আওয়ামী লীগের প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয়- বিদ্রোহী প্রার্থীর জয় by রাজীব নূর
জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমানুর রহমান খান আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শহিদুল ইসলামকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছে। আমানুর (আনারস) পেয়েছেন ৯৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শহিদুল (নৌকা) ৪৪ হাজার ৫৩১ ভোট এবং অপর প্রার্থী জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ (লাঙ্গল) ১১ হাজার ৬৮৪ ভোট পেয়েছেন।
বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান ৫৩ হাজার ২৭৭। সাংসদ মতিউর রহমানের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।আমানুর রহমান খান নির্বাচনের এ ফলকে বিদ্রোহী জনতার বিজয় বলে আখ্যায়িত করেন। তাঁর মতে, নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এসে আওয়ামী লীগ থেকে তাঁকে অগণতান্ত্রিকভাবে ও দলের গঠনতন্ত্র না মেনে বহিষ্কার করা এবং গত কয়েক দিন ধরে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের গ্রেপ্তার করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা ভোটের মাধ্যমে প্রতিহত করেছেন ঘাটাইলবাসী। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগের রাতে কালোটাকা ছড়িয়ে আমানুর ফলাফল প্রভাবিত করেছেন।
মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহও ফলাফল মেনে নেওয়ার কথা বললেন। তবে তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থী পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
নির্বাচনের চিত্র: দু-একটি পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলে।
নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ৫৬ শতাংশের অধিক ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। মোট ভোটার দুই লাখ ৭১ হাজার ৩২৯ জন। পুরুষ ও নারী ভোটার যথাক্রমে এক লাখ ৩১ হাজার ৭৮৬ ও এক লাখ ৩৯ হাজার ৫৪৩। পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।
৯৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ভোটকক্ষের সংখ্যা ছিল ৮৮৫টি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৭ জন করে সদস্য ছিলেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে এঁদের উপস্থিতি আরও বেশি ছিল।
৯৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সেনানিবাসের দুটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা জানান, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কেন্দ্রে মোট দুই হাজার ৮৬২ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ৯৩ জন ভোট দিয়েছেন। ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ কেন্দ্রে দুই হাজার ৮৪২ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৭৭ জন।
সকালে আতঙ্ক, দুপুরে উচ্ছ্বাস, সন্ধ্যায় আনন্দ মিছিল: সকালের দিকে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। তবে দুপুর না হতেই ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়ার উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সন্ধ্যায় বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকেরা আনন্দ মিছিল নিয়ে উপজেলা সদরে আসতে শুরু করেন।
সরেজমিন ঘুরে সকালে কোনো কেন্দ্রেই ভোটারদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা যায়নি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। ভোটের আগের রাতে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতার ঘটনা এবং এসব ঘটনা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক টহলের কারণে ভোটারদের মধ্যে কিছু আতঙ্ক ছিল।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম গতকাল সকালে পৌরসভার রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, দীঘলকান্দি ও দিগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে আমানুরের লোকজন তাঁর প্রতিনিধিদের বের করে দিয়েছেন।
মুকুল একাডেমি উচ্চবিদ্যালয়ে ভোট দেন বিদ্রোহী প্রার্থী আমানুর রহমান খান। ভোট দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রতনপুর কেন্দ্রে শহিদুলের সমর্থকেরা তাঁর একজন সমর্থককে মারধর করেছেন।
No comments