সাভারে ভবনধস: ৪১ দিনেও জ্ঞান ফেরেনি মনোয়ারের মায়ের স্বীকৃতি মিলেছে by আশীষ-উর-রহমান
বিছানা নম্বর ১৫। নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র
(আইসিইউ)। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাভার। নাকে অক্সিজেনের নল। গলায়
অস্ত্রোপচার করে লাগানো হয়েছে আরও একটি নল, পথ্য ও ওষুধ খাওয়ানোর জন্য।
রোগীর বয়স ২০ বছর। গতকাল সোমবার ৪১তম দিন পার হয়েছে। কিন্তু সংজ্ঞা ফেরেনি যুবকটির।
কিন্তু আইসিইউর বাইরের বারান্দায় যুবকের পুরো পরিবার নির্ভার। মা মুনজেলা বেগম, বাবা আবুল হোসেন আর ছোট ভাই মোশরেকুল—কারও মুখে আর আগের মতো দুশ্চিন্তার কালো মেঘ নেই। কারণ, যুবকটির পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছে, যুবকের নাম মনোয়ার হোসেন। মুনজেলা বেগমই তাঁর মা।
মুনজেলা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনত যে কত দুঃখ আছিল। হামার ছাওয়ারে তারা কয় হামার নয়! শ্যাষে ঝন্টু মেম্বার আইসে যেমন কইল, হয় এইডাই মনোয়ার, তখন তারা মানছে।’
সাভারে রানা প্লাজা ধসের দিনেই ২৪ মে মনোয়ারকে (তখনো পরিচয় জানা যায়নি) সংজ্ঞাহীন অবস্থায় এনাম হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। পা দুটো ভাঙা। ওই রাতেই তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। সংজ্ঞাহীন অজ্ঞাতপরিচয় যুবকটিকে প্রথমে মানিকগঞ্জের শুক্কুরি বেগম তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর বলে দাবি করে হাসপাতালে ছেলের জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে আসেন মুনজেলা বেগম। তিনি যুবকটিকে তাঁর ছেলে মনোয়ার বলে দাবি করেন। এই পরিবারও ছেলের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় হাসপাতালে অবস্থান করতে থাকে। কয়েক দিন পর যুবকের মাথার ব্যান্ডেজ খোলা হলে তাঁর মুখমণ্ডল পরিষ্কার দেখা যায়। তখন শুক্কুরি বেগম জানান, যুবকটি তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর নন। ফলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায় শুক্কুরির পরিবার। আশায় বুক বাঁধেন মুনজেলা বেগম। কিন্তু যুবকের সংজ্ঞা আর ফিরছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অপেক্ষা করছে, যুবকের জ্ঞান ফিরলে মিটবে পরিচয়ের দোলাচল, মুনজেলা বেগমের অপেক্ষা। কিন্তু জ্ঞান তো আর ফিরছে না।
এ নিয়ে প্রথম আলোতে ৩০ এপ্রিল ‘কাছের মা দূরের মা’, ৯ মে ‘দূরের মার দুঃখ ঘোচেনি’ এবং ১৮ মে ‘২৪ দিনেও সেই যুবকের সংজ্ঞা ফেরেনি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সেই সূত্রে যুবকটির চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি অর্থ সহায়তা দিতে থাকেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা নিজেরা সংরক্ষণ করেছে। কারণ, যুবকের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় সেই অর্থ তারা কাউকে দিতে পারছে না।
ছেলের পরিচয় নিশ্চিত করতে মুনজেলা বেগম শেষে তাঁদের এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হন। চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফোনে মনোয়ার হোসেন বলে মুনজেলার একটি ছেলে আছে বলে জানান। চিকিৎসাধীন যুবকটিই সেই মনোয়ার কি না, তা নিশ্চিত করতে ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ ওরফে ঝন্টু হাসপাতালে গিয়ে শনাক্ত করবেন বলেও জানান তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এতে রাজি হয়।
এরপর ইউপি সদস্য মামুনুর হাসপাতালে এসে যুবকটিকে মনোয়ার বলে শনাক্ত করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট হয়ে মুনজেলাকে মনোয়ারের মা বলে মেনে নেয়। পাষাণ ভার নেমে যায় এত দিন ধরে হাসপাতালে অপেক্ষায় থাকা মায়ের বুক থেকে।
মনোয়ারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ১০ হাজার টাকাসহ গত রোববার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার দেওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৭৪ হাজার ৬২০ টাকা। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এই অর্থ মা মুনজেলা বেগমের নামে স্থানীয় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শাখায় হিসাব খুলে জমা করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ছেলের স্বীকৃতি পাওয়ায় মুনজেলাসহ পরিবারের সদস্যরা খুব খুশি। হাসপাতালে এখন তাঁরা বেশ স্বচ্ছন্দেই আছেন। তাঁদের থাকার জন্য হাসপাতালে একটি কক্ষ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে লাগোয়া বাথরুমও আছে। মুনজেলা বলেন, ‘ঝন্টু মেম্বার আসি পরিচয় দিবার পর ডাইরেকটার ম্যাডামে হামাগেরে এখন অনেক স্নিহ করেন। থাকার ঘর দিছেন। ছাওয়ার বাপেরও চিকিচসা হইছে।’
মুনজেলাদের সাভারে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই বলে হাসপাতালের পরিচালক রওশন আরা চৌধুরী তাঁদের জন্য হাসপাতালেই একটি কক্ষের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ৫১০ নম্বর কক্ষে থেকেই বিনা খরচে মনোয়ারের বাবা আবুল হোসেনেরও চিকিৎসা হয়েছে।
কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত ঘটনা, সেই মনোয়ারের অবস্থার কোনো বিশেষ উন্নতি হয়নি বলে জানালেন আইসিইউর চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ইয়াসমিন খানম। তিনি বলেন, ‘খুব আশাবাদী হওয়ার মতো নয় পরিস্থিতি। অবস্থা একই রকম। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে তিন মাস, এমনকি ছয় মাস পরেও রোগীর জ্ঞান ফিরে আসতে পারে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
