স্তন ক্যান্সার-আমার চিকিৎসা আমার সিদ্ধান্ত by অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
আমার মা প্রায় এক দশক ক্যান্সারের সঙ্গে
যুদ্ধ করে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। প্রথম দৌহিত্রকে দেখা এবং
তাকে কোলে নেওয়ার জন্যই যেন সেই লড়াই তিনি যথাসম্ভব দীর্ঘায়িত করেছিলেন।
আমার পরবর্তী সন্তানরা আর তাকে জানার সুযোগ পাবে না। বুঝতে পারবে না তিনি কতটা শিশুঅন্তপ্রাণ ও স্নেহময়ী ছিলেন।
সন্তানদের সঙ্গে প্রায়ই 'মায়ের মা'কে নিয়ে কথা হয় এবং কী ধরনের অসুস্থতা তাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, সেটা তাদের ব্যাখ্যার চেষ্টা করি আমি। তখন তারা জানতে চায়, আমার ক্ষেত্রেও একই অঘটন ঘটতে পারে কি-না। আমি সবসময় বলে এসেছি, এ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু সত্য হচ্ছে, আমি নিজেও শরীরে একটি 'বখাটে' জিন 'বিআরসিএওয়ান' বহন করছি এবং এটা হঠাৎই আমার স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, স্তন ক্যান্সারের ৮৭ ভাগ ও জরায়ু ক্যান্সারের ৫০ ভাগ ঝুঁকিতে রয়েছি আমি। তার মানে এই নয়, যেসব নারীর শরীরে ওই জিন আছে তাদের সবাই আমার মতো ঝুঁকিতে থাকবেন। এটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। যাদের স্তন ক্যান্সার হয়, তাদের খুব সামান্য শতাংশই তাতে আক্রান্ত হন উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জিনের কারণে। কিন্তু যাদের এই জিন রয়েছে, গড়ে তাদের ৬৫ শতাংশই ক্যান্সার ঝুঁকিতে থাকেন।
যখন জানতে পারলাম আমার ক্ষেত্রেও এটা বাস্তবতা, তখনই আগাম তৎপর হয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিই আমি। আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি 'প্রিভেনটিভ ডবল মাসটেকটোমি' (স্তন অপসারণ) করিয়ে ফেলব। যদিও দেহের দুই স্থানেই ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে, শুরুটা আমি ওপর থেকেই করতে চেয়েছি। কারণ জরায়ুর চেয়ে আমার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি এবং এর অস্ত্রোপচারও বেশি জটিল। মাসটেকটোমি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তিন মাস দীর্ঘ চিকিৎসা প্রক্রিয়া ২৭ এপ্রিল শেষ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিষয়টি আমি ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেখে আমার স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পেরেছি।
বিষয়টি নিয়ে এখন আমি লিখছি এই প্রত্যাশা থেকে যে, আমার অভিজ্ঞতা থেকে অন্যান্য নারী উপকৃত হবেন। ক্যান্সার এখনও এমন একটা শব্দ, যা এক অজানা আশঙ্কা হিসেবে মানুষের মনের মধ্যে গিয়ে আঘাত করে এবং অসহায়ত্বের এক গভীর বোধ জন্মায়। কিন্তু আজকের দিনে একটা সামান্য রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব, কেউ স্তন বা জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন কি-না। তারপর শুধু ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপার।
আমার নিজের চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় দিন, 'নিপল ডিলে' নামে একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে ওই স্থানটিকে রোগমুক্ত করে অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ ঘটানো হয়। পরীক্ষাটি কিছুটা বেদনাদায়ক এবং কালশিটে দাগ ফেলে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে নিপল অক্ষত রাখার সুযোগ বহুলাংশে বেড়ে যায়।
