চালচিত্র-রাজনীতিতে ধূম্রজাল, সংসদ ও দেশবাসীর প্রত্যাশা by শুভ রহমান

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে দেশে ফিরে এলেন। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এসেছেন। নতুন একটা যুগের সূচনা হলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের। স্বভাবতই দেশবাসীর প্রত্যাশা, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এত দিনের লক্ষণীয় নেতিবাচক রাজনীতিতে স্পষ্টত আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
ইতিমধ্যে দ্রুত একটা সাংঘর্ষিক অবস্থান গ্রহণ করে জামায়াত-শিবির দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে উপর্যুপরি সহিংসতা শুরু করে দিল অনেকটা আকস্মিকভাবেই। ব্যাপকভাবে পুলিশ মার খেতে থাকল জামায়াত-শিবিরের স্পষ্টত ট্রেনিংপ্রাপ্ত ক্যাডারদের হাতে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা অ্যাকশনে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তার করতে এবং বেধড়ক পিটুনি দিতে থাকল। মজার ব্যাপার, এত সব হামলা-পাল্টাহামলার প্রতি বিএনপি ১৮ দলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকা সত্ত্বেও তেমন একটা জোরালো প্রতিবাদ জানাল না। তা ছাড়া বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সত্ত্বেও না বেগম জিয়ার চীন ও ভারত সফর, না মৌলবাদী জামায়াতের সঙ্গে সংঘর্ষ_কোনো একটি বিষয় নিয়েই তেমন লক্ষণীয় কোনো বক্তব্য স্থায়ী কমিটির সভা থেকে দেশবাসীর কাছে রাখা হলো না। সবাই যেন মুখে কুলুপ এঁটে মিডিয়াকে এড়িয়েই চলছেন।
ইতিমধ্যে আকস্মিকভাবেই রামুতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাবেশ করে খালেদা জিয়া এমন কিছু বক্তব্য দিলেন, যা নিয়ে দেশে ব্যাপক গুঞ্জন ও আলোচনা শুরু হয়েছে। খানিকটা বিদ্রূপাত্মক, খানিকটা রহস্যমিশ্রিত বক্তব্য দিয়ে তিনি জনমনে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও ধূম্রজালের সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের 'তলে তলে যোগাযোগ চলার' একটা গূঢ় তথ্য তুলে ধরলেন। অথচ তার তেমন কোনো ব্যাখ্যা তিনি দিলেন না। আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষতাকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করলেন। রামুতে সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের ওপর নেপথ্য সাম্প্রদায়িক শক্তির অবর্ণনীয় ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও হামলার সময় মাত্র দুই শ গজ দূরে অবস্থিত থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করলেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানানো হলো। তুলনামূলকভাবে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির প্রতিই সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অধিক সমর্থন ব্যক্ত হলো। বেগম জিয়ার স্পষ্টত এই ভোট ধরার সমাবেশ যথেষ্ট সফল হলো এবং তিনি সম্ভবত আশ্বস্ত হলেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে ১৮ দলীয় বিরোধী জোটের অন্য শরিকরা কতটা ক্ষুব্ধ হলো, জোটের ভেতর কোনো ভাঙনের প্রবণতা সৃষ্টি হলো কি না, এমনকি পরিবর্তিত ভারতনীতির প্রশ্নে খোদ নিজ দল বিএনপির অভ্যন্তরেই বিভক্তি দেখা দিল কি না, সেসব ব্যাপারে জোটের নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন তেমন ভ্রুক্ষেপই করলেন না। অনেকেই এতে যথেষ্ট বিস্মিত ও বিব্রত বোধ করতে লাগলেন। বিএনপি হাইকমান্ডের কেউ কেউ মন্তব্য করলেন- না, বিএনপির ভারতনীতির_ভারতবিরোধী নীতির পরিবর্তন হয়নি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় এক নেতা নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বললেন, জনগণের স্বার্থহানি যেসব ক্ষেত্রে হয়, সেগুলো ছাড়া জামায়াতকে ভারতবিরোধী বলা যাবে না।
