একাধিক প্রেম ছিল লিনার by রুদ্র মিজান
স্ত্রীর পরকীয়ার জের ধরেই রাজধানীর
মিরপুরের ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন মাতব্বরকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায়
সম্পৃক্ত গিয়াসের স্ত্রী লাভলী আক্তার লিনার প্রেমিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার
করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পরপরই গিয়াসের স্ত্রী লিনাকে আটক করা হয়।
গিয়াসকে হত্যার সময় টেলিভিশনের ভলিউম বাড়িয়ে দেয়া হয়। বাসার প্রায় সকল
কক্ষের আলো নিভিয়ে তাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যা শেষে বীরদর্পে পালিয়ে
যায় তারা। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তার স্ত্রী লাভলী আক্তার লিনা একেক
সময় পুলিশকে একেক ধরনের তথ্য দিয়েছেন। তার এবং তার সন্তানদের কথার মধ্যেও
গরমিল পাওয়া যায়। কিলিং মিশনে লিনাসহ গ্রেপ্তারকৃত তিনজন অংশ নিয়েছিল বলে
পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার দিন রাত ১১টায় পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটে নার্গিস
আক্তারের ফ্ল্যাটের দরজায় নক করে গিয়াস উদ্দিনের ৯ বছর বয়সী কন্যা ইশিকা।
দরজা খুলতেই ইশিকা জানায়, তার বাবাকে মারধর করা হয়েছে। তিনি মেঝেতে পড়ে
আছেন। নার্গিস দ্রুত ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেন, পুরো ঘর অন্ধকার। ভেতরের একটি
কক্ষে আলো আছে। টেলিভিশন উচ্চ ভলিউমে চলছে। এর মধ্যেই ঘোঙানির শব্দ করেন
লিনা। দরজা বরাবর ঘুমানোর কক্ষের মেঝেতে তিনি। তার মুখ এবং হাত পেছন থেকে
ওড়না দিয়ে বাঁধা। একই ভাবে তার দুই পা বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে পায়ের বাঁধন
এমনভাবে ছিল যে পা ভালভাবে নাড়ালেই লিনা তা খুলতে পারতেন। নার্গিস বাঁধন
খুলে দিলে লিনা বলেন, ভাবী আমার জামাই নেই, জামাই নেই। কারা গিয়াসকে মারলো
জানতে চাইলে লিনা তখন জানান, তারা গিয়াসের সঙ্গে এসেছিলো।
তাৎক্ষণিকভাবে কক্ষের বাতি অন করে ডাইনিং কক্ষে ফ্রিজের পাশে গিয়াসকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। এসময় দ্রুত তিনি চার তলায় নেমে গিয়াসের ভাই ফজলুর রহমানের স্ত্রী ও অন্যদের ডেকে আনেন। বাড়ির নারীদের কান্নার শব্দ শুনে নিচতলা থেকে ছুটে যান লোকজন। লিনা তখন গিয়াসকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। গিয়াসের ভাই ও স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বাড়ির সবাই নিচে নেমে যান। তাদের সঙ্গে লিনাও নিচে নামেন, আবার দ্রুত উপরে উঠে যান। ওই সময়ে তিনি ঘরে ঢুকে রক্ত পরিষ্কার করেন। পরে এ বিষয়ে পুলিশ জানতে চাইলে লিনা জানান, ঘরে রক্ত জমে খারাপ দেখাচ্ছিল বলেই পরিষ্কার করেছেন তিনি। ওই বাসা থেকে কান্নার আওয়াজ আসার সাত-আট মিনিট আগে বোরকা পরা এক ব্যক্তিকে ওই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে দেখেন বাড়ির নিচতলার ব্যবসায়ীরা। মুদি ব্যবসায়ী আয়নাল আবেদিন জানান, তার দোকানে তখন পাঁচ-ছয় জন ক্রেতা। তাদের একজন বলছিল-দেখ বোরকা পড়ে যাচ্ছে। অথচ কেডস পায়ে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাকিয়ে দেখেন লাল-সাদা রঙের কেডস ও বোরকা পরা এক সুঠামদেহী লোক দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে। কিলাররা গিয়াসের সঙ্গে ওই বাসায় গিয়েছিল লিনা এমন দাবি করলেও আয়নাল জানান, রাত প্রায় সাড়ে ১০ টায় গিয়াস তার দোকান থেকে বাসায় যান। তখন তার সঙ্গে কেউ ছিল না। যাওয়ার আগে একটি কল আসে তার মোবাইল ফোনে। কথা বলা শেষ করে তিনি আয়নালকে বলেন, বাসায় মেহমান আসছে। যেতে হবে।
