ভারত সীমান্তে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে না’... by আলাউদ্দিন কবির
বন্ধুর আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্য প্রমাণিত হলো। এখন আমি লজ্জিত হবো, না উৎকণ্ঠিত হবো ভেবে পাচ্ছি না। গত ২৭ আগস্ট আমার অফিসে এক বন্ধু ও আমি খবরের কাগজে চোখ বুলাচ্ছিলাম গল্পের ফাঁকে ফাঁকে। হঠাৎ আমার ভারতবিমুখ ও একরোখা বন্ধু দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, ‘এই দ্যাখ, দাদাদের আরেক ভাঁওতাবাজির ইশতেহার!’ বললাম, দাদারা আবার কোন ভাওতাবাজি করল তোর সাথে? সে পড়ে শোনালো,‘‘বিজিবিকে প্রশিক্ষণ দেবে বিএসএফ...।’ আমি তার পড়া থামিয়ে দিয়ে বললাম, এ তো আমাদের জন্য সুখবর। বড় প্রতিবেশী হিসেবে দাদারা আমাদের বিজিবিকে প্রশিক্ষণ দিতেই পারেন। তারা যেহেতু আমাদের চেয়ে এগিয়ে, তখন আমাদের প্রশিক্ষক হলে সমস্যা কোথায়?’ আমার কথা শুনে বন্ধু তার ‘বিএসএফ-সমাচার’ শুরু করল এভাবে, আচ্ছা, বিএসএফ সম্পর্কে তোর যে এত ভালো ধারণা, তুই কি তাদের অতীতের এতগুলো হত্যাকাণ্ডের কথা ভুলে বসে আছিস? বললাম, নিকট অতীতে তাদের কর্মকাণ্ড যতই খারাপ হোক না কেন, ভুলে গেলে চলবে না যে, তারাই মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুর মতো সাহায্য করেছে।’ তখন বন্ধু তার যুক্তির শেষ তীর নিপে করল এভাবে, আমি হলফ করে বলতে পারি, তারা মুখে যা-ই বলুক, সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার মিশন বন্ধ করবে না কিছুতেই। কারণ, বিএসএফ তো তারাই, যারা স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের সাহায্য করেও স্বাধীনতা-পরবর্তী এই দীর্ঘ চার দশক অব্যাহত সীমান্ত হত্যা, হামলা ও নির্যাতন চালিয়ে গেছে বেপরোয়াভাবেই। প্রতিবেশী ও ছোটভাইপ্রতিম এই বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের বুকে গুলি চালাতে তাদের বিবেকে বাধেনি এতটুকু! শুধু ফেলানীর কথা সামনে আনলেই তো বিএসএফের আসল মনোভাব ও চরিত্র সুস্পষ্ট হয়ে যায়।’
তারপর আমার বাস্তববাদী ও ইতিহাসসচেতন বন্ধু ওই রিপোর্টের পুরোটাই পড়ল এবং শেষের দিকের কয়েকটা কথা নিয়ে আমার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলল: এই যে কথাগুলো... ‘বিএসএফ দ্বিপীয় সম্মেলনে বিজিবিকে জানিয়েছে, ভারত এখন সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে না। প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করে। এই অস্ত্র ব্যবহার করতে গিয়ে বিএসএফের সদস্যরা চোরাচালানিদের হাতে আহত হচ্ছে...’ (দৈনিক নয়া দিগন্ত)। এসব তুই যতই সত্য মনে করিস না কেন, নিশ্চিত বলে দিতে পারি, এ কথাগুলোয় ‘ঘাপলা’ আছেই এবং থাকবেই।
তারপরও বন্ধুর এসব অমূলক আশঙ্কাভরা কথাকে আমি তেমন একটা আমলে নিইনি। কেবল তাকে এই বলে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলাম যে, ‘অতীত আঁকড়ে ধরে থাকলে তো বেঁচে থাকাই দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। বিএসএফ আগে কী করেছে বা তাদের চরিত্র আগে কেমন ছিল, তারচেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলো, এখন তারা কী করছে বা কী বলছে তার প্রতি বিশ্বাস রাখা।’ এসব বলেও আমার এক কথার বন্ধুকে তার মত থেকে নড়াতে পারলাম না। অগত্যা বিষয় পরিবর্তন করে প্রাণবন্ত করে তুললাম দু’জনের আলাপন ও আড্ডা।
হায়, সেলুকাস! ৩০ আগস্টের পত্রিকা হাতে নিয়ে দেখি, সে বন্ধুর আশঙ্কাই সঠিক। মনে হলো, সে আমার চেয়ে দূরদর্শী। পত্রিকায় শিরোনাম হয়ে এলো, ‘বিএসএফের তাড়া খেয়ে পানিতে পড়ে বাংলাদেশীর মৃত্যু’! একটি ঘটনা কিছুটা তুলে ধরছি পাঠকের সুবিধার্থে। ‘ভারতে গরু আনতে যাওয়ার সময় ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনী বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক গরু ব্যবসায়ীর। তিনি হলেন মহেশপুর উপজেলার জলুলী গ্রামের কাঙ্গাল মণ্ডলের জামাতা শহিদুল ইসলাম। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার ভোররাতে মাঠিলা গ্রামের কোদলা নদী পার হয়ে ৫২ নং মেইন পিলার ১৭ সাব-পিলারের কাছ দিয়ে ভারতে গরু আনতে যাওয়ার সময় ভারতের কুলিয়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে পিটিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে কোদলা নদীতে ফেলে দেয়। পরে সকালে এলাকাবাসী লাশ নদীতে ভাসতে দেখে জলুলী বিজিবি ক্যাম্পে খবর দেয়...’ (দৈনিক নয়া দিগন্ত)।
