আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য অর্জন আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়াতে হবে
বি শ্বের ১৯৩টি দেশ ২০০২ সালে মিলেনিয়াম
ডিক্লারেশন গ্রহণ করেছিল। এতে আর্থ-সামাজিক খাতে ৫২টি লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা
হয়। সৌভাগ্যের বিষয়, বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকায় থাকা বাংলাদেশ
এ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে যা অর্জন করেছে,
তাকে বিশ্বসমাজ
'যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক' হিসেবেই শুধু স্বীকৃতি দেয়নি, ইউএনডিপির এ লক্ষ্য
অর্জনের তালিকায় সফল ১৮টি অগ্রসরমান দেশের তালিকায়ও স্থান দিয়েছে। এটা সত্য
যে, বাংলাদেশে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী-পুরুষ খুব সামান্য আয়ে দিন
কাটায়। গত কয়েক বছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীর একটি অংশের জন্য
'ভাত-রুটির' ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর নানাবিধ
কর্মসূচি এ ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। টানা কয়েক বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬
শতাংশের ওপরে রাখতে পারার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে শ্রম বাজারে। আমাদের প্রধান
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য নানা ইস্যুতে। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তার
কর্মসূচি বজায় রাখার প্রশ্নে দ্বিমত নেই। একই অবস্থান শিক্ষা প্রসারের
ক্ষেত্রে। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের উপস্থিতি ব্যাপক। বলা
যায়, শতভাগ উপস্থিতির লক্ষ্য অচিরেই অর্জন সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র ও
ছাত্রীর সংখ্যায় ইতিমধ্যেই সমতা এসেছে। শিশু ও প্রসূতি মৃত্যুর হার
বিপুলভাবে হ্রাস পেয়েছে। যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনা
সম্ভব হয়েছে। এ সাফল্যের কারণে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট
পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। খাদ্যশস্যে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।
অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও উৎসাহব্যঞ্জক। তবে সাফল্যের এ তালিকা যতই দীর্ঘ
করা হোক না কেন, বাংলাদেশ এখনও বিশ্বের 'গরিব দেশ' হিসেবে পরিচিত। এ থেকে
মুক্ত হওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা রয়েছে এবং তা অর্জন করতে হলে বিশ্ব
সম্প্রদায়ের আরও সহায়তা প্রত্যাশিত। রোববার ঢাকায় ২০১৫-উত্তর উন্নয়ন
এজেন্ডাবিষয়ক এক জাতীয় সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশ
গঠনের নবতর লক্ষ্য অর্জনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের তরফে আরও বেশি সহায়তা
প্রত্যাশা করেন। এ সহায়তা আসতে পারে দু'ভাবে_ এক. উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে
বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানো। দুই. আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহজ শর্তে
ঋণ ও অনুদান প্রদান। 'উন্নত বিশ্ব তাদের বাজারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্য ও
সেবার অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে'_ প্রধানমন্ত্রীর এ প্রত্যাশা এখন
সময়ের দাবি। এর অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে শুল্ক ও অ-শুল্ক যাবতীয় বাধা অপসারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এ সুবিধার জন্য দাবি
জানিয়ে আসছে। এ ধরনের সুবিধা পেলে রফতানি আয় যেমন বাড়বে, তেমনি
কর্মসংস্থানের বাজারও সম্প্রসারিত হবে। আমাদের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ
সমস্যা হচ্ছে ঝড়-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার
জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে, চাপ পড়ছে অর্থনীতিতে। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে
ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখার জন্যও উন্নত বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে
সহায়তা বাড়াতে হবে। জলবায়ুজনিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য তাদের আরও বেশি
করে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ৯৫০ ডলার।
একটি সমৃদ্ধ ও গর্বিত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর
চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। এ লক্ষ্য অর্জনে বিশ্ব সমাজকে আরও বেশি করে পাশে
পেতে চাই। বিশ্ব সমাজের কাছে এটাও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কল্যাণে অবদান রাখছে এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে
তার যত উন্নতি ঘটবে, এর মাত্রা তত বাড়বে।
No comments