পেশাজীবীদের দায় আগে সেবা পরে রাজনীতি
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি
অংশ দলীয় আনুগত্য লাভের আশায় নিজ নিজ পেশার প্রতি বিশ্বস্ততা, নিষ্ঠা ও
মর্যাদা জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠিত হয় না_ এমনটিই অভিযোগ।
পেশাজীবীদের মধ্যেও বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ঝোঁক প্রবল।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিতদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার বক্তব্যটি অরণ্যে রোদন মনে হতে পারে।
সোমবার সমকালে 'আগে সেবা পরে রাজনীতি করুন' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে
তার বক্তব্যের গুরুত্বকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। চিকিৎসার মতো একটি মহান
পেশার সঙ্গে জড়িতরা কেন নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অগ্রাধিকার না দিয়ে দলীয়
রাজনৈতিক আনুগত্যকে অভীষ্ট অর্জনের উপায় বিবেচনা করেন, সেটা
যোগাযোগমন্ত্রী নিজেও ভালো জানেন। যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা
উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশায় নিযুক্তদের ব্যবহার করে।
এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায়। তাই পেশাজীবীদের
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। সরকারি দল যদি
পেশাজীবীদের শর্তহীন আনুগত্যের বাতিক ঝেড়ে ফেলতে পারে, কেবল তখনই
পেশাজীবীরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে উৎসাহী হবেন। তখন দলীয় পরিচয়ের
ভিত্তিতে কারও সুবিধাপ্রাপ্তির সুযোগ কমে যাবে এবং দক্ষ ব্যক্তিরাই নিজের
অবস্থানকে উন্নীত করতে সক্ষম হবেন। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলও পেশাজীবীদের দলীয়
আনুগত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে পারে। যারা
আজ বিরোধী দল বা জোটে আছেন, তারাই তো একদিন সরকার গঠন করবেন। তাই
পেশাজীবীদের দলীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দীর্ঘদিনের লালিত অভ্যাস
থেকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা
গেলে পেশাজীবীরাও দলীয় আনুগত্যের চেয়ে পেশার প্রতি বিশ্বস্ততা ও নিষ্ঠার
ওপর অধিক গুরুত্ব দেবেন। তবে বিরাজমান অবস্থা যেহেতু রাতারাতি পাল্টে ফেলা
সম্ভব নয়, তাই এখন 'আগে সেবা পরে রাজনীতি'_ এ নীতি পেশাজীবীরা অনুসরণ করতে
পারেন। এতে সেবার মান অবশ্যই উন্নত হবে।
No comments