তদন্তে অগ্রগতি নেই- দোষীদের শাস্তি চাইলেন প্রেসিডেন্ট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে প্রশিক্ষিত জঙ্গিগোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে। হত্যাকাণ্ডের ধরন এবং হত্যাকারীদের সম্পর্কে বর্ণনা থেকে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে প্রশিক্ষিত জঙ্গিরাই হত্যা করেছে তাকে। তবে ঠিক কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে বেশ অন্ধকারে তদন্ত কর্মকর্তারা। শফিউল ইসলাম লালন চর্চা করতেন। তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য। একসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সক্রিয় সদস্যও ছিলেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের দিন বিকালে নিহত শিক্ষকের বাসা থেকে মাস্টার্সের ফলপ্রার্থী এক ছাত্রীকে তালাবদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে বর্তমানে সেইফ হোমে রাখা হয়েছে। ওই ছাত্রীর প্রেমিক (সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী) জাহাঙ্গীরের সঙ্গেও ড. শফিউল ইসলামের সুসম্পর্ক ছিল। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মেয়েটির কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচটি ক্লুকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করলেও বর্তমানে দু’টি বিষয়কে (জঙ্গিগোষ্ঠী ও ব্যক্তিগত জীবন) প্রাধান্য দিয়ে তদন্তকাজ এগিয়ে চলেছে বলে পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, শনিবার যখন দুর্বৃত্তরা অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলামকে আক্রমণ করে তখন পাশের বাসার ব্যালকনি থেকে তা লক্ষ্য করেন এক নারী। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী। গত দু’দিন ধরে ডিবি পুলিশ এবং র্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। র্যাবকে ওই নারী জানিয়েছেন, কাশফুলের ছোট্ট একটা জঙ্গল ছিল তাদের বাসার কাছে। সেই জঙ্গলে ওত পেতে ছিল দুর্বৃত্তরা। স্যার যখন মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন তখন সেই জঙ্গল থেকে বের হয়ে পাঁচজন যুবক স্যারকে মাটিতে শুইয়ে মাথায় কোপ দেয়। এরপর তারা পশ্চিম দিকের প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, যে প্রাচীর দিয়ে আসামিরা পালিয়ে গেছে সেটা কমপক্ষে ১২ ফুট উঁচু, যা সহজে পার হয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য। সাধারণ মানুষের পক্ষে এ দেয়াল টপকানো সম্ভব নয়। পুলিশ ধারণা করছে, এ থেকেও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়, প্রশিক্ষিত খুনিরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এদিকে মতিহার থানার ডিউটি অফিসার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতি ও ইনজেকশনের সিরিঞ্জ উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়ছে, হামলাকারীরা মাথায় এমনভাবে আঘাত করেছে যা থেকে বেঁচে ওঠা সম্ভব নয়। আবার হত্যাকাণ্ডে যে চাপাতি ব্যবহৃত হয়েছে সেখানে সুতা পেঁচানো ছিল। ফলে ফরেনসিক রিপোর্টে হাতের ছাপ পায়নি পুলিশ। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, যে ভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে এটা প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের কাজ। কেন না এর আগে জঙ্গিরা বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে বিষ ব্যবহার করেছে। এবারও তারা বিষ সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তা ব্যবহারের আগেই শিক্ষককে বেশ কয়েকটি কোপ তারা দিয়ে ফেলে যাতে হামলাকারীরা নিশ্চিত ছিল যে তিনি মারা যাবেন।
এদিকে হত্যা ঘটনায় প্রথম দফায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। গতকাল তাদের রিমান্ডের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা হয়নি বলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। কাল (আজ বুধবার) রিমান্ড শুনানি হবে।
তৃতীয় দিনও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, আজ ক্লাসে ফিরবেন শিক্ষকরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে গতকাল ক্যাম্পাসে শিক্ষক সমিতির ডাকে তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর আগে একই দাবিতে রোববার ও সোমবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করে তারা। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ৭ দিনের কালোব্যাজ ধারণ কর্মসূচি অব্যাহত বয়েছে। তবে ২০১৪-১৫ সেশনের প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম চলছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বিকালে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। মানববন্ধন শেষে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান মজুমদার। এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। বক্তারা হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে শিক্ষক সমিতির ১৫ দিনের আলটিমেটামের দ্বিতীয় দিন পার হয়ে গেলেও কোন অগ্রগতি হয়নি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আগামী ১৩ দিনের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। এ ছাড়া হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিভাগের পক্ষ থেকে ভিসি বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। দুপুরে ভিসির দপ্তরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ওয়ারদাতুল আকমামের নেতৃত্বে শিক্ষকরা স্মারকলিপি দেন।
