চরাচর-হাওরের জেলে by বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে আসছিল অন্ধকার বুকে নিয়ে। বকসহ নানা জাতের পাখি সেই সময় জলাশয়ের ধারের গাছগুলোতে রাতযাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। শ্রীমঙ্গলের পশ্চিম ভাড়াউড়া সড়কটি যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু হাইল হাওরের সরু পথটির। ১০ নভেম্বর, শনিবার হাওরের সবুজ কচি জলজ তৃণভূমিতে পা রাখি।
কয়েকজন মাছ শিকারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাওর ঘিরে বেঁচে থাকা মানুষগুলো ভালো নেই। এখানে শতাধিক পরিবার সরাসরি মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। আজ নাকি তাতে ভাগ বসিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কথার ফাঁকে ফাঁকে মাছ শিকারের অভিজ্ঞতাও ভাগাভাগি করেছেন তাঁরা।
কথা হয় খয়ের আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, আমাদের এখানে মূলত দুই পদ্ধতিতে মাছ শিকার হয়ে থাকে। একটা জাল দিয়ে এবং অন্যটি আলো দিয়ে। আলো জ্বেলে মাছ ধরার পদ্ধতিকে স্থানীয় ভাষায় 'আলোয়া শিকার' বলে। এ পদ্ধতিতেই তিনি মাছ শিকার করেন বলে জানান। একটি মাঝারি আকারের ডিঙি নৌকার সামনে তীব্র আলো সংবলিত একটি বাতি লাগিয়ে রাখা হয়। এরপর নৌকাটিকে ধীরে ধীরে চালানো হয়। আলো দেখে কোনো কোনো মাছ কৌতূহলবশত ওই আলোর সামনে ছুটে আসে। এ সময় নৌকার ওপর নিঃশব্দে ও গভীর মনোযোগে দাঁড়িয়ে থাকা জেলে ওই মাছের শরীর লক্ষ্য করে তীক্ষ্ন খোঁচা বা কোঁচ (তীক্ষ্ন ফলা দিয়ে তৈরি খুঁচিয়ে মাছ শিকার করার বল্লমসদৃশ অস্ত্র) নিক্ষেপ করে। লক্ষ্য অব্যর্থ হলে মাছটি সঙ্গে সঙ্গে তখন কোঁচবিদ্ধ হয়ে ধরা পড়ে। এ ছাড়া আলো স্থাপিত নৌকাটি যাওয়ার সময়ও কোনো কোনো মাছ পানির ওপর নীরবে ভেসে থাকতে দেখা যায়। এগুলোও খোঁচা দিয়ে শিকার করা হয়। প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে ১০ কেজি বড় মাছ পাওয়া যায়। এভাবে সারা রাত জেগে মাছ শিকারে পরিশ্রম অনেক বেশি। এখন হাওরে আগের মতো মাছ আর নেই বলে তিনি জানান।
ওয়াহিদ উল্লাহ বলেন, 'সন্ধ্যা ও রাতে হাওরে বেশি মাছ বায়। পানি পরিষ্কার হলে ওই আলোতে পানির নিচে সাত থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়। তখন এই পদ্ধতিতে বড় বড় মাছ বেশি শিকার করা খুব সহজ। গত বছর ১২ কেজি ওজনের একটা চিতল মাছ এভাবে আলোয়া দিয়ে শিকার করেছি। দৈনিক গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয়।' শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, 'আমাদের এখানে চার-পাঁচ ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়ে থাকে। আগে জালচোরের উপদ্রব ছিল বলে জাল পেতে রাত জেগে পাহারা দিতে হতো। এখন জাল চুরি হয় না বলে সন্ধ্যায় আমরা জাল পেতে রেখে আসি। শেষরাতের দিকে গিয়ে জাল তুলি।'
সাদাত মিয়া ও আবদুস শহিদ বলেন, 'আমরা সন্ধ্যার দিকে জাল পেতে রেখে আসি। রাত ৩টায় ঘুম থেকে উঠে আবার হাওরে যাই। পেতে রাখা জালটি গিয়ে তুলে দেখি কী পরিমাণ মাছ আটক হয়েছে। ওই মাছগুলো পরে সকাল ৭-৮টার দিকে স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসি। এতে আমাদের প্রতিদিনের আয় হয় গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। মাঝেমধ্যে আরো বেশি আয় হয়।' তাঁরা আক্ষেপের সঙ্গে জানান, প্রভাবশালীরা নেট দিয়ে বিল দখল করে রাখে। আমাদের ঢুকতে দেয় না। মেশিন দিয়ে বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরার নিয়ম না থাকলেও তারা তা-ই করে। কেউ কিছু বলে না। আমাদের তো টাকার জোর নেই, তাই আমরা কিছুই করতে পারি না।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
