প্রশাসন-মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হোক পুলিশ by মো. জহিরুল ইসলাম
গত কিছুদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের 'ঝটিকা কর্মসূচি' চলাকালে পুলিশকে হেনস্তা হতে দেখে বাহিনীটির দক্ষতা ও মনোবল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। বিষয়টি নিছক রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক বিবেচনার বিষয় হয়।
একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর কাছে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এভাবে হেনস্তা হতেই থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের শক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, একটি দক্ষ ও উজ্জীবিত পুলিশ বাহিনীই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান হাতিয়ার। এখানেই কিন্তু পুলিশের মানোন্নয়ন, জবাবদিহির প্রশ্নটি চলে আসে। আমাদের মনে আছে, কয়েক মাস আগে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমীতে ২৯তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, পুলিশ অফিসারদের আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে (সমকাল, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১২)।
প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ কীভাবে একটি দক্ষ ও দায়িত্বশীল বাহিনী হিসেবে সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হতে পারে? আমরা দেখেছি, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও পরাধীনতার দিনগুলোর মতো গণতান্ত্রিক ও সামরিক সরকার নির্বিশেষে পুলিশকে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছে। 'পুলিশ জনগণের সেবক' এই জনপ্রিয় স্লোগানের বিপরীতে পুলিশ হয়ে ওঠে বিরোধী দল দমন-নিপীড়নের বিশ্বস্ত হাত। আমরা বেদনার সঙ্গে দেখেছি, বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী লীগ নেতা নাসিমের ওপর হামলা, বর্তমান সরকারের সময়কালে পুলিশ কর্তৃক বিরোধীদলীয় হুইপের ওপর আক্রমণ, তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা।
কথিত আছে, পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অনেকক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়। আলোচ্য বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 'বর্তমান সরকার ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে পুলিশ বাহিনীর ৩২ হাজার পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে ৩০৬টি ক্যাডার পদসহ ২৩ হাজার ৮৭৯টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে' (সমকাল, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১২)। বাংলাদেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি বিবেচনায় পুলিশ-জনগণের অনুপাত বৃদ্ধিতে এই উদ্যোগ অনেকের মতে প্রশংসনীয় হলেও একটা শঙ্কা থেকেই যায়। কারণ দলীয়করণ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হলে পুলিশি সেবা কমে গিয়ে বরং পুলিশ নিত্যনতুন সমস্যার সঙ্গে জড়াবে। আর তা দীর্ঘমেয়াদে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
অন্য আরেকটি দিক হচ্ছে, ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণভিত্তিক পুলিশি কাঠামোতে দার্শনিক কোনো মৌলিক পরিবর্তন ব্যতিরেকে বর্তমানে পুলিশ বিভাগের যেসব উদ্যোগ বা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে তার কারণে অন্যায়ভাবে সাধারণ মানুষের ওপর খবরদারি, নির্যাতন-নিপীড়ন বেড়েছে। লঙ্ঘিত হচ্ছে চিরঞ্জীবভাবে গ্রহণযোগ্য মানবাধিকারের রীতিনীতি। কিছুদিন আগে আদালত চত্বরে পুলিশ কর্তৃক তরুণীর শল্গীলতাহানির চেষ্টা, র্যাব কর্তৃক লিমনের ওপর নির্যাতন ও তার পরিবারের ওপর হুমকি এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্তৃক শিশু তানহার ওপর মানসিক নির্র্যাতনের চেষ্টা এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কহীন র্যাব, চিতা, কোবরা ও শিল্প পুলিশের নামে যেসব ব্রাঞ্চ বা শাখা হচ্ছে তা দিয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক, ভয় তথা বৃহৎ অর্থে 'ভয়ের সংস্কৃতি' তৈরি করা যাবে; কিন্তু পুলিশ-জনগণ, মালিক-শ্রমিক-পুলিশ, পুলিশ-ছাত্র সম্পর্ক নির্মাণ করা যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন দমন বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে 'এডুকেশন পুলিশ' নামে একটা শাখার কথা শোনা যাচ্ছে। ছাত্র অধিকার আদায়ের আন্দোলন রুখতে দমন-পীড়নের আলাদা পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজন নেই বরং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন ও ছাত্রদের মধ্যে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক সচেতনতা বেশি জরুরি।
সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ অবশ্য দুর্নীতি। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় আনলে দেখা যায়, দুর্নীতির অন্যতম একটি কারণ হলো পুলিশের চাকরিতে 'সামাজিক মর্যাদা'র অভাব ও সামগ্রিকভাবে বেতনসহ সুবিধার অপ্রতুলতা। পুলিশের নিম্ন র্যাংকের (কনস্টেবল/এসআই) কাজ করা লোকজন অতিকষ্ঠে ও বেদনাক্লিষ্ট জীবনযাপন করেন। একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে পুলিশের দুর্নীতি তথা যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি যুক্ত তা হলো তাদের 'স্ট্যাটাস ফ্রদ্ধাস্টেশন' পরিস্থিতি। প্রচণ্ড মানসিক চাপ নিয়ে তারা সরকার ও সরকারদলীয় কর্মসূচির বাস্তবায়ন করে অথচ বেতন কাঠামো ও সুবিধার দিক থেকে তাদের অবস্থান সবার নিচে। অপরাধ ব্যাখ্যায় ও নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে মার্কসীয় ধারার বাইরে আধুনিকায়ন তত্ত্বগুলোর মৌলিক প্রস্তাবনাও তাই একইরকম। শ্রেণীগত অবস্থান থেকে পুলিশের কার্যক্রম বিবেচনা করলে একটা বিষয় চোখে পড়ে যে, পুলিশরা একই শ্রেণীর মানুষকেই (শ্রমিক/গার্মেন্টকর্মী/কৃষক/ছাত্র) হয়তো অত্যাচার-নির্যাতন করছে। আবার নিজেই কখনোবা সরকার, রাজনৈতিক দল, ঊর্ধ্বতন আমলা বা উচ্চতর অফিসার কর্তৃক শোষিত হচ্ছে।
দুঃখজনক যে, 'পুলিশি টহল'সহ সব কাজে যারা এগিয়ে থাকে এবং প্রধানত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যারা ভিকটিম হয় সেই কনস্টেবলদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি বা জীবনযাত্রার মানোন্নয়নকল্পে কোনো উদ্যোগের কথা শোনা যায়নি। পুলিশের ভেতরে সামাজিক সমতা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির প্রশ্নটিকে এড়িয়ে বাংলাদেশ পুলিশের দুর্নীতি-অন্যায়-নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা যাবে না।
পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে প্রথমত মানবতাবাদ, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং নৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক পর্যায়ে পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ, দলীয়করণ-আত্মীয়করণের বিপরীতে নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা, দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসারদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, দুর্নীতি প্রশ্নে পুলিশ বিভাগ ছাড়াও সরকারকে সবক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তবেই পুলিশ হয়ে উঠবে জনগণের প্রকৃত সেবক। তখন আমরা পেতে পারি একটি দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী, যারা প্রজাতন্ত্রের নির্দেশ বাস্তবায়নে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ইস্পাত কঠিন মনোবল ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম : শিক্ষক, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল
jahir_smile2008@yahoo.com
প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ কীভাবে একটি দক্ষ ও দায়িত্বশীল বাহিনী হিসেবে সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হতে পারে? আমরা দেখেছি, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও পরাধীনতার দিনগুলোর মতো গণতান্ত্রিক ও সামরিক সরকার নির্বিশেষে পুলিশকে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছে। 'পুলিশ জনগণের সেবক' এই জনপ্রিয় স্লোগানের বিপরীতে পুলিশ হয়ে ওঠে বিরোধী দল দমন-নিপীড়নের বিশ্বস্ত হাত। আমরা বেদনার সঙ্গে দেখেছি, বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী লীগ নেতা নাসিমের ওপর হামলা, বর্তমান সরকারের সময়কালে পুলিশ কর্তৃক বিরোধীদলীয় হুইপের ওপর আক্রমণ, তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা।
কথিত আছে, পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অনেকক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়। আলোচ্য বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 'বর্তমান সরকার ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে পুলিশ বাহিনীর ৩২ হাজার পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে ৩০৬টি ক্যাডার পদসহ ২৩ হাজার ৮৭৯টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে' (সমকাল, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১২)। বাংলাদেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি বিবেচনায় পুলিশ-জনগণের অনুপাত বৃদ্ধিতে এই উদ্যোগ অনেকের মতে প্রশংসনীয় হলেও একটা শঙ্কা থেকেই যায়। কারণ দলীয়করণ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হলে পুলিশি সেবা কমে গিয়ে বরং পুলিশ নিত্যনতুন সমস্যার সঙ্গে জড়াবে। আর তা দীর্ঘমেয়াদে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
