আর কত লাশ বইবে বাংলাদেশ? by সাজেদুল হক
মুহূর্তেই বদলে যায় সব। সুস্থ আর স্বাভাবিক মানুষটি হয়ে যান লাশ। কেউ হন গুরুতর আহত। বাকি জীবন এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে। সড়ক দুর্ঘটনা এমনভাবে এলোমেলো করে দেয় বহু মানুষের জীবন। তছনছ হয়ে যায় বহু পরিবারের স্বপ্ন। বড়াইগ্রাম দুর্ঘটনা আবারও এক দুঃস্বপ্নের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশকে। দুর্ঘটনা নয়, এ নিছক হত্যাকাণ্ড। হত্যার এ প্রলয় নৃত্য অবশ্য চলছে বহুদিন ধরেই। রা করছেন না কেউই। মানুষের জীবন নিয়ে কৌতুকও করেন ক্ষমতাবানরা। দক্ষ চালক নিয়োগের দাবি উঠলেও এতে রা করেন না তারা। বলেন, চালক হওয়ার জন্য ছাগল চেনাই যথেষ্ট। ছাগল চেনা চালকদের কারণে এক একটি মহাসড়ক এখন পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। শোক প্রকাশের সংস্কৃতিও অবশ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল। শোকেও যোগ দিয়েছে রাজনীতি আর বিভক্তি। বড়াইগ্রাম ট্র্যাজেডি অবশ্য শোকের কাতারে আবার শামিল করেছে রাজনীতিবিদদের। যদিও এটা নিশ্চিত একটি শোকবিবৃতিই এইসব হতভাগ্য মানুষদের একমাত্র প্রাপ্য। দুই দিনের হা-হুতাশ। তারপর আবার সব কিছু ভুলে যাওয়া। এ লেখা যখন তৈরি হচ্ছে তখনও বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় নিশ্চিতভাবে কেউ নিহত-আহত হচ্ছেন। আমাদের কোন বিকার নেই। আমাদের অনেক প্রতিভাবান মানুষকেও আমরা হারিয়েছি সড়ক দুর্ঘটনায়। শ্রমিক রাজনীতির ম্যারপাঁচে প্রভাবশালীরা সবসময় পক্ষ নিয়েছেন চালকদের। কঠোর আইন দূরহস্ত। কোন চালক গ্রেপ্তার হলেই ধর্মঘট। অশুভ দাবির কাছে আত্মসমর্পণ। আইন দিনকে দিন সহজ হয়েছে চালকদের জন্য। লাইসেন্স প্রদানে মানা হয় না কোন নিয়ম-নীতি। এমনকি বিআরটিসি’র বেশির ভাগ চালকই যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত নন। অন্য অনেক কিছুর মতোই বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রধানতম দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার মানুষ নিহত ও ৩৫ হাজার আহত হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়। আর বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে মৃত্যুর হার ৮৫ দশমিক ৬। বেসরকারি এক হিসাবে চলতি বছর প্রথম সাত মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২ হাজার মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জিডিপি’র শতকরা ২ ভাগ। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শতকরা ৬০ ভাগ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। একেকটি সড়ক দুর্ঘটনা একেকটি পরিবার আর ব্যক্তি মানুষের স্বপ্নের মৃত্যু। স্বাধীন বাংলাদেশ এমন মৃত্যুর মিছিল আর কত সইবে সে প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বড়।
No comments