ফল বিশ্লেষণ-কঠিন বলে আর কিছু নেই by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
মূলত পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারের কারণেই এই অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষা দিতে হতো। কিন্তু পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের কারণে এখন মুখস্থবিদ্যা উঠে গেছে। পরীক্ষায় পাস করতে এখন পুরো বিষয়টিকে আয়ত্তে আনতে হয়।
এতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতি কমে গেছে। এ ছাড়া এবার প্রাথমিক সমাপনীতে প্রথমবারের মতো সৃজনশীলের আদলে প্রতি বিষয়ে যোগ্যতাভিত্তিক ১০ নম্বরের প্রশ্ন ছিল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়াশোনাও ফল ভালো হওয়ার একটি বিশেষ কারণ। আগে একটা সময় শিক্ষার্থীরা নোট-গাইডের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু বর্তমানে পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে নোট-গাইড তাদের কোনো কাজে আসছে না। পরীক্ষায় পাস করার জন্য মূল বই একমাত্র নিয়ামক হয়ে উঠছে। পাশাপাশি কঠিন বিষয় হিসেবে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানকে শিক্ষার্থীরা ঠিকঠাক আয়ত্ত করতে পারার কারণে পাসের হার অনেক বেড়ে গেছে। এ ছাড়া স্কুলে শিক্ষকরাও এখন পাঠদানে বেশি আন্তরিক হয়েছেন। কারণ কোনো স্কুলে পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করতে না পারলে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন কেটে নেওয়া হয়। তাই শিক্ষকরাও যথাসাধ্য সচেষ্ট থাকেন যাতে কোনো শিক্ষার্থী ফেল করে না বসে।
আগে পাবলিক পরীক্ষার ফল বের হলে দেখা যেত ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান- এই তিন বিষয়ের কারণেই বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হচ্ছে। পাসের হার কম হওয়ার পেছনেও থাকে বিজ্ঞান, ইংরেজি ও গণিত। কিন্তু এবারের সমাপনী পরীক্ষায় এই তিন 'কঠিন' বিষয়ের 'ভীতি' পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছে ছোট্ট শিক্ষার্থীরা। সরকারের যথাযথ নির্দেশনা, শিক্ষকদের ঐকান্তিক চেষ্টা ও শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সেই সুবাদে মাত্র চার বছর আগে শুরু হওয়া জেএসসি ও জেডিসি এবং পিএসসি ও ইএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ক্রমাগত বাজিমাত করে চলেছে তারা।
পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. মো. আফসারুল আমিন জানান, ধারাবাহিক এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীবান্ধব। এর ফলে শিক্ষার্থীরা আর পরীক্ষাকে ভয় না পেয়ে আনন্দের সঙ্গে নিচ্ছে।
কঠিন হলো সহজ : এবারের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় দেখা গেছে কঠিন বিষয়গুলোতে পাসের হার সবচেয়ে ভালো। এর মধ্যে বিজ্ঞানে পাসের হার ৯৯.৮০, গণিতে ৯৭.৮৭ এবং ইংরেজিতে ৯৯.০৭ শতাংশ। একই চিত্র জেএসসিতেও। জেএসসির ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর ঢাকা বোর্ডে ইংরেজিতে যেখানে পাসের হার ছিল ৮৫.৩৯ শতাংশ, সেখানে এবার পাসের হার ৮৮.৬২ শতাংশ। সাধারণ বিজ্ঞানে গত বছর চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৮.৭৭ শতাংশ। এবার তা ৯৬.০২ শতাংশ। গণিতে গত বছর রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৫.৫৮ শতাংশ, সেখানে এ বছর পাসের হার ৯২.৬৭ শতাংশ।
কঠিন বিষয়গুলোকে শিক্ষার্থীরা কিভাবে আত্মস্থ করল- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ফল ভালো না হলে শিক্ষকদের জবাবদিহি করতে হয়। এতে শিক্ষকদের সম্মানে লাগে। শিক্ষকরা অসম্মানিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠানের ভালো ফল অর্জনের ব্যাপারে মনোযোগী হয়েছেন।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘরে ঘরে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে সবার আগে। ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়তে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে ফলও ভালো হচ্ছে। এ ছাড়া পুরো বছর ধরে এখন স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে নজরদারি করা হয়। এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এক প্রকার চাপে থাকে। এটাও ভালো ফল করতে ভূমিকা রাখে।
বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বিমল কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, ফল আরো ভালো হতো। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যদি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া যেত, তাহলে শিক্ষার্থীদের ফেল করার সুযোগই থাকত না।
মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে : দিন দিন মেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এবার পাসের হারে ছেলেরা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দিক থেকে মেয়েরা এগিয়ে ছিল। ফলাফলের উন্নতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণের হারকে একটি সূচক ধরা হচ্ছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জেএসসি ও জেডিসিতে ছেলেদের চেয়ে এক লাখ ৪১ হাজার ৪৬ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি অংশ নিয়েছে। প্রাথমিকে দুই লাখ ২৮ হাজার ৫১৫ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি অংশ নিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অভিভাবকরা এখন বুঝতে পারছেন মেয়েরা আর ফেলনা নয়। এ জন্য মেয়েদের তাঁরা পড়াশোনা করাচ্ছেন। এ ছাড়া উপবৃত্তি দেওয়ার কারণেও স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতি বাড়ছে বলে তিনি জানান।
জিপিএ ৫-এর রমরমা : দুটি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবার দুই লাখ ৩০ হাজার ১৪০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা গতবারের তুলনায় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার বেশি।
জেএসসিতেও জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী এ পরীক্ষা চালুর প্রথম বছর ২০১০ সালে জেএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল মাত্র আট হাজার ৫২ জন। ২০১১ সালে পেয়েছে ২৯ হাজার ৮৩৮ জন। আর এ বছর পেয়েছে ৪৬ হাজার ৯৪২ জন।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কুন্ডু গোপী দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গা থেকে নিরন্তর কাজ করে যাওয়ার কারণে পাসের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি জিপিএ ৫ পাওয়ার হারও বেড়েছে।
ঝরে পড়া : প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, জেএসসি ও জেডিসিতে ১৩.০৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তারা অষ্টম শ্রেণীতেই ঝরে পড়েছে। আর প্রাথমিকে ফেল করেছে ২.৬৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, তারা পঞ্চম ও অষ্টম থেকে ঝরে পড়েছে। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসন বলছে, তারা ঝরে পড়েনি। আগামী বছর এই শিক্ষার্থীরা আবার পরীক্ষায় বসবে। কারণ এই দুই শ্রেণীর সার্টিফিকেট না পেলে পরের ক্লাসে ভর্তি হতে পারবে না। ফলে তারা আবার পড়াশোনায় আসবে।
পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল : অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরীক্ষণ বিদ্যালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রাথমিকের যেসব শিক্ষক পিটিআইতে সি-ইন-এড ডিগ্রি নিতে যান, তাঁদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ছয় মাস পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে পাঠদান করাতে হয়। পিটিআইয়ের প্রশিক্ষকরা এসব বিদ্যালয়ে নজরদারি করেন। এর ফলে ওই বিদ্যালয়গুলোতে ভালো ফল হচ্ছে। তবে সরকারি প্রাথমিকের ১০টি বিদ্যালয় থেকে এবার কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। সব সুবিধা পাওয়ার পরও কেন এ অবস্থা হলো, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
টিভিতে ক্লাস সম্প্রচার : এক বছর ধরে ঢাকার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে। এর ফলে দুর্গম অঞ্চলে থাকলেও একজন শিক্ষার্থী ঘরে বসে দেশের সেরা 'স্যারের' ক্লাস করতে পারছে। এতে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি হয়েছে, পড়াশোনার আগ্রহও বেড়েছে। এ ছাড়া বিনা মূল্যের বই বিতরণও ভালো ফল তৈরিতে ভূমিকা রেখে চলেছে। কারণ আগে বছরের শুরুর দিকে দিনের পর দিন গড়িয়ে গেলেও অনেক শিক্ষার্থীই বই পেত না। এখন বছরের প্রথম দিন উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা স্কুলের প্রতি আরো আগ্রহী হচ্ছে। এ ছাড়া দরিদ্র অভিভাবকরা জানান, বই কেনার জন্য এখন টাকা লাগে না। শুধু খাতা আর কলম কিনে দিলেই হয়। এতে স্কুলে ভর্তির হার বেড়েছে।
