নগরবাড়ীতে খোলা আকাশের নিচে ২০ হাজার মে. টন সার
শ্রমিক, পরিবহন ও বাফার গুদামে জায়গা-সংকটের কারণে পাবনার নগরবাড়ী ঘাটে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। মাস খানেক ধরে ভেজা মাটিতে সারগুলো পরে থাকায় একদিকে এর কার্যকারিতা কমছে, অন্যদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, ঘাট এলাকায় সরকারি কোনো গুদাম না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলছে।গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়ক থেকে নাগরবাড়ী ঘাট এলাকায় ঢোকার পর চোখে পড়ে সারের বস্তার স্তূপ। ভেজা মাটির ওপর কয়েক হাজার বস্তা সার রাখা হয়েছে। ঘাটের ট্রাক ও বাস টার্মিনাল এবং টার্মিনাল সড়কসহ প্রায় অর্ধকিলোমিটার নদীর পাড়জুড়ে শুধু সার আর সার। পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে বস্তাগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে। তবে বাতাসে ভাসছে সারের তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ। ঘাটের আশপাশের এলাকাগুলোতেও এই গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
ঘাট এলাকায় জাহাজ থেকে প্রতিনিয়ত সার নামাচ্ছেন শ্রমিকেরা। কিন্তু সারগুলো দিনের পর দিন এখানেই থেকে যাচ্ছে। অন্য কোথাও পাঠানো হচ্ছে না।
জানা যায়, বিদেশ থেকে আমদানির পর বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যমে বাফার গুদামে সারগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়। উত্তরাঞ্চলের জন্য এ বছর যমুনা এন্টারপ্রাইজ, বাংলাদেশ ট্রান্সপোর্ট, বাংলাদেশ ট্রেডার্স, গোলাম মোস্তফা ট্রান্সপোর্ট, রেক্স মোটর্স, নবাব অ্যান্ড কোং ও পটম ট্রেডার্স—এই সাতটি এজেন্সি সার পরিবহনের কাজ করছে। সমুদ্রপথে বিদেশ থেকে বড় জাহাজে সার আনার পর ছোট জাহাজের মাধ্যমে তা বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলের সারগুলো আনা হচ্ছে পাবনার নগবাড়ী ও বাঘাবাড়ী ঘাটে। নিয়মানুযায়ী, ছোট জাহাজ থেকে সার নামার পর তা ট্রাকযোগে বাফার গুদামে পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঘাটে শ্রমিক ও পরিবহন-সংকট এবং গুদামে জায়গা না থাকায় সারগুলো ঘাটেই পড়ে থাকছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিবছরই তিন মাস ধরে সারগুলো নগরবাড়ী ঘাটে পড়ে থাকে। এতে আশপাশের এলাকায় তীব্র গন্ধ ছড়ায়। এতে নানা ধরনের স্বাস্থ্য-সমস্যা দেখা দেয়।
এ প্রসঙ্গে কৃষিবিদ জাফর সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সার খোলা স্থানে রাখলে বা বাতাস লাগলে এর কার্যকারিতা কিছুটা কমে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে সারের গন্ধ নাক দিয়ে ঢুকলে শ্বাসজনিত বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। রেক্স মোটরস ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন জানান, সার মজুদের জন্য উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, সান্তাহার, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, বিরামপুর, কুড়িগ্রাম, মহেন্দ্রপুর, রাজশাহী, নাটোর, বাঘাবাড়ী ও পার্বতীপুরে ১৪টি বাফার গুদাম রয়েছে। গত বছর সারের ঘাটতি কম হওয়ায় গুদামগুলো খালি হয়নি। ফলে ঘাটে যে পরিমাণ সার আসছে, তা ঘাটেই পরে থাকছে। এ পর্যন্ত তাঁদের প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন সার ঘাটে জমা হয়েছে। অন্য এজেন্সিগুলোরও প্রায় একই পরিমাণ সার এসেছে। এতে বর্তমানে নগরবাড়ী ঘাটে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন সার আটকা পড়েছে।
নগরবাড়ী ঘাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল্লাহ বলেন, গুদামে জায়গা সংকটের চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শ্রমিক ও পরিবহন সংকট। ধানকাটা মৌসুম শুরু হওয়ায় সার ওঠানো-নামানোর জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে সার পরিবহনের জন্য ট্রাক সংকটও রয়েছে। প্রতিবছরই এ সমস্যা দেখা দেয়। তাই অবিলম্বে নগরবাড়ীতে একটি গুদাম করার দাবি জানান তিনি।
No comments