সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুর রহমান কারাগারে
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. ফজলুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ‘কুরুচিপূর্ণ’ ও ‘উস্কানিমূলক’ বক্তৃতা রাখার অভিযোগে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জামিন নামঞ্জুরের পর তাকে গতকাল বিকালে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে সকালে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত এই নেতা কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। বেলা পৌনে ৩ টার দিকে আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশের পর তাকে কারাগারে নেয়ার সময় নেতাকর্মীরা আদালত এলাকায় বিক্ষোভ ও পরে শহরের কালীবাড়ি মোড় এলাকায় সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তার জামিন আবেদনের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা কার্যকর করা হয়নি বলে দাবি করেন।
গত ২৩শে মার্চ ইটনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ১৯শে মার্চ রাতে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম কামাল হোসেনের এক নির্বাচনী পথসভায় এডভোকেট মো. ফজলুর রহমান বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিএনপি নেতা এডভোকেট মো. ফজলুর রহমান কুরুচিপূর্ণ ও উস্কানিমূলক কথা বলেছেন এমন অভিযোগ করে মো. আলী হোসেন নামে এক আওয়ামী লীগ সমর্থক তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ইটনা থানায় একটি জিডি (নং-৫১১, তাং-১৯/০৩/১৪) করেন। গত ১৮ই আগস্ট পুলিশ নন এফআইআর মামলা হিসেবে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। মেয়ের ভর্তি এবং নিজের চিকিৎসার প্রয়োজনে এডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময় গত ২৭শে আগস্ট কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪নং আমলি আদালতের বিচারক হুসাইন মুহাম্মদ ফজলুল বারী মামলাটি আমলে নিয়ে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ২৭শে অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এডভোকেট মো. ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে নির্দেশ দেন। গত ২৯শে অক্টোবর হাইকোর্টের এ নির্দেশের ওপর চেম্বার জজ স্থগিতাদেশ দেন। পরে গত ৬ই নভেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগের আদেশের পর ফজলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আসেন এবং গতকাল কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২-এ আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন।
আদালতে বেলা ১০টা ৫৫ মিনিটে শুরু হওয়া জামিন আবেদনের শুনানিতে ফজলুর রহমানের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট ফজলুল কবির, এডভোকেট মীর ইকবাল হোসেন বিপ্লব, এডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, এডভোকেট রহম আলী, এডভোকেট আমিনুল ইসলাম রতন, এডভোকেট শরীফুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে পিপি শাহ আজিজুল হক, এপিপি আমিনুল হক চুন্নু, এডভোকেট এমএ রশিদ, এডভোকেট অজয় কুমার দাস প্রমুখ জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানিতে অংশ নেন। এডভোকেট ফজলুল কবির শুনানিতে বলেন, ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আইনত সিদ্ধ নয়। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা আদালতে উত্থাপন করে বলেন, ওই ধারায় উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকার নিজে অথবা সরকারের প্রতিনিধি বাদী হয়ে মামলা করতে হয়। কিন্তু ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে একজন আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। তিনি মামলার পুলিশ প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আবদুল হামিদ খোন্দকার মোশ্তাকের দল করতেন, আজকে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তিনি খোন্দকার মোশ্তাকের দল করতেন, যিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন। এই কথা আমি কিশোরগঞ্জে হাজার হাজার লোকের সম্মুখে কইছি। এইটা শেখ মজিবের আওয়ামী লীগ না, হাসিনা লীগ। শেখ হাসিনা তার গোষ্ঠী গেরাত, সৈয়দ আশরাফ তার গোষ্ঠী গেরাত, আবদুল হামিদ তার আত্মীয় স্বজন নিয়া এই দল করে।’ ফজলুর রহমান যদি এই বক্তব্য রেখেও থাকেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে না। জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে পিপি শাহ আজিজুল হক বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলাটি হয়েছে। মহামান্য প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি তথা রাষ্ট্রপ্রধান। তাকে কটূক্তি করে দেয়া ফজলুর রহমানের বক্তব্য আলী হোসেন শুনে নিজের বিবেকবোধ থেকে এগিয়ে এসেছেন। ফজলুর রহমান তার বক্তৃতার মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত এমনটি উল্লেখ করে পিপি শাহ আজিজ শুনানিতে ফজলুর রহমানের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। প্রায় ৪০ মিনিট শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে আদালত কক্ষে আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে বিচারক আদেশ পরে দেয়া হবে বলে জানান। পরে বেলা পৌনে ৩টার দিকে আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ফজলুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। জামিন আবেদনের