ঘুরেফিরে একই প্রতিষ্ঠান : ফলাফলে দেখা গেছে, রাজধানীর কয়েকটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবারও ভালো করেছে। এ তুলনায় রাজধানীর বাইরের মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেরাদের তালিকায় উঠে আসতে পেরেছে। তবে আর কয়েক বছর পর এ চিত্র আর থাকবে না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের জন্য আমরা নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে লড়াই করছি মানসম্মত শিক্ষার জন্য। লড়াইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারলেই সারা দেশে ভালো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছড়িয়ে যাবে।'
আগে পাবলিক পরীক্ষার ফল বের হলে দেখা যেত ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান- এই তিন বিষয়ের কারণেই বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হচ্ছে। পাসের হার কম হওয়ার পেছনেও থাকে বিজ্ঞান, ইংরেজি ও গণিত। কিন্তু এবারের সমাপনী পরীক্ষায় এই তিন 'কঠিন' বিষয়ের 'ভীতি' পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছে ছোট্ট শিক্ষার্থীরা। সরকারের যথাযথ নির্দেশনা, শিক্ষকদের ঐকান্তিক চেষ্টা ও শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সেই সুবাদে মাত্র চার বছর আগে শুরু হওয়া জেএসসি ও জেডিসি এবং পিএসসি ও ইএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ক্রমাগত বাজিমাত করে চলেছে তারা।
পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. মো. আফসারুল আমিন জানান, ধারাবাহিক এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীবান্ধব। এর ফলে শিক্ষার্থীরা আর পরীক্ষাকে ভয় না পেয়ে আনন্দের সঙ্গে নিচ্ছে।
কঠিন হলো সহজ : এবারের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় দেখা গেছে কঠিন বিষয়গুলোতে পাসের হার সবচেয়ে ভালো। এর মধ্যে বিজ্ঞানে পাসের হার ৯৯.৮০, গণিতে ৯৭.৮৭ এবং ইংরেজিতে ৯৯.০৭ শতাংশ। একই চিত্র জেএসসিতেও। জেএসসির ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর ঢাকা বোর্ডে ইংরেজিতে যেখানে পাসের হার ছিল ৮৫.৩৯ শতাংশ, সেখানে এবার পাসের হার ৮৮.৬২ শতাংশ। সাধারণ বিজ্ঞানে গত বছর চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৮.৭৭ শতাংশ। এবার তা ৯৬.০২ শতাংশ। গণিতে গত বছর রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৫.৫৮ শতাংশ, সেখানে এ বছর পাসের হার ৯২.৬৭ শতাংশ।
কঠিন বিষয়গুলোকে শিক্ষার্থীরা কিভাবে আত্মস্থ করল- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ফল ভালো না হলে শিক্ষকদের জবাবদিহি করতে হয়। এতে শিক্ষকদের সম্মানে লাগে। শিক্ষকরা অসম্মানিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠানের ভালো ফল অর্জনের ব্যাপারে মনোযোগী হয়েছেন।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘরে ঘরে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে সবার আগে। ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়তে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে ফলও ভালো হচ্ছে। এ ছাড়া পুরো বছর ধরে এখন স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে নজরদারি করা হয়। এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এক প্রকার চাপে থাকে। এটাও ভালো ফল করতে ভূমিকা রাখে।
বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বিমল কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, ফল আরো ভালো হতো। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যদি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া যেত, তাহলে শিক্ষার্থীদের ফেল করার সুযোগই থাকত না।
মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে : দিন দিন মেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এবার পাসের হারে ছেলেরা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দিক থেকে মেয়েরা এগিয়ে ছিল। ফলাফলের উন্নতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণের হারকে একটি সূচক ধরা হচ্ছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জেএসসি ও জেডিসিতে ছেলেদের চেয়ে এক লাখ ৪১ হাজার ৪৬ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি অংশ নিয়েছে। প্রাথমিকে দুই লাখ ২৮ হাজার ৫১৫ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি অংশ নিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অভিভাবকরা এখন বুঝতে পারছেন মেয়েরা আর ফেলনা নয়। এ জন্য মেয়েদের তাঁরা পড়াশোনা করাচ্ছেন। এ ছাড়া উপবৃত্তি দেওয়ার কারণেও স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতি বাড়ছে বলে তিনি জানান।
