মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনী মুসলিমদের হত্যা করেছে
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত মাসে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় পলায়নরত মুসলিমদের স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করে। নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গতকাল রোববার এ কথা জানিয়েছে।
এইচআরডব্লিউ জানায়, কিয়াউক পিউ শহরে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যখন আদিবাসী সংখ্যালঘু কামান মুসলিমদের হত্যা করে, তখন তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে সেনারা। এ ছাড়া রাখাইন রাজ্যের সহিংসতাকবলিত গ্রামগুলো থেকে পলায়নরত রোহিঙ্গা মুসলিমরা নৌকায় করে রাজ্যের রাজধানী সিত্তিতে গেলে তাদের বেধড়ক মারধর করে স্থানীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।তবে অন্যান্য জায়গায় দেখা গেছে, বৌদ্ধদের হামলা থেকে রোহিঙ্গা ও কামান মুসলিমদের রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ফাঁকা গুলি ছুড়ে তারা বৌদ্ধদের হটিয়ে দিয়েছে। উদ্বাস্তু লোকজনকে খাদ্য-পানীয়ও সরবরাহ করেছে।
রাখাইন রাজ্যে গত জুনের পর থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা বৌদ্ধ-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হয়েছে ১৮০ জন। বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এক লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ। এদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। তাদের ওপর দশকের পর দশক ধরে নির্যাতন চলছে।
রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার ধ্বংসযজ্ঞের নতুন স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে এইচআরডব্লিউ। এতে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের তিনটি এলাকায় বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘স্যাটেলাইট ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, তিনটি এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বৌদ্ধরা। স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় তারা এ কাজ করে।’
রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু মুসলিমদের হত্যা-নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনকে চাপ দেওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্র্যাড অ্যাডামস। আজ সোমবার মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন ওবামা।
ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘এ ধরনের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের পরও অপরাধীদের যদি শাস্তি না হয়, তাহলে সেটাকে এ ধরনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সবুজসংকেত হিসেবেই ধরে নেয় দুর্বৃত্তরা।’
মিয়ানমারে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম সে দেশের নাগরিক হলেও সরকার দাবি করছে, রোহিঙ্গারা অবৈধ অভিবাসী। রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলে মনে করে জাতিসংঘ।
‘শান্তি নষ্ট করা’ সহিংসতা: আসিয়ান
মিয়ানমারের জাতিগত দাঙ্গাকে ‘শান্তি নষ্ট করা’ সহিংসতা বলে অভিহিত করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ানের প্রধান সুরিন পিতসুওয়ান। তবে এই দাঙ্গাকে তিনি গণহত্যা বলতে নারাজ।
কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে গতকাল মঙ্গলবার পিতসুয়ান বলেন, ‘আমি বলব, জাতিগত সহিংসতার এই প্রবণতা শান্তি নষ্ট করছে। এতে করে এই অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।’
১০ সদস্য রাষ্ট্রের সংস্থা আসিয়ানের নেতাদের সম্মেলন চলছে নমপেনে। মিয়ানমারও এই সংস্থার সদস্য। এএফপি।
No comments