গতকাল সরজমিনে মিরপুরের ১০-এর ওই বাড়িতে গেলে দেখা যায় গিয়াস উদ্দিনের ফ্ল্যাটের গেইটে তালা লাগানো আছে। ঘটনার পর পুলিশ এই তালা দিয়েছে। তবে গিয়াসের চার ভাইদের প্রতিটি ফ্ল্যাটের গেইটেও তালা ছিল। বাড়ির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সবসময়ই এভাবে তালা দিয়ে রাখা হয়। এই তালার চাবি সংশ্লিষ্ট বাসার লোকজন ছাড়া অন্য কারও কাছে নেই। গিয়াস-লিনা দম্পতির দুই শিশু সন্তান বর্তমানে তাদের নানার বাসায় রয়েছে। ওই বাসায় গেলে ইশিকা ও নিহালের সঙ্গে কথা হয়। ইশিকা জানায়, কিলাররা বাসায় কখন যায় তারা তা দেখতে পায়নি। ওই সময়ে তারা ভাই-বোন বাসার একটি কক্ষে বসে ডিভিডি দেখছিল। এক পর্যায়ে তাদের পিতা গিয়াস উদ্দিনের কণ্ঠ শোনে ইশিকা। ওই সময়ে গিয়াস উদ্দিনকে তিন জন মারধর করছিল। গিয়াস তখন ‘ইশু ইশু’ (ইশিকা) বলে ডাকছিলেন। কিলারদের একজনের কাঁধে একটি ব্যাগ ছিল বলে জানায় ইশিকা। তখন তাদের মা লিনা কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে সে জানায়, মাকে দেখতে পাইনি। তিনি হয়তো অন্যকক্ষে ছিলেন। সেখানে তার মায়ের সঙ্গে কিলারদের একজন ছিল বলে মনে হয়েছে। ইশিকা বের হওয়ার চেষ্টা করলে কিলাররা দুই শিশুকে বেঁধে দরজা বন্ধ করে রাখে। যাওয়ার আগে কিলাররাই দরজা ও বাঁধন খুলে দিয়ে যায় বলে জানায় ইশিকা।
ঘটনার দুই দিন আগে গিয়াস ও লিনার মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এ সময় বাসায় গৃহপরিচারিকা ছিলেন। ওই গৃহপরিচারিকার বরাত দিয়ে গিয়াসের স্বজনরা জানান, লিনার প্রেমিককে নিয়েই ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে লিনা ক্ষুব্ধ হয়ে গিয়াসকে হুমকি দিয়ে বলেন, এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর মায়ের বুক খালি করে দেবো। শেষ পর্যন্ত লিনার পরকীয়ার কারণেই গিয়াসকে জীবন দিতে হয়েছে। মিরপুর-১১’র সি ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের বাসিন্দা লিয়াকত আলী মোল্লার কন্যা লাভলী আক্তার লিনা। মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী থাকাকালে প্রতিবেশী উজ্জ্বলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার।
লিনার অমতেই গিয়াসের সঙ্গে ২০০৩ সালের ১৪ই অক্টোবর বিয়ে হয় তার। বিয়ের পরও উজ্জ্বলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একসময় উজ্জ্বল দেশের বাইরে চলে যান। তখন থেকে বিএফ শাহীন কলেজের ছাত্র তানভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় লিনার। প্রায় প্রতিদিনই লিনা বাসার বাইরে বের হতেন। ওই সময়ে তানভীরের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তার মোটরাসাইকেলে বসে বিভিন্ন স্থানে যেতে দেখা গেছে তাকে। লিনার সন্তানরাও তানভীরকে চিনে।