এর দু'সপ্তাহ পর ছিল বড় ধরনের অস্ত্রোপচার, যার মাধ্যমে স্তন কোষগুলো সরিয়ে ফেলা হয় এবং অস্থায়ী ছাঁকনি বসানো হয়। ওই অস্ত্রোপচারে আট ঘণ্টা সময়ও লেগে যেতে পারে। রোগীকে জেগে উঠতে হয় এক ঝাঁক টিউব আর এক্সপেন্ডারস বুকে নিয়ে। মনে হতে পারে, দৃশ্যটা কোনো সায়েন্স ফিকশনের। কিন্তু অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পরেই তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।
এরও ৯ সপ্তাহ পর ইমপ্লান্ট (কৃত্রিম পদার্থ) স্থাপনের মাধ্যমে স্তন পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। গত কয়েক বছরে এই প্রক্রিয়ায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং এর ফলাফলও চমৎকার হতে পারে।
আমি এসব লিখতে চেয়েছি অন্যান্য নারীকে এই কথা বলার জন্য যে, মাসটেকটোমির সিদ্ধান্তটি সহজ ছিল না। কিন্তু এটা সম্পন্ন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমার স্তন ক্যান্সার ঝুঁকি এখন ৮৭ শতাংশ থেকে নেমে ৫ শতাংশে এসেছে। আমি এখন আমার সন্তানদের বলতে পারি যে, স্তন ক্যান্সারের থাবায় আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় আর তাদের পেতে হবে না। তাদের এই আশ্বাসও পুনর্ব্যক্ত করা যায় যে, অস্বস্তিকর কোনো দৃশ্য তারা দেখবে না, কেবল একটি ছোট্ট ক্ষতচিহ্ন ছাড়া! আর সবকিছুতে তাদের 'মাম্মি' আগের মতোই। তারা জানে যে, আমি তাদের কতটা ভালোবাসি এবং তাদের কাছে থাকার জন্য আমি যতদূর সম্ভব সবকিছু করব। ব্যক্তিগত ব্যাপার যদি বলি, নারীত্বের কোনোকিছুই হারিয়ে গেছে বলে আমার মনে হয় না। নিজেকে বরং এখন ক্ষমতায়িত মনে হয়; আমি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম।
আমি সৌভাগ্যবতী যে, সঙ্গী হিসেবে পাশে ব্রাড পিটকে পেয়েছিলাম। সে এতটা ভালোবাসা ও সমর্থন জুগিয়েছে! ফলে যাদের স্ত্রী কিংবা বান্ধবী এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জানা দরকার, তারাও এ চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমার চিকিৎসাকেন্দ্র পিঙ্ক লোটাস ব্রেস্ট সেন্টারে ব্রাড আমার সঙ্গেই ছিল সব সময়। অস্ত্রোপচারের প্রতিটি মিনিট সে আমার সঙ্গেই কাটিয়েছে। আমরা দু'জন মিলে হাসি-ঠাট্টাও করেছি। আমরা জানতাম যে, পরিবারের জন্য আমরা সঠিক কাজটিই করছি এবং এর মধ্য দিয়ে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়বে। এবং সেটাই হয়েছে।
পাঠিকাকে বলছি, আমি আশা করি, আপনি জানলেন_ আপনার সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। নারীদের প্রত্যেককে, বিশেষত যাদের স্তন কিংবা জরায়ু ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে, আমি উৎসাহিত করতে চাই যে, প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খুঁজে নিন। এর মধ্য দিয়ে আপনি উপকৃত হবেন এবং জীবনের প্রয়োজনে নিজেই তথ্যবহুল সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
শুধু স্তন ক্যান্সারেই বিশ্বে প্রতি বছর ৪ লাখ ৫৮ হাজার মারা যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে দেখা যাচ্ছে। তারা মূলত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অধিবাসী। এখন এই অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার সময় এসেছে যে, যাতে আরও বেশি নারী জিন পরীক্ষা এবং জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারেন। তারা যে পেশারই হোন, যে পরিবারেরই হোন, যেখানকার বাসিন্দাই হোন না কেন। বিআরসিএওয়ান ও বিআরসিএটু পরীক্ষার খরচ এখন যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ডলার। এই খরচ অনেক নারীর চিকিৎসার জন্য প্রতিবন্ধক।
আমি আমার চিকিৎসার কথা গোপন করতে চাইনি। কারণ বিশ্বে অনেক নারী আছেন, যারা জানেন না, তারা ক্যান্সারের ছায়ায় বসবাস করছেন। আমি আশা করি, তারাও জিন পরীক্ষার সুযোগ পাবেন এবং যদি তাদের উচ্চঝুঁকি থাকে তাহলেও তারা জানবেন যে তাদের সামনে কার্যকর সুযোগ রয়েছে।
জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। কিন্তু তাতে ভীত হওয়া উচিত হবে না। বরং আমাদের সেগুলো মোকাবেলা করতে হবে এবং জয়ী হতে হবে।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে ভাষান্তর
শেখ রোকন
সন্তানদের সঙ্গে প্রায়ই 'মায়ের মা'কে নিয়ে কথা হয় এবং কী ধরনের অসুস্থতা তাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, সেটা তাদের ব্যাখ্যার চেষ্টা করি আমি। তখন তারা জানতে চায়, আমার ক্ষেত্রেও একই অঘটন ঘটতে পারে কি-না। আমি সবসময় বলে এসেছি, এ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু সত্য হচ্ছে, আমি নিজেও শরীরে একটি 'বখাটে' জিন 'বিআরসিএওয়ান' বহন করছি এবং এটা হঠাৎই আমার স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, স্তন ক্যান্সারের ৮৭ ভাগ ও জরায়ু ক্যান্সারের ৫০ ভাগ ঝুঁকিতে রয়েছি আমি। তার মানে এই নয়, যেসব নারীর শরীরে ওই জিন আছে তাদের সবাই আমার মতো ঝুঁকিতে থাকবেন। এটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। যাদের স্তন ক্যান্সার হয়, তাদের খুব সামান্য শতাংশই তাতে আক্রান্ত হন উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জিনের কারণে। কিন্তু যাদের এই জিন রয়েছে, গড়ে তাদের ৬৫ শতাংশই ক্যান্সার ঝুঁকিতে থাকেন।
যখন জানতে পারলাম আমার ক্ষেত্রেও এটা বাস্তবতা, তখনই আগাম তৎপর হয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিই আমি। আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি 'প্রিভেনটিভ ডবল মাসটেকটোমি' (স্তন অপসারণ) করিয়ে ফেলব। যদিও দেহের দুই স্থানেই ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে, শুরুটা আমি ওপর থেকেই করতে চেয়েছি। কারণ জরায়ুর চেয়ে আমার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি এবং এর অস্ত্রোপচারও বেশি জটিল। মাসটেকটোমি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তিন মাস দীর্ঘ চিকিৎসা প্রক্রিয়া ২৭ এপ্রিল শেষ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিষয়টি আমি ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেখে আমার স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পেরেছি।
বিষয়টি নিয়ে এখন আমি লিখছি এই প্রত্যাশা থেকে যে, আমার অভিজ্ঞতা থেকে অন্যান্য নারী উপকৃত হবেন। ক্যান্সার এখনও এমন একটা শব্দ, যা এক অজানা আশঙ্কা হিসেবে মানুষের মনের মধ্যে গিয়ে আঘাত করে এবং অসহায়ত্বের এক গভীর বোধ জন্মায়। কিন্তু আজকের দিনে একটা সামান্য রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব, কেউ স্তন বা জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন কি-না। তারপর শুধু ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপার।
আমার নিজের চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় দিন, 'নিপল ডিলে' নামে একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে ওই স্থানটিকে রোগমুক্ত করে অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ ঘটানো হয়। পরীক্ষাটি কিছুটা বেদনাদায়ক এবং কালশিটে দাগ ফেলে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে নিপল অক্ষত রাখার সুযোগ বহুলাংশে বেড়ে যায়।
এর দু'সপ্তাহ পর ছিল বড় ধরনের অস্ত্রোপচার, যার মাধ্যমে স্তন কোষগুলো সরিয়ে ফেলা হয় এবং অস্থায়ী ছাঁকনি বসানো হয়। ওই অস্ত্রোপচারে আট ঘণ্টা সময়ও লেগে যেতে পারে। রোগীকে জেগে উঠতে হয় এক ঝাঁক টিউব আর এক্সপেন্ডারস বুকে নিয়ে। মনে হতে পারে, দৃশ্যটা কোনো সায়েন্স ফিকশনের। কিন্তু অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পরেই তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।
