মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাঙালি নিবন্ধন!
রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমান সংখ্যালঘুদের দীর্ঘ মেয়াদে পৈতৃক ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মিয়ানমার। আদমশুমারিতে গণনা থেকে বাদ দেয়ার পর এবার তাদের বাঙালি হিসেবে জোরপূর্বক নিবন্ধনের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটি। রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান নামে বিতর্কিত এ পরিকল্পনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মধ্যেও মিয়ানমার সরকারের এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রবল আস্থার সংকটের মধ্যে মিয়ানমারের নতুন পরিকল্পনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোনো রোহিঙ্গা নিজেদের বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিবন্ধন করতে না চাইলে তাদেরকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে ক্যাম্পে আটকে রাখবে দেশটির সামরিক জান্তা।
বাংলাদেশ সরকারের এক কূটনীতিক বলেছেন, মিয়ানমার থেকে সব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশটি রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করেছে। মিয়ানমার বরাবরই সন্দেহ করে থাকে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) নামের একটি জঙ্গি গ্র“পকে বাংলাদেশ প্রশ্রয় দেয়। বাংলাদেশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে আরএসও আশ্রয় দেয়ার সন্দেহ থেকেই গত মে মাসে দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে ছিল। তখন নায়েক মিজানুর রহমান নামের একজন বিজিবি সদস্য নিহত হয়েছিলেন। পরে কূটনৈতিক উদ্যোগে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় মিয়ানমার সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে সবিস্তারে জানতে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানকে সম্প্রতি ঢাকায় ডেকে এনে পরামর্শ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, অতিশিগগিরই মিয়ানমার তাদের রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবে। মিয়ানমার অবশ্য ইতিমধ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এই বিষয়ে সহায়তা কামনা করেছে।
বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশংকা করছেন, রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘ মেয়াদে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে- যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ভেস্তে দিতে পারে। রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করার পরও তাদেরকে বাঙালি হিসেবে নিবন্ধিত করার অর্থই হল রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। তারা কিংবা তাদের পূর্ব পুরুষেরা বাংলাদেশ থেকে গেছেন- এমন ধারণা সৃষ্টির দুরভিসন্ধি থেকে মিয়ানমার সরকার এই পরিকল্পনা নিয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ। এটি সমস্যার বলপূর্বক সমাধানের চেষ্টা বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল।
বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সালের জুনে মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সহিংস ঘটনায় এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহারা হয়েছেন। তারপর এই বিষয়টি তদন্ত করার লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের সুপারিশের আলোকে রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এই অ্যাকশন প্ল্যান এখনও জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি। তবে জাতিসংঘে তার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে এই বিষয়ে সহায়তা কামনা করেছে মিয়ানমার। শিগগিরই দেশটি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। মিয়ানমারে চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হলেও রোহিঙ্গাদের গণনা করা হয়নি। এখন রোহিঙ্গাদের কেউ নিজেদের বাঙালি হিসেবে নিবন্ধনের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করলে তাদেরকে পৃথক ক্যাম্পে রাখা হবে বলেও অ্যাকশন প্ল্যানে বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনাকে বৈষম্যমূলক হিসেবে অভিহিত করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে বিশ্বাসযোগ্য রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে খসড়া করণীয় সুপারিশ ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করেছে। তবে বিষয়টি এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সম্মতির অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশের করণীয় সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুুলেছে। আমরা এই বিষয়ে একটি খসড়া পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এটি এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সম্মতির অপেক্ষায় আছে। মিয়ানমার যদিও জাতিসংঘসহ কোনো কোনো পর্যায়ে পরিকল্পনাটি অবহিত করেছে, কিন্তু এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি। তবে রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান ঘোষণা করলে বাংলাদেশের এই ব্যাপারে আপত্তি থাকবে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন।
এদিকে, জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকায় ইউএনএইচসিআর দফতর যুগান্তরের কাছে একটি লিখিত প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, এটি (মিয়ানমার) সরকারের নেতৃত্বাধীন একটি পরিকল্পনা, যা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। যদি দেশটির সরকার ইউএনএইচসিআরের কাছে এ ব্যাপারে কোনো সমর্থন চায় তবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং আমাদের সহায়তা সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী যাদের নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে, তাদের মানবিক সহায়তা এবং সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে আমাদের মানবিক নীতি ও ম্যান্ডেটের আলোকেই হবে।
এদিকে ৩১ আগস্ট ঢাকায় দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, কক্সবাজারে অবস্থিত দুটি শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দুমাসের মধ্যে শুরু হবে। এ নিয়ে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি দুমাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এরই মধ্যে রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় নতুন পরিকল্পনা দীর্ঘ বিরতির পর প্রত্যাবাসনের নতুন পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার আশংকাও রয়েছে।
রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যানের মতো বাংলাদেশের জন্য বৈরী ও বিতর্কিত পরিকল্পনা সত্ত্বেও মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সীমান্তসহ অপরাপর ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার দুয়ার খোলা রাখতে চায় বাংলাদেশ। এই লক্ষ্যে দেশটির প্রেসিডেন্টের পর দ্বিতীয় শক্তিশালী ব্যক্তি পার্লামেন্টের স্পিকারের বাংলাদেশ সফরের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের স্পিকারকে অনানুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বাংলাদেশ সফরে সম্মতিও জানিয়েছেন। এখন দিনক্ষণ চূড়ান্ত করাসহ অপরাপর প্রস্তুতির কাজ চলছে।
বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফিরতি সফরে বাংলাদেশে আসতে পারেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের প্রধান। অপরদিকে, মিয়ানমার সফরে যেতে পারেন বাংলাদেশের নৌবাহিনী প্রধান। এভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার নীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মধ্যেও মিয়ানমার সরকারের এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রবল আস্থার সংকটের মধ্যে মিয়ানমারের নতুন পরিকল্পনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোনো রোহিঙ্গা নিজেদের বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিবন্ধন করতে না চাইলে তাদেরকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে ক্যাম্পে আটকে রাখবে দেশটির সামরিক জান্তা।
বাংলাদেশ সরকারের এক কূটনীতিক বলেছেন, মিয়ানমার থেকে সব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশটি রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করেছে। মিয়ানমার বরাবরই সন্দেহ করে থাকে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) নামের একটি জঙ্গি গ্র“পকে বাংলাদেশ প্রশ্রয় দেয়। বাংলাদেশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে আরএসও আশ্রয় দেয়ার সন্দেহ থেকেই গত মে মাসে দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে ছিল। তখন নায়েক মিজানুর রহমান নামের একজন বিজিবি সদস্য নিহত হয়েছিলেন। পরে কূটনৈতিক উদ্যোগে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় মিয়ানমার সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে সবিস্তারে জানতে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানকে সম্প্রতি ঢাকায় ডেকে এনে পরামর্শ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, অতিশিগগিরই মিয়ানমার তাদের রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবে। মিয়ানমার অবশ্য ইতিমধ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এই বিষয়ে সহায়তা কামনা করেছে।
বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশংকা করছেন, রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘ মেয়াদে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে- যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ভেস্তে দিতে পারে। রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করার পরও তাদেরকে বাঙালি হিসেবে নিবন্ধিত করার অর্থই হল রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। তারা কিংবা তাদের পূর্ব পুরুষেরা বাংলাদেশ থেকে গেছেন- এমন ধারণা সৃষ্টির দুরভিসন্ধি থেকে মিয়ানমার সরকার এই পরিকল্পনা নিয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ। এটি সমস্যার বলপূর্বক সমাধানের চেষ্টা বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল।
বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সালের জুনে মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সহিংস ঘটনায় এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহারা হয়েছেন। তারপর এই বিষয়টি তদন্ত করার লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের সুপারিশের আলোকে রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এই অ্যাকশন প্ল্যান এখনও জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি। তবে জাতিসংঘে তার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে এই বিষয়ে সহায়তা কামনা করেছে মিয়ানমার। শিগগিরই দেশটি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। মিয়ানমারে চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হলেও রোহিঙ্গাদের গণনা করা হয়নি। এখন রোহিঙ্গাদের কেউ নিজেদের বাঙালি হিসেবে নিবন্ধনের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করলে তাদেরকে পৃথক ক্যাম্পে রাখা হবে বলেও অ্যাকশন প্ল্যানে বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনাকে বৈষম্যমূলক হিসেবে অভিহিত করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে বিশ্বাসযোগ্য রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে খসড়া করণীয় সুপারিশ ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করেছে। তবে বিষয়টি এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সম্মতির অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশের করণীয় সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুুলেছে। আমরা এই বিষয়ে একটি খসড়া পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এটি এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সম্মতির অপেক্ষায় আছে। মিয়ানমার যদিও জাতিসংঘসহ কোনো কোনো পর্যায়ে পরিকল্পনাটি অবহিত করেছে, কিন্তু এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি। তবে রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যান ঘোষণা করলে বাংলাদেশের এই ব্যাপারে আপত্তি থাকবে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন।
এদিকে, জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকায় ইউএনএইচসিআর দফতর যুগান্তরের কাছে একটি লিখিত প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, এটি (মিয়ানমার) সরকারের নেতৃত্বাধীন একটি পরিকল্পনা, যা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। যদি দেশটির সরকার ইউএনএইচসিআরের কাছে এ ব্যাপারে কোনো সমর্থন চায় তবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং আমাদের সহায়তা সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী যাদের নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে, তাদের মানবিক সহায়তা এবং সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে আমাদের মানবিক নীতি ও ম্যান্ডেটের আলোকেই হবে।
এদিকে ৩১ আগস্ট ঢাকায় দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, কক্সবাজারে অবস্থিত দুটি শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দুমাসের মধ্যে শুরু হবে। এ নিয়ে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি দুমাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এরই মধ্যে রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় নতুন পরিকল্পনা দীর্ঘ বিরতির পর প্রত্যাবাসনের নতুন পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার আশংকাও রয়েছে।
রাখাইন অ্যাকশন প্ল্যানের মতো বাংলাদেশের জন্য বৈরী ও বিতর্কিত পরিকল্পনা সত্ত্বেও মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সীমান্তসহ অপরাপর ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার দুয়ার খোলা রাখতে চায় বাংলাদেশ। এই লক্ষ্যে দেশটির প্রেসিডেন্টের পর দ্বিতীয় শক্তিশালী ব্যক্তি পার্লামেন্টের স্পিকারের বাংলাদেশ সফরের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের স্পিকারকে অনানুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বাংলাদেশ সফরে সম্মতিও জানিয়েছেন। এখন দিনক্ষণ চূড়ান্ত করাসহ অপরাপর প্রস্তুতির কাজ চলছে।
বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফিরতি সফরে বাংলাদেশে আসতে পারেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের প্রধান। অপরদিকে, মিয়ানমার সফরে যেতে পারেন বাংলাদেশের নৌবাহিনী প্রধান। এভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার নীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
No comments