অন্য আরেকটি দিক হচ্ছে, ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণভিত্তিক পুলিশি কাঠামোতে দার্শনিক কোনো মৌলিক পরিবর্তন ব্যতিরেকে বর্তমানে পুলিশ বিভাগের যেসব উদ্যোগ বা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে তার কারণে অন্যায়ভাবে সাধারণ মানুষের ওপর খবরদারি, নির্যাতন-নিপীড়ন বেড়েছে। লঙ্ঘিত হচ্ছে চিরঞ্জীবভাবে গ্রহণযোগ্য মানবাধিকারের রীতিনীতি। কিছুদিন আগে আদালত চত্বরে পুলিশ কর্তৃক তরুণীর শল্গীলতাহানির চেষ্টা, র্যাব কর্তৃক লিমনের ওপর নির্যাতন ও তার পরিবারের ওপর হুমকি এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্তৃক শিশু তানহার ওপর মানসিক নির্র্যাতনের চেষ্টা এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কহীন র্যাব, চিতা, কোবরা ও শিল্প পুলিশের নামে যেসব ব্রাঞ্চ বা শাখা হচ্ছে তা দিয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক, ভয় তথা বৃহৎ অর্থে 'ভয়ের সংস্কৃতি' তৈরি করা যাবে; কিন্তু পুলিশ-জনগণ, মালিক-শ্রমিক-পুলিশ, পুলিশ-ছাত্র সম্পর্ক নির্মাণ করা যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন দমন বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে 'এডুকেশন পুলিশ' নামে একটা শাখার কথা শোনা যাচ্ছে। ছাত্র অধিকার আদায়ের আন্দোলন রুখতে দমন-পীড়নের আলাদা পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজন নেই বরং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন ও ছাত্রদের মধ্যে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক সচেতনতা বেশি জরুরি।
সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ অবশ্য দুর্নীতি। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় আনলে দেখা যায়, দুর্নীতির অন্যতম একটি কারণ হলো পুলিশের চাকরিতে 'সামাজিক মর্যাদা'র অভাব ও সামগ্রিকভাবে বেতনসহ সুবিধার অপ্রতুলতা। পুলিশের নিম্ন র্যাংকের (কনস্টেবল/এসআই) কাজ করা লোকজন অতিকষ্ঠে ও বেদনাক্লিষ্ট জীবনযাপন করেন। একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে পুলিশের দুর্নীতি তথা যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি যুক্ত তা হলো তাদের 'স্ট্যাটাস ফ্রদ্ধাস্টেশন' পরিস্থিতি। প্রচণ্ড মানসিক চাপ নিয়ে তারা সরকার ও সরকারদলীয় কর্মসূচির বাস্তবায়ন করে অথচ বেতন কাঠামো ও সুবিধার দিক থেকে তাদের অবস্থান সবার নিচে। অপরাধ ব্যাখ্যায় ও নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে মার্কসীয় ধারার বাইরে আধুনিকায়ন তত্ত্বগুলোর মৌলিক প্রস্তাবনাও তাই একইরকম। শ্রেণীগত অবস্থান থেকে পুলিশের কার্যক্রম বিবেচনা করলে একটা বিষয় চোখে পড়ে যে, পুলিশরা একই শ্রেণীর মানুষকেই (শ্রমিক/গার্মেন্টকর্মী/কৃষক/ছাত্র) হয়তো অত্যাচার-নির্যাতন করছে। আবার নিজেই কখনোবা সরকার, রাজনৈতিক দল, ঊর্ধ্বতন আমলা বা উচ্চতর অফিসার কর্তৃক শোষিত হচ্ছে।
দুঃখজনক যে, 'পুলিশি টহল'সহ সব কাজে যারা এগিয়ে থাকে এবং প্রধানত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যারা ভিকটিম হয় সেই কনস্টেবলদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি বা জীবনযাত্রার মানোন্নয়নকল্পে কোনো উদ্যোগের কথা শোনা যায়নি। পুলিশের ভেতরে সামাজিক সমতা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির প্রশ্নটিকে এড়িয়ে বাংলাদেশ পুলিশের দুর্নীতি-অন্যায়-নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা যাবে না।
পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে প্রথমত মানবতাবাদ, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং নৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক পর্যায়ে পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ, দলীয়করণ-আত্মীয়করণের বিপরীতে নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা, দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসারদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, দুর্নীতি প্রশ্নে পুলিশ বিভাগ ছাড়াও সরকারকে সবক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তবেই পুলিশ হয়ে উঠবে জনগণের প্রকৃত সেবক। তখন আমরা পেতে পারি একটি দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী, যারা প্রজাতন্ত্রের নির্দেশ বাস্তবায়নে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ইস্পাত কঠিন মনোবল ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম : শিক্ষক, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল
jahir_smile2008@yahoo.com
No comments