সাত খুন তদন্তের ধরন নিয়ে প্রশ্ন আদালতের
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনা তদন্তের ধরন ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, মঙ্গলবার বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে সাত খুনের তদন্তসংক্রান্ত শুনানির সময় এ প্রশ্ন তোলেন আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এস এম নাজমুল হক। সাত খুনের ঘটনায় পুলিশ, র্যা ব ও মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির দেয়া অগ্রগতি প্রতিবেদন এদিন আদালতে উপস্থাপন করেন মোমতাজ উদ্দিন ফকির। র্যা ব তাদের অগ্রগতি প্রতিবেদনে তদন্ত শেষ করার জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। হাইকোর্টের আদেশে গঠিত সাত সদস্যের সার্বিক তদন্ত কমিটি সময় চেয়েছে চার সপ্তাহ। আর পুলিশ প্রতিবেদনে আসামি ও ‘ভিকটিমদের’ যথাযথ নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি আদালতে জানানো হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার মূল তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। র্যা ব ওই হত্যাকাণ্ডে তাদের বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তদন্ত করছে। আর নারায়ণগঞ্জের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না এবং অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে সার্বিক তদন্ত কমিটি। শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, ঘটনার সময় নারায়ণগঞ্জে র্যাব ইউনিটে কারা ছিলেন, তাদের সংখ্যা আছে, নাম-ঠিকানা-পদবি আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে জটিলতা হওয়ার কারণ নেই। আদালত বলেন, “আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি, আজ একজন, কাল একজন, সাত দিন পর একজন্- এভাবে জবানবন্দি নেয়া হচ্ছে। তারা সবাই চাকরিতে আছেন। আলাদা আলাদাভাবে কেন করা হচ্ছে? এটা কি তাদের জড়ানোর জন্য, নাকি কাউকে রক্ষার জন্য?” অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির এ সময় বলেন, “আপনারা যাদের আদেশ দিয়েছেন, সেখানে কিন্তু সিনসিয়ারিটির অভাব নেই।” বিচারক তখন বলেন, “আমরা সে ব্যাপারে পরে আসছি।” শুনানিতে আদালত বলেন, “আপিল বিভাগ এ ঘটনার ইনকোয়ারি (অনুসন্ধান) থেকে সিআইডিকে বাদ দিয়েছে। কিন্তু মূল তদন্তের বাইরেও যে আরো তদন্ত চলতে পারে, তা আপিল বিভাগ সমর্থন করেছে। আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার করতে পারে। আমাদেরকে আইন অনুসারে চলতে হয়।” বিচারক প্রশ্ন করেন, “সিআইডি তো বাদ গেল। কিন্তু ইতিমধ্যে অনেক দিন চলে গেছে। আপনারা আপিল বিভাগেও অনেক দিন পরে গেছেন। সিআইডি তদন্ত বন্ধ করার আগে অনেক কিছু পেয়েছে। সেগুলোর কী হবে?” এই পর্যায়ে সেগুলো বাদ দিলে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হতে পারে বলে আদালত মন্তব্য করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সাক্ষ্য আইন অনুসারে সেগুলো বাদ যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরপর বিচারক পরবর্তী আদেশের জন্য ১০ ডিসেম্বর দিন আদালত মুলতবি করেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন। র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর এক আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত এক আদেশে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার তদন্তে থাকলেও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয় হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেলে আপিল বিভাগ সিআইডিকে বাদ দেয়।
No comments