শিক্ষক শফিউল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইলেন প্রেসিডেন্ট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। গতকাল বিকাল ৩টায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিউল ইসলাম দুষ্কৃতকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গোটা জাতির সঙ্গে আমিও গভীরভাবে ব্যথিত ও দুঃখিত। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন জ্ঞানতাপস এভাবে খুন হবেন তা কারও কাম্য নয়। সভাপতির বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তির। এ বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ প্রকৌশলী সৃষ্টির বিকল্প নেই। আমাদের রয়েছে বিপুল মানবসম্পদ। এদের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলেই তারা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দেশের বিশিষ্ট প্রকৌশলী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, সরকার দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে আইসিটি ইন এডুকেশন মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। ফলে মাধ্যমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হচ্ছে। গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের এই সমাবর্তন একদিকে যেমন তোমাদের অর্জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তেমনি দায়িত্বও অর্পণ করছে। সে দায়িত্ব নিজের পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশ ও জাতির প্রতি। সমাবর্তন বক্তা ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, সনাতন শিক্ষক কেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতি থেকে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতির দিকে নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আকৃষ্ট হচ্ছে। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সম্ভাব্য সমাধানসহ মূল্যায়ন করে; শিক্ষক এখানে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন। আমি আশা করবো, উপস্থিত শিক্ষকরাও এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের বাঁধা-ধরা সমাধান ছাড়াও নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ব্যবহার করে নতুন নতুন প্রযুক্তি কিভাবে সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে উৎসাহ দেবেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা ২০৫০ বিএসই গ্র্যাজুয়েট, ৩৭ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারীর ডিগ্রি অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের কাছে পেশ করেন। আচার্য আবদুল হামিদ ডিগ্রি অনুমোদন করে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণীর (বিএসসি ইঞ্জি.) ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষ (৩ সিরিজ) থেকে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ (৮ সিরিজ) পর্যন্ত এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীর (এমএসসি ইঞ্জি., এম ইঞ্জি., এমফিল, পিএইচডি) ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সনদপত্র দেয়া হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ কৃতী গ্র্যাজুয়েটদের গোল্ড ম্যাডেল ও ক্রেস্ট দেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের দিন বিকালে নিহত শিক্ষকের বাসা থেকে মাস্টার্সের ফলপ্রার্থী এক ছাত্রীকে তালাবদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে বর্তমানে সেইফ হোমে রাখা হয়েছে। ওই ছাত্রীর প্রেমিক (সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী) জাহাঙ্গীরের সঙ্গেও ড. শফিউল ইসলামের সুসম্পর্ক ছিল। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মেয়েটির কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচটি ক্লুকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করলেও বর্তমানে দু’টি বিষয়কে (জঙ্গিগোষ্ঠী ও ব্যক্তিগত জীবন) প্রাধান্য দিয়ে তদন্তকাজ এগিয়ে চলেছে বলে পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, শনিবার যখন দুর্বৃত্তরা অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলামকে আক্রমণ করে তখন পাশের বাসার ব্যালকনি থেকে তা লক্ষ্য করেন এক নারী। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী। গত দু’দিন ধরে ডিবি পুলিশ এবং র্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। র্যাবকে ওই নারী জানিয়েছেন, কাশফুলের ছোট্ট একটা জঙ্গল ছিল তাদের বাসার কাছে। সেই জঙ্গলে ওত পেতে ছিল দুর্বৃত্তরা। স্যার যখন মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন তখন সেই জঙ্গল থেকে বের হয়ে পাঁচজন যুবক স্যারকে মাটিতে শুইয়ে মাথায় কোপ দেয়। এরপর তারা পশ্চিম দিকের প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, যে প্রাচীর দিয়ে আসামিরা পালিয়ে গেছে সেটা কমপক্ষে ১২ ফুট উঁচু, যা সহজে পার হয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য। সাধারণ মানুষের পক্ষে এ দেয়াল টপকানো সম্ভব নয়। পুলিশ ধারণা করছে, এ থেকেও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়, প্রশিক্ষিত খুনিরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এদিকে মতিহার থানার ডিউটি অফিসার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতি ও ইনজেকশনের সিরিঞ্জ উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়ছে, হামলাকারীরা মাথায় এমনভাবে আঘাত করেছে যা থেকে বেঁচে ওঠা সম্ভব নয়। আবার হত্যাকাণ্ডে যে চাপাতি ব্যবহৃত হয়েছে সেখানে সুতা পেঁচানো ছিল। ফলে ফরেনসিক রিপোর্টে হাতের ছাপ পায়নি পুলিশ। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, যে ভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে এটা প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের কাজ। কেন না এর আগে জঙ্গিরা বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে বিষ ব্যবহার করেছে। এবারও তারা বিষ সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তা ব্যবহারের আগেই শিক্ষককে বেশ কয়েকটি কোপ তারা দিয়ে ফেলে যাতে হামলাকারীরা নিশ্চিত ছিল যে তিনি মারা যাবেন।
