এএফপির বিশ্লেষণ- বেকায়দায় পড়তে পারে ইউপিএ সরকার
ভারতীয় পার্লা-মেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার শীত-কালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। পশ্চিবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছেন, এই অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে তাঁর দল।
কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) এবং আরও কয়েকটি দলও ইতিমধ্যে একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছে। কাজেই পার্লামেন্টের এই অধিবেশনে বেশ বেকায়দায় পড়তে হতে পারে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা বা ইউপিএ সরকারকে।ইউপিএ সরকার গত সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও খুচরা ব্যবসায় বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের (এফডিআই) সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টিসহ (বিজেপি) ইউপিএ জোটের কিছু শরিক দল ও ট্রেড ইউনিয়ন এর বিরোধিতা করে আন্দোলন করছে। একপর্যায়ে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন তুলে নিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। তাৎক্ষণিক অন্য কিছু ছোট দলকে শরিক হিসেবে পাওয়ায় সরকার টিকে যায়। কিন্তু ওই দলগুলো পার্লামেন্টে সরকারকে সব সময় সমর্থন দেবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধীর হয়ে পড়া এবং এর সঙ্গে বাজেটঘাটতি ও মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় চাপের মুখে আছে ইউপিএ সরকার।
নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জয়া হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতি, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্বের উচ্চ হারের কারণে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার টিকবে কি টিকবে না, তা নিয়ে কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তা আছে। খুচরা ব্যবসায় বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিরোধী দল যদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে, তা হলে সরকার খুব বেকায়দায় পড়ে যাবে।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত শুক্রবার ঘোষণা দেন, ইউপিএ সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। লোকসভার আগামী অধিবেশনে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন।
অনাস্থা ভোটে রক্ষা পেতে হলে সরকারকে নির্ভর করতে হবে জোটের বাইরে ছোট দলগুলোর ওপর। কিন্তু এই দলগুলোর অনেকেই বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী। আর অনাস্থা ভোটে হারলে আগাম নির্বাচন ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
এর আগে বিজেপি সাংসদদের বিরোধিতা ও হইচইয়ের কারণে প্রায় প্রতিদিন মুলতবি রাখতে হয়েছে পার্লামেন্ট অধিবেশন। সর্বশেষ অধিবেশনে তো বলতে গেলে কোনো আলোচনাই হয়নি। ওই অধিবেশনে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বিল পাস হয় মাত্র চারটি।
নয়া দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চের বিশ্লেষক দেবিকা মালিক বলেন, ‘পার্লামেন্টে এ ধরনের বিশৃঙ্খলার প্রবণতা শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। আমরা দেখছি, সরকার এমন চরম সব বিল নিয়ে আসছে, যা পাস হচ্ছে খুবই কম।’
No comments