উদ্বাস্তুকরণ ঠেকাতে চাই কর্মসংস্থানমুখী উন্নয়ন প্রকল্প- সিডরের পাঁচ বছর পর
গত শুক্রবার প্রথম আলোয় পাঁচ বছর বয়সী সিডরের সচিত্র খবর ছাপা হয়েছে, যা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় এই শিশুর জন্ম হয়েছিল এক আশ্রয়শিবিরে। এ কারণেই মা-বাবা তার নাম রেখেছিলেন ‘সিডর’।
মংলা উপজেলার চিলা গ্রামের এই শিশুটি এখন স্থানীয় দিশারী বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও সেই সিডরে আক্রান্ত অনেক পরিবারের শিশুসন্তানেরা পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। কেননা, সিডরে আক্রান্ত এলাকায় ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি ও উপকূলীয় বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়নি। ফলে অনেকেই পরিণত হয়েছেন অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে। কেবল সিডর নয়, লবণাক্ততাও উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন অভিশপ্ত করে তুলেছে।যেসব পরিবারের অন্নের সংস্থান করাই কঠিন, সেসব পরিবারের বাবা-মা সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর কথা ভাবতেই পারেন না। যেসব পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটি কাজের সন্ধানে দূরে গিয়ে আর ফিরে আসেননি, কিংবা স্বজনের খোঁজ রাখেননি, সেসব পরিবার কীভাবে শিশুর শিক্ষার নিশ্চয়তা দেবে? সিডরের আঘাতের পাঁচ বছর পর আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ যেটুকু হয়েছে, তাতে হয়তো এই মানুষগুলো মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে সরকার বা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ফলে দরিদ্র মানুষগুলো পড়েছে মহা দুর্বিপাকে। আইলা ও সিডরে আক্রান্ত এলাকায় একটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়া হলে সেখানেই তাদের কর্মসংস্থান হওয়া সম্ভব। সেই সঙ্গে লবণাক্ততা দূর করতেও চাই যথাযথ পরিকল্পনা। উপকূলীয় জমি লবণাক্ত হওয়ার জন্য চিংড়িঘেরের মালিকেরাও কম দায়ী নন। অনেক সময় বাঁধ কেটে তাঁরা চিংড়িঘেরে লবণাক্ত পানি ঢোকান, যা কৃষি ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
এই ক্ষতি আর বাড়তে দেওয়া যায় না। শিশু সিডরের মতো সেখানকার সব শিশু পড়াশোনার সুযোগ তখনই পাবে, যখন তাদের অভিভাবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক উদ্বাস্তুকরণ ঠেকাতে এর বিকল্প নেই।
No comments