পাঁচ বছর বয়সী নিহাল বলে, আম্মু এক আঙ্কেলের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আমাদের আইসক্রীম কিনে দেন। প্রেমিককে কখনও কখনও বাসায় নিয়ে যেতেন লিনা। ২০০৮ সালে এক যুবককে লিনার কক্ষে দেখতে পান নিহত গিয়াসের বোন শাহিদা আক্তার। শাহিদা জানান, দুপুর বেলা পাঁচ তলার ওই বাসায় গেলে দরজা খোলার আগে লিনা ভেতর থেকে তাকে দেখে জানতে চান, তুমি কি ভেতরে আসবে? পরে দরজা খুলে দেন। ওই সময়ে লিনাকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তার পরনে ছিল হাত কাটা সাদা গেঞ্জি ও থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। কিছু সময় পরে শাহিদা বাথরুমে যেতে চাইলে ঘুমানোর কক্ষের বাথরুমে যেতে বাধা দেন লিনা। এতে সন্দেহ হয় শাহিদার। তখন তিনি জোর করলে লিনা আরও বেশি বাঁধা দেন। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয় দু’জনের মধ্যে। এক পর্যায়ে অন্য কাউকে না জানানো এবং তাকে কোন প্রশ্ন না করার শর্তে লিনা জানান, তার বন্ধু বাসায় এসেছে। সে বাথরুমে আছে। শাহিদা শর্তে রাজি হলে বাথরুমের দরজা খুলে দেন লিনা। এ সময় সুঠামদেহী এক যুবক বাথরুম থেকে বের হন। তিনি খালি গায়ে ছিলেন। শাহিদা আসার আগে বাসায় লিনা ও ওই যুবক ছাড়া আর কেউ ছিল না। এ ঘটনার পরদিন লিনা ও গিয়াসের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সালিশ-বৈঠক হয়। তখন লিনা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। তবে লিনার মা রেহানা মোল্লা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি ছিল সাজানো। লিনার সঙ্গে কোন ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। ডাকাতদের হাতেই গিয়াস নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্কুল জীবন থেকেই উগ্রভাবে চলাফেরা করতেন লিনা। তিনি টি-শার্ট, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে প্রায়ই বাইরে বের হতেন। প্রায় প্রতিদিনই পার্লারে গিয়ে রূপচর্চা করতেন। শপিং করা তার অন্যতম শখ। স্কুল জীবন থেকেই ছেলেদের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন লিনা। তার একাধিক ছেলে বন্ধু রয়েছে।
২০০৮ সালে লিনার প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি ও সালিশ-বৈঠকের পর শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান লিনা। ভাসুর-দেবরের সন্তানদের সঙ্গে তার দুই সন্তানকে মিশতে দিতেন না তিনি। বাসার বাইরেই বেশি সময় কাটাতেন। এদিকে গতকাল রাতে মিরপুরের পৃথক স্থান থেকে তিন কিলারকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে লিনার প্রেমিক তানভির, সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র জিসান ও মুক্ত। জিসান ও মুক্ত ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছে। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন জানান, আটককৃতরা স্বীকার করেছে পরকীয়ার জের ধরেই গিয়াসকে হত্যা করিয়েছে তার স্ত্রী। এ ঘটনায় গতকাল নিহতের পিতা সিরাজ মাতব্বর বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত রোববার রাতে মিরপুর-১০-এর সি ব্লকের ১৫ নম্বর লেনের নিজ বাড়ির পঞ্চম তলায় খুন হন গিয়াস উদ্দিন।
তাৎক্ষণিকভাবে কক্ষের বাতি অন করে ডাইনিং কক্ষে ফ্রিজের পাশে গিয়াসকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। এসময় দ্রুত তিনি চার তলায় নেমে গিয়াসের ভাই ফজলুর রহমানের স্ত্রী ও অন্যদের ডেকে আনেন। বাড়ির নারীদের কান্নার শব্দ শুনে নিচতলা থেকে ছুটে যান লোকজন। লিনা তখন গিয়াসকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। গিয়াসের ভাই ও স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বাড়ির সবাই নিচে নেমে যান। তাদের সঙ্গে লিনাও নিচে নামেন, আবার দ্রুত উপরে উঠে যান। ওই সময়ে তিনি ঘরে ঢুকে রক্ত পরিষ্কার করেন। পরে এ বিষয়ে পুলিশ জানতে চাইলে লিনা জানান, ঘরে রক্ত জমে খারাপ দেখাচ্ছিল বলেই পরিষ্কার করেছেন তিনি। ওই বাসা থেকে কান্নার আওয়াজ আসার সাত-আট মিনিট আগে বোরকা পরা এক ব্যক্তিকে ওই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে দেখেন বাড়ির নিচতলার ব্যবসায়ীরা। মুদি ব্যবসায়ী আয়নাল আবেদিন জানান, তার দোকানে তখন পাঁচ-ছয় জন ক্রেতা। তাদের একজন বলছিল-দেখ বোরকা পড়ে যাচ্ছে। অথচ কেডস পায়ে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাকিয়ে দেখেন লাল-সাদা রঙের কেডস ও বোরকা পরা এক সুঠামদেহী লোক দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে। কিলাররা গিয়াসের সঙ্গে ওই বাসায় গিয়েছিল লিনা এমন দাবি করলেও আয়নাল জানান, রাত প্রায় সাড়ে ১০ টায় গিয়াস তার দোকান থেকে বাসায় যান। তখন তার সঙ্গে কেউ ছিল না। যাওয়ার আগে একটি কল আসে তার মোবাইল ফোনে। কথা বলা শেষ করে তিনি আয়নালকে বলেন, বাসায় মেহমান আসছে। যেতে হবে।
গতকাল সরজমিনে মিরপুরের ১০-এর ওই বাড়িতে গেলে দেখা যায় গিয়াস উদ্দিনের ফ্ল্যাটের গেইটে তালা লাগানো আছে। ঘটনার পর পুলিশ এই তালা দিয়েছে। তবে গিয়াসের চার ভাইদের প্রতিটি ফ্ল্যাটের গেইটেও তালা ছিল। বাড়ির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সবসময়ই এভাবে তালা দিয়ে রাখা হয়। এই তালার চাবি সংশ্লিষ্ট বাসার লোকজন ছাড়া অন্য কারও কাছে নেই। গিয়াস-লিনা দম্পতির দুই শিশু সন্তান বর্তমানে তাদের নানার বাসায় রয়েছে। ওই বাসায় গেলে ইশিকা ও নিহালের সঙ্গে কথা হয়। ইশিকা জানায়, কিলাররা বাসায় কখন যায় তারা তা দেখতে পায়নি। ওই সময়ে তারা ভাই-বোন বাসার একটি কক্ষে বসে ডিভিডি দেখছিল। এক পর্যায়ে তাদের পিতা গিয়াস উদ্দিনের কণ্ঠ শোনে ইশিকা। ওই সময়ে গিয়াস উদ্দিনকে তিন জন মারধর করছিল। গিয়াস তখন ‘ইশু ইশু’ (ইশিকা) বলে ডাকছিলেন। কিলারদের একজনের কাঁধে একটি ব্যাগ ছিল বলে জানায় ইশিকা। তখন তাদের মা লিনা কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে সে জানায়, মাকে দেখতে পাইনি। তিনি হয়তো অন্যকক্ষে ছিলেন। সেখানে তার মায়ের সঙ্গে কিলারদের একজন ছিল বলে মনে হয়েছে। ইশিকা বের হওয়ার চেষ্টা করলে কিলাররা দুই শিশুকে বেঁধে দরজা বন্ধ করে রাখে। যাওয়ার আগে কিলাররাই দরজা ও বাঁধন খুলে দিয়ে যায় বলে জানায় ইশিকা।
ঘটনার দুই দিন আগে গিয়াস ও লিনার মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এ সময় বাসায় গৃহপরিচারিকা ছিলেন। ওই গৃহপরিচারিকার বরাত দিয়ে গিয়াসের স্বজনরা জানান, লিনার প্রেমিককে নিয়েই ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে লিনা ক্ষুব্ধ হয়ে গিয়াসকে হুমকি দিয়ে বলেন, এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর মায়ের বুক খালি করে দেবো। শেষ পর্যন্ত লিনার পরকীয়ার কারণেই গিয়াসকে জীবন দিতে হয়েছে। মিরপুর-১১’র সি ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের বাসিন্দা লিয়াকত আলী মোল্লার কন্যা লাভলী আক্তার লিনা। মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী থাকাকালে প্রতিবেশী উজ্জ্বলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার।
লিনার অমতেই গিয়াসের সঙ্গে ২০০৩ সালের ১৪ই অক্টোবর বিয়ে হয় তার। বিয়ের পরও উজ্জ্বলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একসময় উজ্জ্বল দেশের বাইরে চলে যান। তখন থেকে বিএফ শাহীন কলেজের ছাত্র তানভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় লিনার। প্রায় প্রতিদিনই লিনা বাসার বাইরে বের হতেন। ওই সময়ে তানভীরের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তার মোটরাসাইকেলে বসে বিভিন্ন স্থানে যেতে দেখা গেছে তাকে। লিনার সন্তানরাও তানভীরকে চিনে।