জিপিএ ৫-এর রমরমা : দুটি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবার দুই লাখ ৩০ হাজার ১৪০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা গতবারের তুলনায় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার বেশি।
জেএসসিতেও জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী এ পরীক্ষা চালুর প্রথম বছর ২০১০ সালে জেএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল মাত্র আট হাজার ৫২ জন। ২০১১ সালে পেয়েছে ২৯ হাজার ৮৩৮ জন। আর এ বছর পেয়েছে ৪৬ হাজার ৯৪২ জন।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কুন্ডু গোপী দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গা থেকে নিরন্তর কাজ করে যাওয়ার কারণে পাসের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি জিপিএ ৫ পাওয়ার হারও বেড়েছে।
ঝরে পড়া : প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, জেএসসি ও জেডিসিতে ১৩.০৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তারা অষ্টম শ্রেণীতেই ঝরে পড়েছে। আর প্রাথমিকে ফেল করেছে ২.৬৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, তারা পঞ্চম ও অষ্টম থেকে ঝরে পড়েছে। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসন বলছে, তারা ঝরে পড়েনি। আগামী বছর এই শিক্ষার্থীরা আবার পরীক্ষায় বসবে। কারণ এই দুই শ্রেণীর সার্টিফিকেট না পেলে পরের ক্লাসে ভর্তি হতে পারবে না। ফলে তারা আবার পড়াশোনায় আসবে।
পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল : অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরীক্ষণ বিদ্যালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রাথমিকের যেসব শিক্ষক পিটিআইতে সি-ইন-এড ডিগ্রি নিতে যান, তাঁদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ছয় মাস পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে পাঠদান করাতে হয়। পিটিআইয়ের প্রশিক্ষকরা এসব বিদ্যালয়ে নজরদারি করেন। এর ফলে ওই বিদ্যালয়গুলোতে ভালো ফল হচ্ছে। তবে সরকারি প্রাথমিকের ১০টি বিদ্যালয় থেকে এবার কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। সব সুবিধা পাওয়ার পরও কেন এ অবস্থা হলো, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
টিভিতে ক্লাস সম্প্রচার : এক বছর ধরে ঢাকার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে। এর ফলে দুর্গম অঞ্চলে থাকলেও একজন শিক্ষার্থী ঘরে বসে দেশের সেরা 'স্যারের' ক্লাস করতে পারছে। এতে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি হয়েছে, পড়াশোনার আগ্রহও বেড়েছে। এ ছাড়া বিনা মূল্যের বই বিতরণও ভালো ফল তৈরিতে ভূমিকা রেখে চলেছে। কারণ আগে বছরের শুরুর দিকে দিনের পর দিন গড়িয়ে গেলেও অনেক শিক্ষার্থীই বই পেত না। এখন বছরের প্রথম দিন উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা স্কুলের প্রতি আরো আগ্রহী হচ্ছে। এ ছাড়া দরিদ্র অভিভাবকরা জানান, বই কেনার জন্য এখন টাকা লাগে না। শুধু খাতা আর কলম কিনে দিলেই হয়। এতে স্কুলে ভর্তির হার বেড়েছে।
ঘুরেফিরে একই প্রতিষ্ঠান : ফলাফলে দেখা গেছে, রাজধানীর কয়েকটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবারও ভালো করেছে। এ তুলনায় রাজধানীর বাইরের মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেরাদের তালিকায় উঠে আসতে পেরেছে। তবে আর কয়েক বছর পর এ চিত্র আর থাকবে না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের জন্য আমরা নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে লড়াই করছি মানসম্মত শিক্ষার জন্য। লড়াইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারলেই সারা দেশে ভালো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছড়িয়ে যাবে।'
No comments