এদিকে বেগম জিয়ার ভারত সফর ও রামুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাবেশের পর বিএনপির নিজ সংগঠন ও তার ১৮ দলীয় জোটের ভেতর ঠিক আগের সংবদ্ধতা যে নেই, ভাঙন সৃষ্টি না হলেও ভেতরে যে একটা নড়বড়ে অবস্থা, একটা অন্তর্ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়েছে_এটা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে এর ভেতর দিয়ে অচিরেই নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ ও ভাঙাগড়া সূচিত হতে পারে।
ইতিমধ্যে নবম জাতীয় সংসদের সংক্ষিপ্ত শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে আগের মতোই বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে- স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের রুটিনমাফিক বিরোধী দলের প্রতি অধিবেশনে যোগদানের আহ্বান জানানো ছাড়া সরকারি দলের বিরোধী দলকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ অধিবেশনে তাঁদের যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়নি, তাই বিএনপি এ অধিবেশনে যোগ দেবে- এমন কথা তিনি বলতে পারছেন না।
ফলে সংসদের বাইরে, যেমন- রাজনৈতিক অঙ্গনে, আন্দোলনের পক্ষে তেমন অনুকূল পরিস্থিতি না থাকলেও সংসদের ভেতরে তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে বিএনপি বক্তব্য দেওয়ার জন্য যে অধিবেশনে যোগ দেবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়নি।
সংসদে ভেতরে-বাইরে আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপি ও তার সমমনারা অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা ভাবলেশহীন অবস্থার মধ্য দিয়েই সময় কাটাচ্ছে। বিশ্লেষকরা ভাবছেন, তাঁরা হয়তো কোনো মেজর ডেভেলপমেন্টের অপেক্ষায় রয়েছেন। সেটা কি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতায় যাওয়া, নাকি রাজনীতিতে কোনো অদৃশ্য শক্তির হস্তক্ষেপ, তা রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের কারো বোধগম্য হচ্ছে না। বিএনপির মুখপাত্র ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতিমধ্যে বেশ খানিকটা আগ বাড়িয়ে বলে বসেছেন, প্রধানমন্ত্রী লাল টেলিফোন তুলে সংলাপের জন্য ডাকলেই তাঁরা সাড়া দেবেন। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে সংলাপ ও সমঝোতার ব্যাপারে তেমন কোনো সাড়া বা আগ্রহ প্রদর্শিত হচ্ছে না। বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর খুনি ও জঙ্গিদের মদদ দানকারীদের সঙ্গে কোনো ঐক্যের আলাপ হতে পারে না বলে ফতোয়া দিয়ে এ ব্যাপারে সম্ভাব্য উদ্যোগে পানিই ঢেলে দিয়েছেন।
ফলে আন্দোলন, সংলাপ, সমঝোতা, সংসদ অধিবেশন- সব ব্যাপারেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন তরল ও অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। এ অবস্থাটা, বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতির যৌক্তিক গতিপথের জন্য বিপজ্জনক এবং কোনো গঠনমূলক, দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক উদ্যোগ গৃহীত না হলে আবারও দেশে ওয়ান-ইলেভেনের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ও অসাংবিধানিক শক্তির হস্তক্ষেপের আশঙ্কাই সৃষ্টি হচ্ছে।
রামু, উখিয়া প্রভৃতি স্থানে সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক শক্তির ভয়াবহ ঘৃণ্য তাণ্ডব চলার পর সেখানে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাবেশ করে খালেদা জিয়া নিজের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিকেই উজ্জ্বল করার প্রয়াস পেয়েছেন। আর সেখানেই তিনি জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য গোপন যোগাযোগের বমশেল ফাটিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিকে বিদ্রূপ ও মসিলিপ্ত করার প্রয়াস পেয়েছেন। এ ধরনের পলিটিক্যাল অফেন্সিভের জন্য আওয়ামী লীগ খুব যে একটা প্রস্তুত ছিল, তা মনে হয় না। জামায়াত-শিবির একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর উন্মত্ত হামলা চালানোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ দমন-পীড়ন চালানোর জন্য প্ররোচিত করছে, অন্যদিকে আবার বেগম জিয়ার তথ্য অনুযায়ী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা সম্ভাব্য আঁতাতের পথও গ্রহণ করছে। আপাত দৃষ্টিতে এটাকে