পিপিপির ওপর আস্থা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিলেন বিলাওয়াল
করাচিতে গত শনিবার পিপিপির সমাবেশে বিলাওয়াল ভুট্টো। ছবি: এএফপি |
সাত বছর আগে প্রায় এক দশকের স্বেচ্ছানির্বাসন শেষে দেশে ফিরেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। নিজ দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা তাঁকে বিপুলভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন। পরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে হামলায় নিহত হন তিনি। এবার বেনজিরের ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোকেও (২৬) একইভাবে স্বাগত জানালেন দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। গত শনিবার বন্দর নগর করাচিতে বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে বিলাওয়ালও যেন মা বেনজিরের যোগ্য উত্তরসূরি হওয়ার বিষয়টি আবার জানান দিলেন সেই নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সামনে। ওই দিনই প্রথমবারের মতো সরাসরি রাজনীতির ময়দানে নামলেন পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল।
লীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থক তথা জনগণের কাছে বিলাওয়ালের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই করাচির এ সমাবেশ আয়োজন করে পিপিপি। একই সঙ্গে গত বছর পার্লামেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়া দলটির প্রতি জনগণের আস্থা ফেরানোও উদ্দেশ্য ছিল এ সমাবেশের। গত পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের ক্ষমতায় থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে পিপিপি। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগে নির্বাচনে চরম ভরাডুবি ঘটে দলটির। পিপিপি এখন শুধু সিন্ধু প্রদেশেই ক্ষমতায় রয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, পিপিপির ওপর জনগণের আস্থা ফেরানোর কাজটা কঠিনই হবে তরুণ নেতা বিলাওয়ালের জন্য। মুলতানে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত একটি আসনের উপনির্বাচনে তাঁর দল পিপিপির প্রার্থী তৃতীয় স্থান পেয়েছেন। ভোট পেয়েছেন মাত্র কয়েক হাজার। এটাকে পিপিপির বর্তমান অবস্থার প্রতীকও বলছেন কেউ কেউ। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র এক প্রার্থী। যাঁকে সমর্থন দিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খান। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের নেতা ইমরান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি,
স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে আন্দোলন করছেন। গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে অভিযোগ তুলে নতুন করে নির্বাচনের দাবিও তুলেছেন তিনি। ইমরান এ আন্দোলনের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত শ্রেণির অনেক তরুণ ও নারীর মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন। অনেকের মতে, গত পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগের চেয়ে বর্তমানে পাকিস্তানের রাজনীতির মাঠের অনেকটা জায়গা নিজের করে নিতে সক্ষম হয়েছেন ইমরান। এ বিষয়টিও পিপিপিকে ঘুরে দাঁড় করাতে বিলাওয়ালের কাজটি অনেক কঠিন করে দিয়েছে। করাচির সমাবেশে বিলাওয়াল নিজেকে দেশটির তরুণ সমাজের প্রকৃত প্রতিনিধি ও পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে চেষ্টা করেন নিজেকে নানা সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও মা বেনজির ভুট্টোর আত্মিক ও মতাদর্শিক ধারক-বাহক হিসেবে তুলে ধরতে। সমাবেশের মূলমঞ্চে আসন নিয়ে বিলাওয়াল জনতার উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘আমিই ভুট্টো।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিলাওয়াল তাঁর বক্তৃতায় আবার এটা বলার চেষ্টা করেছেন, ‘শুধু ভুট্টোবাদই পাকিস্তানকে বাঁচাতে পারে।’ পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাইরিল আলমেইদা বলেন, ‘এটা পুরোনো কথাই হলো।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দ্য ফ্রাইডে টাইমস-এর সম্পাদক নাজাম শেঠি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে ভুট্টোবাদ কোনো অর্থ বহন করে না।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোশাররফ জায়েদি বলেন, নওয়াজ শরিফ ও ইমরান খানের জন্য হুমকি হিসেবে ভাবা হয় বিলাওয়ালকে। তিনি তখনই এই দুজনের প্রকৃত হুমকি হয়ে উঠতে পারবেন যখন পিপিপিকে সিন্ধু ও বিশেষ করে পাঞ্জাবে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবে।
No comments