সাঈদীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল রোববার আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাঈদীর পক্ষে যুক্তি দেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।
কার্যক্রমের শুরুতে আসামির কাঠগড়ায় থাকা সাঈদী হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আড়াই বছর ধরে আসামির কাঠগড়ায় বসে তাঁকে মিথ্যার পাহাড় শুনতে হয়েছে। গত নয় দিন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি যুক্তি উপস্থাপনের নামে এসব মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। আগে দেশের বুদ্ধিজীবীরা বলতেন, বিচারের গতি বাড়াতে হবে। কিন্তু এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিচার ত্বরান্বিত করতে চান। এখন আর তাহলে কীভাবে বিচার হবে?’ট্রাইব্যুনাল একাধিকবার সাঈদীকে কথা বন্ধ করতে বলেন এবং এ বিষয়ে তাঁর আইনজীবীকেও নির্দেশ দেন। এর পরও সাঈদী বলেন, ‘অভিযুক্তের বক্তব্য শোনার বিষয়ে হাদিসে নির্দেশনা রয়েছে। বলা হয়েছে, বিচারক তিন প্রকার। যাঁরা অভিযুক্তের কথা শুনে ন্যায়বিচার করবেন, তাঁরা সরাসরি জান্নাতে যাবেন। আর যাঁরা প্রভাবিত হয়ে বিচার করবেন এবং অভিযুক্তের কথা শুনবেন না, সেই সব বিচারক জাহান্নামে যাবেন। এখন দায়িত্ব আপনাদের—আপনারা জান্নাত পাবেন, না জাহান্নাম পাবেন।’
সাঈদীর বক্তব্য শেষ হলে মিজানুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাঈদীকে দেলাওয়ার হোসাইন শিকদার নামে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সাঈদীর নাম লেখার সময় কোথাও শিকদার শব্দটি লেখেননি। ‘পাঁচ তহবিল’ গঠনের অভিযোগ প্রসঙ্গে মিজানুল বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য অনুসারে, মুক্তিযুদ্ধকালে সাঈদী একদিন লুঙ্গি পরে, বগলে একটি টিন নিয়ে ও মাথায় ঝুড়িতে করে লুটের মাল নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যে লোকের কথায় একাত্তরে পিরোজপুরের পাকিস্তানি সেনারা উঠত-বসত, তিনি এভাবে লুটের মাল নিয়ে যাবেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বেলা একটার দিকে এই মামলার কার্যক্রম আজ সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
গোলাম আযমের ছেলের জবানবন্দি চলছে: একই ট্রাইব্যুনালে গতকাল জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিপক্ষের প্রথম সাক্ষী হিসেবে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আজমী তৃতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া এই কর্মকর্তা গতকাল সামরিক শাসনকালে সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক, সামরিক-অন্যান্য বাহিনীর সম্পর্ক এবং সামরিক শাসকদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে বলেন। তিনি বলেন, সামরিক আইন চলাকালে বেসামরিক প্রশাসনের সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সামরিক প্রশাসক সব কর্মকাণ্ড সম্পাদন করেন। সামরিক শাসনের সময় বেসামরিক প্রশাসনের যেমন অস্তিত্ব থাকে না, তেমনি রাজনীতিবিদেরাও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েন। সামরিক শাসকদের ওপর বেসামরিক প্রশাসন বা রাজনীতিবিদদের কোনো কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। একাত্তরেও বেসামরিক প্রশাসন বা রাজনীতিবিদদের সামরিক প্রশাসনের ওপর সামান্যতম নিয়ন্ত্রণ ছিল না। বেসমারিক ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদদের ‘কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’রও (নেতৃত্বের দায়) সুযোগ থাকে না।
বিকেলে আজমীর জবানবন্দি অসমাপ্ত অবস্থায় এই মামলার কার্যক্রম আজ সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ ২ ডিসেম্বর: একই ট্রাইব্যুনাল গতকাল জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। এই মামলায় এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
No comments