এরও ৯ সপ্তাহ পর ইমপ্লান্ট (কৃত্রিম পদার্থ) স্থাপনের মাধ্যমে স্তন পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। গত কয়েক বছরে এই প্রক্রিয়ায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং এর ফলাফলও চমৎকার হতে পারে।
আমি এসব লিখতে চেয়েছি অন্যান্য নারীকে এই কথা বলার জন্য যে, মাসটেকটোমির সিদ্ধান্তটি সহজ ছিল না। কিন্তু এটা সম্পন্ন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমার স্তন ক্যান্সার ঝুঁকি এখন ৮৭ শতাংশ থেকে নেমে ৫ শতাংশে এসেছে। আমি এখন আমার সন্তানদের বলতে পারি যে, স্তন ক্যান্সারের থাবায় আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় আর তাদের পেতে হবে না। তাদের এই আশ্বাসও পুনর্ব্যক্ত করা যায় যে, অস্বস্তিকর কোনো দৃশ্য তারা দেখবে না, কেবল একটি ছোট্ট ক্ষতচিহ্ন ছাড়া! আর সবকিছুতে তাদের 'মাম্মি' আগের মতোই। তারা জানে যে, আমি তাদের কতটা ভালোবাসি এবং তাদের কাছে থাকার জন্য আমি যতদূর সম্ভব সবকিছু করব। ব্যক্তিগত ব্যাপার যদি বলি, নারীত্বের কোনোকিছুই হারিয়ে গেছে বলে আমার মনে হয় না। নিজেকে বরং এখন ক্ষমতায়িত মনে হয়; আমি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম।
আমি সৌভাগ্যবতী যে, সঙ্গী হিসেবে পাশে ব্রাড পিটকে পেয়েছিলাম। সে এতটা ভালোবাসা ও সমর্থন জুগিয়েছে! ফলে যাদের স্ত্রী কিংবা বান্ধবী এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জানা দরকার, তারাও এ চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমার চিকিৎসাকেন্দ্র পিঙ্ক লোটাস ব্রেস্ট সেন্টারে ব্রাড আমার সঙ্গেই ছিল সব সময়। অস্ত্রোপচারের প্রতিটি মিনিট সে আমার সঙ্গেই কাটিয়েছে। আমরা দু'জন মিলে হাসি-ঠাট্টাও করেছি। আমরা জানতাম যে, পরিবারের জন্য আমরা সঠিক কাজটিই করছি এবং এর মধ্য দিয়ে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়বে। এবং সেটাই হয়েছে।
পাঠিকাকে বলছি, আমি আশা করি, আপনি জানলেন_ আপনার সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। নারীদের প্রত্যেককে, বিশেষত যাদের স্তন কিংবা জরায়ু ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে, আমি উৎসাহিত করতে চাই যে, প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খুঁজে নিন। এর মধ্য দিয়ে আপনি উপকৃত হবেন এবং জীবনের প্রয়োজনে নিজেই তথ্যবহুল সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
শুধু স্তন ক্যান্সারেই বিশ্বে প্রতি বছর ৪ লাখ ৫৮ হাজার মারা যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে দেখা যাচ্ছে। তারা মূলত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অধিবাসী। এখন এই অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার সময় এসেছে যে, যাতে আরও বেশি নারী জিন পরীক্ষা এবং জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারেন। তারা যে পেশারই হোন, যে পরিবারেরই হোন, যেখানকার বাসিন্দাই হোন না কেন। বিআরসিএওয়ান ও বিআরসিএটু পরীক্ষার খরচ এখন যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ডলার। এই খরচ অনেক নারীর চিকিৎসার জন্য প্রতিবন্ধক।
আমি আমার চিকিৎসার কথা গোপন করতে চাইনি। কারণ বিশ্বে অনেক নারী আছেন, যারা জানেন না, তারা ক্যান্সারের ছায়ায় বসবাস করছেন। আমি আশা করি, তারাও জিন পরীক্ষার সুযোগ পাবেন এবং যদি তাদের উচ্চঝুঁকি থাকে তাহলেও তারা জানবেন যে তাদের সামনে কার্যকর সুযোগ রয়েছে।
জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। কিন্তু তাতে ভীত হওয়া উচিত হবে না। বরং আমাদের সেগুলো মোকাবেলা করতে হবে এবং জয়ী হতে হবে।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে ভাষান্তর
শেখ রোকন
No comments