কয়েকজন মাছ শিকারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাওর ঘিরে বেঁচে থাকা মানুষগুলো ভালো নেই। এখানে শতাধিক পরিবার সরাসরি মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। আজ নাকি তাতে ভাগ বসিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কথার ফাঁকে ফাঁকে মাছ শিকারের অভিজ্ঞতাও ভাগাভাগি করেছেন তাঁরা।
কথা হয় খয়ের আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, আমাদের এখানে মূলত দুই পদ্ধতিতে মাছ শিকার হয়ে থাকে। একটা জাল দিয়ে এবং অন্যটি আলো দিয়ে। আলো জ্বেলে মাছ ধরার পদ্ধতিকে স্থানীয় ভাষায় 'আলোয়া শিকার' বলে। এ পদ্ধতিতেই তিনি মাছ শিকার করেন বলে জানান। একটি মাঝারি আকারের ডিঙি নৌকার সামনে তীব্র আলো সংবলিত একটি বাতি লাগিয়ে রাখা হয়। এরপর নৌকাটিকে ধীরে ধীরে চালানো হয়। আলো দেখে কোনো কোনো মাছ কৌতূহলবশত ওই আলোর সামনে ছুটে আসে। এ সময় নৌকার ওপর নিঃশব্দে ও গভীর মনোযোগে দাঁড়িয়ে থাকা জেলে ওই মাছের শরীর লক্ষ্য করে তীক্ষ্ন খোঁচা বা কোঁচ (তীক্ষ্ন ফলা দিয়ে তৈরি খুঁচিয়ে মাছ শিকার করার বল্লমসদৃশ অস্ত্র) নিক্ষেপ করে। লক্ষ্য অব্যর্থ হলে মাছটি সঙ্গে সঙ্গে তখন কোঁচবিদ্ধ হয়ে ধরা পড়ে। এ ছাড়া আলো স্থাপিত নৌকাটি যাওয়ার সময়ও কোনো কোনো মাছ পানির ওপর নীরবে ভেসে থাকতে দেখা যায়। এগুলোও খোঁচা দিয়ে শিকার করা হয়। প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে ১০ কেজি বড় মাছ পাওয়া যায়। এভাবে সারা রাত জেগে মাছ শিকারে পরিশ্রম অনেক বেশি। এখন হাওরে আগের মতো মাছ আর নেই বলে তিনি জানান।
ওয়াহিদ উল্লাহ বলেন, 'সন্ধ্যা ও রাতে হাওরে বেশি মাছ বায়। পানি পরিষ্কার হলে ওই আলোতে পানির নিচে সাত থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়। তখন এই পদ্ধতিতে বড় বড় মাছ বেশি শিকার করা খুব সহজ। গত বছর ১২ কেজি ওজনের একটা চিতল মাছ এভাবে আলোয়া দিয়ে শিকার করেছি। দৈনিক গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয়।' শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, 'আমাদের এখানে চার-পাঁচ ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়ে থাকে। আগে জালচোরের উপদ্রব ছিল বলে জাল পেতে রাত জেগে পাহারা দিতে হতো। এখন জাল চুরি হয় না বলে সন্ধ্যায় আমরা জাল পেতে রেখে আসি। শেষরাতের দিকে গিয়ে জাল তুলি।'
সাদাত মিয়া ও আবদুস শহিদ বলেন, 'আমরা সন্ধ্যার দিকে জাল পেতে রেখে আসি। রাত ৩টায় ঘুম থেকে উঠে আবার হাওরে যাই। পেতে রাখা জালটি গিয়ে তুলে দেখি কী পরিমাণ মাছ আটক হয়েছে। ওই মাছগুলো পরে সকাল ৭-৮টার দিকে স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসি। এতে আমাদের প্রতিদিনের আয় হয় গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। মাঝেমধ্যে আরো বেশি আয় হয়।' তাঁরা আক্ষেপের সঙ্গে জানান, প্রভাবশালীরা নেট দিয়ে বিল দখল করে রাখে। আমাদের ঢুকতে দেয় না। মেশিন দিয়ে বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরার নিয়ম না থাকলেও তারা তা-ই করে। কেউ কিছু বলে না। আমাদের তো টাকার জোর নেই, তাই আমরা কিছুই করতে পারি না।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
No comments