সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট!
কাঁচা রাস্তার ধারে জরাজীর্ণ একটি খামারবাড়ি। বাইরে দড়িতে ঝুলছে কাপড়-চোপড়। উঠোন ছেয়ে আছে আগাছায়। তারই এক কোণে পানির কূপ। বাড়ির বাইরে পাহারায় দুজন মাত্র পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যানুয়েলা নামের তিন ঠ্যাংওয়ালা এক কুকুর। অবাক লাগলেও এটি একজন প্রেসিডেন্টের বাড়ি।
তাঁর নাম হোসে মুজিকা। উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট তিনি। বলা হয়ে থাকে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট।
যে আমজনতার ভোটে রাজনীতিবিদরা নেতা নির্বাচিত হন তাঁদের থেকে রাজনীতিবিদদের জীবনযাপন বিলাসবহুল হবে-বর্তমান ভোগবাদী বিশ্বে এটাই সাধারণ হিসাব ও দৃশ্য। কিন্তু মুজিকার সঙ্গে বিশ্বের অন্য নেতাদের স্পষ্ট ফাঁরাক এখানেই।
২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্টের জন্য বরাদ্দ সরকারি বাসভবনটি গ্রহণ করেননি মুজিকা। রাজধানী মন্টেভিডিওর বাইরে স্ত্রীর মালিকানাধীন খামারবাড়িটিতেই থেকে যান তিনি। সময় পেলেই স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির জমিতে নেমে পড়েন, নিজ হাতে গড়েন ফুলের বাগান।
কৃচ্ছ্রসাধনের এই জীবনযাপন মুজিকার নতুন নয়। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে উরুগুয়ের বামপন্থী গেরিলা সংগঠন তুপামারোসের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়নের সংগ্রামে ছয়বার গুলি খেয়েছেন। জেল খেটেছেন ১৪ বছর। উরুগুয়েতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৫ সালে মুক্তি পান তিনি। জেলে থাকার দিনগুলোতেই মূলত জীবন সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিটি গড়ে ওঠে।
মুজিকার মাসিক আয় ১২ হাজার ডলার। এর ৯০ ভাগই তিনি দান করেন বিভিন্ন দাতব্য কাজে। এর পর যা থাকে তা ব্যয় হয় নিজের খরচের পেছনে। 'জীবনের বেশির ভাগ আমি এভাবেই কাটিয়েছি'- বলেন, বাড়ির বাগানে একটি কাঠের চেয়ারে বসা মুজিকা। পায়ের কাছে তার স্ত্রী ম্যানুয়েলা। 'আমার নিজের যা আছে তা দিয়েই আমার চলে যায়।'
তাঁর দেওয়া অর্থ ব্যয় হয় সমাজের গরিব ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে। গরিবদের দিয়ে হাতে যা থাকে তা একজন সাধারণ নাগরিকের মাসিক গড় আয় ৭৭৫ ডলারের সমানই দাঁড়ায়। ২০১০ সালে সরকারের কাছে দেওয়া তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব থেকে জানা যায়, তার ১৮০০ ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে। চলতি বছর দাখিল করা হিসাবে দেখা যায় তাঁর ও স্ত্রীর মিলিত সম্পদ দুই লাখ ১৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ। এই অঙ্ক শুধু তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট দানিলো আস্তোরির সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ এবং মুজিকার পূর্বসূরি তাবারে ভাসকুয়েজের এক-তৃতীয়াংশ। মুজিকা বলেন, 'আমাকে সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট বলা হয়। কিন্তু আমি নিজেকে গরিব ভাবি না। গরিব তারাই যারা সবসময় ব্যস্ত থাকেন বিলাসী জীবনযাপনের চেষ্টায় এবং সবসময়ই আরো বেশি বেশি পেতে চান।'
সহজ সাধারণ জীবনযাপন প্রসঙ্গে বলেন, 'এটা এক ধরনের স্বাধীনতার বিষয়। আপনার যদি অনেক সম্পদ না থাকে তবে তা রক্ষায় আপনাকে সারা জীবন দাসের মতো খাটতেও হবে না। আপনি নিজের জন্য আরো বেশি সময় পাবেন। আমাকে পাগল ও খামখেয়ালি বুড়ো মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই স্বাধীন পছন্দ।'
মুজিকার সহজ-সরল জীবনযাপনের এই দৃষ্টিভঙ্গি এর আগেও বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোয় অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলনে বিশ্বনেতারা যখন টেকসই উন্নয়নের ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন তখন মুজিকা তাঁর দেওয়া বক্তব্যে বলেছিলেন, 'বেশির ভাগ লোককে দারিদ্র্যমুক্ত করতে আমরা সারা দুপুর টেকসই উন্নয়নের কথা বলে আসছি। কিন্তু আসলে আমরা কী ভাবছি? আমরা কি ধনী দেশগুলোর উন্নয়ন ও ভোগের মডেল অনুসরণ করব? আমি আপনাদের কাছে জানতে চাচ্ছি, এই পৃথিবীতে প্রতিটি ইন্ডিয়ান (আমেরিকার আদিবাসী) পরিবারের যদি জার্মানিদের সমপরিমাণ গাড়ি থাকত তবে কী ঘটত? কতটুকু অঙ্েিজন আমরা পৃথিবীকে জোগাতে পারতাম?'
