শহীদ মিনারের অবমাননা -ভিন্নমতের কণ্ঠরোধের অপপ্রয়াস বন্ধ হোক
বাংলাদেশের দুটি রাজনৈতিক ঘরানা দেশকে বিভক্ত করে যেভাবে নিজেদের ক্ষমতার বিস্তার ঘটাতে চাইছে, তাতে অমঙ্গলের পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। সর্বশেষ ভাষা আন্দোলনের মহান প্রতীক, বাংলাদেশের মুক্তিকামী চেতনার প্রাণভোমরা শহীদ মিনারও তাদের হিংসা-বিভক্তির রাজনীতির শিকার হলো। অধ্যাপক পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নিতে না দেওয়ার নামে রাজনৈতিক মহলে কুৎসিত তৎপরতা চালানো হয়েছে। তাঁকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ আখ্যায়িত করে একটি পক্ষ অনলাইনমাধ্যম থেকে শুরু করে বাস্তব জমিনে ঘৃণা প্রকাশ করে চলেছে। এই ঘৃণার সুনামি ক্রমেই দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকের ভাবমূর্তিতেও আঘাত হেনেছে। শাহবাগে একটি ভুঁইফোড় সংগঠন ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচকদের ছবিতে কাটাচিহ্ন দিয়ে তাঁদের মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের শেষ সম্মাননার ‘অনুমতি’ না দিয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। সবকিছু মিলিয়ে শহীদ মিনারকে সচেতনভাবে দলীয় সম্পত্তি বানানোর প্রয়াস অত্যন্ত নিন্দনীয়। ভালোবাসার অশ্রু আর সংগ্রামের রক্তবিধৌত শহীদ মিনারকে এভাবে অপমান করার অধিকার কারও নেই। শহীদ মিনার সর্বজনের গন্তব্য। সভ্য সমাজে সামাজিক সম্মতির ভিত্তিতে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ের মীমাংসা হয়। যে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য নেই, সে বিষয়ের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ মিনারকে জড়িত না করাই গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক। সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করলেই ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া, ভিন্নমতাবলম্বীকে হুমকি-অবমাননা ও কুৎসার শিকার করা স্বৈরাচারী মনোবৃত্তিরই পরিচায়ক। সরকারি মহল থেকে যেখানে এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিবৃত্ত করার কথা, সেখানে উসকে দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রীদের কণ্ঠেও হুমকি-রণহুংকার শোনা যাচ্ছে। এভাবে শহীদ মিনারকে ক্ষমতার ঢাল বানানো খোদ মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ মিনার ও ভাষাশহীদদের প্রতিই চরম অবমাননা।
No comments