দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা- ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মামলা করতে নিষেধ করা হয়েছিল’

১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় প্রথমে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মামলা করতে নিষেধ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী আহাদুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমানের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এ কথা বলেন আহাদুর রহমান।


তিনি ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামের ইউরিয়া সার কারখানার জেটিঘাটে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের সময় কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। ৩ এপ্রিল তিনি বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা করেন। ২০০৪ সালের ৩ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি নিজে মামলা দুটি তদন্ত করেন। পরে মামলা দুটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।
আহাদুর রহমান বলেন, ‘আটক বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ সম্পর্কে মামলা করার আগে চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার সাব্বির আলী আমাকে মামলা করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি জানে এবং মামলা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আমি তখন বলি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সম্পর্কে দেশ-বিদেশে জানাজানি হয়েছে। মিডিয়া জেনে গেছে। মামলা না করলে ভবিষ্যতে আমাদেরই অসুবিধা হবে। এতে পুলিশ কমিশনার একমত পোষণ করেন এবং মামলা করার নির্দেশ দেন।’
অস্ত্র আটকের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আহাদুর রহমান বলেন, ‘সিইউএফএল জেটিঘাটে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যে সার্জেন্ট আলাউদ্দিন ও সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন জনৈক আবুল হোসেন ও হাফিজুর রহমানকে আমার কাছে হাজির করেন। আবুল হোসেন ও হাফিজ জানান, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উলফার জন্য আনা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে। তাঁরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছেড়ে দিতে চাপ দেন।’ তিনি জানান, এরপর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) ঘটনাস্থলে গেলে আটক অস্ত্র ছেড়ে দিতে তাঁকেও চাপ দেন আবুল হোসেন। রাজি না হলে কিছুক্ষণ পর আবুল হোসেন সেখান থেকে সরে পড়েন। তিনি পরে জানতে পারেন, এই আবুল হোসেন হলেন এনএসআইয়ের মেজর লিয়াকত।
আহাদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার রাতে জেটিঘাট থেকে হাবিলদার গোলাম রসুল ও সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন উলফা সন্দেহে পাঁচ ব্যক্তিকে আটক করে বন্দর ফাঁড়িতে নিয়ে রাখেন। পরে সার্জেন্ট আলাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে ও চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারের পরামর্শে উপকমিশনার (বন্দর) আটক পাঁচজনকে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেন।’
মামলার বাদী ও প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পরে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি, আটক অস্ত্র ও গোলাবারুদ ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য আনা হয়েছে। এর সঙ্গে চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, এনএসআইয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, এনএসআইয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন আহম্মদ ও এনএসআইয়ের মেজর লিয়াকতসহ অন্যরা জড়িত।’ তিনি জানান, এর আগে তিনি এই দুটি মামলায় যথাক্রমে ২০০৫ সালের ৬ জুলাই ও ২০০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তখন তিনি এসব কথা বলেননি। তাঁর দাবি, ‘সেই সময়ের সরকারের কঠিন চাপের কারণে সাক্ষ্যে এসব কথা বলিনি।’
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমের পক্ষে আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাক্ষীকে কিছুক্ষণ জেরা করেন। আদালত ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন।

No comments

Powered by Blogger.