জনগণই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে পারে
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর গতকাল সোমবার তাঁর দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক ডন-এ সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়ে ‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা’ শিরোনামে এ লেখাটি লিখেছেন। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তা ছাপা হলো পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মহান আল্লাহর নামে। আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম করুণায় দেশটিকে বহু সংকট থেকে উদ্ধারও করেছেন। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর নাশকতা ও নির্বাচনবিরোধীদের ধর্মঘটের হুমকি সত্ত্বেও ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী মঞ্চ থেকে পড়ে গিয়ে ইমরান খানের আহত হওয়া এবং পরে সুস্থ হয়ে ওঠা দেশটিকে আরও একটি ট্র্যাজেডি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। ইমরানের অপ্রত্যাশিত জয়ের পর তাঁর বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে অস্ত্রের ঝনঝনানি হতে পারত। কিন্তু তাঁর (অসুস্থতাজনিত) নিশ্চলতা সেই উন্মাদনার হাত থেকে দেশকে অব্যাহতি দিয়েছে। নানা কারণে ২০১৩ সালের নির্বাচনকে আশীর্বাদ হিসেবে মনে করা যায়। এই নির্বাচনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অংশগ্রহণ আত্মতুষ্টিতে বুঁদ হয়ে থাকা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে জাগিয়ে তুলেছে। একই সঙ্গে এই নির্বাচন জনগণকে বিকল্প পছন্দের সুযোগ দিয়েছে। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় বুলিসর্বস্ব বক্তৃতা ও অবান্তর স্লোগানের চেয়ে সুনির্দিষ্ট ইস্যু প্রাধান্য পেয়েছে। যতগুলো নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল, তার মধ্যে প্রথম অবস্থানে ছিল লোডশেডিংয়ের অবসান। অন্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল সন্ত্রাস মোকাবিলা ও অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা। নির্বাচনী প্রচারণায় বিধিবহির্ভূতভাবে বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও প্রতিটি দল স্বচ্ছ সরকার গঠনের কথা বলেছে। একই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। দুর্নীতির বদলে সুশাসন ছিল এবারের নির্বাচনের মূল ইস্যু। ভোটাররা পরবর্তী সরকারের কাছে একটু নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা আশা করেছেন। এটা খুব বড় কোনো চাওয়া নয়। এবারের নির্বাচনের ফলাফলে আরও কতগুলো স্পষ্ট বার্তা রয়েছে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, ক্ষমতাসীনেরা ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন না করলে জনগণ তাদের শাস্তি দিতে পারে। ভোটাররা পরিবর্তন চান, কিন্তু শাসনব্যবস্থা নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হোক, তা চান না। ক্ষমতাসীনেরা অতীতের দুর্দশার ধুয়া তুলে অথবা ভবিষ্যতের অলীক স্বর্গরাজ্যের আশা দেখিয়ে জনগণের আবেগকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করবে—এটা তারা বরদাশত করেন না। গত সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের নিত্যকার বাদানুবাদের কারণে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পিএমএল-এন নির্বাচিত হওয়ায় অন্তত এই দ্বন্দ্ব এখন দূরে থাকবে। অবশ্য অনেকের আশঙ্কা, পিএমএল-এনের সঙ্গে বিচার বিভাগের উষ্ণ সম্পর্কের চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। এই সম্পর্কের জেরে অন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হওয়ার বদলে আরও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। মিয়া মোহাম্মদ নওয়াজ শরিফকে বিরাট চ্যালেঞ্জিং কাজের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এটা মোটেও প্রীতি ম্যাচ হবে না। যে বিশেষ শক্তি তাঁকে দৃষ্টিকটুভাবে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, সেই শক্তি একটি বেসামরিক সরকারের কাছে কোনোভাবেই নতিস্বীকার করবে না। সেই শক্তির বিশেষ কিছু মহল সরকারের মধ্যে একটি টেকনোক্র্যাট চক্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করবে। প্রতিটি দলের মধ্যে এরা ঘাপটি মেরে থাকে এবং একপর্যায়ে এরাই নেতৃত্বে উঠে আসে। নওয়াজকে জনগণের দুঃখ-দুর্দশাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, একমাত্র জনগণই পারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে।
No comments