কমিউনিটি রেডিও- আমেরিকা ও বাংলাদেশ by এ. এম. জিয়া হাবীব আহসান
একজন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ইউএস জুডিশিয়াল সিস্টেম শীর্ষক ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস লিডারশিপ প্রোগ্রামে অংশ নিতে সে দেশ সফর করি। অভিবাসীদের দেশখ্যাত বিচিত্র মানুষ ও কালচারের দেশ আমেরিকা। প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী এবং কয়েকটি অঙ্গরাজ্য ভ্রমণ করি। বাংলাদেশ থেকে আমরা সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রোগ্রামে যোগ দিই। সময় নির্ধারিত ছিল KBOO FM Radio স্টেশন পরিদর্শনের জন্য। পোর্টল্যান্ড অরিগন, ঠিকানায় পৌঁছলে স্টেশনের কো-অর্ডিনেটর Ani Haines স্বাগত জানান। তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী কো-অর্ডিনেটর। KBOO FM Radio জনপ্রিয় বেতার মাধ্যম। জনপ্রিয়তার কারণ খুঁজতে লাগলাম। জানতে পারলাম, এটি একটি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন। অন্যান্য মিডিয়ার মতো গৎবাঁধা প্রোগ্রাম করে না। KBOO এর চার্টার অনুযায়ী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য অনুষ্ঠান সম্প্রচারে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ওই সব জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার ও প্রশিক্ষণেও ভূমিকা পালন করে থাকে। KBOO গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুর অত্যন্ত প্রিয়, বিতর্কিত ও অবহেলিত দিকের ওপর জোর দিয়ে সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে। KBOO শান্তি ও সুবিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বহুমাত্রিক সংস্কৃতি, পরিবেশবাদ, মত প্রকাশের অধিকার ও সামাজিক পরিবর্তন প্রভৃতি মূল্যবোধের নীতি অনুসরণ করে থাকে। এর চিত্রকলা, সাংস্কৃতিক ও মিউজিক অনুষ্ঠানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী ও গবেষণাধর্মী মতামতের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসম কমিউনিটি ও গ্রুপদের নিয়ে তাদের প্রোগ্রাম। অ্যানি জানালেন, তাদেরকে অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা ও প্রশিক্ষিত করাই প্রোগ্রামের লক্ষ্য। পাবলিক অ্যাফেয়ারস ডিরেক্টর Jenka Soderberg- -এর কাছ থেকে জানতে পারলাম, ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক এই রেডিওর সাথে কাজ করে। ৪০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এটি মুনাফাহীন স্বতন্ত্র বেতার প্রতিষ্ঠান। তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদ পরিবেশন করে। তারা কিভাবে প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন কাভারেজ দেন তার টেকনিকগুলো উপস্থাপন করেন। তাদের নিউজ লেটারে এক মাসের প্রোগ্রাম সেট করা থাকে। অ্যানি হেনিস বলেন, অন্য স্টেশনে যাদের কথা শোনানো হয় না, তাদের কথা এখানে শোনানো হয়। আমরা আমাদের অনুষ্ঠানে মূল্যবোধগুলো তুলে ধরি। কারো প্রতি বিদ্ধেষ বা বৈষম্য পোষণ করি না। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে যাই ও সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করি। এ স্টেশন থেকে সাতটি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। সকাল ৭টায় এবং বিকেল ৫টায় খবর প্রচারিত হয়। ইন্টারনেটেও অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। প্রত্যেক সপ্তাহে পরিবেশ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। পুলিশি নির্যাতন ও বর্বরতা নিয়েও তারা প্রোগ্রাম করেন। নারী, শিশু ও লেবার প্রভৃতি ইস্যুতেও অনুষ্ঠান তৈরি ও প্রচার করা হয়। আন্তর্জাতিক ইস্যু যেমনÑ ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলের সংঘর্ষ নিয়েও প্রোগ্রাম প্রচারিত হয়। তাদের পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, এই রেডিওর ৬০ সহস্রাধিক শ্রোতা রয়েছে। স্টুডিওর রেকর্ডিং সিস্টেম, বিভিন্ন গ্রুপ কিভাবে কাজ করছে, কিভাবে অনুষ্ঠান সম্প্রচার হচ্ছে সব কিছু আমাদের দেখানো হলো। আমাদের দেশে টিভি চ্যানেলের জোয়ারে গ্রামগঞ্জ থেকেও বিদায় নিতে যাচ্ছে রেডিওর প্রোগ্রাম। রেডিওর শ্রোতার আজ বড়ই অভাব। তবে সম্প্রতি FM রেডিও শ্রোতাদের স্বাদ কিছুটা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। KBOO FM রেডিওর মতো আমাদের রেডিও স্টেশনগুলোও যদি স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অভাব, অভিযোগ, মানবাধিকার ও সংস্কৃতি নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরতে পারে, তাহলে সমাজ সংস্কারে পরিবর্তন আসতে পারে এবং এতে বৈষম্য দূরীভূত হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমনÑ প্রতিবন্ধী, হিজরা, ুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাদের সচেতন করতে কমিউনিটি রেডিওর ভূমিকা বিরাট। উপকূলে নিরাপদ আবাসন গড়তে এর জুড়ি নেই। কমিউনিটি রেডিওকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানাভাবে নামকরণ করা হয়েছে। যেমনÑ গ্রামীণ বেতারকেন্দ্র, মুক্ত বেতার, সমবায় রেডিও, ক্যাম্পাস রেডিও, বিকল্প বেতার, শিক্ষামূলক বেতার ইত্যাদি। একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে উন্নয়নশীল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতির জন্য তথ্যজগতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকারের সুফল ভোগ করতে বাংলাদেশেও চালু হয়েছে কমিউনিটি রেডিও। ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল তথ্য মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো মোট ১৪টি কমিউনিটি রেডিও চালুর ঘোষণা দেয়। তার মধ্যে সমাজ উন্নয়ন সংগঠন ইপসা কর্তৃক পরিচালিত রেডিও সাগর গিরি এফএম ৯৯.২ চট্টগ্রামে সরকার অনুমোদিত প্রথম কমিউনিটি রেডিও। রেডিও সাগর গিরি পরিদর্শনে গেলে ইপসার প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান ও স্টেশন ম্যানেজার মো: শাহ সুলতান শামীম স্বাগত জানান। স্টেশন ম্যানেজার বলেন, রেডিও সাগর গিরি অনুমোদন লাভের পর ২৩ নভেম্বর ২০১১ এফ এম ৯৯.২ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু করে এবং গত ২৪ মার্চ ২০১২ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ৯ কিলোমিটার উত্তরে, রাজধানী ঢাকা থেকে ২১৯ কিলোমিটার দক্ষিণে, ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সাগর গিরির মিলনকেন্দ্র বার আউলিয়ার পুণ্যভূমিতে সীতাকুণ্ড উপজেলার অবস্থান এবং ঢাকার দূরত্ব ২৩৭ কিলোমিটার। উপজেলা সদর সামান্য দূরত্বে রেডিও ‘সাগর সাগর গিরি’এফ এম ৯৯.২ এর অবস্থান। এই বেতার কেন্দ্রের লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও বাস্তবভিত্তিক নানা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, দারিদ্র্যবিমোচন ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। স্টেশন ম্যানেজার বলেন, আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি- তা হলো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি সেবাগুলোতে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা ও কমিউনিটিতে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত সেবা প্রদান করা। স্থানীয় পর্যায়ে আয়বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পরিবেশ তৈরি করা। স্থানীয় কৃষি, লোকজ, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন বিকাশের সুযোগ তৈরি করে দেয়া। কমিউনিটিকে ুদ্রঋণের ইতিবাচক দিক এবং ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা। আমাদের সাথে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠী হচ্ছে কৃষক, শ্রমিক, ধনী, দরিদ্র, পেশাজীবী, মৎস্যজীবী, আদিবাসী নারী-পুরুষ, প্রতিবন্ধী ও শিশু-কিশোরসহ সম্প্রচার এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সম্প্রচার এলাকায় দারিদ্র্যবিমোচন ও সমাজ উন্নয়নে স্থানীয় ভাষায় সহজবোধ্যভাবে স্থানীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ ও মিরসরাই এলাকার সর্বস্তরের ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী এর সুফল পাবে। স্থানীয় যুবকরাই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে এখানে। সুবিধাবঞ্চিত জনগণ যাদের কথা জাতীয় মাধ্যমগুলোতে প্রাধান্য পায় না, তারাই এখানে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে।
লেখক : মানবাধিকার আইনজীবী ও লেখক
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ৯ কিলোমিটার উত্তরে, রাজধানী ঢাকা থেকে ২১৯ কিলোমিটার দক্ষিণে, ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সাগর গিরির মিলনকেন্দ্র বার আউলিয়ার পুণ্যভূমিতে সীতাকুণ্ড উপজেলার অবস্থান এবং ঢাকার দূরত্ব ২৩৭ কিলোমিটার। উপজেলা সদর সামান্য দূরত্বে রেডিও ‘সাগর সাগর গিরি’এফ এম ৯৯.২ এর অবস্থান। এই বেতার কেন্দ্রের লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও বাস্তবভিত্তিক নানা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, দারিদ্র্যবিমোচন ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। স্টেশন ম্যানেজার বলেন, আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি- তা হলো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি সেবাগুলোতে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা ও কমিউনিটিতে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত সেবা প্রদান করা। স্থানীয় পর্যায়ে আয়বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পরিবেশ তৈরি করা। স্থানীয় কৃষি, লোকজ, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন বিকাশের সুযোগ তৈরি করে দেয়া। কমিউনিটিকে ুদ্রঋণের ইতিবাচক দিক এবং ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা। আমাদের সাথে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠী হচ্ছে কৃষক, শ্রমিক, ধনী, দরিদ্র, পেশাজীবী, মৎস্যজীবী, আদিবাসী নারী-পুরুষ, প্রতিবন্ধী ও শিশু-কিশোরসহ সম্প্রচার এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সম্প্রচার এলাকায় দারিদ্র্যবিমোচন ও সমাজ উন্নয়নে স্থানীয় ভাষায় সহজবোধ্যভাবে স্থানীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ ও মিরসরাই এলাকার সর্বস্তরের ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী এর সুফল পাবে। স্থানীয় যুবকরাই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে এখানে। সুবিধাবঞ্চিত জনগণ যাদের কথা জাতীয় মাধ্যমগুলোতে প্রাধান্য পায় না, তারাই এখানে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে।
লেখক : মানবাধিকার আইনজীবী ও লেখক
No comments