অনাস্থার হুমকি, আগাম নির্বাচনের শঙ্কা-ভারতে ইউপিএ সরকারের সামনে ঝড়ের আভাস
একহাঁটু কাদায় ভারতের ক্ষমতাসীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) সরকার। দীর্ঘদিন ধরেই তারা অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতি সচল রাখতে সংস্কার কর্মসূচির বাস্তবায়ন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল। সম্প্রতি এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অন্যমত আঞ্চলিক শক্তি তৃণমূল কংগ্রেসের পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকি। তাই এখন আগাম নির্বাচনের শঙ্কাও উঁকি দিতে শুরু করেছে।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার গত সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং খুচরা বাজারে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় সরকারের জোটসঙ্গী, বিরোধী দল ও ইউনিয়নগুলো এর প্রচণ্ড প্রতিবাদ জানায়। সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয় জোটসঙ্গী তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ক্ষমতাসীন জোট। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ছোট দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয় তারা।মূলত অর্থনীতির ধীরগতি, ফুলে-ফেঁপে ওঠা বাজেট ঘাটতি এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণেই সরকার বাজার সংস্কারে হাত দিতে বাধ্য হয়। গত তিন বছরের মধ্যে এখন ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের হার সবচেয়ে ধীর।
দিলি্লর জওয়া হেরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জয়া হাসান বলেন, 'এ মুহূর্তে গুরুতর আস্থার সংকট মোকাবিলা করছে সরকার। ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এফডিআই নিয়ে বিরোধী দলগুলো অনাস্থা ভোটের ডাক দিলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে পড়তে পারে তারা।'
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় গত শনিবার পার্লামেন্টে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ২২ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া শীতকালীন অধিবেশনেই এ প্রস্তাব আনা হবে বলে তিনি জানান। লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ১৯। অনাস্থা প্রস্তাব আনতে ৫০ এমপির সমর্থনের প্রয়োজন হয়। তিনি এ প্রস্তাবে সমর্থন দেওয়ার জন্য অন্য দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এখনো এ বিষয় তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। দ্বিধা রয়েছে বাম দলগুলোর মধ্যেও।
এই ভোট উতরাতে ছোটখাটো দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে ইউপিএ সরকারকে। এ দলগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিরই এফডিআই ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নেই। সরকার তাদের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হলে আগাম নির্বাচন দিতে হতে পারে। তবে কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা ও অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেছেন, তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। ২০১৪ সালের আগে কোনো নির্বাচনের কথা ভাবছে না তাঁর দল। সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়েও কোনো হুমকি নেই।
নয়াদিলি্লভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চের বিশ্লেষক দেবিকা মালিক বলেন, বিরোধী দলগুলোর এফডিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণে পার্লামেন্ট গত বর্ষা অধিবেশন একেবারেই স্থবির হয়ে যায়, '২০০৯ সাল থেকে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে অধিবেশন চলাটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে।' দিলি্লভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের বিশ্লেষক বিজি বার্ঘেস বলেন, বিরোধী দল পার্লামেন্টকে স্থবির করে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে সরকার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এখনই যদি তারা ব্যবস্থা না নেয় তা হলে সামনের নির্বাচনেই এর মাশুল দিতে হবে। সূত্র : এএফপি।
No comments