পাঁচ বছর বয়সী নিহাল বলে, আম্মু এক আঙ্কেলের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আমাদের আইসক্রীম কিনে দেন। প্রেমিককে কখনও কখনও বাসায় নিয়ে যেতেন লিনা। ২০০৮ সালে এক যুবককে লিনার কক্ষে দেখতে পান নিহত গিয়াসের বোন শাহিদা আক্তার। শাহিদা জানান, দুপুর বেলা পাঁচ তলার ওই বাসায় গেলে দরজা খোলার আগে লিনা ভেতর থেকে তাকে দেখে জানতে চান, তুমি কি ভেতরে আসবে? পরে দরজা খুলে দেন। ওই সময়ে লিনাকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তার পরনে ছিল হাত কাটা সাদা গেঞ্জি ও থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। কিছু সময় পরে শাহিদা বাথরুমে যেতে চাইলে ঘুমানোর কক্ষের বাথরুমে যেতে বাধা দেন লিনা। এতে সন্দেহ হয় শাহিদার। তখন তিনি জোর করলে লিনা আরও বেশি বাঁধা দেন। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয় দু’জনের মধ্যে। এক পর্যায়ে অন্য কাউকে না জানানো এবং তাকে কোন প্রশ্ন না করার শর্তে লিনা জানান, তার বন্ধু বাসায় এসেছে। সে বাথরুমে আছে। শাহিদা শর্তে রাজি হলে বাথরুমের দরজা খুলে দেন লিনা। এ সময় সুঠামদেহী এক যুবক বাথরুম থেকে বের হন। তিনি খালি গায়ে ছিলেন। শাহিদা আসার আগে বাসায় লিনা ও ওই যুবক ছাড়া আর কেউ ছিল না। এ ঘটনার পরদিন লিনা ও গিয়াসের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সালিশ-বৈঠক হয়। তখন লিনা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। তবে লিনার মা রেহানা মোল্লা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি ছিল সাজানো। লিনার সঙ্গে কোন ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। ডাকাতদের হাতেই গিয়াস নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্কুল জীবন থেকেই উগ্রভাবে চলাফেরা করতেন লিনা। তিনি টি-শার্ট, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে প্রায়ই বাইরে বের হতেন। প্রায় প্রতিদিনই পার্লারে গিয়ে রূপচর্চা করতেন। শপিং করা তার অন্যতম শখ। স্কুল জীবন থেকেই ছেলেদের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন লিনা। তার একাধিক ছেলে বন্ধু রয়েছে।
২০০৮ সালে লিনার প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি ও সালিশ-বৈঠকের পর শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান লিনা। ভাসুর-দেবরের সন্তানদের সঙ্গে তার দুই সন্তানকে মিশতে দিতেন না তিনি। বাসার বাইরেই বেশি সময় কাটাতেন। এদিকে গতকাল রাতে মিরপুরের পৃথক স্থান থেকে তিন কিলারকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে লিনার প্রেমিক তানভির, সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র জিসান ও মুক্ত। জিসান ও মুক্ত ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছে। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন জানান, আটককৃতরা স্বীকার করেছে পরকীয়ার জের ধরেই গিয়াসকে হত্যা করিয়েছে তার স্ত্রী। এ ঘটনায় গতকাল নিহতের পিতা সিরাজ মাতব্বর বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত রোববার রাতে মিরপুর-১০-এর সি ব্লকের ১৫ নম্বর লেনের নিজ বাড়ির পঞ্চম তলায় খুন হন গিয়াস উদ্দিন।
No comments