দ্বিমুখী নীতি বা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মনে হলেও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন নেতা সমস্বরে তার সপক্ষে অতীতের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে অর্কেস্ট্রা বাজাতে শুরু করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এক পত্রিকাকে বলেছেন, ওনার (খালেদা জিয়া) কাছে নিশ্চয়ই এ বিষয়ে তথ্য আছে, এর সত্যতা আছে বলেই তিনি এ কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া ভারত সফর শেষে ৩ নভেম্বর দেশে ফেরেন এবং এর এক দিন পর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে পিটাপিটি শুরু করে দেয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার প্রমুখ খালেদা জিয়ার 'তথ্য'কে নানাভাবে সমর্থনই করেছেন। এম কে আনোয়ার বলেছেন, অতীতে বহুবার এ রকম হয়েছে। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচন এবং ২০০৬ সালে শায়খুল হাদিস আজিজুল হকের খেলাফত মজলিসকে চারদলীয় জোট থেকে বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগের পাঁচ দফা চুক্তি করার কথা উল্লেখ করেন। অবশ্য তখনকার সে অবস্থাটা যে খোদ আওয়ামী লীগ ও গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল মহলের ভেতরেই তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল, সেটাও সবার জানা।
এখন নাকি খালেদা জিয়ার বক্তব্যে জামায়াতের অভ্যন্তরে এবং ১৮ দলীয় জোটের ভেতর এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত অন্য এক খবরে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়ে সে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীসহ উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রয়োজনে সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। সরকার চায় এ রকম প্রতিশ্রুতি বিএনপি প্রকাশ্যে দিক।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এ তথ্য সত্য হলে অচিরেই দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তির এক বড় রকম মেরুকরণ প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে। দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এমনকি উগ্রপন্থী জামায়াতের একটি অংশও দেশে সব বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী বিরাট সম্ভাবনাময় গণতান্ত্রিক শক্তির নতুন অভিযাত্রা শুরু করেছে। জনশ্রুতি রয়েছে, যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ডিসেম্বরের মধ্যেই দেওয়া হবে। জামায়াতের একটি অংশ তাদের দায় গ্রহণ করতে চাইছে না। তখন দেশে জাতীয় নির্বাচনও নতুন আস্থা ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সমঝোতার ভেতর দিয়েই অনুষ্ঠিত হবে। অযথা তত্ত্বাবধায়ক, না দলীয় সরকার- কার অধীনে নির্বাচন হবে, সে কালক্ষেপণকারী ও জনস্বার্থবর্জিত বিতর্কের অবসান ঘটবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরিত সুসম্পন্ন করে দেশকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কলঙ্ক থেকে মুক্ত করে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সফল, কার্যকর ও দৃপ্ত নবযাত্রাও শুরু হবে।
বেগম জিয়ার বক্তব্যের অভিঘাতে সৃষ্ট রাজনীতি অঙ্গনের ধূম্রজালেরও অবসান ঘটে দেশ শান্তি, প্রগতি ও গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে।
বস্তুত এ দেশ দীর্ঘকাল ধরেই নানা রকম সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, গণবিরোধী শক্তি বিদেশি গোয়েন্দা চক্রসহ বহিঃশক্তির সঙ্গে যোগসাজশ করে অন্যায়, অবিচার, লুটপাট, শোষণ-নির্যাতন, হত্যা-ধর্ষণসহ ভয়াবহ সব অপরাধ চালিয়ে এ দেশের সব সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও দীর্ঘ গণসংগ্রামে অর্জিত সংসদীয় গণতন্ত্রকে অর্থহীন করে দিচ্ছে। আজ রাজনীতির নতুন মেরুকরণ ও সচেতন সমীকরণের মধ্য দিয়ে দেশে সুস্থ, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠলে অবশেষে দেশবাসীর দুঃখের রজনীর অবসান ঘটবে।

১৮.১১.২০১২

No comments

Powered by Blogger.