শিক্ষক হত্যার সুষ্ঠু বিচার হবে তো? by ড. সুলতান মাহমুদ রানা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলামের নির্মম মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে কয়েকদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এ লেখা তৈরির সময়ও আমরা কালো ব্যাজ ধারণ করছি। ইতিমধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি শেষ হয়েছে। অবশ্য সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলছেই। এমন নানা কঠোর কর্মসূচি পালিত হবে এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু কখনও আমরা তাকে আর ফিরে পাব না। এমনকি অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে হত্যার যথাযথ বিচার এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে কি-না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
শিক্ষকের নির্মম হত্যাকাণ্ড কারও পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা যেমন নতুন কিছু নয়, তেমনি ধর্মঘট ও ক্লাস বর্জনের কর্মসূচিও নতুন নয়। কর্মসূচি আসে এবং চলে যায়, কিন্তু যাকে আমরা হারাই তাকে আর কখনোই ফিরে পাই না। প্রশ্ন হল, তাহলে এসব কর্মসূচি পালন করে কী লাভ? এমন হত্যাকাণ্ডই বা আর কত?
কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। নানা ধোঁয়াশার বেড়াজালে চলছে তদন্তকাজ। এটুকু অন্তত আশার কথা যে, তদন্ত-অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। কোনো দলের বিবেচনায় নয়, কোনো ব্যক্তি বিবেচনায় নয়, একজন শিক্ষক বিবেচনায়, সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার এই নির্মম মৃত্যুর দায় কি আমরা এড়াতে পারি? কে দায় নেবে আর নেবে না সেটি বড় কথা নয়, শিক্ষকের নিরাপত্তার প্রশ্নটি নিঃসন্দেহে গোটা জাতির। কিন্তু আজ কি গোটা জাতি এ হত্যার দায় নিতে প্রস্তুত? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা করেন। মুক্তচিন্তা ও উদার ধারার মানুষ হিসেবে একজন শিক্ষকের নির্মম মৃত্যুকে মানবতার চরম অবক্ষয় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। মানবতা ও উদার চিন্তার মানুষ হিসেবে তার এই হত্যাকাণ্ডকে নিকৃষ্টতম ঘটনা বলা যায়। শিক্ষক হত্যাকাণ্ড মানবতাকে হত্যা করার শামিল। এ হত্যার ঘটনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক জানিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম এ নির্দেশের যথাযথ বাস্তবায়নের।
গত এক দশকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও দু’জন শিক্ষক দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। ২০০৪ সালে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসকে। আর ২০০৬ সালে খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বারবার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় এখন প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন। আজ আমরা কেউই নিরাপদ নই। দিনে-দুপুরে একটার পর একটা এমন নৃশংস ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আজ আমরা যেমন শোকাহত, তেমনি শংকিত ও উৎকণ্ঠিতও বটে। কখন কোন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে যাই, এই ভয়ে হারিয়ে ফেলছি স্বাধীনভাবে কাজ করার শক্তি, সাহস ও মনোবল। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ক্যাম্পাসে কেউ নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারছেন না। মুক্তচিন্তার জায়গাটি শংকুচিত হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই।
মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকের নির্মম মৃত্যুর শোকে আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সমাজ শোকে মুহ্যমান। এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নরপিশাচদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির দুঃসাহস কারও না হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হত্যা, শিক্ষকের ওপর হামলা, জখম, শিক্ষকের বাসে হামলা- প্রতিনিয়তই এমন বর্বোরচিত ঘটনা ঘটছে। একের পর এক শিক্ষক হত্যাকাণ্ড এবং তার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার ধারাবাহিকতায় এমন ঘটনা ঘটতেই থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক এসব ঘটনার প্রতিবাদে ঘটনা-পরবর্তী কয়েকদিন আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করেন অপরাধীদের গ্রেফতার কিংবা শাস্তির দাবিতে। সরকার, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিশ্র“তি দেয়া হয় সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। কিন্তু কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি আর নিশ্চিত হয় না।
গত এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের পাশাপাশি বহু শিক্ষার্থীও নিহত হয়েছেন। কোনোটির সুষ্ঠু বিচার হয়েছে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিগত বছরগুলোয় নিহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবার আজও তাকিয়ে আছে কখন হবে তাদের পিতা কিংবা সন্তানের হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি। এসব হত্যার বিচার আদৌ কোনোদিন হবে কি?