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২০১৪ সালের নির্বাচনে মুজিকা আর প্রার্থী হচ্ছেন না। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৭ বছর। সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষের পর তিনি হয়তো রাজনীতি থেকে অবসরেই যাবেন। আর দশজন সাধারণ নাগরিকের মতোই পেনশনের অর্থেই বাকি জীবনটা পার করবেন তিনি। কিন্তু জীবনের যে উদাহরণ তিনি রেখে যাচ্ছেন, তা অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এটাই তাঁর আশা। সূত্র : বিবিসি।
যে আমজনতার ভোটে রাজনীতিবিদরা নেতা নির্বাচিত হন তাঁদের থেকে রাজনীতিবিদদের জীবনযাপন বিলাসবহুল হবে-বর্তমান ভোগবাদী বিশ্বে এটাই সাধারণ হিসাব ও দৃশ্য। কিন্তু মুজিকার সঙ্গে বিশ্বের অন্য নেতাদের স্পষ্ট ফাঁরাক এখানেই।
২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্টের জন্য বরাদ্দ সরকারি বাসভবনটি গ্রহণ করেননি মুজিকা। রাজধানী মন্টেভিডিওর বাইরে স্ত্রীর মালিকানাধীন খামারবাড়িটিতেই থেকে যান তিনি। সময় পেলেই স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির জমিতে নেমে পড়েন, নিজ হাতে গড়েন ফুলের বাগান।
কৃচ্ছ্রসাধনের এই জীবনযাপন মুজিকার নতুন নয়। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে উরুগুয়ের বামপন্থী গেরিলা সংগঠন তুপামারোসের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়নের সংগ্রামে ছয়বার গুলি খেয়েছেন। জেল খেটেছেন ১৪ বছর। উরুগুয়েতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৫ সালে মুক্তি পান তিনি। জেলে থাকার দিনগুলোতেই মূলত জীবন সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিটি গড়ে ওঠে।
মুজিকার মাসিক আয় ১২ হাজার ডলার। এর ৯০ ভাগই তিনি দান করেন বিভিন্ন দাতব্য কাজে। এর পর যা থাকে তা ব্যয় হয় নিজের খরচের পেছনে। 'জীবনের বেশির ভাগ আমি এভাবেই কাটিয়েছি'- বলেন, বাড়ির বাগানে একটি কাঠের চেয়ারে বসা মুজিকা। পায়ের কাছে তার স্ত্রী ম্যানুয়েলা। 'আমার নিজের যা আছে তা দিয়েই আমার চলে যায়।'
তাঁর দেওয়া অর্থ ব্যয় হয় সমাজের গরিব ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে। গরিবদের দিয়ে হাতে যা থাকে তা একজন সাধারণ নাগরিকের মাসিক গড় আয় ৭৭৫ ডলারের সমানই দাঁড়ায়। ২০১০ সালে সরকারের কাছে দেওয়া তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব থেকে জানা যায়, তার ১৮০০ ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে। চলতি বছর দাখিল করা হিসাবে দেখা যায় তাঁর ও স্ত্রীর মিলিত সম্পদ দুই লাখ ১৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ। এই অঙ্ক শুধু তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট দানিলো আস্তোরির সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ এবং মুজিকার পূর্বসূরি তাবারে ভাসকুয়েজের এক-তৃতীয়াংশ। মুজিকা বলেন, 'আমাকে সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট বলা হয়। কিন্তু আমি নিজেকে গরিব ভাবি না। গরিব তারাই যারা সবসময় ব্যস্ত থাকেন বিলাসী জীবনযাপনের চেষ্টায় এবং সবসময়ই আরো বেশি বেশি পেতে চান।'
সহজ সাধারণ জীবনযাপন প্রসঙ্গে বলেন, 'এটা এক ধরনের স্বাধীনতার বিষয়। আপনার যদি অনেক সম্পদ না থাকে তবে তা রক্ষায় আপনাকে সারা জীবন দাসের মতো খাটতেও হবে না। আপনি নিজের জন্য আরো বেশি সময় পাবেন। আমাকে পাগল ও খামখেয়ালি বুড়ো মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই স্বাধীন পছন্দ।'
মুজিকার সহজ-সরল জীবনযাপনের এই দৃষ্টিভঙ্গি এর আগেও বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোয় অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলনে বিশ্বনেতারা যখন টেকসই উন্নয়নের ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন তখন মুজিকা তাঁর দেওয়া বক্তব্যে বলেছিলেন, 'বেশির ভাগ লোককে দারিদ্র্যমুক্ত করতে আমরা সারা দুপুর টেকসই উন্নয়নের কথা বলে আসছি। কিন্তু আসলে আমরা কী ভাবছি? আমরা কি ধনী দেশগুলোর উন্নয়ন ও ভোগের মডেল অনুসরণ করব? আমি আপনাদের কাছে জানতে চাচ্ছি, এই পৃথিবীতে প্রতিটি ইন্ডিয়ান (আমেরিকার আদিবাসী) পরিবারের যদি জার্মানিদের সমপরিমাণ গাড়ি থাকত তবে কী ঘটত? কতটুকু অঙ্েিজন আমরা পৃথিবীকে জোগাতে পারতাম?'
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২০১৪ সালের নির্বাচনে মুজিকা আর প্রার্থী হচ্ছেন না। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৭ বছর। সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষের পর তিনি হয়তো রাজনীতি থেকে অবসরেই যাবেন। আর দশজন সাধারণ নাগরিকের মতোই পেনশনের অর্থেই বাকি জীবনটা পার করবেন তিনি। কিন্তু জীবনের যে উদাহরণ তিনি রেখে যাচ্ছেন, তা অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এটাই তাঁর আশা। সূত্র : বিবিসি।
No comments