এরশাদের কমান্ড মানছেন না কেউ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ
এরশাদের কমান্ড মানছে না রংপুর জেলা ও মহানগর সাবেক কমিটির নেতারা। রংপুরে
এরশাদের আগমনের উপস্থিতি জেনে জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয় দখলে রেখে সংবাদ
সম্মেলন করে রংপুর মহানগর সিটি করপোরেশনের ৩৩ ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা।
সেখানে তারা পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। ওই সময় এরশাদ তার পল্লী নিবাস
বাসভবনে তার সমর্থকদের নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
একই সময় এরশাদের আগমনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ হতে পারে এমন
আশঙ্কায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। অন্যদিকে,
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার
সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে দলীয় কার্যালয়ের চাবি নিতে পারছেন না এরশাদ। ফলে
জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে রংপুরে জাতীয় পার্টির রাজনীতি। দলীয়
নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, গত ১০ই সেপ্টেম্বর জাপা কেন্দ্রীয়
প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতির পদ থেকে
প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বাদ দিয়ে রংপুর জেলা ও মহানগর আহবায়ক
কমিটি গঠন করা হয়। সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টারকে আহবায়ক ও বিলুপ্ত
কমিটির সাধারন সম্পাদক আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টুকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সাবেক
এমপি এরশাদের ভাতিজা হোসাইন মকবুল শাহরিয়ারকে সদস্য সচিব করে জেলা আহ্বায়ক
কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃৃত সাবেক উপজেলা
চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে আহ্বায়ক, বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ
সম্পাদক এডভোকেট সালাহ উদ্দিন কাদেরী ও জাপা থেকে বহিষ্কৃত সাবেক পৌর মেয়র এ
কে এম আবদুর রউফ মানিককে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জাপা থেকে বহিষ্কৃত এস এম
ইয়াসিরকে সদস্য সচিব করে মহানগর কমিটি গঠন করা হয়। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে
রাঙ্গার সমর্থকরা। তারা রাঙ্গাকে তার নিজ নিজ পদে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে দলীয়
কার্যালয় দখলে নিয়ে রাঙ্গা সমর্থকরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। এনিয়ে সংসদে
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের আশির্বাদপুষ্ট রাঙ্গা সর্মথক ও জাপা
চেয়ারম্যান এরশাদের নতুন কমিটির সর্মথকদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। এনিয়ে
গত ২০শে সেপ্টেম্বর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে দু’গ্রুপ সমাবেশ আহ্বান করায়
সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। পরে শাপলা চত্বরে মোস্তফা গ্রুপ সমাবেশ
করতে চাইলে সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়। গত ২রা অক্টোবর এরশাদ রংপুরে এলে তার
উপস্থিতিতে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় এরশাদ নেতাকর্মীদের
উদ্দেশ্যে বলেন, জাতীয় পার্টি এরশাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
আমারই দলের রাঙ্গা হতে পারে না। তিনি বলেন, আমি দলের চেয়ারম্যান। যে কমিটি
করেছি ওই কমিটি চূড়ান্ত। এর কোন পরিবর্তন হবে না। ওদিকে দলীয় কার্যালয়ে
পাল্টা ঘোষনা দিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আর যাই হোক যারা রংপুরে তৃণমূল
জাতীয় পার্টি গঠন করে দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে সেই মোস্তাফা, মানিক ও
ইয়াসিরসহ অন্যদের কোনভাবে মেনে নেবে না জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও
সমর্থকরা। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে দলের চেয়ারম্যানকে বাধ্য করা
হবে এক সময় বিদ্রোহী নেতাদের বাদ দিতে। এ প্রসঙ্গে মহানগর কমিটি আহ্বায়ক
মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, তৃণমূল জাতীয় পার্টি গঠন করার পেছনে
নেপথ্যে ছিলেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। তার কারণে এটি হয়েছিল। দল ও এরশাদকে
ভালবাসী বলেই তৃণমূল জাতীয় পার্টির মাধ্যমে রংপুরে দলের অবস্থান ধরে রাখতে
চেয়েছিলাম। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে আমাদের দল থেকে দূরে রেখেছে তারা দলের
অস্তিত্বকে বিলীন করে ফেলেছে। প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গা তার লোকজনকে গ্রেপ্তার
না করে এরশাদ সমর্থকদের গ্রেপ্তার করার জন্য বলেন। অপরদিকে এরশাদ তার
সমর্থকদের গ্রেপ্তার না করে দলে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তাদের
গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশকে তাগাদা দিচ্ছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ
নীরব ভূমিকা পালন করছে।
No comments