বিনিয়োগ নেই তবু প্রবৃদ্ধির গালগল্পঃ মারাত্মক ঝুঁকিতে অর্থনীতি
আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী যখন
লক্ষ-হাজার কোটি টাকার চোখ ধাঁধানো বাজেট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে ব্যস্ত সময়
কাটাচ্ছেন, তখন জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে সচেতন সব মহলেই মারাত্মক আশঙ্কার
সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে জানানো
হয়েছে, বিনিয়োগ না বাড়া আশঙ্কার একটি প্রধান কারণ।
তথ্য-পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছেই না। এই হার
বহুদিন ধরেই মাত্র ২৫ শতাংশের আশপাশে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক একে বলেছে
বিনিয়োগ-ফাঁদ। অর্থাত্ সরকার যত গালগল্পই শোনাক না কেন, প্রকৃতপক্ষে দেশে
বিনিয়োগ বাড়ছে না। ঋণ দেয়াসহ ব্যাংকের চরম অব্যবস্থাপনার কারণে অলস পড়ে আছে
বিপুল পরিমাণ অর্থ। ওদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ঘুষ-দুর্নীতির পাশাপাশি
গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তো বাংলাদেশে আসারই
নাম করছেন না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে যে উত্পাদনসহ সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিরও
উন্নয়ন ঘটার কোনো সম্ভাবনা থাকে না—এই সহজ কথাটা আজকাল এমনকি শিশু-কিশোররাও
বোঝে। একই কারণে দেশের রফতানি খাতেও বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
সাভারের ভবন ধস এবং শত শত শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা একটি সাম্প্রতিক কারণ হলেও
প্রকৃতপক্ষে দেশের রফতানি খাত অনেক আগে থেকেই বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে
পড়েছে। আয় কমতে শুরু করেছে আশঙ্কাজনক হারে। রফতানি আয়ের প্রধান খাতগুলো
লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কোনো কোনো সময় এক মাসের ব্যবধানেই আয় কমে
যাচ্ছে এমনকি ৩৯ শতাংশ পর্যন্তও। ওদিকে রফতানি অর্ডারই শুধু কমে যাচ্ছে না,
পুরনো অনেক অর্ডারও বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের অন্তত ৩৫ ভাগ গার্মেন্ট
কারখানা উত্পাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ২৪শ’
কারখানা। সাভার দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এমন অবস্থায়
বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতকে রক্ষার জন্য শিল্প-কারখানায় নিরাপত্তা ও উত্পাদন
নিশ্চিত করার, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ বাড়ানোর, সড়কপথের সংস্কার এবং
সুষ্ঠু বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি রফতানি খাতের এই বিপর্যয় নিঃসন্দেহে ভীতিকর। কারণ, বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান আসে রফতানি আয় থেকে। সে আয় যখন এক মাসেই ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়, তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। উদ্বেগের অন্য একটি কারণ হলো, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেক প্রধান খাত রেমিট্যান্সেও বলতে গেলে ধস নেমেছে। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি তথা পরিমাণ কমতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে। আগে প্রবৃদ্ধি যেখানে ছিল সাড়ে ২২ শতাংশ, সেখানে বিগত সাড়ে চার বছরে এই পরিমাণ কমে নেমে এসেছে মাত্র পাঁচ শতাংশে। সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতাই রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ। ভ্রান্ত ও একদেশ তথা ভারতমুখী পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। সে কারণে ওই দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া হয় বন্ধ করেছে নয়তো অনেক কমিয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো দেশ এমনকি বাংলাদেশীদের ফেরতও পাঠিয়েছে। এখানে সৌদি আরবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার। কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তথা মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩৫ শতাংশই এসেছে সৌদি আরব থেকে। সবচেয়ে বড় সে চাকরির বাজারেই বাংলাদেশীদের জন্য দরজা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চাকরিরতদের সংখ্যাও ২২ লাখ থেকে কমে এসেছে ১৫ লাখে। অর্থাত্ বিদেশে বাংলাদেশের জন্য চাকরির বাজার সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে হবে।
রফতানি আয়ের পাশাপাশি রেমিট্যান্সও কমে যাওয়ার পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চয়ই বাড়িয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। এর ফলে অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই শুধু বাধাগ্রস্ত হবে না, বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেনের ভারসাম্যেও বিরাট ঘাটতির সৃষ্টি হবে। বাস্তবে এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছেও। সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির পাশাপাশি আমদানি ব্যয়ে বিপুল বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স আয়, বৈদেশিক সাহায্য ও এডিপিতে বিদেশি অর্থায়ন কমে যাওয়ার ফলে ভারসাম্যে তিনশ’ বিলিয়ন ডলারের বিরাট ঘাটতির মুখে পড়েছে দেশ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়েই দেশের অর্থনীতি ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে পড়েছে। এমন অবস্থায় দরকার আর্থিক খাতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া এবং সে অনুযায়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা। সরকারকে গার্মেন্টসহ শিল্প-কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। আর্থিক খাতে দুর্নীতিও কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য দরকার সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জোর উদ্যোগ নেয়া। না হলে সঙ্কটই শুধু আরও মারাত্মক হবে না, দেশের অর্থনীতিও বিপর্যযের মুখে পড়বে। তখন আর লক্ষ-হাজার কোটি টাকার বাজেটেও কোনো কাজ হবে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি রফতানি খাতের এই বিপর্যয় নিঃসন্দেহে ভীতিকর। কারণ, বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান আসে রফতানি আয় থেকে। সে আয় যখন এক মাসেই ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়, তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। উদ্বেগের অন্য একটি কারণ হলো, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেক প্রধান খাত রেমিট্যান্সেও বলতে গেলে ধস নেমেছে। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি তথা পরিমাণ কমতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে। আগে প্রবৃদ্ধি যেখানে ছিল সাড়ে ২২ শতাংশ, সেখানে বিগত সাড়ে চার বছরে এই পরিমাণ কমে নেমে এসেছে মাত্র পাঁচ শতাংশে। সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতাই রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ। ভ্রান্ত ও একদেশ তথা ভারতমুখী পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। সে কারণে ওই দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া হয় বন্ধ করেছে নয়তো অনেক কমিয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো দেশ এমনকি বাংলাদেশীদের ফেরতও পাঠিয়েছে। এখানে সৌদি আরবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার। কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তথা মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩৫ শতাংশই এসেছে সৌদি আরব থেকে। সবচেয়ে বড় সে চাকরির বাজারেই বাংলাদেশীদের জন্য দরজা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চাকরিরতদের সংখ্যাও ২২ লাখ থেকে কমে এসেছে ১৫ লাখে। অর্থাত্ বিদেশে বাংলাদেশের জন্য চাকরির বাজার সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে হবে।
রফতানি আয়ের পাশাপাশি রেমিট্যান্সও কমে যাওয়ার পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চয়ই বাড়িয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। এর ফলে অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই শুধু বাধাগ্রস্ত হবে না, বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেনের ভারসাম্যেও বিরাট ঘাটতির সৃষ্টি হবে। বাস্তবে এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছেও। সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির পাশাপাশি আমদানি ব্যয়ে বিপুল বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স আয়, বৈদেশিক সাহায্য ও এডিপিতে বিদেশি অর্থায়ন কমে যাওয়ার ফলে ভারসাম্যে তিনশ’ বিলিয়ন ডলারের বিরাট ঘাটতির মুখে পড়েছে দেশ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়েই দেশের অর্থনীতি ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে পড়েছে। এমন অবস্থায় দরকার আর্থিক খাতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া এবং সে অনুযায়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা। সরকারকে গার্মেন্টসহ শিল্প-কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। আর্থিক খাতে দুর্নীতিও কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য দরকার সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জোর উদ্যোগ নেয়া। না হলে সঙ্কটই শুধু আরও মারাত্মক হবে না, দেশের অর্থনীতিও বিপর্যযের মুখে পড়বে। তখন আর লক্ষ-হাজার কোটি টাকার বাজেটেও কোনো কাজ হবে না।
No comments