শুনানির সময় আদালত এলাকায় জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ দলের ও অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ফজলুর রহমানের নিজ নির্বাচনী এলাকা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকেও কাকডাকা ভোরে রওনা দিয়ে শ’ শ’ নেতাকর্মী-সমর্থক আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এ অবস্থায় সকাল থেকে আদালত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ প্রিজন ভ্যান প্রস্তুত রাখা হয়। আদালতের আদেশের পর ফজলুর রহমানকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা প্রিজন ভ্যানের পিছু পিছু বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন। পরে শহরের কালীবাড়ি মোড়ে গিয়ে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশে জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, নিজাম উদ্দিন খান নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাঈল মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার বাঁধন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ সুমন প্রমুখ ছাড়াও ফজলুর রহমানের সহধর্মিণী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল উম্মে কুলসুম রেখা বক্তৃতা করেন।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান চুন্নু বলেন, আমি ১০ বছর বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি। সাধারণ মানুষ বিচার চেয়েছে, বিচার নিষ্পত্তি করেছি। ওই সময়ে বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যখন বিচার প্রার্থনা করতো, তাদেরকেও আমরা ন্যায়বিচার করেছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশ ভালভাবে চলতে পারে না।
উম্মে কুলসুম রেখা তার বক্তৃতায় বলেন, তাকে অন্যায় ভাবে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দেয়া হয়েছে। তিনি বিদেশে ছিলেন, যাতে দেশে না আসতে পারেন এ জন্য তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তিনি দেশে ফিরেছেন। সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা কার্যকর করা হয়নি। আইনের মাধ্যমে ফজলুর রহমানকে মুক্ত করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
সাজানো মামলায় ফজলুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে: বিএনপি
মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এড. ফজলুর রহমানের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, অপহরণ, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এডভোকেট ফজলুর রহমানের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এটা জনবিচ্ছিন্ন সরকারের ধারাবাহিক অপকর্মের অংশ। মির্জা আলমগীর বলেন, ক্ষমতাসীনরা মনে করছে, বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা যাবে। কিন্তু তাদের এই মনোবাসনা কোনদিনই পূরণ হবে না। অবিলম্বে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। এদিকে ঢাকা মহানগরের চকবাজার থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খতিবুর রহমান খোকন, শ্যামপুর থানা বিএনপি নেতা মো. ইবরাহিম এবং মো. জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তারা।
গত ২৩শে মার্চ ইটনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ১৯শে মার্চ রাতে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম কামাল হোসেনের এক নির্বাচনী পথসভায় এডভোকেট মো. ফজলুর রহমান বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিএনপি নেতা এডভোকেট মো. ফজলুর রহমান কুরুচিপূর্ণ ও উস্কানিমূলক কথা বলেছেন এমন অভিযোগ করে মো. আলী হোসেন নামে এক আওয়ামী লীগ সমর্থক তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ইটনা থানায় একটি জিডি (নং-৫১১, তাং-১৯/০৩/১৪) করেন। গত ১৮ই আগস্ট পুলিশ নন এফআইআর মামলা হিসেবে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। মেয়ের ভর্তি এবং নিজের চিকিৎসার প্রয়োজনে এডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময় গত ২৭শে আগস্ট কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪নং আমলি আদালতের বিচারক হুসাইন মুহাম্মদ ফজলুল বারী মামলাটি আমলে নিয়ে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ২৭শে অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এডভোকেট মো. ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে নির্দেশ দেন। গত ২৯শে অক্টোবর হাইকোর্টের এ নির্দেশের ওপর চেম্বার জজ স্থগিতাদেশ দেন। পরে গত ৬ই নভেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগের আদেশের পর ফজলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আসেন এবং গতকাল কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২-এ আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন।
