মুদ্রা পাচার-সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মুদ্রা পাচারের ঘটনা দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। জানা গেছে, কেবল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বছরে ৫০০ কোটি টাকার বেশি মুদ্রা পাচার হয়।
বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পেশাদার বাহকের মাধ্যমে এসব মুদ্রা পাচার হয়। মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। মুদ্রা পাচারের ক্ষেত্রে বিদেশি কয়েকটি চক্রের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট রয়েছে। শঙ্কার কথা হলো, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না। মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িত চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের উদ্যোগও সফলতার মুখ দেখছে না। এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অজুহাত হলো, কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। মুদ্রা পাচার মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম নির্দিষ্ট পর্যায়ে থেমে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি র্যাব ভিন্ন ভিন্ন অভিযানে কয়েকজন মুদ্রা পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছে কোটি টাকা মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মুদ্রা পাচার করা হয়। এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১৫টি সিন্ডিকেট চিহ্নিত করেছে। কিন্তু সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। কোটি কোটি টাকা মূল্যমানের মুদ্রা পাচারের বিষয়টি দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো মূল্যে মুদ্রা পাচার চক্রকে রুখতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াও জরুরি। সমকালের প্রতিবেদনে জানা গেছে, মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িত অনেক রথী-মহারথীর নাম পাওয়া গেছে। তারপরও পুলিশ তাদের আইনের আওতায় কেন নিতে পারছে না সেটাই বড় প্রশ্ন। আমরা মনে করি, দেশের স্বার্থেই তাদের নাম প্রকাশ জরুরি। পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু তিনটি উপায়ে মুদ্রা পাচার হয়, তার বড় অংশ পাচার হয় নির্ধারিত বাহকের মাধ্যমে। বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের মাধ্যমেও পাচার হয় মুদ্রা। এ ছাড়া প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ী বিদেশ ভ্রমণের সময় মুদ্রা পাচার করে। এই তিন শ্রেণীর বাহকের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারিসহ প্রতিরোধের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা আশা করব, মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যতই প্রভাবশালী হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এই অপতৎপরতা বন্ধ করা হবে।
No comments