শিক্ষক, সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রনেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় এর আগেও শিক্ষক ও ছাত্র ধর্মঘট কিংবা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আবার কয়েকদিন পরই তা থেমে গেছে। ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমরাও সেটি চাই। কিন্তু যে বিচারের কিংবা সুষ্ঠু তদন্তের আশায় এমন ধর্মঘটের কর্মসূচি স্থগিত হয়, তা আদৌ কি আলোর মুখ দেখতে পায়? বিচার হয় না বলেই এমন হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যদি একেএম শফিউল স্যারের হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার না হয়, তাহলে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটতেই থাকবে। দুর্বৃত্তদের সাহস ও শক্তি আরও বেড়ে যাবে। কোনোভাবেই তা থামানো সম্ভব হবে না।
ড. সুলতান মাহমুদ রানা : সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকের নির্মম হত্যাকাণ্ড কারও পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা যেমন নতুন কিছু নয়, তেমনি ধর্মঘট ও ক্লাস বর্জনের কর্মসূচিও নতুন নয়। কর্মসূচি আসে এবং চলে যায়, কিন্তু যাকে আমরা হারাই তাকে আর কখনোই ফিরে পাই না। প্রশ্ন হল, তাহলে এসব কর্মসূচি পালন করে কী লাভ? এমন হত্যাকাণ্ডই বা আর কত?
কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। নানা ধোঁয়াশার বেড়াজালে চলছে তদন্তকাজ। এটুকু অন্তত আশার কথা যে, তদন্ত-অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। কোনো দলের বিবেচনায় নয়, কোনো ব্যক্তি বিবেচনায় নয়, একজন শিক্ষক বিবেচনায়, সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার এই নির্মম মৃত্যুর দায় কি আমরা এড়াতে পারি? কে দায় নেবে আর নেবে না সেটি বড় কথা নয়, শিক্ষকের নিরাপত্তার প্রশ্নটি নিঃসন্দেহে গোটা জাতির। কিন্তু আজ কি গোটা জাতি এ হত্যার দায় নিতে প্রস্তুত? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা করেন। মুক্তচিন্তা ও উদার ধারার মানুষ হিসেবে একজন শিক্ষকের নির্মম মৃত্যুকে মানবতার চরম অবক্ষয় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। মানবতা ও উদার চিন্তার মানুষ হিসেবে তার এই হত্যাকাণ্ডকে নিকৃষ্টতম ঘটনা বলা যায়। শিক্ষক হত্যাকাণ্ড মানবতাকে হত্যা করার শামিল। এ হত্যার ঘটনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক জানিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম এ নির্দেশের যথাযথ বাস্তবায়নের।
গত এক দশকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও দু’জন শিক্ষক দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। ২০০৪ সালে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসকে। আর ২০০৬ সালে খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বারবার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় এখন প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন। আজ আমরা কেউই নিরাপদ নই। দিনে-দুপুরে একটার পর একটা এমন নৃশংস ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আজ আমরা যেমন শোকাহত, তেমনি শংকিত ও উৎকণ্ঠিতও বটে। কখন কোন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে যাই, এই ভয়ে হারিয়ে ফেলছি স্বাধীনভাবে কাজ করার শক্তি, সাহস ও মনোবল। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ক্যাম্পাসে কেউ নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারছেন না। মুক্তচিন্তার জায়গাটি শংকুচিত হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই।
মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকের নির্মম মৃত্যুর শোকে আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সমাজ শোকে মুহ্যমান। এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নরপিশাচদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির দুঃসাহস কারও না হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হত্যা, শিক্ষকের ওপর হামলা, জখম, শিক্ষকের বাসে হামলা- প্রতিনিয়তই এমন বর্বোরচিত ঘটনা ঘটছে। একের পর এক শিক্ষক হত্যাকাণ্ড এবং তার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার ধারাবাহিকতায় এমন ঘটনা ঘটতেই থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক এসব ঘটনার প্রতিবাদে ঘটনা-পরবর্তী কয়েকদিন আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করেন অপরাধীদের গ্রেফতার কিংবা শাস্তির দাবিতে। সরকার, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিশ্র“তি দেয়া হয় সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। কিন্তু কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি আর নিশ্চিত হয় না।
গত এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের পাশাপাশি বহু শিক্ষার্থীও নিহত হয়েছেন। কোনোটির সুষ্ঠু বিচার হয়েছে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিগত বছরগুলোয় নিহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবার আজও তাকিয়ে আছে কখন হবে তাদের পিতা কিংবা সন্তানের হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি। এসব হত্যার বিচার আদৌ কোনোদিন হবে কি?
শিক্ষক, সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রনেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় এর আগেও শিক্ষক ও ছাত্র ধর্মঘট কিংবা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আবার কয়েকদিন পরই তা থেমে গেছে। ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমরাও সেটি চাই। কিন্তু যে বিচারের কিংবা সুষ্ঠু তদন্তের আশায় এমন ধর্মঘটের কর্মসূচি স্থগিত হয়, তা আদৌ কি আলোর মুখ দেখতে পায়? বিচার হয় না বলেই এমন হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যদি একেএম শফিউল স্যারের হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার না হয়, তাহলে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটতেই থাকবে। দুর্বৃত্তদের সাহস ও শক্তি আরও বেড়ে যাবে। কোনোভাবেই তা থামানো সম্ভব হবে না।
ড. সুলতান মাহমুদ রানা : সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
No comments