আদালতে বেলা ১০টা ৫৫ মিনিটে শুরু হওয়া জামিন আবেদনের শুনানিতে ফজলুর রহমানের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট ফজলুল কবির, এডভোকেট মীর ইকবাল হোসেন বিপ্লব, এডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, এডভোকেট রহম আলী, এডভোকেট আমিনুল ইসলাম রতন, এডভোকেট শরীফুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে পিপি শাহ আজিজুল হক, এপিপি আমিনুল হক চুন্নু, এডভোকেট এমএ রশিদ, এডভোকেট অজয় কুমার দাস প্রমুখ জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানিতে অংশ নেন। এডভোকেট ফজলুল কবির শুনানিতে বলেন, ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আইনত সিদ্ধ নয়। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা আদালতে উত্থাপন করে বলেন, ওই ধারায় উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকার নিজে অথবা সরকারের প্রতিনিধি বাদী হয়ে মামলা করতে হয়। কিন্তু ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে একজন আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। তিনি মামলার পুলিশ প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আবদুল হামিদ খোন্দকার মোশ্তাকের দল করতেন, আজকে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তিনি খোন্দকার মোশ্তাকের দল করতেন, যিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন। এই কথা আমি কিশোরগঞ্জে হাজার হাজার লোকের সম্মুখে কইছি। এইটা শেখ মজিবের আওয়ামী লীগ না, হাসিনা লীগ। শেখ হাসিনা তার গোষ্ঠী গেরাত, সৈয়দ আশরাফ তার গোষ্ঠী গেরাত, আবদুল হামিদ তার আত্মীয় স্বজন নিয়া এই দল করে।’ ফজলুর রহমান যদি এই বক্তব্য রেখেও থাকেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে না। জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে পিপি শাহ আজিজুল হক বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলাটি হয়েছে। মহামান্য প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি তথা রাষ্ট্রপ্রধান। তাকে কটূক্তি করে দেয়া ফজলুর রহমানের বক্তব্য আলী হোসেন শুনে নিজের বিবেকবোধ থেকে এগিয়ে এসেছেন। ফজলুর রহমান তার বক্তৃতার মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত এমনটি উল্লেখ করে পিপি শাহ আজিজ শুনানিতে ফজলুর রহমানের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। প্রায় ৪০ মিনিট শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে আদালত কক্ষে আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে বিচারক আদেশ পরে দেয়া হবে বলে জানান। পরে বেলা পৌনে ৩টার দিকে আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ফজলুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। জামিন আবেদনের শুনানির সময় আদালত এলাকায় জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ দলের ও অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ফজলুর রহমানের নিজ নির্বাচনী এলাকা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকেও কাকডাকা ভোরে রওনা দিয়ে শ’ শ’ নেতাকর্মী-সমর্থক আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এ অবস্থায় সকাল থেকে আদালত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ প্রিজন ভ্যান প্রস্তুত রাখা হয়। আদালতের আদেশের পর ফজলুর রহমানকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা প্রিজন ভ্যানের পিছু পিছু বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন। পরে শহরের কালীবাড়ি মোড়ে গিয়ে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশে জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, নিজাম উদ্দিন খান নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাঈল মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার বাঁধন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ সুমন প্রমুখ ছাড়াও ফজলুর রহমানের সহধর্মিণী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল উম্মে কুলসুম রেখা বক্তৃতা করেন।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান চুন্নু বলেন, আমি ১০ বছর বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি। সাধারণ মানুষ বিচার চেয়েছে, বিচার নিষ্পত্তি করেছি। ওই সময়ে বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যখন বিচার প্রার্থনা করতো, তাদেরকেও আমরা ন্যায়বিচার করেছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশ ভালভাবে চলতে পারে না।
উম্মে কুলসুম রেখা তার বক্তৃতায় বলেন, তাকে অন্যায় ভাবে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দেয়া হয়েছে। তিনি বিদেশে ছিলেন, যাতে দেশে না আসতে পারেন এ জন্য তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তিনি দেশে ফিরেছেন। সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা কার্যকর করা হয়নি। আইনের মাধ্যমে ফজলুর রহমানকে মুক্ত করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
সাজানো মামলায় ফজলুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে: বিএনপি
মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এড. ফজলুর রহমানের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, অপহরণ, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এডভোকেট ফজলুর রহমানের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এটা জনবিচ্ছিন্ন সরকারের ধারাবাহিক অপকর্মের অংশ। মির্জা আলমগীর বলেন, ক্ষমতাসীনরা মনে করছে, বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা যাবে। কিন্তু তাদের এই মনোবাসনা কোনদিনই পূরণ হবে না। অবিলম্বে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। এদিকে ঢাকা মহানগরের চকবাজার থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খতিবুর রহমান খোকন, শ্যামপুর থানা বিএনপি নেতা মো. ইবরাহিম এবং মো. জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তারা।
No comments