বাবাকে মনে পড়ে by অধ্যাপক ডা. মো. তাহমিনুর রহমান
কী বিচিত্র মানুষের জীবন! ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২, বৃহস্পতিবার। মাকে নিয়ে বাবা ঢাকায় এসেছিলেন। বিকালে ল্যাব এইড হাসপাতালে তিনি তার ছাত্র নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. সিরাজুল হকের সঙ্গে দেখা করে গল্প করেছেন, চেকআপ শেষে ওইদিনই বগুড়া ফিরে গেছেন। এরপর হঠাৎ রাতে স্ট্রোক ও হার্ট ফেইলের ঘটনা। সময় কত দ্রুত ফুরিয়ে যায়! এখনও চোখ বন্ধ করলে দেখি বাবা অচেতন অবস্থায় আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। ২১ সেপ্টেম্বর ২০১২ থেকে ১০ অক্টোবর ২০১২। সব প্রচেষ্টা ব্যার্থ করে দিয়ে অক্টোবরের ১০ তারিখে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, রক্ত জমাট বাধা, হার্ট ফেইল ও কিডনি জটিলতায় পণ্ডিত, বগুড়া জিলা স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক, দিনাজপুর জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষক ও দেশের অন্যতম একজন রস সাহিত্যিক আমার বাবা তাজমিলুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।
আমার বাবা সম্পর্কে কী লিখব, কোনদিক থেকে শুরু করব- বুঝতে পারছি না। বাবার জন্ম বগুড়ার গাবতলী থানার মেঘাগাছা গ্রামে ১৯২০ সালের দিকে। ১৯৪০ বিএ পাস করে কলকাতায় পাড়ি জমান। যোগ দেন কলকাতা ফুড বিভাগে, ফুড ইন্সপেক্টর হিসেবে। কিন্তু যার রক্তে শিক্ষতার নেশা, জ্ঞান বিতরণের নেশা- তিনি ফুড সাপ্লাইয়ের চাকরি করবেন কীভাবে? তাই লোভনীয় সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি বগুড়ায় ফিরে আসেন। প্রথমে নিজ উপজেলা গাবতলী স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে বগুড়া জিলা স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বগুড়া জিলা স্কুল, দিনাজপুর জিলা স্কুল, কুড়িগ্রাম জিলা স্কুল, রাজশাহী সরকারি স্কুল এবং সবশেষে পুনরায় বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি জীবন শেষ করে ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরই মাঝে ১৯৬৫-৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন বাবা।
শিক্ষা বিস্তারে ব্রতী হয়ে অবসর গ্রহণের পর বাবা প্রতিষ্ঠা করেন বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল। ১৯৯৫ পর্যন্ত ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে সুনাম ও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রদের উৎসাহ প্রদান ও অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতেন। শিক্ষকতার বাইরে রম্য রচনা ও নাটকসহ বিভিন্ন ধরনের লেখালেখির চর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আমার বাবা। তার লিখিত রম্য রচনার বই ‘অমৎসর’ এর ভূমিকা লিখেছিলেন দেশবরেণ্য রম্য সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ এবং প্রচ্ছদ অলংকরণ করেছিলেন বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি ১০টির মতো নাটক লিখেছেন। এগুলো দেশের বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছে। একটি নাটক স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার পেয়েছে এবং অন্য একটি নাটক ‘কলির জিন’ পাকিস্তান আমলে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সবার্ধিক মঞ্চস্থ সফল নাটক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বণার্ঢ্য জীবনের অধিকারী, জ্ঞানতাপস, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক আমার বাবা তাজমিলুর রহমানের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১০ অক্টোবর। এ অক্টোবরে আমি আমার প্রিয় বাবাকে হারিয়েছি। তাকে খুব মনে পড়ছে।
অধ্যাপক ডা. মো. তাহমিনুর রহমান
ভাইস-প্রিন্সিপাল ও বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ, ধানমণ্ডি, ঢাকা
আমার বাবা সম্পর্কে কী লিখব, কোনদিক থেকে শুরু করব- বুঝতে পারছি না। বাবার জন্ম বগুড়ার গাবতলী থানার মেঘাগাছা গ্রামে ১৯২০ সালের দিকে। ১৯৪০ বিএ পাস করে কলকাতায় পাড়ি জমান। যোগ দেন কলকাতা ফুড বিভাগে, ফুড ইন্সপেক্টর হিসেবে। কিন্তু যার রক্তে শিক্ষতার নেশা, জ্ঞান বিতরণের নেশা- তিনি ফুড সাপ্লাইয়ের চাকরি করবেন কীভাবে? তাই লোভনীয় সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি বগুড়ায় ফিরে আসেন। প্রথমে নিজ উপজেলা গাবতলী স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে বগুড়া জিলা স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বগুড়া জিলা স্কুল, দিনাজপুর জিলা স্কুল, কুড়িগ্রাম জিলা স্কুল, রাজশাহী সরকারি স্কুল এবং সবশেষে পুনরায় বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি জীবন শেষ করে ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরই মাঝে ১৯৬৫-৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন বাবা।
শিক্ষা বিস্তারে ব্রতী হয়ে অবসর গ্রহণের পর বাবা প্রতিষ্ঠা করেন বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল। ১৯৯৫ পর্যন্ত ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে সুনাম ও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রদের উৎসাহ প্রদান ও অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতেন। শিক্ষকতার বাইরে রম্য রচনা ও নাটকসহ বিভিন্ন ধরনের লেখালেখির চর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আমার বাবা। তার লিখিত রম্য রচনার বই ‘অমৎসর’ এর ভূমিকা লিখেছিলেন দেশবরেণ্য রম্য সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ এবং প্রচ্ছদ অলংকরণ করেছিলেন বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি ১০টির মতো নাটক লিখেছেন। এগুলো দেশের বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছে। একটি নাটক স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার পেয়েছে এবং অন্য একটি নাটক ‘কলির জিন’ পাকিস্তান আমলে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সবার্ধিক মঞ্চস্থ সফল নাটক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বণার্ঢ্য জীবনের অধিকারী, জ্ঞানতাপস, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক আমার বাবা তাজমিলুর রহমানের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১০ অক্টোবর। এ অক্টোবরে আমি আমার প্রিয় বাবাকে হারিয়েছি। তাকে খুব মনে পড়ছে।
অধ্যাপক ডা. মো. তাহমিনুর রহমান
ভাইস-প্রিন্সিপাল ও বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ, ধানমণ্ডি, ঢাকা
No comments