শহিদুল ইসলামের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরটা পড়ে আমার বলতে ইচ্ছে করছে, এই কি তাহলে বিএসএফের অপ্রাণঘাতী অস্ত্র? গুলি খরচ না করে আচ্ছামতো পিটিয়ে আধমরা করে পানিতে ফেলে হত্যা করা এবং তারপর দ্বিপীয় সম্মেলনে সাফাই গাওয়া যে, ‘ভারত এখন সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে না। প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করে।’! হায় বিএসএফ... হায় মানবতা। মিথ্যাচারেরও সীমা থাকা উচিত।
alauddin.kabir.49@gmail.com
তারপর আমার বাস্তববাদী ও ইতিহাসসচেতন বন্ধু ওই রিপোর্টের পুরোটাই পড়ল এবং শেষের দিকের কয়েকটা কথা নিয়ে আমার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলল: এই যে কথাগুলো... ‘বিএসএফ দ্বিপীয় সম্মেলনে বিজিবিকে জানিয়েছে, ভারত এখন সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে না। প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করে। এই অস্ত্র ব্যবহার করতে গিয়ে বিএসএফের সদস্যরা চোরাচালানিদের হাতে আহত হচ্ছে...’ (দৈনিক নয়া দিগন্ত)। এসব তুই যতই সত্য মনে করিস না কেন, নিশ্চিত বলে দিতে পারি, এ কথাগুলোয় ‘ঘাপলা’ আছেই এবং থাকবেই।
তারপরও বন্ধুর এসব অমূলক আশঙ্কাভরা কথাকে আমি তেমন একটা আমলে নিইনি। কেবল তাকে এই বলে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলাম যে, ‘অতীত আঁকড়ে ধরে থাকলে তো বেঁচে থাকাই দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। বিএসএফ আগে কী করেছে বা তাদের চরিত্র আগে কেমন ছিল, তারচেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলো, এখন তারা কী করছে বা কী বলছে তার প্রতি বিশ্বাস রাখা।’ এসব বলেও আমার এক কথার বন্ধুকে তার মত থেকে নড়াতে পারলাম না। অগত্যা বিষয় পরিবর্তন করে প্রাণবন্ত করে তুললাম দু’জনের আলাপন ও আড্ডা।
হায়, সেলুকাস! ৩০ আগস্টের পত্রিকা হাতে নিয়ে দেখি, সে বন্ধুর আশঙ্কাই সঠিক। মনে হলো, সে আমার চেয়ে দূরদর্শী। পত্রিকায় শিরোনাম হয়ে এলো, ‘বিএসএফের তাড়া খেয়ে পানিতে পড়ে বাংলাদেশীর মৃত্যু’! একটি ঘটনা কিছুটা তুলে ধরছি পাঠকের সুবিধার্থে। ‘ভারতে গরু আনতে যাওয়ার সময় ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনী বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক গরু ব্যবসায়ীর। তিনি হলেন মহেশপুর উপজেলার জলুলী গ্রামের কাঙ্গাল মণ্ডলের জামাতা শহিদুল ইসলাম। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার ভোররাতে মাঠিলা গ্রামের কোদলা নদী পার হয়ে ৫২ নং মেইন পিলার ১৭ সাব-পিলারের কাছ দিয়ে ভারতে গরু আনতে যাওয়ার সময় ভারতের কুলিয়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে পিটিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে কোদলা নদীতে ফেলে দেয়। পরে সকালে এলাকাবাসী লাশ নদীতে ভাসতে দেখে জলুলী বিজিবি ক্যাম্পে খবর দেয়...’ (দৈনিক নয়া দিগন্ত)।
শহিদুল ইসলামের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরটা পড়ে আমার বলতে ইচ্ছে করছে, এই কি তাহলে বিএসএফের অপ্রাণঘাতী অস্ত্র? গুলি খরচ না করে আচ্ছামতো পিটিয়ে আধমরা করে পানিতে ফেলে হত্যা করা এবং তারপর দ্বিপীয় সম্মেলনে সাফাই গাওয়া যে, ‘ভারত এখন সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে না। প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করে।’! হায় বিএসএফ... হায় মানবতা। মিথ্যাচারেরও সীমা থাকা উচিত।
alauddin.kabir.49@gmail.com
No comments