চিনে নতুন নুতৃত্ব-শি চিনপিং নতুন প্রেসিডেন্ট

আগামী ১০ বছরের জন্য সরকার ও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ঘোষণা করেছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে শি চিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি ঘোষণা করা হয়।


এই নেতারাই আগামী দশকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনকে সামনের পথ দেখাবেন।
গত ৮ নভেম্বর শুরু হওয়া সিপিসির ১৮তম কংগ্রেস শেষ হয় বুধবার। প্রায় ২০০ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে কংগ্রেসের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। গতকাল সকালে ২৫ সদস্যের পলিটব্যুরো ও সাত সদস্যের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, নেতাদের নামের তালিকা আরো আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল এবং গতকাল কেবল আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়েছে। এবার পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সংখ্যা দুজন কমিয়ে ৯ থেকে সাতজনে নিয়ে আসা হয়েছে। যেকোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে তাঁরাই মূলত সর্বময় ক্ষমতা ভোগ করেন এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে (৫৯) সিপিসির সাধারণ সম্পাদক ও চীনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়েছে। আগামী মার্চে বর্তমান প্রেসিডেন্ট হু চিনথাওয়ের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন তিনি। চিনপিং কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ১২ সদস্যের এই পরিষদ চীনের সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। দায়িত্বরত উপ-প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং চীনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিও আগামী মার্চের পার্লামেন্ট অধিবেশনের পর নতুন দায়িত্ব হাতে পাবেন।
পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির বাকি পাঁচ সদস্য হচ্ছেন_উপপ্রধানমন্ত্রী ঝ্যাং দেজিয়াং, সিপিসির শাংহাই শাখার প্রধান ইয়ু ঝেংশেং, প্রোপাগান্ডা প্রধান লিউ ইয়ুনশান, উপপ্রধানমন্ত্রী ওয়াং কিশান এবং সিপিসির তিয়ানজিন শাখার প্রধান ঝ্যাং গাওলি। এর মধ্যে ওয়াং কিশান সিপিসির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা সেন্ট্রাল কমিশন ফর ডিসিপ্লিন ইন্সপেকশনের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এই পাঁচ নেতাই ২৫ সদস্যের পলিটব্যুরো কমিটিতে অন্তত এক মেয়াদ (পাঁচ বছরের) পার করেছেন। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত হওয়ায় শিগগিরই চীনের রাজনীতিতে সংস্কারের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরপরই শি চিনপিং দুর্নীতি দমনের ও দলীয় সংহতি বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। গতকাল জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে আত্মবিশ্বাসী চিনপিং বলেন, 'মানুষ আরো উন্নত জীবন চায় এবং এ লক্ষ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে। সিপিসির সামনে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং দলের ভেতরই চাপ তৈরি হওয়ার মতো অনেক সমস্যা রয়েছে। এগুলোর সমাধান করতে হবে। দলের সদস্যদের দুর্নীতি, জনগণের সঙ্গে দূরত্ব, আনুষ্ঠানিকতার বাহুল্য এবং আমলাতন্ত্রের জটিলতা এসব সমস্যার অন্যতম। এগুলোর সমাধানে আমাদের সার্বিক চেষ্টা চালাতে হবে। পুরো দলকেই সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকতে হবে।'
বর্তমান প্রেসিডেন্ট হু চিনথাওয়ের এক দশকের শাসনামলে চীনের অর্থনীতি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সামনে এগিয়েছে। কিন্তু সমৃদ্ধির পাশাপাশি ধনী-গরিবের ব্যবধান বৃদ্ধি, বৈষম্য ও দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে সামাজিক অসন্তোষ ও পরিবেশগত হুমকিও তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিপিসির প্রভাবশালী পদ পাওয়াকে কেন্দ্র করে দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়েছে। চিনথাওয়ের পূর্বসূরি জিয়াং জেমিনের ব্যবসাবান্ধব নীতির সমর্থকরা একপক্ষে এবং চিনথাওয়ের সমতাভিত্তিক উন্নয়নের সমর্থকরা আরেকপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। চিনপিং এবং সিপিসির নতুন নেতৃত্ব কিভাবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন, বিশ্লেষকরা এখন তারই হিসাব কষছেন।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

* ১৯৪৯ : সাল থেকে সিপিসি চীনের শাসনক্ষমতায় আছে
* ৭৭ : সিপিসির ৭৭ শতাংশ সদস্যই পুরুষ
* ২০০১ : সাল থেকে স্বাধীন ব্যবসায়ীরাও সিপিসির সদস্য হতে পারছেন
* ৬৮ : লাখ সদস্যই দল এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার হয়ে কাজ করছেন
* ২০১১ : সাল নাগাদ সিপিসির সদস্যসংখ্যা আট কোটি ৩০ লাখে পৌঁছেছে

No comments

Powered by Blogger.