন।
বিমানের পাইলটরা কয়েক বছর ধরে বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু তা মানা হয়নি। এ নিয়ে মামলাও চলছে। এখন ক্যাপ্টেন শহীদকে সুযোগ দিতেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ঘটনায় প্রতীয়মান হয়, সোনা পাচারে আরও ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি জড়িত আছেন।
ঢাকায় ২০ মাসে সোনা উদ্ধার: শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআর সম্প্রতি তাঁর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে একটি পাচারের ঘটনায় জড়িত হিসেবে ১৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১০ জনই বিমানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী। তিনি বলেন, এসব তথ্য তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেবেন। তিনি মনে করেন, সঠিকভাবে তদন্ত হলে এঁদের ওপরে আর কারা আছেন, তা বেরিয়ে আসবে।
শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত, অর্থাৎ ২০ মাসে শুল্ক বিভাগ ও শুল্ক গোয়েন্দারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক হাজার ১৮ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে।
ঢাকা বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম জানান, গত জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোনা উদ্ধারের ঘটনায় ৯৫টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১৯ জন।
Such notorious 'events' is simply
ReplyDeleteunthinkable. Minister in charge
of 'Biman' is a 'stigmatized' Politician
Mr.Menon with no experience. who
is running the affairs of Biman.