কিন্তু আইসিইউর বাইরের বারান্দায় যুবকের পুরো পরিবার নির্ভার। মা মুনজেলা বেগম, বাবা আবুল হোসেন আর ছোট ভাই মোশরেকুল—কারও মুখে আর আগের মতো দুশ্চিন্তার কালো মেঘ নেই। কারণ, যুবকটির পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছে, যুবকের নাম মনোয়ার হোসেন। মুনজেলা বেগমই তাঁর মা।
মুনজেলা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনত যে কত দুঃখ আছিল। হামার ছাওয়ারে তারা কয় হামার নয়! শ্যাষে ঝন্টু মেম্বার আইসে যেমন কইল, হয় এইডাই মনোয়ার, তখন তারা মানছে।’
সাভারে রানা প্লাজা ধসের দিনেই ২৪ মে মনোয়ারকে (তখনো পরিচয় জানা যায়নি) সংজ্ঞাহীন অবস্থায় এনাম হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। পা দুটো ভাঙা। ওই রাতেই তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। সংজ্ঞাহীন অজ্ঞাতপরিচয় যুবকটিকে প্রথমে মানিকগঞ্জের শুক্কুরি বেগম তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর বলে দাবি করে হাসপাতালে ছেলের জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে আসেন মুনজেলা বেগম। তিনি যুবকটিকে তাঁর ছেলে মনোয়ার বলে দাবি করেন। এই পরিবারও ছেলের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় হাসপাতালে অবস্থান করতে থাকে। কয়েক দিন পর যুবকের মাথার ব্যান্ডেজ খোলা হলে তাঁর মুখমণ্ডল পরিষ্কার দেখা যায়। তখন শুক্কুরি বেগম জানান, যুবকটি তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর নন। ফলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায় শুক্কুরির পরিবার। আশায় বুক বাঁধেন মুনজেলা বেগম। কিন্তু যুবকের সংজ্ঞা আর ফিরছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অপেক্ষা করছে, যুবকের জ্ঞান ফিরলে মিটবে পরিচয়ের দোলাচল, মুনজেলা বেগমের অপেক্ষা। কিন্তু জ্ঞান তো আর ফিরছে না।
এ নিয়ে প্রথম আলোতে ৩০ এপ্রিল ‘কাছের মা দূরের মা’, ৯ মে ‘দূরের মার দুঃখ ঘোচেনি’ এবং ১৮ মে ‘২৪ দিনেও সেই যুবকের সংজ্ঞা ফেরেনি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সেই সূত্রে যুবকটির চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি অর্থ সহায়তা দিতে থাকেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা নিজেরা সংরক্ষণ করেছে। কারণ, যুবকের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় সেই অর্থ তারা কাউকে দিতে পারছে না।
ছেলের পরিচয় নিশ্চিত করতে মুনজেলা বেগম শেষে তাঁদের এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হন। চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফোনে মনোয়ার হোসেন বলে মুনজেলার একটি ছেলে আছে বলে জানান। চিকিৎসাধীন যুবকটিই সেই মনোয়ার কি না, তা নিশ্চিত করতে ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ ওরফে ঝন্টু হাসপাতালে গিয়ে শনাক্ত করবেন বলেও জানান তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এতে রাজি হয়।
এরপর ইউপি সদস্য মামুনুর হাসপাতালে এসে যুবকটিকে মনোয়ার বলে শনাক্ত করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট হয়ে মুনজেলাকে মনোয়ারের মা বলে মেনে নেয়। পাষাণ ভার নেমে যায় এত দিন ধরে হাসপাতালে অপেক্ষায় থাকা মায়ের বুক থেকে।
মনোয়ারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ১০ হাজার টাকাসহ গত রোববার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার দেওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৭৪ হাজার ৬২০ টাকা। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এই অর্থ মা মুনজেলা বেগমের নামে স্থানীয় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শাখায় হিসাব খুলে জমা করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ছেলের স্বীকৃতি পাওয়ায় মুনজেলাসহ পরিবারের সদস্যরা খুব খুশি। হাসপাতালে এখন তাঁরা বেশ স্বচ্ছন্দেই আছেন। তাঁদের থাকার জন্য হাসপাতালে একটি কক্ষ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে লাগোয়া বাথরুমও আছে। মুনজেলা বলেন, ‘ঝন্টু মেম্বার আসি পরিচয় দিবার পর ডাইরেকটার ম্যাডামে হামাগেরে এখন অনেক স্নিহ করেন। থাকার ঘর দিছেন। ছাওয়ার বাপেরও চিকিচসা হইছে।’
মুনজেলাদের সাভারে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই বলে হাসপাতালের পরিচালক রওশন আরা চৌধুরী তাঁদের জন্য হাসপাতালেই একটি কক্ষের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ৫১০ নম্বর কক্ষে থেকেই বিনা খরচে মনোয়ারের বাবা আবুল হোসেনেরও চিকিৎসা হয়েছে।
কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত ঘটনা, সেই মনোয়ারের অবস্থার কোনো বিশেষ উন্নতি হয়নি বলে জানালেন আইসিইউর চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ইয়াসমিন খানম। তিনি বলেন, ‘খুব আশাবাদী হওয়ার মতো নয় পরিস্থিতি। অবস্থা একই রকম। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে তিন মাস, এমনকি ছয় মাস পরেও রোগীর জ্ঞান ফিরে আসতে পারে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
No comments