এদিকে হত্যা ঘটনায় প্রথম দফায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। গতকাল তাদের রিমান্ডের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা হয়নি বলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। কাল (আজ বুধবার) রিমান্ড শুনানি হবে।
তৃতীয় দিনও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, আজ ক্লাসে ফিরবেন শিক্ষকরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে গতকাল ক্যাম্পাসে শিক্ষক সমিতির ডাকে তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর আগে একই দাবিতে রোববার ও সোমবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করে তারা। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ৭ দিনের কালোব্যাজ ধারণ কর্মসূচি অব্যাহত বয়েছে। তবে ২০১৪-১৫ সেশনের প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম চলছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বিকালে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। মানববন্ধন শেষে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান মজুমদার। এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। বক্তারা হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে শিক্ষক সমিতির ১৫ দিনের আলটিমেটামের দ্বিতীয় দিন পার হয়ে গেলেও কোন অগ্রগতি হয়নি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আগামী ১৩ দিনের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। এ ছাড়া হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিভাগের পক্ষ থেকে ভিসি বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। দুপুরে ভিসির দপ্তরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ওয়ারদাতুল আকমামের নেতৃত্বে শিক্ষকরা স্মারকলিপি দেন।
শিক্ষক শফিউল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইলেন প্রেসিডেন্ট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। গতকাল বিকাল ৩টায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিউল ইসলাম দুষ্কৃতকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গোটা জাতির সঙ্গে আমিও গভীরভাবে ব্যথিত ও দুঃখিত। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন জ্ঞানতাপস এভাবে খুন হবেন তা কারও কাম্য নয়। সভাপতির বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তির। এ বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ প্রকৌশলী সৃষ্টির বিকল্প নেই। আমাদের রয়েছে বিপুল মানবসম্পদ। এদের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলেই তারা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দেশের বিশিষ্ট প্রকৌশলী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, সরকার দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে আইসিটি ইন এডুকেশন মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। ফলে মাধ্যমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হচ্ছে। গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের এই সমাবর্তন একদিকে যেমন তোমাদের অর্জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তেমনি দায়িত্বও অর্পণ করছে। সে দায়িত্ব নিজের পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশ ও জাতির প্রতি। সমাবর্তন বক্তা ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, সনাতন শিক্ষক কেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতি থেকে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতির দিকে নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আকৃষ্ট হচ্ছে। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সম্ভাব্য সমাধানসহ মূল্যায়ন করে; শিক্ষক এখানে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন। আমি আশা করবো, উপস্থিত শিক্ষকরাও এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের বাঁধা-ধরা সমাধান ছাড়াও নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ব্যবহার করে নতুন নতুন প্রযুক্তি কিভাবে সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে উৎসাহ দেবেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা ২০৫০ বিএসই গ্র্যাজুয়েট, ৩৭ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারীর ডিগ্রি অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের কাছে পেশ করেন। আচার্য আবদুল হামিদ ডিগ্রি অনুমোদন করে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণীর (বিএসসি ইঞ্জি.) ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষ (৩ সিরিজ) থেকে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ (৮ সিরিজ) পর্যন্ত এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীর (এমএসসি ইঞ্জি., এম ইঞ্জি., এমফিল, পিএইচডি) ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সনদপত্র দেয়া হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ কৃতী গ্র্যাজুয়েটদের গোল্ড ম্যাডেল ও ক্রেস্ট দেন।
No comments